Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী
#প্রতিশোধ
#ছোট_গল্প
@copyright protected
--" তুমি আমাকে ভালোবাসো সৌম্য? "
---" বাসি অন্তরা বাসি। কেন তোমার বিশ্বাস হয় না? তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো তোমার পছন্দের জায়গায় তোমাকে আবার বেড়াতে নিয়ে …


#শম্পাশম্পি চক্রবর্তী
#প্রতিশোধ
#ছোট_গল্প
@copyright protected
--" তুমি আমাকে ভালোবাসো সৌম্য? "
---" বাসি অন্তরা বাসি। কেন তোমার বিশ্বাস হয় না? তোমাকে ভালোবাসি বলেই তো তোমার পছন্দের জায়গায় তোমাকে আবার বেড়াতে নিয়ে এলাম। যদি না বাসতাম তাহলে কী তোমার ইচ্ছা কে দাম দিতাম? তুমি বৃথাই আমাকে সন্দেহ করে আসছ অন্তরা। " সময় টা গোধূলির কিছু পরে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ পেরিয়ে ওরা দুজন এসে পৌঁছে ছিল পাহাড়ি সমতল থেকে অনেকটা উঁচুতে।,,,,,,
 দূরে কোথাও একটি পাহাড়ি ঝর্ণার শব্দ ভেসে আসতেই অন্তরা বালিকা সুলভ উল্লাসে উল্লসিত হয়েছিল। তারপর সৌম্যকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে মাথা রেখে বলে উঠেছিল--" আমি তোমাকে সন্দেহ করি না সৌম্য। আসলে সেদিন রাতে যখন হঠাত্ করে ঘুম ভেঙে গিয়েছিল পাশে দেখলাম তুমি নেই। উঠে পড়েছিলাম । ভেবেছিলাম তুমি হয়তো ছাদে গেছ। কিন্তু ছাদে গিয়ে দেখেছিলাম সেখানেও তুমি নেই। বেশ অবাক হয়েছিলাম । আবার ঘরে ফিরে আসতে গিয়ে তিথির ঘরে চাপা কন্ঠস্বরের কথোপকথন থমকেছিলাম । দরজায় কান পাততে  শুনেছিলাম তোমার আর তিথির গাঢ় কন্ঠস্বর। মাথার ঠিক রাখতে পারিনি। সজোরে দরজার কপাট দুটো খুলে দিতেই দেখেছিলাম দুটি নারী পুরুষের নগ্ন শরীর একে অপরকে ছুঁয়ে যাচ্ছে । চিনতে অসুবিধা হয়নি সৌম্য তোমাদের দুজনকেই । তুমি আর তিথি, আমার ছোট বোন। তবুও সন্দেহ মনে স্থান দিই নি। কারণ আমি তোমাকে চিনি। তুমি তিথির প্রলোভনের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছ। ওর শারীরিক উন্মাদনা তোমাকে বাধ্য করেছে ওর দিকে এগিয়ে যেতে তাই তুমি বাধ্য হয়েছ। তোমার কোনো দোষ নেই।" ---"থাক না ওসব কথা অন্তরা। তুমি  তিথি কে চিনতে পেরেছ এটাই আমার কাছে পাওয়া । নইলে আজীবন তোমার কাছে দোষের ভাগী হয়ে থাকতাম। এসো বরং এই পাথরটার ওপর বোসো অন্তরা। দেখো পাহাড়ের সূর্য অস্তমিত হয়ে গেছে। লাল আভায় পরিপূর্ণ । কতো সুন্দর। কতো মনোমুগ্ধকর চিত্র । " অন্তরা সৌম্যর হাতের ওপর ভরসা করে উঁচু পাথরটার ওপর বসলো। অনিমেষ দৃষ্টি মেলে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো --
---" তোমার মতো স্বামী পাওয়া যে কোনো মেয়ের কাছেই সৌভাগ্যের সৌম্য। নইলে আমার মতো অর্ধপঙ্গু স্ত্রী যার চলন শক্তি নেই বললেই চলে তাকে নিয়ে এসেছ দার্জিলিং তার ইচ্ছাটুকু পূরণ করার জন্য ! সারা রাস্তা টা তো প্রায় কোলে করেই আনলে। কতো কষ্ট হলো তোমার তবুও তোমার চোখেমুখে কোনো বিরক্তি নেই। সত্যিই আমি খুব ভাগ্যবতী সৌম্য। " অন্তরার দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো সৌম্য র দৃষ্টিপথে । মুহূর্তে চোখদুটো তার নোনা জলে ভরে উঠলো তার। হঠাত্ কিছু বোঝার আগেই কে যেন তাকে প্রচন্ড একটা ধাক্কা মারলো । "আঃ" গড়াতে গড়াতে পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি র  নরম মাংসের নারী শরীরটা অন্তরার যার চলার ক্ষমতা হারিয়ে গেছে তিন বছর আগে অন্তঃসত্ত্বা থাকা কালীন তিন তলার সিঁড়ি থেকে গড়িয়ে পড়ে সেই শরীরটাই পুনরায় পাহাড়ের গায়ে বৃহৎকার পাথরের ওপর আঘাত খেতে খেতে খাদে পড়ে যেতেই মুহূর্তে তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল সৌম্য। ঠোঁটের প্রান্তে ফুটে উঠেছিল তার পরিতৃপ্তির হাসি। না তার আর তিথির মিলনের পথে আর কোনো বাধা রইলো না। ,,,,,,,,,,,,,,,
