Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

তাপস দত্তের ধারাবাহিক উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি

ধারাবাহিক
উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি- পর্ব ১৩
 তাপস দত্ত
******
ট্রেনের জানালা দিয়ে আঙুল তুলে দেখায় ওই দুরের সবুজ বনটিকে।

-আচ্ছা কেমন দেখাচ্ছে সাহিত্যের ভাষায় বলুনতাে সুলােচনবাবু। সুলােচন জানে ওর সাহিত্য ভাল লাগেনা, তবুও সে চেষ্টা …


ধারাবাহিক
উপন্যাস চন্দ্র গোধূলি- পর্ব ১৩
 তাপস দত্ত
******
ট্রেনের জানালা দিয়ে আঙুল তুলে দেখায় ওই দুরের সবুজ বনটিকে।

-আচ্ছা কেমন দেখাচ্ছে সাহিত্যের ভাষায় বলুনতাে সুলােচনবাবু। সুলােচন জানে ওর সাহিত্য ভাল লাগেনা, তবুও সে চেষ্টা করল “উচু নিচু সবুজ ভরা পাহাড়। গােধূলির ঠিক ভাল লাগল না, চন্দ্র খুব ভাল বলত। মনে মনে ভাবল গােধূলি। তবে ওর মনে বড় অহঙ্কার ছিলে। ও চলে গেছে ভালই হয়েছে। তা না হলে সুলােচনের দেখাই পেতাম না। ওরা বারানসীর কাশী বিশ্বনাথের মন্দিরে পূজো দিতে গেল। সেদিন মন্দিরের পূজারী বললেন -আপনারা যখন অনেক দুর থেকে এসেছেন আজ এখানে থেকে যান। মস্ত বড় পন্ডিত এসেছেন। ওদের তর্ক যুদ্ধ হবে সন্ধ্যায়। ওরা মেলা দেখতে গেল। বড়বড় মিষ্টির দোকানের সারি একপাশে। আর একপাশে দেবতার পুতুল বিক্রি হচ্ছে। আর মেলার পিছনের দিকে রঙ-বে-রঙের পাখি খাঁচায় ভর্তি। গােধূলি একা এগিয়ে গেল। খাঁচায় ভর্তি পাখিগুলাে সুন্দর শিস দিচ্ছে। হঠাৎ যেন চমকে উঠল গােধূলি। ওই যে দুরে দাঁড়িয়ে একটা লোক অনেকগুলি পাখি কিনে আকাশে উড়িয়ে দিলে, এতাে চন্দ্রদা ?

মনে মনে ভাবল সে তাে মারা গেছে? ভাবতে ভাবতেই চন্দ্রকে আর দেখতে পেল না। শরৎকে সব ঘটনা বলতে ওরা সারা মেলা তন্ন তন্ন করে খুঁজল।  চন্দ্রকে পেল না।

শরৎ বলে উঠল -সত্যিই তাের মাথা খারাপ হয়েছে। বাড়ি ফিরেই তাের সঙ্গে সুলােচনের বিয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। গােধুলির মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে উঠল।

 হঠাৎ উষা বৌদির কথা, গােধূলির কথা মনে পড়ল চন্দ্রের। আর যাযাবরের মতাে ঘুরতে ভাল লাগেনা চন্দ্রের। ওদের শান্তির নীড়েই ফিরে যাবে স্থির করল। 'সেখানে সােনার সংসার পাতবে, সেখানে কেউ থাকবে না। শুধু গােধূলি আর আমি  আর কেউ নয়।

