#হনন
#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী
#ছবি_দেখে_গল্প
@copyright protected
---" অনিকেত আর শিপ্রার বিয়েটা অবশেষে হয়েই গেল। খুবই জাকজমক পূর্ণ বিয়ে। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক লোক। আর হবেই বা না কেন ব্যারিস্টার চি…
#হনন
#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী
#ছবি_দেখে_গল্প
@copyright protected
---" অনিকেত আর শিপ্রার বিয়েটা অবশেষে হয়েই গেল। খুবই জাকজমক পূর্ণ বিয়ে। বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজন মিলিয়ে প্রায় হাজার খানেক লোক। আর হবেই বা না কেন ব্যারিস্টার চিত্তরঞ্জন সামন্তর একমাত্র মেয়ের বিয়ে সেখানে জাকজমক হবে না তা ভাবাই তো ভুল।",,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
অফিস ক্যান্টিন।
অফিস শেষের আড্ডা দুই বন্ধুর।
কথাগুলি প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলে কিছু সময় তাকিয়ে থাকলো রঞ্জন নবারুণের দিকে। তার কথাগুলি শোনার পর নবারুণের চোখের দৃষ্টি কেমন যেন অস্বাভাবিক লাগলো সেই মুহূর্তে রঞ্জনের। প্রশ্নটা না করে পারে না রঞ্জন- -" কী রে নবারুণ তোর চোখমুখ এমন অস্বাভাবিক লাগছে কেন ? তুই কী অসুস্থ বোধ করছিস? এতো ভালো খবরটা শুনে তোর ভালো লাগল না ?
তুই তো শিপ্রা কে পছন্দ করিস।
আশা করি ওর ভালোও চাস ।
তাহলে,,,,"
---" না না ঠিক আছে এর চাইতে আনন্দের খবর আর কী হতে পারে আমার জীবনে। তুই চিন্তা করিস না রঞ্জন । আমি পুরোপুরি সুস্থ । আর শিপ্রাকে আমি একা কেন তুই ,রক্তিম সবাই পছন্দ করতিস। কিন্তু আশ্চর্য এটাই শিপ্রা অনিকেতকে ভালোবেসে ফেলল। আসলে অনিকেত ধনী পরিবারের ছেলে। শিপ্রা ও ধনী পরিবারের মেয়ে । আমাদের মতো ভিখারি পরিবারের ছেলেদের মধ্যে কারোকে ও পছন্দ করতে যাবেই বা কেন ? আর সবচাইতে অদ্ভুত ব্যাপার কী জানিস রঞ্জন শিপ্রা বা অনিকেত দুজনেই আমাদের বন্ধু অথচ ওদের বিয়েতে অন্যান্য বন্ধুদের আমন্ত্রণ জানালেও আমাদের জানালো না।
বড় লোকেদের বোঝা বড়ো দায়"।
রঞ্জন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল নবারুণের কথাগুলির শেষে। মনে মনে বলে উঠলো -
----" তুই যেটা আমাকে বলতে পারলি অকপটে আমি তা তোকে বলতে পারলাম না নবারুণ । কারণ তুই বা রক্তিম কতোটা শিপ্রাকে ভালোবাসিস আমার জানা নেই তবে আন্দাজ করতে পারি তোদের থেকে আমি শিপ্রাকে অনেক অনেক বেশী ভালোবাসি। আমি শিপ্রাকে ছাড়া বাঁচাবো না । আর ওকে আমার জীবনে পেয়েই ছাড়বো। আমার জীবন থাকতে শিপ্রার পাশে আমি কারোকে কোনো দিন বাঁচতে দেবো না।"
--' কী রে কী ভাবছিস? " নবারুণের প্রশ্নের উত্তরে স্মিত হাসি হেসে রঞ্জন বলে উঠেছিলো---" আর কী হবে বন্ধু বিয়ে যখন হয়ে গেছে শিপ্রার তখন অন্য কিছু ভেবে কাজ নেই। কষ্ট চেপেই বাঁচতে হবে আমাদের । চল বাড়ি ফেরা যাক।",,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
এরপর কেটে গিয়েছিল দিন পনেরো মতো সময় । ঢাকুরিয়া এলাকায় পুরনো আমলের বাড়ির দক্ষিণ প্রান্তের ঘর লাগোয়া ব্যালকনিতে বসে নবারুণ দৈনিক পত্রিকাতে চোখ বোলাতে গিয়ে রীতিমতো চমকে উঠলো পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় বড় হরফে লেখা খবরটার প্রতি চোখ পড়তেই। ---" স্ত্রীর দেশের বাড়ি মথুরাপুরে মধুচন্দ্রিমাতে গিয়ে অস্বাভাবিক মৃত্যু ব্যবসায়ী অনিকেত সান্যালের। তাঁর স্ত্রী শিপ্রা সান্যালকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। অনুমান করা হচ্ছে