Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

লকডাউন কিস্যা -- ত্রাণ --- প্রলয় বিশ্বাস

লকডাউন কিস্যা  --
             ত্রাণ
-------------------------
প্রলয় বিশ্বাস



--হ্যালো
--yes, জগৎ বল্লভপুর police station বলছি।
--নমস্কার স্যার, আমি আমাদের 'পাশে আছি' সংস্থার পক্ষ থেকে চিন্টু কথা বলছি।
--হ্যাঁ, বলুন।
--বলছি, সামনে…


লকডাউন কিস্যা  --
             ত্রাণ
-------------------------
প্রলয় বিশ্বাস 



--হ্যালো
--yes, জগৎ বল্লভপুর police station বলছি।
--নমস্কার স্যার, আমি আমাদের 'পাশে আছি' সংস্থার পক্ষ থেকে চিন্টু কথা বলছি।
--হ্যাঁ, বলুন।
--বলছি, সামনের রোববার আমরা আমাদের এলাকায় কিছু ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে চাইছি।সে জন্য আপনার একটা পারমিশন....

--বেশ তো, তা কোন কোন এলাকায় যেতে চাইছেন বলুন।
--স্যার, ওই অঘোর চক, জাগ্রত পল্লী, নতুন পাড়া, দিলদরিয়া চক.. এই সব এলাকার পাশাপাশি আর কি।
--বেশ বেশ, তা কি কি থাকছে আপনাদের ত্রাণ সামগ্রীতে?
--স্যার, মদ আর পিঁয়াজি।
-- হোয়াট !! মদ-পিঁয়াজি !! ত্রাণ দেবেন মদ-পিঁয়াজি!! আপনি কি আমার সঙ্গে সকাল বেলা মস্করা জুড়লেন?
--না স্যার, শুনুন না। বলছি কি এমনি তে তো চাল ডাল আলু গম এসব হাবি জাবি সরকার থেকে দিচ্ছেই। তেল নুন সাবান মশলা এসবও বিভিন্ন সংগঠন থেকে দিয়েই চলেছে।কিন্তু স্যার, ভেবে দেখুন, যারা মদ খায়, যারা এই একটি মাত্র জিনিসের উপর ভরসা করে জীবনের সব দুঃখ যন্ত্রণা ভুলে থাকে -- কষ্ট হচ্ছে, ভীষণ কষ্ট... কান্না পাচ্ছে.. বুকটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে,--- তবু সেখান থেকে তাদের রেহাই নেই, কেননা মদ দোকান খোলা নেই। এই কদিন তারা কি ভয়ংকর যন্ত্রনাকে দিনের পর দিন বয়ে বেড়িয়েছে,একবার ভাবুন। দেশের সরকার কে ধন্যবাদ, তারা এই সব মানুষের দুঃখ লাঘবের ব্যবস্থা করেছে।কিন্তু স্যার, এক একটি বোতলের যা দাম করেছে, তাতে গরীব মাতালরা বোধহয় না খেয়েই মরবে।সেই জন্য....
-- এই চুপ, একেবারে চুপ।এতক্ষণ ভদ্দর লোক মনে হচ্ছিল।এখন তো দেখছি সকাল বেলায় গিলে নিয়েছেন।
--স্যার, স্যার, pleaae স্যার, লাইন টা কাটবেন না,আমার কথাটা শুনুন।
--বলুন, আমার কাজ আছে।
--আসলে স্যার, আমরা একটা নতুন কিছু করতে চাই, মানে যেটা এর আগে কেউ করেনি।
-- তা বলে ত্রাণ হিসেবে মদ পিঁয়াজি। বাপের জন্মে কেউ শুনেছে ! আপনাদের মাথায় এসব এলো কি করে?
-- কেন স্যার, মদ খাওয়া এবং খাওয়ানো কি বেআইনি? সরকার নিজেই যখন...
-- আরে থামুন। ও সব জানিনা, এরকম ত্রাণ দেবার পারমিশন আমি দিতে পারবো না।
-- কেন স্যার, চাল আলু এসব দেয়া যায়, মদ নয় কেন?
-- কারণ মদ essential নয়।
-- তাহলে স্যার, এত মদের দোকান খোলা হলো কেন? শুনেছি শুধুমাত্র essential দ্রব্যের দোকানই নাকি খোলার কথা।
-- আরে, এতো আচ্ছা মুশকিলে পড়া গেল....
-- না স্যার, মুশকিল কিছু নেই। আমরা স্যার social distance মেনে, মুখে মাস্ক পরে, হাতে sanitizer মেখে এবং মাখিয়েই মদ- পিঁয়াজি দেব।
-- sanitizer হাতে মেখে মদ বিতরণ !! বাপের জন্মে শুনিনি।শুনুন, আপনি যাই বলুন, পারমিশন আমি দিতে পারব না।
-- তাহলে শুনুন স্যার, সেন্টুদার সঙ্গে আমাদের কথা হয়ে গেছে।স্যার বলেছেন দারুন হবে।উনিই বলেছেন মানুষ কে পরিষেবা দিচ্ছিস যখন কোনো ফাঁক রাখিসনা । পিঁয়াজিটা ওনারই প্রস্তাব। আর তাছাড়া সামনের নির্বাচনে জেলা পরিষদ থেকে আমার টিকিট পাওয়ার কথা।এখন এই বিপদের সময় এরকম একটি সমাজসেবা মূলক কাজে বাধা দিলে... বুজতেই পারছেন সেন্টু স্যারআপনাকে সাল্টে দেবে।
-- আরে শুনুন, শুনুন চিঙ্কুবাবু,...এতো আচ্ছা মুশকিল।...আরে আপনারা একসঙ্গে এত বোতল পাবেন কি করে?..
--সে আপনাকে ভাবতে হবেনা স্যার, আমাদের ছেলেরা গত চারদিন ধরে ভোর থেকে মদের দোকানে লাইন দিয়ে পাঁচশো বোতল collect করেছে।একবার ভেবে দেখুন স্যার, নিজেরা না খেয়ে ওরা দুঃস্থ অসহায় মাতালদের হাতে তুলে দিচ্ছে মদের বোতল.. সঙ্গে পিঁয়াজি।...একবার ভেবে দেখুন স্যার, এক একটি বোতল চারশ-পাঁচশ টাকা দাম।....হৃদয়টা কত বড় একবার ভেবে দেখুন। সোশ্যাল মিডিয়ায় একশ দেড়শ টাকার প্যাকেট দিয়ে কত ছবি... আর আমাদেরএক একটি বোতলের সঙ্গে চারটি করে পিঁয়াজি... ভাবুন স্যার, পাঁচশ জনকে চারটি করে পিঁয়াজি দিতে যা খরচ, প্লাস সাত-আট জনকে ভোর থেকে উঠে পিঁয়াজি তৈরির হ্যাপা... স্যার... স্যার... হ্যালো.. হ্যালো... হ্যা... লো....

(শোনা যায়, পরের নির্বাচনে চিঙ্কু বাবুর বিরোধী প্রার্থী কোনোমতে জামানত ধরে রাখতে পেরেছিলেন)
---------
লেখক - শিক্ষক, গায়ক।