Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকার দৈনিক সেরা সম্মাননা

#বিশ্ব মা দিবস
#ভূমিকা বদল
#সুস্মিতা

(একটা গল্প বড্ড লিখতে ইচ্ছে করল ...খুব সাধারণ গল্প ,ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি ...বন্ধুদের সঙ্গে তো সবই ভাগ করে নেওয়া যায়)

#ভূমিকা বদল

 ভোর সাড়ে তিনটে...
ঘুম ভেঙ্গে গেল সুনয়নার। ভো…


#বিশ্ব মা দিবস
#ভূমিকা বদল
#সুস্মিতা

(একটা গল্প বড্ড লিখতে ইচ্ছে করল ...খুব সাধারণ গল্প ,ব্যক্তিগত জীবনের অভিজ্ঞতা বা অনুভূতি ...বন্ধুদের সঙ্গে তো সবই ভাগ করে নেওয়া যায়)

#ভূমিকা বদল

 ভোর সাড়ে তিনটে...
ঘুম ভেঙ্গে গেল সুনয়নার। ভোরেই ওঠার অভ্যাস, কিন্ত তাই বলে এত তাড়াতাড়িও নয়। বোধহয় নতুন জায়গা,অচেনা বিছানা...এসব কারণেই ঘুমটা ভেঙ্গে যাচ্ছে গত তিনদিন ধরে।
   তিনদিন হ'ল দিল্লীতে মেয়ের কাছে এসেছেন সুনয়না। এটা মেয়ে সায়নীর পি.জি অ্যাকোমোডেশন। একটা দু কামরার ফ্ল্যাটে ওরা চার বন্ধু একসঙ্গে থাকে। সায়নীর রুমমেট দিন সাতেকের জন্য বাড়ি গিয়েছে ভুবনেশ্বরে। অতএব সুনয়নার থাকার জায়গার অসুবিধা হবে না। মেয়ের সঙ্গে সাতটা দিন একসাথে কাটানোর সুযোগ ছাড়তে চাননি তিনি। আদরের একমাত্র মেয়েটা যবে থেকে অন্য শহরে চলে এসেছে, মায়ের মনটা কিছুতেই...মেয়েকে বড় মিস্ করেন তিনি।

     গত শুক্রবার সন্ধ্যায় দিল্লীতে এসে পৌঁছেছেন সুনয়না। থাকবেন মোটে ছয় দিন। ওই যতক্ষণ মেয়েটাকে একটু কাছে পাওয়া যায়...
     ঘুমটা ভেঙ্গে যেতেই হাত বাড়িয়ে মেয়েকে একটু ছুঁতে ইচ্ছে করল মায়ের। শীতের ভোররাতে সন্তানের গায়ের ওম...সেই ছোট্টবেলার মতো এখনও মেয়েকে বুকে জড়িয়ে বড্ড আদর করতে ভালো লাগে। মাতৃত্ব যে এমনই...
      ওমা, মেয়ে তো পাশে নেই...। এত তাড়াতাড়ি উঠে পড়েছে ? আজও ? ভোররাতে বাথরুমে গিয়েছে বোধহয়...।বাড়িতে থাকার সময় এই অভ্যাস তো ছিলনা...
     সুনয়নার মনে পড়ে গেল-ছোট থেকেই সায়নীটা ঘুমিয়ে পড়লে একেবারে কাদা , ভোরবেলা ওকে জাগানো যে কি  কঠিন কাজ ছিল। সকাল আটটার আগে সে বিছানা ছাড়তেই চাইতনা। সাড়ে আটটার মধ্যে রেডি করে সায়নীকে স্কুলে পাঠানো ছিল প্রতিদিনের যুদ্ধ। এই নিয়ে কম অশান্তি হয়েছে বাড়িতে ...
   এ তো গেল ছোটবেলার কথা। এখনও ছুটিছাটাতে বাড়ি গেলে বেলা দশটার আগে বিছানা ছাড়েনা সায়নী। সুনয়নাও অবশ্য ওই কয়েকটা দিন তার রাজকন্যাকে আদরে প্রশ্রয়ে মাথায় করে রাখে। যেভাবে যতটুকু সম্ভব একটু আদর দেওয়া যায় মেয়েটাকে। যে মেয়েকে  বাড়িতে কোনোদিন সেরকম ভারি কোনো কাজ করতে হয়নি , দিল্লীর পি জি তে তাকে প্রায় সবকিছুই তো নিজেকেই করে নিতে হয়...। মমতায় বুকটা ফেটে যায় মায়ের...
         সুনয়না নিজে কিন্তু একেবারে ভোরের পাখি। প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে ভোর পাঁচটায় ঘুম ভেঙ্গে যায় তার। সঙ্গেসঙ্গে বাথরুমে যেতেই হবে।এখানে এসে নতুন পরিবেশে অচেনা বিছানায় রাত তিনটে সাড়ে তিনটেতেই রোজ ঘুমটা ভেঙ্গে যাচ্ছে।

        এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতেই প্রায় মিনিট দশেক পেরিয়ে গেল...
"সায়নীটা কি করছে বাথরুমে?"-একটু বিচলিত বোধ করলেন সুনয়না ...। খেয়াল হল গত দুদিনও ঠিক এই একই সময়ে তার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং দুদিনই সেই সময়ে মেয়েটা বিছানায় ছিলনা। "বাথরুম টাথরুমে গিয়েছে" ভেবে সুনয়না গত দুদিন আবার পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু আজ মনটা যেন কিরকম অস্থির লাগছে...যে মেয়ে বেলা না বাড়লে বিছানা ছাড়তে পারেনা ,সে প্রতিদিন এই ভোর রাতে উঠে কি করে ? শরীরটা খারাপ হয়নি তো ?
  মায়ের মন...একটু এদিক ওদিক হলেই বড় কুডাক ডাকে। সুনয়নার মস্তিষ্ক জুড়ে ধেয়ে আসলো একরাশ দুশ্চিন্তা। বড় কোনো অসুখ হয়নি তো আদরের সন্তানের ? ও কিছু গোপন করছে না তো ?
       চিন্তার গতি সব থেকে তীব্র...।
অসুস্থতার দুশ্চিন্তার সাথে সাথে মনের কোণে উঁকি দিলো আরও নানা ভয়। চারিদিকে যে কত কিছু শোনা যায়...ছেলেমেয়েরা আজকাল অল্প বয়স থেকেই পরিবারের থেকে দূরে থাকে। কতরকম অজানা অচেনা মেলামেশা ওদের। কুসঙ্গে কোনো খারাপ নেশা, কোনো ভুল কাজে জড়িয়ে পরেনি তো ? রাত দুপুরে জেগে কোন্ গোপন কাজ করে ও ? বুকের ভেতরটা হাহাকার করে উঠল সুনয়নার। প্রচন্ড ভয়ে একটা কাঁপুনি টের পেলেন তিনি।

        নাহ,আজ উঠে দেখতেই হবে কি ব্যাপার। মেয়ে বিপদে পড়লে হাল তো মাকেই ধরতে হবে...। দুরু দুরু বুকে ধীরে বিছানা ছাড়লেন সুনয়না। পা টিপে টিপে এগিয়ে গেলেন বাথরুমের দিকে...।
   এই ফ্ল্যাটটাতে চারজনের জন্য একটাই বাথরুম। ভেতরে সায়নী। দরজাটা আধভেজানো, ভাগ্যিস ভেতর থেকে বন্ধ করেনি। আলতো হাতে দরজাটা ঠেলা দিলেন সুনয়না...
      সুনয়না হতভম্ব...বাকরুদ্ধ ...

     বড্ড ঠান্ডা পড়েছে দিল্লীতে। তাপমাত্রা পাঁচ ছয় ডিগ্রী সেলসিয়াসে ঘোরাফেরা করছে। হাত পা যেন জমে যাচ্ছে। কিন্তু সায়নী বোঝে-তার মা সব কিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারলেও বাথরুমের ব্যাপারে বড্ড পিটপিটে। পাবলিক টয়লেট তো দূরের কথা কিছুতেই অন্য কারুর সঙ্গে বাথরুম শেয়ার করতে পারেনা মা। অনেক চেষ্টা করেও এই অভ্যাসটা পাল্টাতে পারেন না সুনয়না। ও আরও জানে ভোর পাঁচটায় ঘুম থেকে উঠেই একেবারে ঝকঝকে বাথরুমে স্নান সেরে ফেলাটাই মায়ের একমাত্র বিলাসিতা। সায়নীদের চারবন্ধুর ব্যবহার করা বাথরুমে মা'র একটু অসুবিধা হবেই। এছাড়াও সারাদিনে আরও  কত বন্ধুদের আনাগোনা তো চলছেই । সকলকে আদর করে রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা তো মা করেই চলেছে ...।
   কিন্তু ওই কমন বাথরুমের ব্যাপারটা ...। যদিও সায়নী এটাও জানে যে মা মুখ ফুটে কিছুতেই কোনও অসুবিধার কথা কোনোদিন বলবে না, সায়নীকেও কিছু করতেই দেবে না...মা'টা যে ওইরকমই। কিন্তু মাত্র কয়েকদিনের জন্য কাছে থাকতে আসা মাকে সায়নীরও যে  একটু সেবা করতে ইচ্ছে করে।
     আদরের মা কে এই সামান্য আরামটুকু দেওয়ার জন্যই একেবারে নিঃশব্দে চুপিসারে ভোররাতে ঘুম থেকে উঠে পড়ছে সায়নী। ফিনাইল সাবান দিয়ে গোটা বাথরুম ধুয়ে মুছে রাখছে ও মায়ের জন্য । গত তিনদিন ধরে এটাই করছে...
      দৃশ্যটি দেখে একেবারে বাকরুদ্ধ সুনয়না। একটাও শব্দ বেরোলো না মুখ থেকে..."মেয়েটা কবে কখন এত বড় হয়ে গেল?" দিল্লীর প্রবল ঠান্ডায় তার চোখে শ্রাবণধারা ...তবুও তিনি মজা করে বললেন-"বাবু ,আমিও তো এখানে তোদের মতো হোস্টেল লাইফ এনজয় করতে এসেছি...একদম তোদের মত তোদের সঙ্গে কলেজ জীবন...কেন তুই এইসব ..."
    মাকে কথা শেষ করতে না দিয়ে, মায়ের মুখটা বুকের মধ্যে টেনে নিয়ে সায়নী তার এযুগের ভাষায় বলে উঠল-" কাম অন মাম্মা,আই নো ইউ ভেরি ওয়েল বিকজ আই ওয়াজ ইনসাইড ইউ ফর নাইন মান্থস্...নটি গার্ল এনজয় দিস বাথরুম অ্যান্ড এনজয় ইয়োর হোস্টেল লাইফ অ