Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#একটি_কালো_মেয়ের_উপাখ্যান
#শম্পা_শম্পি_চক্রবর্তী
#ছোট গল্প
@copyright protected
অনির্বাণ দা,
     দাদা বলতাম তোমায় । দু মাসের বড়ো ছিলে বলে। জানো এটা তোমায় আমার লেখা হয়তো শেষ চিঠি । আচ্ছা বলতে পারো এটা আমার কত নম্বর চিঠি ? অবশ্য …


#একটি_কালো_মেয়ের_উপাখ্যান
#শম্পা_শম্পি_চক্রবর্তী
#ছোট গল্প
@copyright protected
অনির্বাণ দা,
     দাদা বলতাম তোমায় । দু মাসের বড়ো ছিলে বলে। জানো এটা তোমায় আমার লেখা হয়তো শেষ চিঠি । আচ্ছা বলতে পারো এটা আমার কত নম্বর চিঠি ? অবশ্য সংখ্যাতত্ত্বের বিষয় টিতে তুমি বোধকরি একটু কাঁচাই ছিলে । অনেকটা ফটিক এর মতো । তোমার ফটিক কে মনে পরে ? সেই যে গো গোকুল মাস্টারের ক্লাসের লাস্ট বেঞ্চে বসা ছেলেটা । যে কালো বলেও আমায় ঘৃণা করে তোমার মত কালোমোষ বলে ডাকতো না ।
যে দাঁত উঁচু বলে আমায় মুলোদেঁতো বলে সবার কাছে হ্যানস্তা করতো না । যে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো বোকা বোকা চাউনি মেলে।
আর আমি ....কি বোকা !
নিজের সৌন্দর্য সম্পর্কে না জেনেই তোমায় ভালোবেসে ফেললাম ?
 হাসি পাচ্ছে । খুব খুব হাসি পাচ্ছে অনির্বাণদা কিন্তু হাসতে পারছিনা ।
কেন জানো? দাঁতের মাড়িতে বিষাক্ত ক্যান্সার বাসা বেঁধেছে আমার । উঃ কি কষ্ট । তবু আমি লিখবো। রোজ একটি করে তোমাকে চিঠি।
 আচ্ছা অনির্বাণদা তোমার মনে আছে সেই বৃষ্টি ভেজা রাতের কথা? যেদিন মুষলধারা বৃষ্টিতে তুমি ছাতা আনোনি।এইভেবে বৃষ্টি নাও আসতে পারে ।
কিন্তু বৃষ্টি তো এসেছিল । প্রবল বেগে আকাশ বাতাস বিদীর্ণ করে । আমি অবশ্য ছাতা নিয়ে গিয়েছিলাম । সেই একটি মাত্র ছাতার মধ্যে আমি আর তুমি । তুমি প্রথমটা আমার ছাতার তলায় আসতে চাওনি । আমাকে যে তুমি ঘৃণা করতে। তুমি চেয়েছিলে তিতাসের ছাতার তলায় যেতে । সেটাই তো স্বাভাবিক । তিতাস যে বড়ো সুন্দর । ঠিক যেন পূর্ণিমার চাঁদ আর আমি তার পাশে চাঁদের কলঙ্ক মাত্র । চাঁদকে তো সবাই চায় আর তার গায়ের কালো কালো দাগ গুলো কে ? ,,,,,,,,যাক্ ওসব কথা একটা গোপন প্রেমের তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের কথাই না হয় বলি। তোমার টকটকে ফর্সা সুন্দর হাতটায় ধরা ছিল ছাতার হাতল । আমার  কাঁধ ছুঁয়েছিল তোমার কাঁধকে । তোমার হাত ছুঁয়েছিল আমার হাত কে । কিন্তু সেটাই তো স্বাভাবিক । একই ছাতার তলায় স্পর্শ তো একটু লাগতে পারে । তাতে তোমার কি আসে যায় ? কিন্তু আমার ? জানো তুমি কি জানো ? সেদিন এই কালো মেয়েটার শরীর জুড়ে খেলে গিয়েছিল শিহরণ । উত্তেজনায় এই মেয়েটি ঘুমোতে পারেনি সারাটা রাত । পাগলের মত ছটফট করেছে কালো মেয়েটির অষ্টাদশী শরীরটা শুধু তোমাকে পাওয়ার আশায় । কিন্তু হায়রে নিয়তি মিশকালো দাঁত উঁচু মেয়েটা শুধু স্বপ্ন দেখতে পারে কিন্তু বাস্তব দেখা যে তার মানা। ....,,,,,,
 মনে পরে অনির্বাণদা সেদিনের কথা যেদিন প্রথম মলয় বাবুর ফিজিক্সের ক্লাসে তুমি অসুস্থ হওয়ার ভান করেছিলে যাতে তোমাকে exam টা না দিতে হয় । আমি সেদিন খুব কেঁদে ছিলামগো খুব । তুমি যে সত্যিকারের অসুস্থ হওনি তা এই কালো মেয়েটার বোকা মাথাটায় ঢ়োকেইনি সেদিন।
কিন্তু তিতাস বুঝেছিল । তিতাস যে তোমায় খুব চিনতো আমার থেকে অনেক অনেক বেশি ।
