Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ত্রিমাত্রিক- এর ছোট্ট বিশ্লেষণ ---- আশরাফুল ইসলাম

بسم الله الرحمن الرحیم

ত্রিমাত্রিক- এর ছোট্ট বিশ্লেষণ
-------আশরাফুল ইসলাম

ত্রিমাত্রিক মিশ্রবৃত্তের কবিতা, সংস্কৃত থেকে বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেছে বহু বছর পূর্বে৷ এতে মুক্তাক্ষর, বদ্ধাক্ষর নির্দিষ্ট ছকবিন্যাসে সাজানো হয়৷ যুক্তব…


بسم الله الرحمن الرحیم

ত্রিমাত্রিক- এর ছোট্ট বিশ্লেষণ
-------আশরাফুল ইসলাম

ত্রিমাত্রিক মিশ্রবৃত্তের কবিতা, সংস্কৃত থেকে বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেছে বহু বছর পূর্বে৷ এতে মুক্তাক্ষর, বদ্ধাক্ষর নির্দিষ্ট ছকবিন্যাসে সাজানো হয়৷ যুক্তবর্ণ সহ বা যুক্তবর্ণ ছাড়া লেখা যায়৷ যুক্তবর্ণকেও নির্দিষ্ট ছকবিন্যাসে নেয়া যায়৷

শুধু বদ্ধাক্ষর অথবা শুধু মুক্তাক্ষরে লেখলেও ত্রিমাত্রিকই হবে৷

কিছু উদাহরণ দিলে বিষয়টা বুঝতে সুবিধা হবে। উদাহরণ:-

অগ্নি যেমন কাষ্ঠ পুড়ায়
হিংসা পুড়ায় পুণ্যকে,
মিথ্যা কথায় ধ্বংস নিজের
প্রাপ্তি শুধুই শূন্যকে৷

সত্য পথের ভক্ত যেজন
আস্তা রাখেন স্রষ্টাতে,
ইচ্ছা তাদের কিচ্ছা লেখেন
মন্দ নাশের নিষ্ঠাতে৷

স্বরবৃত্ত- ৪+৪+৪+৩
মাত্রাবৃত্ত- ৬+৬+৬+৪
অক্ষর- ১০+৮
প্রস্বর ও যুক্তবর্ণের ছকবিন্যাস একই নিয়মে প্রত্যেক চরণে সাজানো আছে যা আলাদা বৃত্ত নয় বরং বৈশিষ্ট্য৷

ত্রিমাত্রিক হলো মিশ্রবৃত্ত যেটাতে স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত তিনবৃত্তেই মাত্রা মেলানো যাবে৷ মুক্তস্বর, বদ্ধস্বর, যুক্তবর্ণ পর্যায়ক্রমে একরীতিতে সাজানো থাকবে৷

বাংলা কবিতায় তিনবৃত্ত অথবা তিনবৃত্তে সংমিশ্রণ ছাড়া যা যা আসবে তা সবই ছন্দের বৈশিষ্ট্য হবে৷ যেমন:- প্রস্বরতা বা যুক্তবর্ণের নির্দিষ্ট ছকবিন্যাস৷

কবিতা আবৃত্তির বিষয়, শ্রবণের সাথে সম্পৃক্ত মিশ্রছন্দে লেখলেও আবৃত্তি একসাথে সব বৃত্তে যেমন সম্ভব নয় ঠিক মাত্রা লেখাতে মিলালেও আবৃত্তিতে সম্ভব নয়৷

ত্রিমাত্রিক আমি প্রথম লেখছি না, তবে পূর্বের থেকে আলাদা বৈশিষ্ট্য আমার লেখাতে আছে৷ শেষ কথা যা বাংলাতে আগেই ছিলো তাকে ঘষে মেজে যাই করবো তা মূলেই থাকবে৷

আলাদা বৃত্ত যদি বৈশিষ্ট্যকে বলি তবে অবশ্যই পর্ব ও মাত্রা দেখাতে হবে এবং স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও অক্ষরবৃত্তকে সরালে যাকে বৃত্ত বলবো বা তার অস্তিত্বকে রক্ষা করে দেখাতে হবে৷

