Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকার দৈনিক সেরা সম্মাননা

গল্প—উইল
মালা চ্যাটার্জ্জী
৪,৫,২০২০

“এই দাদু, মাইরি বলছি, আজ কত কষ্ট করে তোমার
বাড়ি এইছি তা জানো, বকুলদের আম গাছে উঠে,
তারপর পকাদের পাঁচিল বেয়ে তোমার বাড়ির
উঠোনে নেমেছি । আচ্ছা বলিহারি বাপু,তুমি মরবে
 কবে বলো দিকি নি? দিদিমা তো …


গল্প—উইল
মালা চ্যাটার্জ্জী
৪,৫,২০২০

“এই দাদু, মাইরি বলছি, আজ কত কষ্ট করে তোমার
বাড়ি এইছি তা জানো, বকুলদের আম গাছে উঠে,
তারপর পকাদের পাঁচিল বেয়ে তোমার বাড়ির
উঠোনে নেমেছি । আচ্ছা বলিহারি বাপু,তুমি মরবে
 কবে বলো দিকি নি? দিদিমা তো সেই কবে স্বগে
গেছেন। একা একা বাঁচতে তোমার ভালো নাগে?
 মরলে একটা ছ্যারাদ্দি খেতাম বেশ পেট পুরে। এই
 নকডাউনে সোজা পথে আসা কি অতই সোজা !
লোহার রেলিং দে পথ আটকানো যে, সিধুতে গেলেই
পুলিশদের কি হম্বিতম্বি? বাড়ি চলে যা, এক পা
এগুবিনে বলো দিচ্ছি। ”
অনাথবাবু সকালে ঘুম থেকে উঠে দাঁত মাজছিলেন।
দাঁত মাজার পর বললেন,“ তোর শ্রাদ্ধ খেয়ে মরব।
বুঝলি!”
“ ইস, নাতনির ছ্যারাদ্দ খাবার খুব শখ, না? আশি
তো পার করেছ, এবার নিজের ছ্যারাদ্দের কথাও
তো একটু ভাববে!”
“বড্ড কথা শিখেছিস তুই হারামজাদি। কাল থেকে
তুই আর কাজে আসিস না, আমি তোকে আর কাজে
রাখবো না। ”
“ইঃ, কাজে নাগবে না! বলি আমি ছাড়া তোমার
এত ফাই-ফরমাশ খাটবে কে! হ্যাঁ গো দাদু,
দিদিমাকেও কি তুমি এত ফাই-ফরমাশ করতে?
নেগে যেতো না দিদিমা?”
“রেগে যেতো কি যেতো না, তাই দিয়ে তোর এত কি
দরকার রে হারামজাদি, কাজ করতে এসেছিস কাজ
করে চলে যা। ”
“আহা, একটু খুলে বলোই না,শুনতে বড় নোভ হচ্ছে
গো তোমাদের ঘরগৃহস্থালির কথা। ”
মানদা কাজ করতে এলে রোজই তাদের এরকম
চাপান-উতোর হয়। নতুন কিছু নয়।
অনাথবাবু তেজের সঙ্গে বললেন,“ আমাদের ঘর
গৃহস্থালির কথা শুনে তুই কী করবি রে মুখপুড়ি। ”
মানদা হেসে গড়িয়ে বলে,“ তুমি কি দিদিমাকে খুব
ভয় করতে?”
চোখ পাকিয়ে অনাথবাবু বললেন,“ দূর হয়ে যা, দূর
হ। ”
“বেশ, বেশ, আর শুধোবো নি,বুড়ো বয়সে কি নাগ
দেখ না। যাও, এবার বাসি নুঙ্গি গেঞ্জি  ছেড়ে দাও
 দিকি নি।আমি ওদিকে বাসি ঘরদোর ঝাঁট দিয়ে
তোমার খাবারের ব্যবস্থা করি। ”
ঘর ঝাঁট দিতে দিতে অনাথবাবুর বিয়ের ফটোর দিকে
একদৃষ্টে তাকিয়ে  রইল মানদা তারপর বলল,
“বয়সকালে তুমি কিন্তু হেবি দেখতে ছিলে দাদু,
দিদিমাকে তোমার পাশে একদম মানায় নি। এ যেন
বাঁদরের গলায় মুক্তোর মালা। মাইরি, বলছি তখন
যদি আমার সাথে তোমার দেখা হত না, আমিও
তোমাকে ফাঁদে ফেলতাম। ”
“খুব ফাজিল হয়েছিস কিন্তু মানদা, ও দিকে কটা
বাজে খেয়াল আছে? জলখাবার দিবি কটায়?”
“এই যাচ্ছি গো দাদু ঘর ঝাঁট প্রায় হয়ে এল। তুমি
সোফায় বসে টিভি দেখ, আমি চা, জলখাবার নিয়ে
আসছি। ”
ঝটপট করে চা বানিয়ে বিস্কুট দিয়ে সামনে দেয় মানদা। তারপর একটা রুটি, অল্প তরকারী ও এক
কাপ গরম দুধ দেয়। লকডাউনে একদম বাড়ির
বাইরে পা দিতে দেয় না অনাথবাবুকে। নিজেই নিচে
নেমে ফেরিওয়ালাদের কাছ থেকে আনাজপাতি ও
মাছ ডিম কেনে। শুধু তাই নয়, ছেলে দুখুকে দিয়ে
 প্রয়োজনীয় জিনিসও আনিয়ে অনাথবাবুর ঘরে
মজুত রাখে। কতই বা বয়স হবে দুখুর, এই পনেরো
ষোলো। খুশি হয়ে অনাথবাবু কখনও টাকা-পয়সা
দিতে গেলে মানদা একেবারেই তা নেয় না।
কতদিন এরজন্য অনাথবাবু তাকে বলেছে,“তোর
কি টাকাপয়সা লাগে না?”
“খুব নাগে, কিন্তু একবার নোভ এসে গেলে দাদু,
তা কমবি নি গো। নোভ হল শত্তুর। ”

