Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

*   রাজা রানী *
      ------------------------------
শৈলেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। কোন্নগর  , হুগলি।
------------------------------------------------------------

       ছোট মেয়ে তুলির জন্ম দিতে গিয়ে গঙ্গাধর
বাবুর স্ত্রী প্রাণ হারালেন…


*   রাজা রানী *
      ------------------------------
শৈলেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। কোন্নগর  , হুগলি।
------------------------------------------------------------

       ছোট মেয়ে তুলির জন্ম দিতে গিয়ে গঙ্গাধর
বাবুর স্ত্রী প্রাণ হারালেন। সদ্যোজাত শিশুকে
বাঁচাতে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-পড়শির কথায়
তিনি প্রমিতা দেবীকে বিয়ে করলেন। প্রমিতা
রায় উচ্চশিক্ষিতা আধুনিকা। রঙে-রূপে একেবারে সামনের সারিতে । গঙ্গাধরকে তিনি
চিনতেন সাদাসাপটা মুখচোরা মানুষ হিসাবে। তবে মানুষটার একটা বড়ো দোষ ঘন ঘন রেসের মাঠে যাওয়া , আকণ্ঠ মদ খেয়ে টলতে টলতে বাড়ি ফেরা আর এইভাবে সর্বস্বান্ত হওয়া। এ খবরও প্রমিতা রাখতেন । কিন্তু কেউ বুঝতেন না উচ্চশিক্ষিত এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ম্যানেজার, তদুপরি পৈতৃক বিশাল বিষয় -আশয় থাকা সত্ত্বেও গঙ্গাধর কেন এমন করতেন। প্রমিতার বাড়ির লোক নিশ্চিত ছিলেন, এই বিয়েতে তাঁদের মেয়ে কিছুতেই রাজী হবে না। সে নিজে হাই-স্কুলের শিক্ষিকা আর এই সময়ে তার উপযুক্ত পাত্রদের সঙ্গে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।কোথায় গঙ্গাধর ? একে তো দোজবরে, তায় দু-দুটি সন্তানের দায়িত্ব। কিন্তু বাস্তব বড়ো বিচিত্র! এমন মানুষকেই তার জীবনের চিরসাথী হিসাবে গ্রহণ করে নিলেন প্রমিতা। বিয়ের পর থেকে রোজ স্বামী - স্ত্রীর ঝগড়া বাঁধে। গঙ্গাধরের চালচলন - ঐ রেসের মাঠে যাওয়া, মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা - ঝগড়ার মূল এখানেই। তবু এই নিয়েই চলে ওদের দাম্পত্য জীবন।
        সেদিন রবিবার। স্কুলের ছুটি। প্রমিতা তার
স্কুলের সব স্টাফকে নিমন্ত্রণ করেছে তাদের
রজত বিবাহ-বার্ষিকীতে।একসঙ্গে অনেক বান্ধবীকে পেয়ে মেতে উঠলো প্রমিতা। কিন্তু
রক্ষে হলো না। ধরা পড়ে গেলো সে। এই যে রোজ স্বামী - স্ত্রীর ঝগড়া, গঙ্গাধরের রেসের মাঠে যাওয়া, মাতাল হয়ে বাড়ি ফেরা সব ভূয়ো
মিথ্যে। পরিপাটি করে সাজানো। গঙ্গাধর নিজের পরোপকারী ,নিজের ভালমানুষি সবার কাছে গোপন রাখে। তাই ঐ অভিনয়টা করে। এই বিষয়ে ওকে সম্পূর্ণ সমর্থন করে প্রমিতা। রোজ স্বামী-স্ত্রীর নকল ঝগড়ার পিছনে এই অঙ্ক।" কিন্তু একের পর এক সম্পত্তি খোয়ানো? " বান্ধবীদের প্রশ্নে বিন্দুমাত্র বিচলিত নয় প্রমিতা। " তা নাহলে কত গরীব ঘরের মেয়ের কি করে বিয়ে হয়  ? অনাহার অর্দ্ধাহারে যারা - তাদের পাশে দাঁড়ানো, চিকিৎসার খরচ জোটাতে যারা অক্ষম - তাদের সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া, টাকা - পয়সার অভাবে যাদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায় - তাদের লেখাপড়র পুরো দায়িত্ব নেয়া, এমন বহুবিধ সমাজ-কল্যাণের কাজ, সর্বোপরি গ্রামে একটি অনাথ-আশ্রম ও একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠা । এসব ও করেছে ভিণ্ণ নামে। আর ব্যক্তিগত উদ্যোগে যাদের পাশে দাঁড়ায় তাদের প্রতি তার শর্ত - তার নাম ভুলেও প্রকাশ্যে আনা যাবে না। " "কিন্তু গঙ্গাধরকে তুই এতো তাড়াতাড়ি চিনলি কিভাবে? তাছাড়া তোর নামেও তো অনেক অভিযোগ। তুই হাই-স্কুলের শিক্ষিকা। মোটা বেতন। অথচ একটা টাকাও তুই বাড়িতে দিতিস না। তাছাড়া বাড়ির লোককে অন্ধকারে রেখে সারাদিন বাইরে বাইরে কোথায় কাটাতিস? " -- বান্ধবীদের প্রশ্নবাণ ফালাফালা করে দেয় প্রমিতাকে। কিন্তু আদৌ তা হয় না। বরং চকিত উত্তর তার, " আরে আমিও গঙ্গাধরের তৈরী অনাথ-আশ্রম আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সঙ্গে যুক্ত , স্কুল-শিক্ষিকা হবার সময় থেকেই।এছাড়া বাড়িতে আমার বেতনের টাকা না দেয়া আর বাড়ির বাইরে বাইরে কাটানো ? সে তো ওর মতো জনকল্যাণে ওর পাশে থাকার কারণেই। "