(ত্রিমাত্রিক)

দ্বন্দ্ব বন্ধ    হবে-
মুক্তবিশ্বে কবে?
স্রষ্টা জানেন৷

বন্ধু শত্রু     হয়ে-
তিক্ত অস্ত্র ক্ষয়ে-
ভাঙ্গে মনন৷

সিক্ত চক্ষু আজি,
রিক্ত হস্তে সাজি,
চিত্ত করুণ৷

দুস্থ তন্দ্রা কাড়ে,
কষ্ট পুস্ত   দ্বারে,
নিঃস্ব জীবন৷

মঞ্চ মঞ্জু    দেখে,
রত্তি শান্তি চেখে,
ভ্রষ্ট বালক৷

তিষ্যা পথ্য ভালো,
বৃক্ষ মস্ত    কালো,
লভ্য সহজ৷

মিথ্যা গণ্ডু ঘুরে,
ভণ্ড গুঞ্জে সুরে,
ধাপ্পা বিরাট৷

স্বরবৃত্ত- পূর্ণপর্ব বা মূলপর্ব ৪, অতিপর্ব বা অপূর্ণ পর্ব ২৷

মাত্রাবৃত্ত- পূর্ণপর্ব বা মূলপর্ব ৬, অপূর্ণ পর্ব বা অতিপর্ব ২৷

অক্ষরবৃত্ত- পূর্ণপর্ব বা মূলপর্ব ৬, অতিপর্ব বা অপূর্ণ পর্ব ৫৷

প্রস্বর ও যুক্তবর্ণের ছকবিন্যাস, বদ্ধস্বর ও মুক্তস্বর নির্দিষ্ট ভাবে সাজানো৷ আর এটাই ত্রিমাত্রিকের বৈশিষ্ট্য আলাদা বৃত্ত বা ছন্দ নয়৷  না এটা নতুন আবিষ্কার করেছে কেউ৷ সংস্কৃত থেকে বহু বছর পূর্বে বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেছে৷

(ত্রিমাত্রিক)

সত্য রেখে মিথ্যা ধরে
বড্ড খুশি চোর,
বুদ্ধি খুয়ে শুদ্ধি খুঁজে
সন্ধ্যা বলে ভোর!

চিত্ত সুখে নৃত্য করে
বিশ্ব জয়ে সাধ,
অল্প শিখে গল্প জুড়ে
হস্তে নেবে চাঁদ!

রুদ্ধ ঘরে বন্দী হয়ে
মুক্ত বলে খুব,
যুক্ত হলো গুপ্ত ভাবে
স্বার্থে দিলো ডুব৷

সিক্ত হলো চক্ষু দু'টো
দৃশ্য দেখে তার,
বক্ষমাঝে তপ্তব্যথা
সপ্ত পারাবার৷

(ত্রিমাত্রিক)

তপ্ত মনে সুপ্ত ব্যথা   সিক্ত চোখে গাই!
রপ্ত করি তিক্ত ভবে-  নিত্য দুখে ঠাঁই!
চিত্ত আজি ক্ষিপ্ত হয়ে লিপ্ত ভুলে ভাই!
দীপ্ত হলো দীক্ষা পেয়ে গুপ্ত থাকা চাই!

স্বরবৃত্ত- ৪+৪+৪+১
মাত্রাবৃত্ত- ৫+৫+৫+২
অক্ষরবৃত্ত- ৮+৬

প্রস্বর ও যুক্তবর্ণের ছকবিন্যাস, বদ্ধস্বর ও মুক্তস্বর নির্দিষ্টভাবে সাজানো৷ আর এটাই ত্রিমাত্রিকের বৈশিষ্ট্য আলাদা বৃত্ত বা ছন্দ নয়৷ না এটা নতুন আবিষ্কার করেছে কেউ৷ সংস্কৃত থেকে বহু বছর পূর্বে বাংলা সাহিত্যে প্রবেশ করেছে৷