-মুনাই-এর কথা ভেবে মনটা বেদনায় ভরে উঠল। কিন্তু ওখানে কি শুধু হাতে যাওয়া যায় ? শরৎ-এর জন্য প্যান্ট,বৌদির জন্য সুন্দর লাল শাড়ি আর দয়াময়ী দেবীর জন্য সাদা ধবধবে একখানা শাড়ি নিল, কিন্তু গোধূলির  জন্য কি নেওয়া যায় ? এ দোকান ও দোকান ঘুরে ঘুরে শেষে একটা সুন্দর নীল শাড়ি নিল। হ্যাঁ, গােধূলিকে সুন্দর মানাবে।
এর মধ্যে শরৎ গোধূলি ও সুলােচনের বিয়ের তারিখ পঁচিশে মাঘ ঠিক করেছে। আজ সেই দিন, তাই ওদের বাড়িতে যেন উৎসবের জোয়ার এসেছে। সকলের মধ্যেই ব্যস্ততা। দয়াময়ী দেবী বলে শরৎ বেনারসি শাড়ি কিনতে গেল এখনাে এলো না।


-সুবিনয় ডাক্তারকে নেমন্তন্ন করে ফিরবে মা ওর দেরি হবে উত্তর দেয় উষা বৌদি। শরৎ কিন্তু জেনে যায় সুবিনয় ডাক্তারের কাছে ওর বোনের জীবনদাতা চন্দ্রময় চাটার্জী। আমরা নই। ওই চন্দ্রবাবু এসে রক্ত না দিলে ওর বােন চির দিনের মতাে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেত। চন্দ্রবাবু সেই যে গেছেন আর আসেননি।- শরৎ ভাবতে ভাবতে বাড়িতে ঢুকল। এত আয়ােজন, গােধূলিকে আনন্দের দিনে আবার অন্ধকারের পথে ঠেলে দেওয়া যায় না। শরৎ কথাটা চেপে যায় শান্ত স্নিগ্ধ সানাই-এর সুরে সুলােচন-গােধূলির বিয়ে হয়ে যায়।
ট্রেন থেকে নেমে চন্দ্র খুশি মনে হেঁটে চলে। আরও কত দুর! ওই  তাে | সবুজ মায়ায় ভরা গ্রাম, পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া সুবর্ণরেখা নদী। পথিমধ্যে সুজন মাঝির সাথে দেখা হয়ে যায়। ভােরের ক্লান্ত সানাই -এর শব্দ শুনতে পায় চন্দ্র। সুখেন মাঝি যেন নিজেকে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।

-আপনি বেঁচে আছেন মাস্টার মশাই ? দাঁড়ান আমি খবরটা দিইয়া আসি
 চন্দ্রের বুকটা কেঁপে উঠল সানাইয়ের সুরে ঐ দিক থেকেই আসছে। তবে কি গােধূলির বিয়ে....?ক্লান্ত পায়ে গোধূলিদের বাড়ির দরজায় উপস্থিত হয়। উষা বৌদি নিজেকে বিশ্বাস করতে পারে না।

-চন্দ্র তুমি বেঁচে আছাে?

চন্দ্র শুধু শান্ত স্বরে জিজ্ঞাসা করল-বৌদি কার বিয়ে?

গোধূলি তখন সামনে এসে দাঁড়ায়। ওর শরীরে সদ্য পরিহিত লাল বেনারসি শাড়ি বিয়ের মিষ্টি সৌন্দর্য্য বাড়িয়ে দিয়েছে। চন্দ্র ওদের জন্য নিয়ে আসা প্যান্ট, কাপড় বৌদির হাতে তুলে দেয়। শুধু নীল শাড়িটা গােধূলির সামনে উপহার হিসাবে তুলে ধরে। চন্দ্র যেন নীল আকাশের মত শান্ত হয়ে গেছে। ওর চোখে জল নেই, যেন বুক ফাটা এক টুকরাে হাসি বেরিয়ে এলো।
 গােধূলির চোখের জল টলটল করতে লাগল।