অনিকেত সান্যালকে হত্যার পর তাঁর স্ত্রী শিপ্রা সান্যালকে দুষ্কৃতীরা অপহরণ করে নিয়ে গেছে। পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে। ।" বার বার মোটা হরফে লেখা পংক্তিদুটির ওপর চোখ বোলাতে থাকে নবারুণ । মিনিট দশেক সময় কেটে গিয়েছিল হঠাত্ ল্যান্ড ফোনের ক্রিরিং ক্রিরিং শব্দে পত্রিকাটি সেন্টার টেবিলে রেখে উঠে দাঁড়ালো নবারুণ । দ্রুত এগিয়ে গেল ঘরের দিকে। ঘরের পশ্চিম কোণে রাখা ছোট কাঠের নির্মিত টেবিলটার ওপর থেকে ল্যান্ড ফোনের রিসিভারটা কানে দিতেই অপর প্রান্ত থেকে ভেসে এলো রঞ্জনের কন্ঠস্বর।
---" নবারুণ শুনেছিস অনিকেত খুন হয়েছে? আশ্চর্য তার দুঘন্টা আগে রক্তিমও খুন হয়েছে। ওর বডি পাওয়া গেছে ওদের গ্রামের বাড়ির লাগোয়া পুকুরে। তোর জানা আছে কি না জানিনা রক্তিমের জলে খুব ভয় ছিল । খুনি সেটা জানতো তাই হয়তো ওকে জলে ডুবিয়েই হত্যা করেছে আর আরো আশ্চর্যের বিষয় অনিকেতকেও কে যেন জলের মধ্যে গলা টিপে হত্যা করেছে রক্তিমের মতোই। অনিকেত না কী শিপ্রাকে নিয়ে হনিমুনে গিয়েছিল মথুরাপুরে শিপ্রাদের দেশের বাড়িতে। সকাল বেলা নিজেদের বাড়ির বিশালাকার দিঘিতে সাঁতার কাটছিলো অনিকেত। আর সেই সুযোগে দিঘির মধ্যেই অনিকেতকে গলাটিপে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই সঙ্গে শিপ্রাকেও পাওয়া যাচ্ছে না। " পূর্বে নবারুণ সম্পূর্ণটা না জানলেও পরে সবটুকু জেনে বেশ অবাক হয়েছিল। অবাক হয়েছিল রক্তিমের জন্য। রক্তিমকে হত্যা করা হল কেন? দুটো হত্যাই জল কেন্দ্রিক? আশ্চর্য!,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
"---" কী রে নবারুণ কিছু ভাবছিস ?
একবার কী যাবি রক্তিমদের বাড়ি? তাহলে তোর গাড়িটা নিয়ে আয় । আমি রেডি হচ্ছি । "
---" বেশ যাবো। কিন্তু অবাক হচ্ছি ওদের দুজনের মৃত্যুই জল কেন্দ্রিক!!! ",,,,,,,,,,,,,
ফোনের অপর প্রান্ত মৃদু হেসেছিলো মাত্র।,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,
মাস চারেক সময় পার হয়ে গেছে। রঞ্জন আর শিপ্রা হনিমুনে এসেছে । শিপ্রা খুব খুশী । তার প্রকাশ ওর চোখেমুখে। বাবার ইচ্ছেতে বিয়ে করতে হয়েছিল অনিকেতকে। সেই অনিকেত আজ মৃত। সে তার প্রেমিককে পেয়ে গেছে। হ্যাঁ প্রেমিক। আর সে প্রেমিক রঞ্জন ছাড়া আর কেউ নয় । কেউ না জানলেও সে রঞ্জনের তা রঞ্জন আর সে জানতো। কাকপক্ষী ও কোনো দিন টের পায়নি তাদের ভালোবাসার। বাবার ইচ্ছাকে মর্যাদা দিতে গিয়ে নিছক একটা বিয়ে করেই ফেলেছিল অনিকেতকে শিপ্রা। অবশ্যই তার জন্য রঞ্জন কথা দিয়েছিল---" অনিকেত তোমার জীবনে দুদিনের জন্য আসবে। আমি ওই দুটো দিনই ওকে তোমার পাশে সহ্য করবো তারপর,,,,,
শিপ্রা মনোমোহিনী হাসি হেসে বলেছিল--- "কতো জনকে পৃথিবী থেকে সরাবে আমাকে পাওয়ার জন্য রঞ্জন ? রক্তিম, নবারুণ তারাও তো আমাকে চায়। আমাকে পাওয়ার জন্য ওরাও তো পাগল । ওদেরও কী পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবে?"
---" প্রয়োজন পড়লে তাই।"
বক্রহাসি হেসেছিল রঞ্জন ।
এখন ওদের মিলনের পথের কাঁটা কেউ নেই । যদিও নবারুণ বেঁচে আছে তাও সে জড়বুদ্ধি হয়ে। রক্তিমের বাড়ি যাওয়ার পথে রঞ্জনের ইচ্ছাকৃত অ্যাক্সিডেন্টে ওর মাথায় চোট লাগে আর তারপর পূর্ব স্মৃতি হারিয়ে ফেলে।
রঞ্জনের শরীরে আঘাত নিমিত্ত মাত্র।,,,,,,,,
শিপ্রার ইচ্ছানুসারে ওদের দেশের বাড়ি মথুরাপুরে সুন্দর বাগান ঘেরা পরিবেশ আর তার সঙ্গে দিঘির টলটলে কাঁচের মতো জলে জলকেলি করে কাটাবার জন্য পুনরায় মধুচন্দ্রিমায় এসেছে