 রাত্রির সব ব্যবস্থা করে দিয়ে এই মানদা যখন বাড়ি
চলে যায় তখন খুব নিঃসঙ্গ  লাগে অনাথবাবুর। বড়
একা। আজ পাঁচ বছর হল পত্নী শিপ্রা মারা গেছে।
তারপর থেকে তো এই মানদাই ঘরদোর সামলাচ্ছে।
আশ্চর্য  নির্লোভী এই নাতনীসম মেয়েটি। কতই বা
বয়স হবে বড়জোর চল্লিশ। স্বামী আবার বিয়ে করে
অন্যত্র উঠে গেছে। মেয়েটি কিন্তু ঐ বস্তির মধ্যেই
কেমন ছেলেকে লেখাপড়া শেখাচ্ছে। এ বছর
মাধ্যমিকে ভালো ফলও করেছে সে। ইংরেজি আর
অঙ্কটা অনাথবাবু নিজেই আগ্রহভরে মাঝেসাঝে
দেখিয়ে দেন।

হঠাৎ অনাথবাবুর মনে হয় আজই একটা উইল
করে রেখে যাবেন। সত্যি তো তাঁর নিঃসন্তান জীবনে
এই মেয়েটিই তো সেবাযত্ন করে বাঁচিয়ে রেখেছে।
বোনেরা তো শুধু টাকা চাইতে আসে । তাদের
মনেরকথা সব বোঝেন তিনি।
আর বিন্দুমাত্র  দেরি না করে উইলের একটা খসড়া
বানিয়ে ফেলেন তিনি যার যথাসর্বস্ব দাবীদার হল
মানদা ও তাঁর ছেলে দুখু।
এই তো এবার তাঁর মনের গভীরে সমুদ্রের স্রোত
বইছে। স্নেহ বোধহয় এমনি হয়!

স্বত্ব সংরক্ষিত@ মালা চ্যাটার্জ্জী