বৃষ্টির রাত আর বাস্তব
নবনীতা সই
27,7,20
সকাল থেকে বৃষ্টি তো ছিলোই, বিকালের পর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো৷
সকালেই মা বলেছিলো, বাবি প্লিজ চল আমার সাথে৷ পাকামো করে আমিই যাই নি৷ আমার জন্য ঠাম্মা ও যেতে পারেনি৷
ভেবেছিলাম সারাদিন বাড়িতে একা …
বৃষ্টির রাত আর বাস্তব
নবনীতা সই
27,7,20
সকাল থেকে বৃষ্টি তো ছিলোই, বিকালের পর যেন আকাশ ভেঙে পড়লো৷
সকালেই মা বলেছিলো, বাবি প্লিজ চল আমার সাথে৷ পাকামো করে আমিই যাই নি৷ আমার জন্য ঠাম্মা ও যেতে পারেনি৷
ভেবেছিলাম সারাদিন বাড়িতে একা থেকে খুব মজা করবো৷ কোন কিটকিট নেই , সারাদিন বিন্দাস ৷
মা যেতেই সোজা বিছানায়৷
উফ টানা ঘুম৷ সকালের খাবার বাদ, তার বদলে দুপুরে জমিয়ে বিরিয়ানি ৷
সকালে মা যাবার আগে বারবার করে বুড়ি মাসির রান্না খেতে বলে গেছে৷ ধুর সে সব কে খাবে৷ আমি তো দুপুরে হোম ডেলিভারি থেকে খাবার অর্ডার করে খেয়ে নিয়েছি৷ যদিও মা বলে গেছে , গেট যেন একদম না খুলি ফ্ল্যাটের৷
ধুর কিছু হয়নি৷
ঠাম্মা কে আজ জোর করে খাইয়ে দিয়েছি বিরিয়ানী৷ জাস্ট অসম ছিলো খাবার টা৷
দুপুরে কত গল্প , আড্ডা ফোনে, তারপর বসে গিয়েছিলাম কবীর সিং দেখতে৷ টের ই পাইনি কখন বিকাল ঘড়িয়ে গেছে ৷
এখন যত সন্ধ্যা হচ্ছে আকাশ কালো হয়ে যাচ্ছে আরও ৷ বাপির ফোন লাগছে না, যদিও বাপি আজ চারদিন হয়েছে , জয়পুর গেছে৷
বুড়ি মাসিও বিকালে তড়িঘড়ি ঘর পরিস্কার করে, রুটি কটা বানিয়ে পালিয়েছে৷ কত করে বললাম বুড়ি মাসি আর একটু বসো , বৃষ্টি বাড়ছে বলেই দৌড়৷ এখন কি করি? মা তো আটকে গেছে দিদার ওখানে৷ জলে নাকি রাস্তা বন্ধ ৷
আর বুড়ি মাসি যাবার পর থেকেই ঠাম্মার শরীর টা খারাপ হচ্ছে ৷
আমি জাস্ট পাগল হয়ে যাবো৷ কারোর ফোন লাগছে না৷ পিসিদের ফোন করে লাভ নেই থাকে সব দুরে৷ পাশের ফ্লাটে কেউ নেই ৷ ওদের আজ সিনেমা যাবার কথা ছিলো৷ ফেরেনি৷ বা বৃষ্টির জন্য আটকে গেছে৷ ডান দিকের ফ্ল্যাটে থাকে বয়স্ক কাপল৷ তাদের বলে লাভ নেই ৷ দুজনেই বৃদ্ধ ৷
নীচের ফ্ল্যাট দুটোতে দরজাই খুললো না ৷
শেষে ফোন করলাম রনিত কে,ফোন বিজি, কাব্য কে বললাম , বলে সে নাকি আউট অফ টাউন ৷ বাধ্য হয়ে সৃজিত কে ফোন করলাম ৷ কলেজে হ্যাংলার মতন আমার পিছনে পরে থাকে ৷ কিছু তো কাজে আসুক৷ বললো চেষ্টা করছে আসার৷
ঠাকুমার খুব যখন শরীর খারাপ লাগছে তখন বাধ্য হয়ে আমিই গেট খুলে বের হলাম৷ আমাদের ফ্লাট বাড়িটা রাস্তার উপরেই৷ নীচের দোকান গুলো আজ বন্ধ৷ রবিবার করে সব বন্ধ থাকে৷
বৃষ্টিতে সব সাদা হয়ে আছে৷ কিছু ভালো দেখা যাচ্ছে না৷ রাস্তায় কোন লোক নেই ৷
দুরের চায়ের দোকানে আলো দেখে আমি সেখানেই গেলাম৷ ঝাপ বন্ধ আধা কিন্ত
চায়ের দোকানদার টিভি দেখছিলো৷
আমি বললাম তাকে , সে দোকান ফেলে কি করে যাবে ৷ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে বললো তুই যা তো বিশু৷
ছেলেটার মুখটা দেখেই ভক্তি হলোনা৷ কি বিশ্রী বিড়ির গন্ধ ৷ কিন্ত চেনা৷ পিছনের কলোনিতে থাকে৷ সেই স্কুল যাবার সময় থেকে এই বিশুকে দেখে আসছি৷ নাম টাও জানতাম না৷ চায়ের দোকানদার বললো, তুমি যাও মা, তুমি তো নির্মল দার মেয়ে , বিশু ডাক্তার নিয়ে যাচ্ছে ৷
আমাদের ..
ফাস্ট ফ্লোর, বায়ের ফ্ল্যাট আমি চিনি৷
ঠাকুমার খুব পেটে ব্যাথা, বমি হচ্ছে ৷ কোন ভালো নার্সিহোমে নেওয়া গেলে ভালো হতো৷ আমার কাছে কার্ড আছে৷
কিছু লাগবে না তুমি যাও আমি দেখছি৷
ফেরার সময় নিজেকে গালি দিতে দিতে আসলাম, কেন বললাম কার্ড আছে?
