Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#অণুগল্প
#তুমি_আছো_তাই
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য

প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে সাবানটা। আমাকে সুস্থ রাখার কারণে অর্ধেকের বেশী জীবন দান করেছে ও। জানি একদিন এভাবেই শেষ‌ও হয়ে যাবে। ওর শেষ কণাটা দিয়েও আমাকে রক্ষা করে যাবে অসংখ‍্য…


#অণুগল্প
#তুমি_আছো_তাই
#অরিন্দম_ভট্টাচার্য

প্রতিদিন একটু একটু করে ক্ষয়ে যাচ্ছে সাবানটা। আমাকে সুস্থ রাখার কারণে অর্ধেকের বেশী জীবন দান করেছে ও। জানি একদিন এভাবেই শেষ‌ও হয়ে যাবে। ওর শেষ কণাটা দিয়েও আমাকে রক্ষা করে যাবে অসংখ‍্য ক্ষুদ্র শত্রুদের হাত থেকে।

কিন্তু আজ পর্যন্ত কি আমি কোনো এক মুহুর্তের জন‍্যও ওকে মন থেকে ভালোবাসতে পেরেছি? পেরেছি কি ওর সারা গায়ে ভালোবাসার পরশ ছড়িয়ে  দিতে? একবারের জন‍্য হলেও ওকে ধন‍্যবাদ জানাতে পেরেছি কি? ওর মসৃণ গালে একটা চুমু খেয়ে বলতে পেরেছি কি -- থ‍্যাঙ্ক ইউ বন্ধু! তোমার‌ই কারণে আমি আজ‌ও এখনো সুস্থ। তোমার‌ই সাহসে আমি এখনো থলে হাতে বাজার যাই, বাইরে বেরোই, রেশনের কার্ড হাতে লাইন দিই, ভিড় বাসে ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরি।

নাকি ওকে আজ পর্যন্ত ভালো করে চেয়েও দেখিনি? যখন‌ই তাকিয়েছি ওর দিকে, তখন‌ই দু'চোখে ভেসে উঠেছে সেই গায়ে কাঁটাওয়ালা গোল বলের মতো ক্ষুদ্র শত্রুদের ছবি!

নাকি সম্পর্কটা শুধুই স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে! নিজের প্রয়োজনের তাগিদেই, সবসময় হাতে তুলে নিয়েছি ওর নরম স্নিগ্ধ মসৃণ দেহটাকে! ওর ইচ্ছা অনিচ্ছার তোয়াক্কা করিনি, যতক্ষণ না পর্যন্ত শান্তি হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সমগ্র শরীরে নির্মমভাবে ঘষে ঘষে ক্ষয় করেছি ওর আয়ু!

আমার সমস্ত অত‍্যাচার মুখ বুজে সহ‍্য করেছে ও। না পারলে খুব বেশী হলে হাত থেকে পিছলে পড়েছে নীচে। তবুও ছাড়িনি। তুলে নিয়েছি হাতে। আরো চেপে ধরে ঘষাঘষি করেছি ওকে। একবারের জন্যও ওর কষ্টের কথা বুঝতে চাইনি। ভেবেছি ওর সৃষ্টিই হয়েছে আমার জন‍্য।

সে তো তার কাজ, তার শেষ কণাটা দিয়েও করে যাবে। কিন্তু একটিবার... একটিবারের জন‍্য‌ও কি আমি পারিনা ওকে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতে? চুমু খেয়ে মন থেকে বলতে পারিনা -- আই লাভ ইউ!
কে বলতে পারে! ওতেই হয়তো ওর ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে। তৃপ্ত হবে সারা দেহমন।

আজ সবার অলক্ষ্যে ঘটে গেল সেই প্রেম নিবেদনের পালা। কেউ জানলো না। শুধু আমি আর সে।
সঙ্গে সঙ্গে দরজায় ঠকঠক আওয়াজ -- কি গো-- ডিউটি কি আজ যাবে না? বাথরুমেই সারা সময়টা কাটিয়ে দিলে খাবে কখন? সেই ভোর বেলা থেকে উঠে রান্না বান্না করাটাই মনে হয় বৃথা হয়ে গেল।

এই রে! বুঝতে পেরেছে মনে হয়। আমি চিৎকার করে বললাম -- এই হয়ে গেছে--, বেরোচ্ছি--।

তাড়াহুড়ো করে স্নান, ড্রেসবেশ সেরে খেতে বসলাম। আমি খাচ্ছি, ও পাশে দাঁড়িয়ে। খেতে খেতে তাকালাম ওর মুখের দিকে। ও আমার মুখের দিকে হাসিমুখে চেয়ে আছে। মনে হলো ওর কানদুটো কিছু একটা শোনার জন্য উদগ্রীব।

দেখতে পেলাম, একটা সুন্দর সাবান নিঃশব্দে ক্ষয়ে চলেছে। আমি আঙুল চাটতে চাটতে একটা ঢেঁকুর তুলে বললাম -- রান্না ফাটাফাটি হয়েছে। খাবারতো নয়, একেবারে অমৃত। এরকম যত্ন করে যদি খাওয়াতে থাকো, তাহলে ইমিউনিটিতো এমন‌তেই বেড়ে যাবে। করোনা কেন, ওর ঠাকুরদাও আমার কিছু করতে পারবে না।

ওর মিষ্টি মুখে একটা তৃপ্তির হাসি। আমি মুচকি হেসে মনে মনে বললাম -- আই লাভ ইউ।(আসলে ঐ কথাটা জোরে উচ্চারণ করলে, আজ ডিউটিটাই মিস হয়ে যাবে)