#গল্প
#জিনিয়াস
#গোপা_ব্যানার্জী
একমনে ল্যাপটপে টাইপ করে চলেছে জিনিয়া। ওর রিসার্চ প্রায় শেষের দিকে। এটা যদি সফল হয় তাহলে মানবজাতি একটা বিশাল সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবে। পেট্রল, ডিজেল এর মতো জ্বালানি, যা ক্রমশঃ ফুরিয়ে আসছে তার বিকল্…
#গল্প
#জিনিয়াস
#গোপা_ব্যানার্জী
একমনে ল্যাপটপে টাইপ করে চলেছে জিনিয়া। ওর রিসার্চ প্রায় শেষের দিকে। এটা যদি সফল হয় তাহলে মানবজাতি একটা বিশাল সমস্যার সমাধান পেয়ে যাবে। পেট্রল, ডিজেল এর মতো জ্বালানি, যা ক্রমশঃ ফুরিয়ে আসছে তার বিকল্প হিসেবে হাইড্রোজেনের ব্যবহার কিভাবে করা যায় সেই নিয়ে বহুদিন ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে চলেছেন। জ্বালানি হিসেবে আর সমস্ত কিছুর থেকে লিকুইড হাইড্রোজেন অনেক অনেক ভালো, কারণ প্রথমত এটি ব্যবহার করলে কোনো প্রকার দূষণের সম্ভাবনা প্রায় নেই বললে চলে। দ্বিতীয়ত হাইড্রোজেনের ক্যালোরিফিক ভ্যালু অনেকগুন বেশি সাধারণ জ্বালানি থেকে। মানে প্রতি কিলোগ্রাম ভরে এর উৎপাদিত শক্তির পরিমান অনেক বেশি। কিন্তু এটি এত বেশি সহজদাহ্য পদার্থ যে এটিকে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এই কারণে এর সাথে যদি এমন কিছু মিশিয়ে দেওয়া যায় যা হাইড্রোজেনের সাথে বিক্রিয়া করবেনা কিন্তু তার উপস্থিতিতে হাইড্রোজেনের দহনযোগ্যতা এমন হবে যে সেটি পরিবহন করতে কোনো অসুবিধা হবেনা।
সেই নিয়ে যে কাজ ওর জীবনের ধ্যানজ্ঞান সব... জীবনের চারটে বছর কোথা দিয়ে চলে গেছে সেটা বুঝতে পারেনি। সফল হলে ওর এই যুগান্তকারী আবিষ্কার পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীদের আবিষ্কারের সাথে স্থান পাবে।
কাল সকালে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিজ্ঞানীরা আসবেন এই প্রেসেন্টেশন দেখতে। তার প্রস্তুতি চলছে সব নতুন বিজ্ঞানীদের মধ্যে। এই অল্প বয়েসেই জিনিয়া বিজ্ঞানী মহলে সাড়া ফেলে দিয়েছে কারণ ইতিমধ্যে বিশ্বের বেশ কিছু সমস্যার সমাধান বের করতে সে তার পূববর্তী গবেষণার গাইড ডক্টর স্মিথকে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে। তাই বিজ্ঞানী স্মিথ তাকে ভীষণ স্নেহ করেন।
এখন গভীর রাত। ওর খুব ক্লান্ত লাগছে এবার! কিন্তু শেষ না করেও উপায় নেই। জিনিয়া উঠে কফি বানিয়ে আনলো। হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠতে অবাক হয়ে দেখলো ওর প্রিয় বান্ধবী এষার ফোন। কিছুটা অবাক আর কিছুটা ভয় পেয়ে ও ফোনটা ধরেই বললো...
--- কিরে কি হয়েছে? এত রাতে ফোন করছিস? সব ঠিক আছেতো?
ওপারে এষা হেসে বললো...
--- আমার ঘুম আসছেনা... ভাবলাম তুইও নিশ্চয়ই জেগে। পেপার রেডি?
ওরা একই সাথে গবেষণা করছে। একেতো বিদেশ তারপরে দুজনেই বাঙালী, ফলে ওদের মধ্যে বন্ধুত্বটা একটু বেশিই। দুজনেই গবেষণা আর জ্ঞানের জগতে এতটাই মগ্ন অন্য কোনো ব্যাপারে মাথা ঘামায়না। মনের এবং রুচির এতটা মিল বলে খুব সহজেই একে অপরের প্রিয় বন্ধু হয়ে গেছে। জিনিয়া ওর এই জগৎ নিয়ে বেশ আছে। বহুদিন বিদেশে থাকায় পরিবারের সকলের সাথে প্রায় বিচ্ছিন্ন বলা যায়। দেশেও সকলে জানে ওর ধ্যান জ্ঞান এখন এই গবেষণা। এখানে এষা থাকায় একাকিত্ব বোধটাও কবে যেন চলে গেছে। যেকোনো সুখ অসুখে ওরা একজন অন্যজনের পাশে থাকে। যে বিষয় নিয়ে জিনিয়া গবেষণা করেছে বা যে গতিতে ওর মেধার বিকাশ হয়েছে,এব্যাপারে এষা কিন্তু অনেক পিছিয়ে। ওর গবেষণা এখনো বেশ খানিকটা পিছিয়ে । ওর বিষয়টাও আলাদা। কালকের সেমিনারে ও হয়তো প্রেসেন্টেশন নাও দিতে পারে। একটুর জন্য আটকে আছে একথা জিনিয়া জানে। তবুও এষাকে জিনিয়াই জোর করে নাম নথিভুক্ত করিয়েছে। ওকে ভরসা দিয়ে বলেছে দ্যাখ হয়েও যেতে পারে। আবার কবে এরকম সুযোগ আসবে কেউ বলতে পারেনা। শেষ পর্যন্ত নাহলে তখন নাম তুলে নিবি। কাল পর্যন্ত এষা বলেছে ওরও মনে হচ্ছে হয়ে যাবে।
জিনিয়া বললো...