চন্দ্র আবার ফিরে চলল। শুধু বলল -আসি। কোন দিন হয়ত আর দেখা হবে না গোধূলি। ভাল থেকো। কনের শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার সময় হয়েছে। শরৎ গোধূলিকে বিদায় দেওয়ার সময়  বলে-তাের প্রবল অসুখের সময় রক্ত দিয়ে তাের জীবন বাঁচিয়েছিল চন্দ্রদা। গােধূলির অন্তর যেন হাহাকার করে কাঁদতে লাগল। গােধূলি পাগলের মতাে ছুটতে আরম্ভ করল। চন্দ্র.... চন্দ্র....তুমি যেওনা। কান্না ভরা কন্ঠে ছুটতে লাগল।

চন্দ্র ওদের উঠোন পেরিয়ে খােলা আকাশের নিচে এসে দাঁড়াল।  দুঃসহ দুঃখে চন্দ্রের হৃদয়ের মাঝে কান্নাগুলাে টুকরাে টুকরাে হয়ে বাতাসের বুকে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। চোখের কোলে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল আনমনে। চোখ মুছে মুক্ত আকাশের মাঝে চোখ মেলল চন্দ্র। পূর্নিমার চাঁদ তখন অস্তের পথ ধরেছে।
 হাল্কা হাল্কা তুলাের মতাে মেঘ গুলাে  যেন অস্তায়মান চন্দ্র কে বিদায় জানাচ্ছে।

দুরে গোধূলির হৃদয় বিদারী হাহাকার শুনতে পেল চন্দ্র। ওই তাে গােধূলি আলো  আঁধারের বুক চিরে ছুটে আসছে। তার আগেই চন্দ্রকে চলে যেতে হবে অনেক অনেক দূরে। ওর জীবন থেকে অনেক অনেক দূরে। | শরৎ গােধূলিকে সুলােচনের সঙ্গে গাড়িতে করে শ্বশুরবাড়ি পাঠিয়ে দেয়। গোধূলি হৃদয়ের কান্না বেরিয়ে আসছে। সামনের আসনে তার বর্তমান স্বামী সুলােচন আনমনে বাইরে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ গাড়ির ড্রাইভারকে সরিয়ে সুলােচন মােটরের স্টিয়ারিং ধরে। গোধূলি কেমন যেন স্থির হয়ে গেছে। | সুলােচনের মনে কেমন যেন উন্মাদনা পেয়ে বসে। হঠাৎ মােটর গাড়ির স্পীড বাড়িয়ে দেয় সুলােচন। চাপা অভিমান সুলােচনের মনে বাসা বাঁধে। নিজের সদ্য বিবাহিত স্ত্রী যেন নিজের নয়। গাড়ির স্পীড সুলােচন বাড়িয়েই চলে। গােধূলি চোখ বুজে বসে আছে। ড্রাইভার মানা করা সত্ত্বেও সুলােচন গাড়ি আরাে জোরে চালাতে থাকে। গোধূলি এতক্ষন নিরব ভাবে চোখ বুজে ছিল, হঠাৎ চোখ খুলতেই চমকে উঠল। চারপাশের গাছপালা হু হু করে বেরিয়ে যাচ্ছে। গােধূলি কিছু বলার আগেই গাড়ি মােড়ের পথে হঠাৎ আসা ট্রাকের সঙ্গে সংঘর্ষ লাগল। গাড়ি গড়িয়ে পড়তে লাগল অনেক অনেক নীচে খাদের মধ্যে।

আজ সত্যিই সবকিছু শেষ হয়ে গেছে চন্দ্রের। কিন্তু কোথায় যাবে ?সুবর্নরেখার তীর বরাবর হাঁটতে লাগল চন্দ্র। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যার শঙ্খ  ধ্বনি বাতাসে বইতে লাগল। পাগলের মত ঘুরতে ঘুরতে  ক্ষুধায়, তৃষ্ণায় অবসন্ন হয়ে পড়ে লাগল চন্দ্রের শরীর।
সে এক সময় গির্জায় পৌঁছায়।  মারিয়া তখন যিশুর আরাধনায় মগ্ন। হঠাৎ পায়ের শব্দ শুনতে পেয়ে  উঠে এল মারিয়া!

 .... পরের সপ্তাহে এই উপন্যাসের শেষ পর্ব