জ্বলদর্চি মে সংখ্যা( এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ)
আলোচনায় -- তাপসকুমার দত্ত
সদ্য প্রকাশিত হলো এক অভাবনীয় বিষয় নিয়ে জ্বলদর্চি "মে" মাসের সংখ্যা "এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ "। সেই সঙ্গে জ্বলদর্চি নিজেকে নতুন রূপে মেলে ধরলো…
জ্বলদর্চি মে সংখ্যা( এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ)
আলোচনায় -- তাপসকুমার দত্ত
সদ্য প্রকাশিত হলো এক অভাবনীয় বিষয় নিয়ে জ্বলদর্চি "মে" মাসের সংখ্যা "এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ "। সেই সঙ্গে জ্বলদর্চি নিজেকে নতুন রূপে মেলে ধরলো, অন লাইন ই ম্যাগাজিন রূপে, সাথে পি ডি এফ । যেন এক নতুন যুগের পরিবর্তনের সন্ধিক্ষণ । বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে জ্বলদর্চি পত্রিকা বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে ইতিমধ্যে । বর্তমান অস্থির সময়ের বড় প্রাসঙ্গিকতা অসাধারণ প্রচ্ছদ ও অলংকরণের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন সোমা ভট্টাচার্য। সেই সঙ্গে এই সংখ্যায় বেশ কিছু খ্যাতিমান প্রাবন্ধিক, কবি,সাহিত্যিক এই পত্রিকার প্রাণ প্রস্ফুটিত করেছেন তাঁদের কলমে ফুটে উঠেছে "এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ" নিয়ে নানা অজানা তথ্য,গল্প ও এই সময়ের আশঙ্কার কথা।
প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও সাহিত্যিক অমিত্রসূদন ভট্টাচার্যের নিবন্ধটি আমাদের বিশেষ ভাবে ঋদ্ধ করে। তাঁর কথায় "রবীন্দ্রনাথ একান্ত ভাবে দুর্লভ এবং পৃথিবীর ইতিহাসে তিনি এক আশ্চর্য আবির্ভাব"। বর্তমান সময়ের চলছে মৃত্যুমিছিল। নতুন প্রজন্মের কাছে মন্দির,মসজিদ, গীর্জা,জোতিষ অর্থহীন মিথ্যা।
প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক ও রবীন্দ্র গবেষক অনুত্তম ভট্টাচার্যের শঙ্কা মানুষের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা প্রতিকূল পরিবেশের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত। "মাঝে মাঝে মনে হয় সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি এই বুঝি যায়” যেখানে রবীন্দ্রনাথই আমাদের সাহস জোগান। তাঁর কথায় অব্যক্ত যন্ত্রণা ফুটে উঠেছে “কোন অদৃশ্য যাদুমন্ত্র বলে ‘তীষ্ঠ’ উচ্চারণ করে সব কিছু অচল করে দিতে চাইছে"যা আমাদের মুগ্ধ করে।
অন্য দিকে ‘শোক তাপ গেল দূরে ’তে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক শংকর চক্রবর্তী তার সুন্দর নিবন্ধে বন্দিজীবনের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন। সেখানে যেমন মধুর স্মৃতির রোমন্থন করেছেন,তেমনি দিনের শেষে তাকিয়ে থেকেছেন নিজেদের আবাসন শেষের কবিতার দিকে।
আরেক প্রখ্যাত প্রাবন্ধিক অচিন্ত মারিক মজার সুরে বলেছেন “মৃত্যুর ব্রাহ্মমুহূর্তে যে রোগরই প্রকটতা ধরা পড়ুক না কেন, তার নাম আর যাই হোক রবীন্দ্র রোগ হবে না”। তিনি বর্তমান সময়কে তুলনা করেছেন ডুবন্ত টাইটানিকের সঙ্গে। আক্ষেপের সঙ্গে বলেছেন “আমরা এখন অপেক্ষায় আছি— অপেক্ষায় ঘুমোচ্ছি,অপেক্ষায় ভাবছি,আর ও কতদিন অপেক্ষা" যা ঋদ্ধ করেছে আমাদের।
প্রাবন্ধিক সুদর্শন নন্দী বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে, রবীন্দ্রনাথকেই নিজের মনের সাথে টিউনড করে এগিয়ে চলার মত ব্যক্ত করেছেন। যা আমাদের পথ দেখায়। আবার কবি রাখহরি পালের কথায়—চেতনার ওলট পালট ঘটিয়ে সভ্যতা পুনর্জন্ম নিতে চলেছে। এখানে রবীন্দ্রনাথ আমাদের আত্মার আত্মীয় রূপে প্রতিভাত।
কবি আশিস মিশ্র আবার আশার কথা শুনিয়েছেন।
"ওরে বিহঙ্গ, এখনি তোমার ডানা বন্ধ করো না।" "পৃথিবীর বিপন্নতার কত টুকুই বা জানি"এই সময়ে ডুবন্ত মানুষের কাছে রবীন্দ্রনাথই প্রেরণা।
অন্য দিকে কবি সুকান্ত সিংহের আলোচনায়– "শুধুই বেঁচেবর্তে থাকা নয়,চৈতন্যের ঐশ্বর্য চিনতে পারাও যে জরুরি" যা শুধু আমাদের পথ ও পাথেয়।এই উপলব্ধি রবীন্দ্রনাথ ই শিখিয়েছেন। যা আমাদের ঋদ্ধ করেছে।
সন্দীপ দত্তের সুন্দর নিবন্ধে প্রতিভাত হয়েছে,রবীন্দ্রনাথ আমার কাছে রোদ্দুর সম। রোদ্দুরের ওম মাখতে মাখতে, মেঘ নামাচ্ছে আঁধার।
এছাড়া ও বেশ কিছু কবি ও প্রাবন্ধিকের লেখা নিবন্ধ গুলিও বেশ মনোমুগ্ধকর যা পাঠকে ভরিয়ে তুলবে আশা করাই যায়। তাঁদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য তুলসীদাস মাইতি,আশিস দন্ডপাঠ,নীলোৎপল জানা, প্রতাপ সিংহ, মঙ্গল প্রসাদ মাইতি,সঞ্জীব ভট্টাচার্য, কেশব মেট্যা,অনুপ মাহাত,রামকৃষ্ণ মহাপাত্র,বিশ্বজিৎ সাহু,অরুণ পাঠক,রাকেশ সিংহ দেব প্রমুখ।
জ্বলদর্চির পি ডি এফ প্রকল্পটি সুন্দর সাজিয়ছেন গবেষক নরেন হালদার। সব মিলিয়, 'এই সময় ও রবীন্দ্রনাথ' পাঠকের নজর কাড়বে আশা করাই যায়।
----------