--- নারে... এখনো শেষ হয়নি। খুব ক্লান্ত লাগছে। টাইপ করতে ইচ্ছে করছেনা। অথচ যত শিগগির পারি এটা সাবমিট করতে হবে। এই কফি বানিয়ে বসলাম।
কথাটা শুনে এষা বললো...
---- আমার বোধহয় নাম তুলেই নিতে হবে। একটা কাজ করছি আমি তোর কাছে চলে আসছি। টাইপ করতে আমার কোনো ক্লান্তি নেই তুইতো জানিস।
জিনিয়া বললো...
--- না না আমি করে নিচ্ছি। তুই এত রাতে আর আসিসনা। সিকিউরিটি ঝামেলা করবে।
এষা বললো...
---আরে আমি ম্যানেজ করে নিচ্ছি। তুই চিল কর। আমি আসছি।
জিনিয়া ভাবলো ভালোই হলো অনেকটা ক্লান্ত লাগছে। মাথাটাও হালকা করা দরকার। এখন টেক্সাসে বেশ ঠান্ডা। তাই রাস্তা ঘাট ফাঁকা, বেরোনোর সুযোগও হয়নি বেশ কিছুদিন। এষা এলে ওর সঙ্গ ভালো লাগবে আর কাজটাও তাড়াতাড়ি এগোবে।
কিছুক্ষনের মধ্যেই ওর ডোরবেল বাজলো। ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পসেই থাকে দুজনেই, খুব দূর নয় এবং সিকিউরিটিও চেনে এষাকে, তাই তাড়াতাড়ি চলে এলো ও।
দরজা দিয়ে ঢুকেই এষা কেমন একটা উত্তেজিত ভাবে বললো...
---- চল তোর পেপার টাইপ করি! দ্যাখ তোকে সাহায্য করতে এসেছি আর কোনো উদ্দেশ্য নেই আমার।
জিনিয়া বেশ অবাক হয়ে গেল ওর কথা শুনে। বললো...
---- কি যা তা বলছিস! তোর আর আমার এরকম সম্পর্ক নাকি! আমি তোকে নিজের থেকেও বেশি বিশ্বাস করি। এই বিদেশ বিভুঁইয়ে তুই ছাড়া কে আছে আমার! সারাদিন কাজে ডুবে থাকি বলে বয়ফ্রেন্ডও জোটেনি কপালে।
বলে হেসে জড়িয়ে ধরে বললো, বেস্টফ্রেন্ড বল আর বয়ফ্রেন্ড, সবই তুই!
এষাও ওকে পিঠ চাপড়ে বললো...
--- আমারও তুই ছাড়া কে আছে বল।
জিনিয়া বললো ল্যাপটপটা বেডরুমে আছে, তুই যা আমি কফি নিয়ে আসছি তোর জন্য।
এরপরে এষা ঘরে ঢুকে গেল। কিছুক্ষন বাদে জিনিয়া কফি নিয়ে ঢুকতে এষা বললো...
--- তোর কফি কোথায়? খাবিনা?
জিনিয়া বললো...
---এখনি খেয়েছি তাই একটু পরে খাবো বলে ফ্লাস্কে রেখেছি, তুই খা।
এষা ওর পেপারটা পড়ে টাইপ করতে লাগলো। জিনিয়া ওর পাশে শুয়ে গল্প করতে করতে দেখলো বেশ ঘুম পাচ্ছে। চোখ টেনে রাখতে পারছেনা। উঠে গিয়ে নিজের জন্য আবার কফি নিয়ে এলো জিনিয়া । কাপটা রেখে বললো...
---- তুই আসায় খুব উপকার হলো জানিস! আমি আর পারছিলামনা! থ্যাংক ইউ সো মাচ! তুই টাইপ কর আমি বরং একটু চোখে জল দিয়ে আসি।
এষা সানন্দে বললো...
---সিওর! আমি এসেছি যখন তোর প্রেসেন্টেশন কাল করানোর দায়িত্ব আমার।
জিনিয়া চলে গেল ওয়াশরুমে। ফিরে এসে দেখলো এষা খুব মন দিয়ে টাইপ করছে। ও সোফায় বসে কফিতে চুমুক দিয়ে বললো...
---ইসস কাল তোরটাও প্রেসেন্ট করতে পারলে কি ভালো হতো!
এষা ওকে থামিয়ে বললো...
---আরে তুই আর আমিকি আলাদা? তোর সাফল্য আমাকে আরও উৎসাহ দেবে! দেখিস আমিও খুব শিগগিরই চান্স পেয়ে যাবো। এখন নিজের কথা ভাব!
জিনিয়া মনে মনে বেশ উত্তেজিত হতে লাগলো। কাল পেপারটা সাবমিট করলে বিজ্ঞানী মহলে রীতিমতো ঝড় উঠে যাবে। ড