#বিষয় গল্প
#শিরোনাম:বলিদান
#মৌসুমী মিত্র#
বর্ধমান জেলা।বেদাশ্রম। তথাগত ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের তালুক। ধর্মপ্রাণ গোঁড়া ব্রাক্ষ্মণ। সন্ধ্যা-আহ্নিক না করে জল খান না। নিজের নাম নিয়ে মনোকষ্টে ভোগেন। শাক্ত-মানুষ, আর তাঁর কি না গৌতম বু…
#বিষয় গল্প
#শিরোনাম:বলিদান
#মৌসুমী মিত্র#
বর্ধমান জেলা।বেদাশ্রম। তথাগত ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের তালুক। ধর্মপ্রাণ গোঁড়া ব্রাক্ষ্মণ। সন্ধ্যা-আহ্নিক না করে জল খান না। নিজের নাম নিয়ে মনোকষ্টে ভোগেন। শাক্ত-মানুষ, আর তাঁর কি না গৌতম বুদ্ধের নামে নাম!!
তাঁর তালুকটি বেশ বড়োসড়ো। বাড়ির সদর পেরিয়ে দরদালান অতিক্রম করে অন্দরমহলের জটিলতা কাটিয়ে তালুকের শেষ সীমানায় উঁচু ভিটে, পাশে বেলগাছ পেরিয়ে খিড়কীর দরজা। যা আজকাল বন্ধই থাকে। এছাড়া খিড়কীর বাইরে চারটে পুকুর, প্রচুর ধানের জমি, নারকেল বাগান আর ফলের গাছ। পাঁচটি বড়ো গ্ৰামের সীমানা জুড়ে ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের তালুক।
সদরের মাথায় গথিক স্থাপত্যের কাজ আজও সবার সমীহ আদায় করে।
ধর্মপ্রাণ ভট্টাচার্য্য মহাশয় স্বপ্নে পাওয়া মহাদেবকে গঙ্গার পাড় থেকে এনে বিশাল শিবমন্দির স্থাপন করেছেন। মন্দিরের খিলানের কাজ আজও লোকে মুগ্ধ হয়ে দেখে। তিনি নিজে শাক্ত তাই আরাধ্যা মা-কালীও তাঁর নিজস্ব ঘরে যথেষ্ট যত্নের সঙ্গে বিরাজমান। এছাড়াও আছে দুর্গাদালান। ভট্টাচার্য্য মহাশয়ের তালুকে দুর্গোৎসব হয়। বারোমাসে তেরোপার্বণ তো লেগেই আছে এছাড়া প্রতি শনিবার বারের পূজো, সিন্নি, ব্রতকথা পাড়ার লোকের উপস্থিতিতে একেবারে জমজমাট ব্যাপার।
শাক্ত পরিবারে আরাধ্যা দেবী মা-কালীর পূজো প্রতিবছর ধূমধাম করে হয়। পূজোয় একাধিক ছাগ-বলিও হয়। বলির পর ছাগশিশুর দেহগুলি বাড়ির শেষ সীমানায় নিয়ে গিয়ে সেগুলিকে টুকরো করা হয়। এই প্রাণের নিধনে কোনো অন্যায় দেখতে পান না ভট্টাচার্য্য পরিবার।
ধীরে ধীরে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। কোন এক অজানা কারণে খিড়কীর দোর দিয়ে বেরোতে গেলেই মানুষজন নিশ্চিতভাবে হোঁচট খায়। কে যেন পা টেনে ধরে। ক্রমশঃ গোটা পাড়ায় ছড়িয়ে পড়ে এই খবর। রাতের দিকে ছাগশিশুর আর্তকান্না শোনা যায়। দিনমানেও কিরকম ছমছমে ভাব। বেলগাছ থেকে পাতা পড়লে উধাও হয়ে যায়। সবাই বলে ছাগশিশুতে খায়।
দিন বদলেছে।ধীরে ধীরে বলিপ্রথা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু খিড়কীর দোর আজও তেমনই আছে। আজও বাতাসে ভাসে ছাগশিশুর কান্না। ভুলেও যদি কেউ ওদিক পানে যায় তার পা টানে ছাগশিশু। হোঁচট খায়।।#মৌসুমী#