 দশ মাস পার হয়ে গেছে । স্ত্রী তিথিকে নিয়ে সৌম্য এসেছে দার্জিলিং । দুজনের মনেই আজ নতুন করে নিজেদের কে আবিষ্কারের আনন্দ। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথ ধরে কিশোরীর ন্যায় চপলতায় মত্ত তিথি আজ। সৌম্য কখনো গাল টিপে আদর করছে তো কখনো নির্জন রাস্তা পেলে কাছে টেনে নিয়ে ঠোঁটের চুম্বন এঁকে দিয়ে বলে উঠছে-
----" তিথি আজ রাত্রে  আমি কিন্তু উন্মাদ হতে চাই। কতো দিন পর দার্জিলিং এলাম। তুমি সাথে আর কী চাই । আমাকে তোমার রূপের আগুনে উন্মাদ করে দিও প্লিজ। "
---" সৌম্য চলো না ওই পাথরটার ওপর গিয়ে  বসি। ওখান থেকে সূর্যাস্ত পুরোপুরি দেখা যাবে। তুমি  এসো সৌম্য আমি বরং এগিয়ে যাই।" ,,,,,,,,,,,,,,,
--" এ কী তিথির সাথে কথা বলতে বলতে সে কোন পথে চলে এসেছে? এ তো সেই পথ। সেই পাথরের উঁচু অংশ। যেখানে ছয় ফুট পেটাই চেহারার যুবক পাঁচ ফুট এক ইঞ্চি র শীর্ণকায় অর্ধপঙ্গু  যুবতী টিকে বসিয়ে দিয়ে কথার ছলে ভুলিয়ে দিতে দিতে এক সময় প্রচন্ড একটা ধাক্কা মেরেছিল। যুবতীটি গড়াতে গড়াতে কোথায় হারিয়ে গিয়েছিল। সৌম্য শঙ্কিত হলো। চিৎকার করে থামাবার চেষ্টা করলো তিথি কে। তিথি এগিয়ে চলেছে ক্রমশ । সৌম্যর কন্ঠস্বর তার কানে প্রবেশ করলো না। সৌম্য দ্রুত পা চালালো। হঠাত্ নারীকণ্ঠে আর্ত চিৎকার । সৌম্য সমগ্র জীবনীশক্তি দিয়ে দৌড়বার চেষ্টা করলো।
 না নিশ্চন্ত।
ওই তো তিথি পাথরের উঁচু অংশে বসে সূর্যাস্তের শেষ আলোকরশ্মির দিকে তাকিয়ে। সূর্য অস্তমিত। চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে চন্দ্রালোক। আজ মনে হয় পূর্ণিমা। সৌম্য আলতো করে হাত রাখে তিথির কাঁধে। কোনো এক নিশাচরের করুন আকুতি ভেসে গেল মুহূর্তে বাতাসে।
---"তুমি বসে আছ দেখে স্বস্তি পেলাম। অথচ কিছুক্ষণ আগেই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তিথি।"
---" কেন কী ভেবেছিলে সৌম্য তোমার তিথি কে অন্তরা মেরে ফেলেছে। যেমনটি তুমি অন্তরা কে মেরে ফেলেছিলে তাই না সৌম্য? চমকালো সৌম্য। এ কাকে দেখছে সে? এ যে তিথি নয় ! তবে তিথি !" "  খাদের দিকে তাকালো সৌম্য। তিথির শরীর দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে। বাকরুদ্ধ হয়ে গেল সৌম্যর। নারী কন্ঠস্বরের খিলখিলিয়ে হাসির শব্দ তার মস্তিষ্কে অনুরণনের মতো আঘাত খেতে খেতে বাতাসে মিশে যাচ্ছে । সৌম্য বলে ওঠে--
--" আমাকে তুমি ক্ষমা করো অন্তরা। বিশ্বাস করো আমি,,,," পুনরায় নারী কন্ঠস্বর অনুরূপ হাসি হেসে ওঠে। তারপর শীতল কন্ঠস্বরে বলে ওঠে---" আমি তোমাকে বিশ্বাস করি সৌম্য। ঠিক আগের মতো বিশ্বাস করি। তুমি আমাকে খুব খুব ভালোবাসো।।" একটা বরফ শীতল হাত সারা শরীর ছুঁয়ে যেতে লাগলো সৌম্যর। সৌম্য স্থির নিশ্চল। হঠাত্ প্রচন্ড একটা ধাক্কা।পাথরের ওপর আঘাত খেতে খেতে পাথরের খাঁজে আটকে যায় দেহটা। পরের দিন স্থানীয় বাসিন্দারা দুটো দেহ পাহাড় থেকে উদ্ধার করে একটি নারী একটি পুরুষ ।
#সমাপ্ত