Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

পাত্রস্থ
@মিতালী দাস

ঘোষ দম্পতির একমাত্র কন্যা রাই,যেমন সুন্দরী তেমনি সুন্দর গান গায় ।তাকে নিয়ে তাদের প্রচুর স্বপ্ন ।মেয়েকে অনেক যত্ন করে বড়ো করে তুলেছেন ।সবসময় চোখে চোখে রাখেন মেয়েকে ।কখনও যেন কোনো খারাপ ছেলের পাল্লায় না পড়ে,সে…


পাত্রস্থ
@মিতালী দাস

ঘোষ দম্পতির একমাত্র কন্যা রাই,যেমন সুন্দরী তেমনি সুন্দর গান গায় ।তাকে নিয়ে তাদের প্রচুর স্বপ্ন ।মেয়েকে অনেক যত্ন করে বড়ো করে তুলেছেন ।সবসময় চোখে চোখে রাখেন মেয়েকে ।কখনও যেন কোনো খারাপ ছেলের পাল্লায় না পড়ে,সেজন্য কোনো ছেলেকেই মেয়ের ধারেকাছে ঘেঁষতে দেননি ।কোনোরকমে কলেজ পাশ করিয়ে গৃহবন্দি করে রেখেছেন মেয়েকে ।এবার শুধু পাত্রস্থ করলেই হয় ।ঘোষবাবুর লাভ ম্যারেজ একেবারেই অপছন্দ ।
একমাত্র মেয়ে বলে তাদের স্বপ্ন ও আকাশছোঁয়া ।জামাই হতে হবে রূপে গুণে রাজপুত্রের মতন ।কিন্তু যত সম্বন্ধই আসে,কোনো না কোনো কারণে তাদের মনঃপূত হয় না ।এদিকে মেয়ের বয়স ক্রমশঃ বাড়ছে ।বিয়ের সময় পার হয়ে যায় যায় ।অগত্যা গুরুদেবের শরণাপন্ন হলেন তারা ।তাবিজ -কবচ -মাদুলি র অলংকারে মেয়ের শরীর উঠল ভরে,তবু ও কিছু হচ্ছে না দেখে আবার ছুটলেন গুরুদেবের কাছে ।গুরুদেব বিধান দিলেন,তিনদিনের মধ্যে স্বপ্নে তারা পাত্র খুঁজে পাাবেন ।
প্রথম দিন
               রাতে কর্তা গিন্নি সকাল সকাল শুয়ে পড়লেন ।মাঝরাতে ঘোষ গিন্নির ধাক্কাতে ঘোষবাবু খাট থেকে একবারে নীচে ।দশাশই চেহারার গিন্নির ধাক্কায় ষাটোর্ধ লিকলিকে ঘোষবাবুর যায় যায় অবস্থা ।তিনি সেই অবস্থা থেকে কোনোরকমে উঠে পড়ে জিজ্ঞেস করলেন,"কি হয়েছে? এভাবে ধাক্কা দিয়ে ফেলার কারণ কি?"।ঘোষ গিন্নির মেজাজ সপ্তমে উঠল ।তিনি চিৎকার করে মাঝরাতে পাড়া মাথায় করে বলতে লাগলেন -"এই তুমি হলে যত নষ্টের কারণ,তোমার জন্য আমার মেয়ের বিয়ে হবে না ।স্বপ্ন দেখছিলাম,আশীর্বাদ পর্যন্ত হয়ে গেছিল ।কিন্তু বিয়ে পর্যন্ত টিকতে দিলে না!!তোমার নাক ডাকার আওয়াজে সব ভণ্ডুল হয়ে গেল ।"ঘোষবাবু বললেন,"আরে,এত চিন্তা করছ কেন?আশীর্বাদ যখন হয়েই গেছে,বিয়েটাও হবে ।তা পাত্র কেমন?"তাতে ঘোষ গিন্নি যা বর্ণনা করলেন,শেষে এই গিয়ে দাঁড়াল যে,-পাত্র আমাদের ক্রিকেটার সৌরভ গাঙ্গুলী ব্যতীত অন্য কেউ নয় ।ঘোষবাবু বুঝলেন,এ স্বপ্ন ভেঙে তিনি ঠিক কাজ ই করেছেন ।সতীনের ঘরে তিনি মেয়ের বিয়ে দেবেন না ।
দ্বিতীয় দিন
