দৈনিক সেরা কলম সম্মাননা পর্ব ১০
রহস্য কাহিনী
‘দুল অন্তর্ধান রহস্য’
সুদীপ রায়
২৮.০৬.২০২০
...............
‘তাহলে বৌদি, তোমার ধারণা, হীরের দুলজোড়া চুরিই গেছে।‘ অনির্বাণ ফোনে বলল।
রত্না বলল ‘এখন তো তাই মনে হচ্ছে। সম্ভব অসম্ভব সব জায়…
দৈনিক সেরা কলম সম্মাননা পর্ব ১০
রহস্য কাহিনী
‘দুল অন্তর্ধান রহস্য’
সুদীপ রায়
২৮.০৬.২০২০
...............
‘তাহলে বৌদি, তোমার ধারণা, হীরের দুলজোড়া চুরিই গেছে।‘ অনির্বাণ ফোনে বলল।
রত্না বলল ‘এখন তো তাই মনে হচ্ছে। সম্ভব অসম্ভব সব জায়গায় খুঁজে দেখলাম। আলমারি থেকে সব জামাকাপড়, জিনিসপত্র বার করে খুঁজেছি। দুলজোড়া নেই। এদিকে সন্দেহ করার মত কাউকে দেখছিও না। আলমারির চাবি আমার কাছে থাকে। একমাত্র আমি যখন স্নানে যাই, তখন চাবিটা ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে রাখা থাকে। মিতা এতদিনের বিশ্বাসী কাজের লোক। আজ পর্যন্ত একটা জিনিসও এদিক ওদিক হয় নি। ওকে সন্দেহ করি কী করে ? কিন্তু দুলজোড়া যে খোয়া গেছে সেটাও তো সত্যি।‘
‘বৌদি তোমার আলমারি তো তোমার বেডরুমেই থাকে আর বেডরুমের সঙ্গে এটাচড হলো তোমার বাথ। তাই না ?’
‘হ্যাঁ’
‘একমাত্র কোনো দুঃসাহসীর পক্ষেই তুমি যখন বাথরুমে ছিলে তখন বেডরুমে ঢূকে ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার খুলে আলমারির চাবি বার করে আলমারি খুলে লকার থেকে দুল চুরি করা সম্ভব। মিতাকে আমিও যতখানি দেখেছি তাতে ওকে অতখানি ডেয়ার ডেভিল বলে আমার মনে হয় না।‘
‘তাহলে দুলজোড়া কোথায় ভ্যানিশ হয়ে গেল ? আমি বাড়ির সর্বত্র খুঁজে দেখেছি। কোথাও নেই। এমনকি কিচেন, বাথরুম পর্যন্ত বাদ দিই নি।‘
আপনারা যারা আমার ফোর মাস্কটীয়ারস সিরিজের গল্প গুলো পড়েছেন, তারা জানেন অনির্বাণ সেন হল ফোর মাস্কেটিয়ার্সের অন্যতম দুজন শুভো আর পিঙ্কির ছোটকা। রত্না হল শুভো, পিঙ্কির মা। শুভো, পিঙ্কির বাবা অফিসের কাজে দুদিন আগে দিল্লী গেছে, ফিরবে আজ দুপুরে। সন্ধ্যেয় শুভোর বাবার এক সিনিয়র কোলিগের মেয়ের বিয়ের রিসেপসন। সেজন্যই শুভোর মা ব্যাঙ্কের লকার থেকে গতকাল সকালে কিছু জুয়েলারি নিয়ে এসেছিল আজ সন্ধ্যের রিসেপসনে পরার জন্য। হীরের একটা সেট এনে রেখেছিল বেডরুমের আলমারির লকারে। স্নান করার আগে রত্না একবার আলমারি খুলে হীরের সেটটা পরে দেখেছিল। তারপরে সেসব গয়না আবার বাক্সে রেখে সেগুলোকে আলমারিতে লকার বন্দী করে দিয়েছিল। কাল সন্ধ্যে বেলায় আলমারির লকার খুলে দেখে বাকি গয়না সবই ঠিকঠাক আছে, শুধু দুলের ছোট বাক্সটা হাঁ করে খোলা, দুল জোড়া নেই। তারপর থেকে প্রায় সারা রাত ধরে এবং আজ ভোরে আলমারিটা বার দুয়েক সমস্ত জিনিসপত্র নামিয়ে সার্চ করেছে রত্না। খাটের তলা, আলমারির ওপর, নিচ্, চারপাশ দেখে নিয়েছে। খুঁজে দেখেছে পুরো বাড়ি্, কিন্তু দুল দুটো বোধ হয় হাওয়ায় উবে গেছে। কোথায় যেতে পারে চিন্তা করে কুলকিনারা না করতে পেরে অবশেষে রত্না দেওর অনি’র মানে অনির্বাণের শরণাপন্ন হয়েছে। স্বামী দিল্লীতে অফিসের কাজে। ওকে আর বিরক্ত করে নি।
‘বৌদি তুমি আমাকে ভিডিও কল করে একবার আলমারির লকারের ভেতরটা দেখাতে পারবে ?’