কিন্তু তিতাস আমার থেকে কি তোমায় বেশি ভালোবাসতো ? ওকি তোমার জন্য মায়ের অনেক কষ্টে জমানো লক্ষ্মীর ভাঁড় থেকে পয়সা চুরি করে পচাদার দোকানে আলুর চপ খাওয়াতো ? ও কি তোমার জন্য নিজের টিফিনের পয়সা জমিয়ে তোমার জন্মদিনে পার্কার পেন কিনে দিতে পেরেছিল? যা পেয়ে তুমি খুব খুশি হয়ে একটি কাগজের ওপর কয়েক ছত্র লিখে বলেছিলে "--'তিতাস কে দিবি কালোমোষ তুই যেন পড়ে ফেলিস না । '
আমি সেদিন তোমার কথা রাখতে পারিনি গো অনির্বাণদা লুকিয়ে পড়েছিলাম।
তোমার লেখা তিতাসকে চিঠি ।
শেষ স্তবকটা এখনো মনে আছে এই তেতাল্লিশ উর্ধ্ব সায়াহ্ন বেলায় মৃত্যুর দুয়ারে দাঁড়িয়ে ।
" --'আমি তোকে বড্ড ভালোবাসি তিতাস । কাল মলয় বাবুর ক্লাস শেষে কদম তলার মাঠে দেখা করিস ।" জানো অনির্বাণ দা বুকে তখন জ্বালা ধরে গিয়েছিল । প্রচন্ড সে জ্বালা। কিসের জ্বালা জানো হিংসার জ্বালা । একটা একটা করে চোখ থেকে নেমে এসে ছিল জলের ফোঁটা।  মনে হয়েছিল চিঠিটা ছিঁড়ে কুচি কুচি করে ফেলে দিয়ে নতুন করে একটা চিঠি লিখি যাতে লেখা থাকবে
" --'চিত্রা আমি তোকে খুব ভালোবাসি ।" আর সেটা দেখিয়ে আসি তিতাসকে । ও জ্বলবে । ওর বুকের ভিতর টা জ্বলবে ঠিক আমার যেমন জ্বলছে । আর আমি তা আন্দাজ করে তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করবো ।
তোমরা দুজনেই জানতে না কদম তলার মাঠে তোমার আর তিতাসের গভীর প্রেমের সাক্ষী ছিলাম আমি । তুমি যখন কদম গাছটার আড়ালে তিতাসের সিক্ত গোলাপের পাপড়ির মতো ঠোঁট দুটিতে গভীর চুম্বন দিলে আমি ও তখন অনুভব করে ছিলাম তোমার চুম্বনের আবেশ । আজও সেই আবেশ আমার কালো পোড়া ঠোঁট দুটিতে ছুঁয়ে আছে গো ।,,,,,
কলেজ শেষ হল ইউনিভার্সিটি ও শেষ হল সতীর্থ তো ছিলাম । ছায়ার মত অর্ধাঙ্গিনী ও তো হতে চেয়েছিলাম ।
কিন্তু তা হল কই ?
ফটিক অবশ্য বলেছিল গ্রীষ্মের কোন এক দুপুরে ইউনিভার্সিটির গেটের সামনে-- "তুই অনির্বাণের চিন্তা ছেড়ে দে আমি তো আছি । আমি যে তোকে কত ভালোবাসি চিত্রা তা তুই বুঝিস না " ?
একেই তপ্ত দুপুর ।
বলছে কি বোকা বোকা চাউনির ছেলেটা রাগে দিলাম একটা চড় ওর গালে ।
আর বললাম ---" তুই আর অনির্বাণ দা ? চাঁদে আর বানরে "। অপমান টা সহ্য করতে পারেনি ফটিক । গলায় দড়ি দিয়ে সুইসাইড করার চেষ্টা করেছিল। একটুর জন্য বেঁচে গেলো। ,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,?
 জানো অনির্বানদা যেদিন তুমি চাকরি পেলে সেদিনটা আমি ভুলতে পারিনি আাজও। অ্যাপোয়েন্টমেন্ট লেটারটা হাতে নিয়ে তুমি এসে ছিলে গোকুল মাস্টারের বাড়ি । আমিও যেন কোন এক কাজে গিয়েছিলাম । প্রণাম করে গোকুল মাস্টারের হাতে তুলে দিয়েছিলে বড়সর মিষ্টির বাক্স। আমি সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম । সুখবর শুনে আনন্দে আমার বুকের ভিতরটা তোলপার করে উঠেছিল । মুখে শুধু বলে ছিলাম---- " খুব খুব ভালো খবর অনির্বান দা ।" তুমি শুধু হেসেছিলে তারপর খুব আস্তে ও স্পষ্ট ভাবে আমার কানের কাছে তোমার ঠোঁট এনে বলেছিলে " --'আরো একটা ভালো খবর আছেরে চিত্রা পরে জানাবো ।" পেয়েছিলাম খবর তারই মাস দুয়েক বাদে ।
কার্ডটা গোকুল মাস্টারের বাড়িতেই তুমি রেখে গিয়েছিলে। আমন্ত্রিত দের তালিকায় আমি তখন একটা নামমাত্র । তোমার বিয়ের কার্ড টা লুকিয়ে নিয়ে নিয়েছিলাম নিজের ওরনার অন্তরালে । তারপর ছুটেই একপ্রকার চলে গিয়েছিলাম বাড়িতে । নিজের ঘরের দরজাটা বন্ধ করে অতি সন্তর্পণে তোমার বিয়ের কার্ডটা খুলে ছিলাম ।দেখলাম পাশাপাশি দুটি