Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

অপু দুর্গার সাহিত্য পত্রিকা সাপ্তাহিক লেখনী সম্মাননা

সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব -১৮
বিষয়- অণুগল্প
শিরোনাম - শূন্যতা
কলমে- প্রদীপ সেন
তারিখ- ২১/০৭/২০

    ঘরটা কেমন শূন্য-শূন্য লাগছে। অথচ এমন কোনো অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। ওরা চলে গেছে। অজয় আর সর্বাণীর রক্ত ছোটো গোলাপির শরীরে নেই। সে এ…


সাপ্তাহিক প্রতিযোগিতা পর্ব -১৮
বিষয়- অণুগল্প
শিরোনাম - শূন্যতা
কলমে- প্রদীপ সেন
তারিখ- ২১/০৭/২০

    ঘরটা কেমন শূন্য-শূন্য লাগছে। অথচ এমন কোনো অস্বাভাবিক কিছু ঘটেনি। ওরা চলে গেছে। অজয় আর সর্বাণীর রক্ত ছোটো গোলাপির শরীরে নেই। সে এতটুকু ছিল যেদিন মায়ের হাত ধরে এ বাড়িতে ভিক্ষে করতে এসেছিল। চৈত্রের রোদ্দুরে ঘেমে-নেয়ে মায়েঝিয়ে অজয়ের উঠোনে এসে দাঁড়ায়। দুইডা ভিক্ষা দিবেন নি গো, মা।
 সর্বাণী সবেমাত্র রান্নাবান্না সেরে হেঁসেলের দরজায় শেকলটা লাগিয়ে বড়ো ঘরে ঢুকেছে। দরজার বাইরে উঁকি দিয়ে দেখে বছর চল্লিশ-পঞ্চাশের এক বিধবার সাথে বছর পাঁচ-ছয়ের একটা মেয়ে। ভিখিরির চোখে বশ্য-বশ্য ভাব থাকাই স্বাভাবিক। মানুষের কৃপার দানে ওদের ঝোলা ভরতে হয়।
 কৃপাপ্রার্থীর চাউনি ও কন্ঠস্বর নিয়ে ভিখিরিণী বলে, মা, এক গেলাস জল দিবেন? গোলাপির বড্ড জলতৃষ্ণা পাইছে।
 আহা রে! বাড়ি বাড়ি হেঁটে হেঁটে এই চৈতের খরায় এতটুকু মেয়েটা হাঁপিয়ে উঠেছে বোধয়। এই প্রায় -দুপুরে মেয়েটাকে খালি জল খাওয়াবে? নিশ্চয় ক্ষিদে পেয়েছে।
  সর্বাণী বলে, তোমরা বারান্দায় উঠে এসে ওখানটায় বেঞ্চের উপর বসো। আমি আসছি।
ইতস্তত করে ওরা দুজনে বারান্দায় এসে বসলো। অজয় রিটায়ার্ড শিক্ষক। পুকুরে স্নান করে উঠোনে পা রাখতেই মা-মেয়েকে দেখে কয়েকবার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ফেললো। ওদের চোখেমুখে কেমন অসহায় অপ্রস্তুত ভাব। জগতে হাভাতেদের বড্ড জ্বালা।
   ইতিমধ্যে সর্বাণী দুটো বাটিতে দই-চিড়ে নিয়ে হাজির। বলে, এগুলো খাও, আমি ঠান্ডা জল এনে দিচ্ছি। অজয় ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। ওদের আর্ধেক খাওয়াও হয়নি হঠাৎ শোঁ-শোঁ করে কালবৈশাখীর তান্ডব। ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমক আর কান-ফাটা বজ্রপাত। সর্বাণী ছুটে এসে বলে, ঝড় উঠেছে। খোলা বারান্দায় থেকো না। ঘরে এসো বলতে বলতে গোলাপিকে একহাতে ধরে ওর মাকে বলল, বাটিদুটো নিয়ে আমার পিছুপিছু এসো।
 কাছেই প্রকান্ড একটা বাজ পড়লো। বিদ্যুৎ চলে গেলো। মেয়েটি প্রচন্ড ভয় পেয়ে দু'হাতে সর্বাণীর কোমড় জড়িয়ে ধরলো। নিঃসন্তান সর্বাণীর ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠলো। কী পরম সুখস্পর্শ! সম্পদ থেকেও সে যেন ভিখিরিণীর চেয়েও ভিখিরি। ভয় নেই মা, আমি তো আছি। বলে ওকে কোলে তুলে খাটের উপর বসলো। ঘনঘন বাজ পড়ছিল। মেয়েটি সর্বাণীর গলা দুহাতে জড়িয়ে ধরে কাঁপছিল।
  সেদিন ঝড় থেমে গেলে ওরা যখন চলে যাচ্ছিল, সর্বাণীর ভেতরের ঝড় তখনও সমানে বইছিল।
(শব্দ সংখ্যা -২৯৮)