রত্না হোয়াটসএপে ভিডিও কল করে অনি’কে লকারের ভেতরটা আদ্যোপান্ত দেখাল। পি সি চন্দ্রের তিনটে বাক্স। বড়টার ভেতরে হীরের নেকলেস, মাঝারি সাইজটার ভেতরে একজোড়া চুড় আর আংটি সে সব ঠিকঠাক আছে। ছোট বাক্সটার ভেতরে দুল থাকার কথা ছিল। এখন ভোঁ ভাঁ, দুলজোড়া নেই।‘
‘ঠিক আছে বৌদি, আমার যা দেখার ছিল আমি দেখে নিয়েছি। এবারে আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দাও। কাল ঠিক ক’টার সময়ে তুমি দুলজোড়াকে শেষবারের মত দেখেছিলে ?’
‘দুপুর একটা নাগাদ। গয়নাগুলো একবার পরে ট্রায়াল দিয়ে আবার বাক্সে ভরে আলমারি বন্ধ করে আমি স্নান করতে গেছলাম।‘
‘সেসময়ে ঘরে আর কে কে ছিল ?’
‘মিতা একবার এসেছিল রান্নার ব্যাপারে আমার সঙ্গে কথা বলার জন্য। আমি তখন গয়না গুলোর ট্রায়াল নিচ্ছিলাম বেডরুমের দরজা বন্ধ করে। মিতা আসায় আমি তাড়াতাড়ি করে সব গয়না বাক্সে ঢুকিয়ে দিয়ে আলমারি বন্ধ করে দরজা খুলি। মিতা আমার ঘরে পাঁচ মিনিট ছিল। তারপর ও আবার কিচেনে চলে যায় আর আমিও বাথরুমে ঢুকি। তখন অবশ্য অন্যান্যদিনের মত বেডরুমের দরজা ভেজানো ছিল। মিতা কাজ শেষ করে আড়াইটে নাগাদ বাড়ি চলে যায়।‘
অনি এবারে হঠাৎ হা হা করে হেসে উঠল কেন কে জানে, বলল ‘দাদাকে জানিয়েছ ?’
‘না ওকে আর দিল্লীতে ডিসটারব করি নি।‘
’ভালোই করেছ। তাহলে আজ রাতে রিসেপসনে যাচ্ছ না তুমি বৌদি ?‘
‘একটু অসুবিধেয় তো পড়ে গেলাম। আজ মাসের সেকেন্ড স্যাটারডে, ব্যাঙ্ক বন্ধ। সুতরাং আমার নবরত্নের সেটটাও পাব না। দেখি একবার বুনিকে জিজ্ঞেস করে ওর কাছে কিছু পাওয়া যায় কিনা।‘
‘তা কেন বৌদি তোমার হীরের সেটটা পরেই তুমি দাদার সঙ্গে রিসেপসনে যাবে।‘
‘তা কি করে হবে, ওই সেটটার সঙ্গে আমার অন্য কোনো দুল ম্যাচ করবে না।
‘তুমি তোমার হীরের দুল পরেই যাবে।‘
‘পাবো কোথায় সে দুটো ?
‘দুল জোড়া তোমার কাছেই আছে।‘
‘কী যা তা বলছ তুমি।‘
‘একবার আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে প্লীজ।‘
রত্না বিহ্বল হয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াল।
‘একবার কানের দিকে তাকিয়ে দেখো।‘
রত্না নিজের কানের দিকে তাকিয়ে চমকে উঠল। দুকানে শোভা পাচ্ছে তার ‘হারিয়ে যাওয়া’ হীরের দুলজোড়া। কাল দুপুরে স্নানের আগে যখন গয়নার ট্রায়াল নিচ্ছিল, তখন হঠাৎ করে মিতা চলে আসায় তাড়াহুড়োতে দুল দুটো খূলতে ভুলে গেছল রত্না।
অনি তখন ফোনেই হাসছে
‘বৌদি, আমি কিন্তু প্রথম থেকেই জানতাম ও দুটো কেউ চুরি করে নি। করলে শুধু দুলদুটো নিয়ে যেত না। আরও বড় দাঁও মারত। আমার ঠিকই মনে হয়েছিল যে সম্ভবত তুমি দুল দুটো কানে পরে খুলতে ভুলে গেছলে। সেজন্যই তোমাকে ভিডিও কল করতে বলেছিলাম, সিওর হওয়ার জন্য। ভিডিও কলে তোমার কানে দুল দুটো দেখে নিশ্চিত হলাম আমার ধারণা সঠিক। যাও, এবারে আর একবার সেটটা পরে ফাইনাল ট্রায়াল নিয়ে নাও। আই এম সিওর, ইউ উইল লুক গরজাস দিস ইভনিং।‘