Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#দৈনিক_কলম_সন্মাননা_পর্ব-১৯
#ঝাড়খণ্ডের_দলমা
#সোমা_ত্রিবেদী

আমার উনি থাকেন রাঁচি আর আমি কোলকাতা। দু-তিন মাস পরপরই আমি গিয়ে ওর কাছে হাজির হই।  আমার রাঁচি যাবার থাকলেই আমার তিনি কিছু না কিছু weekend plan করেই রাখেন surprise দেবার …


#দৈনিক_কলম_সন্মাননা_পর্ব-১৯
#ঝাড়খণ্ডের_দলমা
#সোমা_ত্রিবেদী

আমার উনি থাকেন রাঁচি আর আমি কোলকাতা। দু-তিন মাস পরপরই আমি গিয়ে ওর কাছে হাজির হই।  আমার রাঁচি যাবার থাকলেই আমার তিনি কিছু না কিছু weekend plan করেই রাখেন surprise দেবার জন্য। এমনই একবার plan ছিল দলমার দামাল হাওয়া উপভোগ করার।

7th September, 2019: রাঁচি থেকে জামসেদপুর গামি বাসে চেপে বসা হল পাশাপাশি। হাতে হাত রেখে অবসান প্রাপ্ত অপেক্ষা ভীষণ ভাবে উপভোগ করছিলাম। সঙ্গে খুচরো মুখ চলার জন্য ছিল চিপস। আমাদের বাস থেকে নামার পর গাড়ি বলা আছে সহরবেড়া তে আমাদের pickup করবে।  বাস থেকে নেমে দিশি চিকেন কিনে গাড়িতে উঠলাম। পথে দেখা হল অজয় ও চম্পাকলির সঙ্গে। অজয় এখন চম্পাকলির প্রেমে পড়েছে, তার সঙ্গ এখন ছাড়চেইনা। নিজে কাদা মেখে এসেছে চম্পাকলিকে impress করবে বলে। এমনকি সে ডাল পাতা ছিঁড়ে তাকে খাইয়েও দিচ্ছে। এরা উভয়েই বনদপ্তরে কর্মরত। ড্রাইভার প্রদীপদা আমাদের আনলো আমাদের আগে থেকেই বুক করা সরকারি কটেজে।

স্নান খাওয়া সেরে আমরা বেরিয়ে পড়লাম জঙ্গলের উদ্দেশ্যে। গাড়ি বাঁকে বাঁকে উঠতে লাগল ওপর দিকে। পথে আমাদের অভ্যর্থনা জানাতে এলো বন-ময়ূরি ও ছোট্ট বাঁদর। অনুভব করলাম তক্ষকের উপস্থিতি। ভাল লেগেছিল ভরা দুপুরে ঝিঁঝিঁ পোকার কনসার্ট। পাহাড়ি শেষ বাঁক আমাদের নিয়ে এলো মেঘেদের সাম্রাজ্যে। এটা বর্ষা কাল। গর্ভিণী মেঘ। যে কোন সময়ে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামতে পারে। এখানেই একটা গুহায় বাস করেন বাবা ভোলেনাথ। আশপাশের অপার সৌন্দর্য আমার কাছে বড়োই মনোমুগ্ধকর।

এবার গাড়ি আমাদের অল্প নিচে আনল যেখান থেকে জামসেদপুর শহরটা দেখা যায়। সেখানের লাল কাঁকুরে মাটি সঙ্গে আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠার সম্পর্ক। এই সেই সবুজ টিলায় ঘেরা শহর যা পৃথিবীর যে কোনও destination এর থেকে অনেক বেশি আকর্ষণীয় আমার কাছে। এই সেই শহর যার ভোর 06:00টার সাইরেনে আমার ঘুম ভাঙতো। এখানেই বিকেলে টিস্কোর স্ল্যাগ ফেলা হাঁ করে দেখতাম, রোজই দেখতাম, তাও সেই আকাশের লালিমা দেখার আগ্রহ থাকতো। শৈশব শহরের ঘ্রাণ ক্ষুধার্তের কাছে ভাতের ঘ্রাণের মতোই প্রিয়।

গাড়ি আমাদের ফিরিয়ে আনলো কটেজে। কটেজের পিছনের বাগানে হরিণ চরছে। গাছে গাছে ফড়িং প্রজাপতি উড়ছে আর তার পিছনেই দলমার পাহাড় দেখা যাচ্ছে। আহাহা কি মনোরম দৃশ্য। বারান্দার নিরালায় আমরা দুটি প্রাণী সন্ধ্যা নামছে আপন খেয়ালে। দীর্ঘ বিবাহিত জীবনে দুটি মন সব সময় একে অপরকে আবর্তিত হয়ে যে সুখ পায় তা আর অন্য কোন কিছুতেই পাওয়া যায় না। আমার উনি একের পর এক গান করে চলছেন দু-চার লাইন করে। আকাশে চন্দ্রদয় হলো। সামনেই পূর্ণিমা, চাঁদের আলোয় বারান্দাটা ধুয়ে যাচ্ছে। এ যেন সব পেয়েছির অনুভূতি।

সারে জাঁহা সে আচ্ছা হিন্দুসিতা হামারা। কি নেই আমার দেশে পাহাড়, পর্বত, টিলা, সাগর, নদ ,নদী, জঙ্গল, মরুভূমি, কোথাও আবার সারা বছর বরফ ঢাকা (-) temperature.  খানিকক্ষণ পর রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লাম।

8th September, 2019: আজ পাহাড় ছেড়ে নাবার পালা। তার আগে হাতি দেখতে গেলাম। বনদপ্তরের পোষা হাতি, চারটি। দুটিতে খুব ভাব, কেবলই মাথায় মাথা ঠেকা ঠেকি করছে একে অপরকে শুড় দিয়ে আদর করছে। এরাই কালকের অজয়-চম্পাকলি। একটা প্রজাপতি আমার হাতে এসে বসলো, বসেই রইলো অনেক্ষণ। কাছেই হরিণের enclosure সেটাও ঘুরে এলাম। এবার আমরা গাড়ি নিয়ে সোজা চাণ্ডিল ড্যাম রওনা দিলাম। পথে প্রাতরাশ সেরে নিলাম। সুন্দর প্রাকৃতিক শোভায় মোড়া চাণ্ডিল ড্যাম। সেখানে নৌকাবিহারের বন্দোবস্ত আছে। আমরা বেশ কিছু ছবি তুলেছিলাম।

এবার যাওয়া হল জামসেদপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র সাকচিতে। গাড়িটি এবার ছেড়ে দিলাম। ওখানে আমার অপেক্ষায় ছিল আমার ছোটবেলার বেশ কিছু বন্ধু। বন্ধুদের সঙ্গে রিইউনিয়ন পর্ব সেরে মানগো বাসস্টেন্ড থেকে রাঁচি গামি বাসে উঠে বসলাম।

ছোট্ট ট্রিপ একরাশ ভাললাগা উপহার দিয়ে শেষ হল।