                 ঘোষবাবু আর গিন্নি আলাদা ঘরে শুলেন ।হাতে মাত্র দুদিন ।তার জন্য যেন মেয়ের বিয়ে ভেঙে না যায় ।রাতটা ভালোভাবেই কাটল ।কিন্তু সকালবেলা উঠেই দেখলেন গিন্নির মুখ ভার ।কিছু বলার আগেই গিন্নি খেঁকিয়ে উঠল-"জানতাম ,তোমার দ্বারা কিছু হবে না ।একটু যে পাশে পাবো,তার ও জো নেই ।"।ঘোষবাবু কিছু বুঝতে পারলেন না ।আমতা আমতা করে জিজ্ঞেস করলেন-",কি হল?" উত্তরে যা শুনলেন,তা হল-আজ গিন্নি একটাও ছেলের সঙ্গে মেয়ের বিয়ের স্বপ্ন দেখেন নি ।তার বক্তব্য,যদি ঘোষবাবু তার সঙ্গে শুতেন তাহলে মাঝরাতে নাক ডাকার শব্দে ঘুম ভেঙে গেলে ভোরবেলা আরেকটা স্বপ্ন  তিনি দেখার সুযোগ পেতেন ।
তৃতীয় দিন
                ঘোষবাবু বড্ড দুঃশ্চিন্তায় পড়লেন ।গিন্নির কাছে শুলেও বিপদ না শুলেও বিপদ ।তিনি ঠিক করলেন একটা দিন মেয়ের জন্য না হয় বিনিদ্র রজনী ই কাটাবেন ।গিন্নি ঘুমিয়ে পড়লে তিনি সারারাত ঘরেই পায়চারি করতে লাগলেন ।কখনও কখনও ঘুমে চোখ জুড়িয়ে এলেও ভয়ে গিন্নির পাশে শুলেন না ।যদি স্বপ্নে পাত্র আসে,আর তার নাক ডাকার শব্দে গিন্নি বিয়ে পর্যন্ত না দেখতে পারেন এই ভেবে ।তবুও ভোরের দিকে চেয়ারে বসে একটু ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ।গিন্নির ঠাকুরঘরের ঘন্টার শব্দে ঘুম ভাঙল ।পুজো শেষ করে প্রসাদ দিতে এলে তিনি গিন্নিকে  বললেন ,"আজ সব ঠিকঠাক মতো দেখতে পেয়েছ মনে হচ্ছে!"গিন্নি বললেন-"হ্যাঁ,ভগবান মুখ তুলে চেয়েছেন ।"কাল বিয়ে শেষ করে কন্যাদান পর্যন্ত স্বপ্ন দেখেছেন তিনি ।ঘোষবাবু এবার কৌতূহলে জিজ্ঞেস করলেন,পাত্র কেমন?গিন্নি তো যা বর্ণনা করলেন, তা কোনো রাজপুত্রের চেয়ে কম নয় ।এবার ঘোষবাবুর দ্বিতীয় প্রশ্ন,"লাভ না অ্যারেঞ্জ?"এই প্রশ্ন শোনা মাত্র গিন্নির মেজাজ গেল বিগড়ে ।তিনি চিৎকার করে বলতে লাগলেন -"তোমার কি বুদ্ধি -শুদ্ধি কিছুই নেই??তিনদিনে একটা স্বপ্ন তো দেখতে পারলেই না,আমি স্বপ্নে পাত্র জোগাড় করে আনলাম ।তা আমি যখন জোগাড় করেছি,সেটা অ্যারেঞ্জ না হয়ে লাভ হয় কি করে???"
ঘোষবাবু দেখলেন,বটেই তো;তার দ্বারা কিছুই হয়নি এতদিন ।এভাবে গিন্নিকে ছোটো করা তার উচিৎ হয়নি ।তিনি এবার গিন্নি কে সন্তুষ্ট করার জন্য বললেন -"বেশ বেশ!!,মেয়ের বিয়েতে এর জন্য তোমার একটা পাওনা রইল ।এবার বলো দেখি পাত্রের নাম- ধাম ।বিয়েটা পাকা করে আসি ।"
গিন্নি হঠাৎ চুপ করে মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লেন ।তিনি মেয়ের বিয়ে নিয়ে এত আনন্দে মশগুল ছিলেন স্বপ্নে,যে পাত্রের নাম- ধাম জানতেই বেমালুম ভুলে  গেছেন  ।এবার কি হবে!!!!
তাড়াতাড়ি দুজনে মিলে ছুটলেন গুরুদেবের কাছে ।যদি আর একটা দিন পাওয়া যায় তাহলে নাম -ধাম জানা যাবে ।নাহলে মেয়েকে  পাত্রস্থ করবেন কি করে!!!!!!
🤔🤣🤔🤣🤔😂🤔🤣🤔😂🤔🤣🤔😃🤔🤣@মিতালী দাস ।*স্বরচিত ।