Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অপু দুর্গার সাহিত্য পত্রিকা সাপ্তাহিক লেখনী সম্মাননা

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব -১৮
বিভাগ -অনুগল্প
তারিখ -২৪|৭|২০



পোট্রের্ট
সাইদীপা বসু

অকৃতদার অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক শৈলেন ভাদুড়ি । যৌবন থেকেই পুরোনো আসবাবের প্রতি তাঁর দারুণ শখ । বলতে গেলে এই কারণেই তাঁর জীবনটা মরুভূমি রয়ে গেল ।


সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব -১৮
বিভাগ -অনুগল্প
তারিখ -২৪|৭|২০



পোট্রের্ট
সাইদীপা বসু

অকৃতদার অবসরপ্রাপ্ত গ্রন্থাগারিক শৈলেন ভাদুড়ি । যৌবন থেকেই পুরোনো আসবাবের প্রতি তাঁর দারুণ শখ । বলতে গেলে এই কারণেই তাঁর জীবনটা মরুভূমি রয়ে গেল ।
  প্রায় সত্তর ছুঁইছুঁই, তবু শরীর যথেষ্ট শক্তপোক্ত । রান্না-বাজার-দোকান সবই একা হাতে করেন । যদিও সেগুলো নামেমাত্র ।সারাদিন সেইসব পুরোনো টেবিল, ফুলদানি, ফোটোফ্রেম, পেপার ওয়েট, রেডিওর বাক্স, গ্রামোফোন, ধূপদানী, প্রদীপ, কলম, ওয়াল পিস, গেলাস .....আরো কত কি! ইত্যাদির গায়ে হাত বুলিয়ে, ঝেড়ে মুছেই চলেন । সেগুলো নাকি তার সাথে ভাব বিনিময়ও করে । আজ তাঁর বাড়িরসামনে একটা গাড়িতে তেমনই সব পুরোনো আসবাব এলো । নিজে তদারকি করে সব নামাচ্ছেন ।একটা সেগুন কাঠের ফ্রেমের আয়না নামাতে গিয়েই অঘটন ঘটে গেল । বেলজিয়াম কাঁচটাতো গেলই, কিন্তু ওটা  কি?
একটা পুরনো লালচে হয়ে যাওয়া ছবি,পোট্রের্ট নারীর ।অদ্ভুত মায়াবী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । শৈলেনবাবু কাঁচের শোক ভুলে স্থির দৃষ্টিতে ছবিটির দিকে চেয়ে আছেন।দুপুরে খেতে বসে বারবার অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছেন । মনের মধ্যে ছবিটা দোলা দিচ্ছে ।
   সন্ধেবেলা ড্রইংরুমের জিনিসগুলোতে অভ্যাস মতো হাত বুলোচ্ছেন , চোখ চলে গেল কাঠের ফ্রেমে আটকানো ছবিটার দিকে ।কী অপরূপ মোহময়ী , শৈলেনবাবু মন্ত্রমুগ্ধের মতো কাছে এগিয়ে গেলেন, হঠাৎই ঘরের আলোটা নিভে গেল ।শৈলেনবাবু অভ্যাসমতো পকেট থেকে লাইটারটা বের করে জ্বালাতেই চমকে উঠলেন, সামনেই সেই ছবি, চোখ দুটো যেন জ্বলজ্বল করছে জীবন্ত মানুষের মতো।ঠোঁটের কোণে হাসিটাও আরো মায়াবী । যথেষ্ট মনের জোর, নিজেকে বোঝালেন "দূর আলো নেই, তাই এইসব দেখছি ।"
    খানিকবাদে কারেন্ট এসে গেল ।শৈলেনবাবু নিজের কাজ সেরে রাতের খাওয়াদাওয়া করে বেডরুমে শুয়ে পড়লেন ।
     প্রায় মাঝরাত্তির কিসের যেন একটা ফিসফিসানি শব্দে শৈলেনবাবু বেডরুম থেকে বেরিয়ে ড্রইংরুমে পা দিয়েছেন, সুইচবোর্ডটা ঘরের ভেতরের দিকে ।অভ্যাসমতো হাতে টর্চ, টর্চের আলোটা ঘরের মধ্যে পড়তেই চোখ চলে গেল সেই পোট্রের্টে ।কী জীবন্ত এক নারী, শৈলেনবাবু নিজের অজান্তেই এগিয়ে গেলেন ছবিটার কাছে। ঠোঁট নড়ছে , কিছু বলছে শব্দটাও আসছে পোট্রের্টের মুখ থেকে । শৈলেনবাবু এগিয়ে গেলেন কাছে, আরো কাছে ........
   
      সকাল সাতটা কাজের মাসী হাঁকডাক করে, বেশ কয়েকবার বেল বাজিয়ে, শেষমেষ ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে ঘরে ঢুকে অচৈতন্য শৈলেনবাবুকে দেখতে পায় ড্রইংরুমের মেঝেতে, বুকের ওপর কাত হয়ে পড়ে আছে পোট্রের্টটি।