(ত্রিমাত্রিক)

গাভী মাতা
নাভি নেড়ে
বলে  বাছাধন-
ডাকো মতা
থাকো সুখে
গোলে মানু' জন৷

সবগুলো মুক্তস্বর মাত্র দুইটি বদ্ধস্বর, যুক্তবর্ণ নেই৷

(ত্রিমাত্রিক)

বঙ্গদেশে  রঙ্গ করে
ভ্রান্ত দলে গুপ্ত ভাবে,
বন্ধু মম   যুক্ত হলো
চিত্ত সুখে রক্ত খাবে৷

গাচ্ছে তারা তিক্ত সুরে
গন্ধ শুঁকে      ভণ্ড হয়ে,
নষ্ট হৃদে      স্পষ্ট চলে
গোষ্ঠি বেঁধে ধান্দা লয়ে৷

চেষ্টা শুধু      বিশ্ব জয়ে
শক্তি ক্ষয়ে   শব্দ তুলে,
শান্তি খুঁজে নিঃস্ব মেরে
দুষ্ট ওরা     স্রষ্টা ভুলে৷
.........

বঙ      গ        দে        শে        / রঙ       গ         
বদ্ধস্বর মুক্তস্বর মুক্তস্বর মুক্তস্বর/ বদ্ধস্বর মুক্তস্বর
কো      রে       /
মুক্তস্বর মুক্তস্বর/

বদ্ধস্বর, মুক্তস্বর, যুক্তবর্ণ নির্দিষ্ট ছকবিন্যাসে সাজানো৷

(ত্রিমাত্রিক)

মন্দ মানুষ গন্ধ ছড়ায়      দ্বন্দ্ব বাঁধায় সবখানে,
মিথ্যা কথার গল্প শুনায় বিদ্যাবিহীন ছল জানে৷

নষ্ট হৃদয়, ভগ্ন কলম-  কাব্য রচার সাধ কতো!
ভ্রষ্ট পথের নিষ্ট পথিক- বিশ্ব জয়ের পণ শতো৷

বুদ্ধি দারুণ, শুদ্ধি করুণ,    মৃত্যু পাবার ভয়হারা,
চিন্তা তাদের সত্য বিধান ধ্বংস করার পায়তারা৷

(ত্রিমাত্রিক)

একক প্রভু, শরিক ছাড়া
সৃজন সবই তাঁর,
পাপের সাজা দেবেন তিনি
দয়ায় পাবে পার৷

সহজ কথা বোঝার যেনো
মানুষ ভবে নাই!
সময় হলে সাবার কাছে
প্রকাশ হবে ভাই৷

মরণ এসে জানান দেবে
কেমন মজা তার!
মাবুদ ভুলে মনের সুখে
জীবন কাটে যার৷

জগতমাঝে ভোগের মোহে
মানব আছে বেশ,
খ্যাতির লোভে পাগলপারা
ঈমান করে শেষ!

বদ্ধাক্ষর, মুক্তাক্ষর নির্দিষ্ট রীতিতে সাজানো, যুক্তবর্ণ নেই৷

(ত্রিমাত্রিক)

চায় সুখ পায় দুখ 
নেই কেউ সঙ্গে,
গায় গান খায় পান 
যায় দূর রঙ্গে৷

মন ভার নয় তার 
জ্ঞান খুব অল্প,
হোক ক্ষয় নেই ভয়
বেশ দেয় গল্প৷

কূল, মান খানখান
ঠাঁই তার বঙ্গে,
সৎপথ ঠিকমত
রোজ রোজ লঙ্ঘে৷

সবগুলো বদ্ধাক্ষর শুধু চরণের শেষে একটি করে মুক্তাক্ষর৷

(ত্রিমাত্রিক)

কাকা বলে কলা খাবে
চলো বাজারে,
শুনে আমি মহাখুশি
সুখে আহা রে!

সবগুলো মুক্তাক্ষর৷

ত্রিমাত্রিকের ছোট্ট বিশ্লেষণ এখানে সমাপ্ত করা হলো৷