Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

||খেজুরে আলাপ||

— ও দাদা! ওরকম ব্যাজার মুখে বসে আছো কেন গো?
— কী করব বলো ভাই? আজ কতদিন হলে পেটে খাবারের একটা দানাও পড়েনি। বাইরে মৃত্যু ভয় আর ভিতরে অতৃপ্তি। কাঁহাতক সহ্য হয় বলো দেখি।
— কিন্তু তাতে কি? খিদে তো আমাদের মিটছে।
— আরে …


||খেজুরে আলাপ||

— ও দাদা! ওরকম ব্যাজার মুখে বসে আছো কেন গো?
— কী করব বলো ভাই? আজ কতদিন হলে পেটে খাবারের একটা দানাও পড়েনি। বাইরে মৃত্যু ভয় আর ভিতরে অতৃপ্তি। কাঁহাতক সহ্য হয় বলো দেখি।
— কিন্তু তাতে কি? খিদে তো আমাদের মিটছে।
— আরে বাপু কথায় আছে ‘ঘ্রাণেন অর্ধেন ভোজনং’। সেখানে এই ‘বটিকা ইন্ডিকা’ বড়ির না আছে স্বাদ না আছে গন্ধ।
— এটা তুমি ঠিকই বলেছ। ‘ফিস পিল’-এও শুধু পেটের জ্বালাই মেটে, মাছ খাওয়ার শান্তি মেলে না।
— সেটাই তো কথা ভাই। খিদে মিটছে ঠিকই, কিন্তু মনেই হচ্ছে না খাচ্ছি বলে।
— আর তার উপরে ওনার মেজাজ! সেটাও তো দিনে দিনে সপ্তমে চড়ছে।
— চড়ছে কি? বলো চড়েই আছে। তবে কী জানো, আজ এতগুলো বছর এ বাড়িতে আছি বাবুর এমন বেহাল অবস্থা আমি আগে কখনো দেখিনি।
— সত্যিই, ওনার ‘মিরাকিউরল’ ফেলে করবে– এই কথা উনি তো দূরে থাক, আমরা কেউও তো ভাবতে পারিনি না।
— তা তো বটেই। ঐরকম একটা সর্বরোগনাশক বড়িও অসুখটাকে সারাতে পারল না! কি, অলক্ষুনে অনুজীব বাবা!
— ঐ ভাইরাসগুলোও বোধহয় এখনও হাঁচতে শেখেনি জানো। না হলে ঐ ‘স্ন্যাফ গানটা’ তাক করা যেত ওদের উপর।(হা হা হা হা)
— অত হেসোনা বাপু। তার আগে বলতো একটু আগে বাবুর কাছে যে ফোনটা এলো , সেটা ঐ ‘update, update' বলে চ্যাঁচানো লোকটার তাই না?
— কে? ও WHO এর লোকটা? হ্যাঁ, তো। ঐ ফোন করেছিল।
— হ্যাঁ, ঐ হু হু। আমি তো মুখ্যু চাকর। বাংলা ছাড়া কিছুই জানিনা। কিন্তু বাবুর কৃপায়  তোমার নিজের ভাষা ছাড়াও বাংলা,  হিন্দি, ইংরেজি সবগুলোতেই তুমি দিব্যি স্বাচ্ছন্দ্য। তা কী কথা হল গো?
— উনি ওদের আশ্বাস দিলেন,  বললেন যে উনি result মানে ফলের খুব কাছাকাছি আছেন। আর একটা কি দুটো ধাপ বেরোলেই পাওয়া যাবে ওষুধ ।তবে তার জন্য আর একটু প্রতীক্ষা।
— ও আচ্ছা। সেদিন বাবু সন্ডার্স সাহেবকেও এগুলোই বলছিলেন তার মানে। আচ্ছা, সেদিন বাবুর মুখে শুনলাম, তিনি নাকি দুরকমের ওষুধ তৈরির চেষ্টা করছেন। কি বেশ! হ্যাঁ,  মনে পড়েছে। ‘live attenuated’ আর ‘heat killed’ ওষুধ। তা ভাই সেগুলো কি গো?
— ওগুলো ভ্যাকসিন মানে ওষুধের প্রকারভেদ। একটা একবার দিলেই দীর্ঘমেয়াদি ফল, তবে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ঘটতে পারে। অন্যটায় সেই আশঙ্কা কম, তবে তা স্বল্পমেয়াদি; এগুলোর জন্য কিছুদিন ছাড়া ছাড়া আবার বুস্টার ডোজ নিতে হবে।
— ও হরি। এসব বড়ো জটিল ব্যাপার ভাই। আমার বোঝার সাধ্য নেই। তবে কেন জানি না আজ আমার মনটা বড়ো মাছ মাছ করছে গো।
— আহা! কী নাম নিলে দাদা।
“আমারও পরাণো যাহা চায়”
মাছ-ই তাই, মাছ-ই তাই গো…
যাইহোক বাজারে যেতে যেও না যেন। আমাদের বাড়ি থেকে বেরোনোর, এমনকি ঘরের জানলা খোলার ও অনুমতি নেই, সেটা খেয়াল আছে তো। এখন ঐ মনের ছবিই ভরসা।
— দিব্যি মাথায় আছে। বেরোলে, আর সাথে অন্য কোনো সংক্রমণ নিয়ে ফিরলে বাবু আর রক্ষে রাখবেন না।

— রক্ষা তোদের এখনও করব না। কাজ নেই না কোনো? আমার গবেষণাগারের দরজায় বসে আবোল তাবোল বকছিস? যা দূর হ এখান থেকে। বেরো শিগগির।

রোগা, বেঁটে উশকোখুশকো চুলের লোকটার ধমকে দাদা আর ভাই তক্ষুনি সেখান থেকে সরে পড়ল।

প্রসঙ্গত বলে রাখি, যে গবেষণাগারের দরজায় এতক্ষণ এই খেজুরে আলাপ চলছিল সেটি ঝাড়খণ্ড প্রদেশের গিরিডিতে অবস্হিত। বেঁটে, রোগা লোকটি নাম, যশ, খ্যাতির লোভমুক্ত বিশ্বখ্যাত গবেষক প্রফেসর টি.কে.শঙ্কু। আলাপী ‘দাদা’ আর ‘ভাই’ যথাক্রমে তাঁরই সর্বক্ষণের সঙ্গী ভৃত্য প্রহ্লাদ ও তাঁর পোষ্য বিড়াল নিউটন।
মিরাকিউরল ফেল করেছে বলেই ঘাবড়াবেন না। ভরসা রাখুন গবেষকের উপর। পৃথিবীর নানা দেশে নিরন্তর হয়ে চলা গবেষণার সাথে প্রতিনিয়ত তিনিও অক্লান্ত ভাবে কাজ করে চলেছেন। খুব শীঘ্রই ওষুধ মিলবে।শুধু আরও একটু ধৈর্য, আরও একটু অপেক্ষা।
#শব্দগ্রাফি

কলমে- দেবাশ্রিতা মজুমদার