কি দরকার এদের সাহায্য নেবার ৷
ফ্লাটে ঢুকে দেখলাম ঠাম্মা খুব ক্লান্ত হয়ে শুয়ে পড়েছে৷ পেটে ব্যাথার ওষুধ আর, জলে গুলে ও আর এস আগেই দিয়েছিলাম ৷
আমি চুপ করে ঠাম্মার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম৷ খুব কান্না আসছিলো আমার খুব৷ বোকামি করেছি৷ মায়ের সাথে ঠাম্মা কে নিয়ে যাওয়া উচিত ছিলো৷ কিন্তু আমি কি করে জানবো এত্ত বৃষ্টি হবে? কি করে জানবো রাস্তাই বন্ধ হয়ে যাবে?
জামাকাপড় গুলো ছেড়ে চা করে ঠাম্মার কাছে বসতেই বেল বাজলো৷ বুকের ভিতর ভয় নিয়ে আইহোলে চোখ রেখে দেখলাম বিশু৷ ঠাকুরের নাম করে দরজা খুলতেই একজন বয়স্ক মানুষ কে নিয়ে ঘরে ঢুকলো৷ ডাক্তার তাড়াতাড়ি ঠাকুমার প্রেসার মেপে, মেডিকেল ফাইল চাইলেন ৷ একটা স্যালাইন লাগিয়ে ঘরের লম্বা ল্যাম্পটায় ঝুলিয়ে দিলেন৷ ঠাম্মা কে ওষুধ দিয়ে তিনি চলে গেলেন৷
আমি পড়লাম আরও বিপদে৷ ওষুধ আনবে কে? দেখলাম ছেলেটা ঐ যে বিশু যার নাম নিজেই কাগজ টা হাতে নিলো৷ আমি যেন কিছু বুঝতে পারছিলাম না৷ হঠাৎ বললো টাকা দাও , এত্ত ওষুধ আনার পয়সা নেই আমার কাছে৷ আমি চমকে উঠেই সরি বলে টাকা আনতে মায়ের ঘরে গেলাম৷ টাকা নিয়ে দিতেই চলে গেলো৷
ঠাম্মা ঘুমিয়ে ছিলো৷ কিছুটা মনটা শান্ত হয়েছিলো৷ আমার একদম ঠাম্মা কে বিরিয়ানী খাওয়ানো উচিত হয়নি৷
ছোটো থেকে আমি ঠাম্মার বুকে মানুষ ৷ মনটা হু হু করছিলো৷বাপি , মা অফিস চলে গেলে, ঠাম্মা আগলে রাখতো৷ ঠাম্মার শিরা উঠে যাওয়া হাতটা স্পর্শ করে সেই ছোটোবেলার স্বাদ পেলাম ৷ সেই কোল সেই আদর৷
মা সবসময় ঠাম্মা কে ঘরের খাবার দেয়৷ আমি ভাবতাম মা ভুল করে৷ কিন্তু ঠাম্মা যে বাইরের খাবার সহ্য করতে পারবেনা মাথায় আসেনা৷
ছোটোবেলার চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলাম , হট করে বেল বাজতে ফিরে এলাম বাস্তবে৷ এই সকালবেলা ই চাইছিলাম মা বাপি যদি একমাস বাড়ি না ফিরতো? কি ভালো হতো৷ এই মুহুর্তে মনে হচ্ছে দরজা খুললেই যদি বাপি কে দেখতে পেতাম ৷
দরজা খুলতেই ভিজে সপসপে বিশু ঢুকলো৷ যাবার সময় রেনকোট টা দেবার কথা মনেই নেই ৷ ওষুধ গুলো রেখে , বললো...
বাথরুম ?
বাঁদিকে৷
আমি একটা তোয়ালে দিলাম ৷
আমি ঠাম্মা কে গিয়ে দেখে আসলাম ৷ বিশু সোজা ঠাম্মার ঘরে গিয়ে , স্যালাইনের বোতল টা নাড়তে নাড়তে বললো, যাও একটু চা আনো৷
খুব রাগ হলো , কিন্তু আমারও চা খেতে মন চাইছিলো৷ রাতে আর কিছু খাবার মন নেই ৷
দুজনে চা নিয়ে বসলাম৷ অনেকক্ষণ পর একটু স্বস্তি ৷ ঘরে আলোয় দেখলাম নাহ্ ছেলেটা দেখতে খারাপ না৷এসব ছেলেকে ঘষে মেজে ভালো পোশাক পরিয়ে মুখে ইংলিশ দিয়ে দাও , ব্যাস৷
বিশু চুপ করে চা খেয়ে বললো, চায়ে এত চিনি দিতে নেই ৷
নিজের উপর রাগ হলো আমার, চা করতে পারিনা ভালো৷
স্যালাইন শেষ না হতে বিশু যেতে পারবেনা৷ ডাক্তার বলে গেছে , স্যালাইন শেষ হলে খুলে দিতে৷ বিশু যে এসব পারে আমি ছাই জানিনা৷ পরে কথায় কথায় ডাক্তার বলেছিলেন , বিশু রাত বিরেতে ওনার ভরসা৷ কাজ করে বিমল ডাক্তারের চেম্বারে৷
ঠাম্মা কে ওষুধ দিয়ে আমি মা কে ফোন করলাম ৷ অনেক কষ্টে ফোনে পেলাম৷ কিন্তু কিছু জানালাম না৷ টেনশান করবে আরও ৷ প্রায় বছর খানেক পর মা বাপেরবাড়ি গেল