Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

।। সুনির্মল বসুর ছোটগল্প।।।। ওঠা নামা।।অংকের শিক্ষক হিসেবে সুধাময় সেনের নাম এই অঞ্চল জুড়ে, যেসব জটিল অংক সহজে মেলে না, তা সুধাময় স্যারের কাছে গেলে, নিশ্চিত সমাধান খুঁজে পায়। স্কুলের টিফিন টাইমে অংক নিয়ে এলে, তিনি চক দিয়ে টে…

 

।। সুনির্মল বসুর ছোটগল্প।।

।। ওঠা নামা।।

অংকের শিক্ষক হিসেবে সুধাময় সেনের নাম এই অঞ্চল জুড়ে, যেসব জটিল অংক সহজে মেলে না, তা সুধাময় স্যারের কাছে গেলে, নিশ্চিত সমাধান খুঁজে পায়। স্কুলের টিফিন টাইমে অংক নিয়ে এলে, তিনি চক দিয়ে টেবিলের ওপরে অংক করে দেন।

পাশের স্কুলে আছেন অঙক স্যার সৌজন্য মন্ডল। তাঁর কাছে গেলে, কোনো অংক মেলে না। অংক না মিললে, তাঁর উত্তর, অংকটা মিলবো কি কইরা, অংকটার ম ইধ্যে ফাইজলামি আছে যে।

সব অংকের মধ্যেই ফাইজলামি থাকে, জেনে ছেলেরা আশ্চর্য হয়। পাশের স্কুলে ছেলেরাও তাই বলে, অংক শিখতে চাও, সুধাময় স্যারের কাছে যাও।

সুধাময় স্যারের একমাত্র ছেলে কল্যাণ স্কুলের ফার্স্ট বয়। অংকে সে বাবার মতই পারদর্শী। বরাবর অংকে সে সর্বোচ্চ নাম্বার পেয়ে থাকে।

সবাই আলোচনা করে, কার ছেলে দেখতে হবে তো।সুধাময় স্যার ছেলের জন্য গর্বিত হন। মৃদু হাসেন, মুখে কিছু বলেন না।

কল্যাণের সহপাঠী দিবাকর আবার অংকে দারুন কাঁচা। অংকটা তার মাথায় কিছুতেই আসে না। সে পড়াশোনায় কোনোদিনই আহামরি নয়। একটা অংক বোঝাবার পরে,করতে দিলে সে অংকটা গুবলেট করবেই।

টিফিন বেলায় দিবাকর একদিন সুধাময় স্যারের কাছে অঙ্ক বুঝতে গেল। স্যার নানা ভাবে সহজ করে

অংকটা বোঝালেন। এবার অংকটা করতে দিলে,

আবারো দিবাকরের ভুল।

সুধাময় স্যার রেগে বললেন, তোর হবে না। তুই ফ্রিজের মধ্যে মাথা ঢুকিয়ে রাখ্।

এসব অনেক দিন আগেকার কথা।

ততদিনে গঙ্গা-পদ্মা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে।

 সুধাময় স্যারের ছেলে কল্যান এখন নামকরা ইঞ্জিনিয়ার। ডিভিসির একটা বড় প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছে। নিজেই ভালবেসে বিয়ে করেছে

মধুরিমাকে। অতিশয় বড়লোকের মেয়ে। শ্বশুর-শাশুড়ির সংসারে থাকা মোটেই তাঁর পছন্দ নয়। কল্যান তাই সল্টলেকে ফ্ল্যাট কিনে বউকে নিয়ে সেখানে উঠেছে।

রিটায়ার্ড বাবা-মায়ের সংসারের কোনো খবর সে রাখে না। বিবাহবার্ষিকীতে সে জানায়, বউ তাঁর সম্পত্তি নয়, সম্পদ।

মাসের প্রথমে পেনশনের টাকা তুলতে ব্যাংকে গিয়েছিলেন সুধাময়বাবু। স্ত্রী যোগমায়া দেবীও এখন ভীষণ অসুস্থ। দুজনের ওষুধ কিনতে মাসে পাঁচ হাজার টাকা খরচ হয়ে যায়।

টাকা তুলে রোদ্দুরে দাঁড়াতেই, হঠাৎ মাথাটা ঘুরে যায় সুধাময় বাবুর। অনেকে জলবাতাস করে তাঁকে

সুস্থ করবার চেষ্টা করতে থাকেন।

নিজের ব্যবসার কাজে টাকার প্রয়োজনে দিবাকর

ব্যাংকে এসেছিল। স্যারকে দেখে চমকে যায়।

অসুস্থ স্যারকে বলে, এখন কেমন লাগছে স্যার,

ঠিক আছি দিবাকর, মাথাটা কেমন ঘুরে গিয়েছিল,

কোনো ভয় নেই স্যার, আমি ট্যাক্সি ডেকেছি, এক্ষুনি আপনাকে ডাক্তারখানায় নিয়ে যাবো।

আমার বাড়িতে তোমার মাসীমা চিন্তা করবেন।

ভাববেন না স্যার, আমি মাসিমাকে ফোনে জানিয়ে দিচ্ছি।

ট্যাক্সি এলো। দিবাকর স্যার কে নিয়ে কলকাতার হাসপাতালে ছুটলো। ডাক্তার পরীক্ষা করলেন। ওষুধ পত্র লিখে দিলেন।

ওষুধ পত্র কিনে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে, দিবাকর স্যারকে বাড়ি পৌঁছে দিল।

এবার আমি আসি স্যার,

এসো বাবা, তুমি আগে আমার জন্য যা করলে,

এটুকু না করলে যে সব পাপ হয়ে যাবে,

দিবাকর, আমার খুব অহংকার ছিল, এই অঞ্চলে আমি অংকের রাজা। আমার ছেলে কল্যাণ অংকে ভালো, অংক পারতিস না বলে, কত বকেছি তোকে।

স্যার, সে তো আমার ভালোর জন্য, আসলে, আমার অংকে মাথা ভালো ছিলনা।

দিবাকর, কত জটিল অংক আমি মিলিয়ে দিয়েছি, অথচ চেয়ে দ্যাখ্, জীবনের অংকে আমি বিগ জিরো। কি করছিস আজকাল,

স্যার, আমি তো পড়াশোনার ভালো ছিলাম না, ব্যবসা করছি। বোনের বিয়ে দিয়েছি, বাবা মারা গেছেন। ভাইকে বিকম অনার্স পড়াচ্ছি।

বিয়ে করিস নি,

না স্যার, ভাইটা দাঁড়িয়ে গেলে, তারপর ভাববো।

যোগমায়া দেবী বললেন, ছেলে থেকেও আমার বাবা ছেলে নেই, তুমি আজ আমার ছেলের মতনই কাজ করলে, আবার এসো।

আসবো তো, আমি প্রতিদিন আসবো, আপনাদের কোন অসুবিধা হলে, আমাকে শুধু একটা খবর দেবেন। আমি তো পড়াশোনায় ভালো ছিলাম না, স্যারের বাড়িতে আসতে পারা ,আমার ভাগ্য।

সুধাময় বাবু বললেন, আজকাল উপরে ওঠা আর নিচে নামার পার্থক্যটা লোকে বুঝতে পারে না। সবাই বলে, আমি ছেলেকে দারুন মানুষ করেছি।

মানুষ আর অমানুষের তফাৎটা কজন দেখতে পায়,

সুন্দর পোশাক আর ঠাটবাটের আড়ালে কত অমানুষ ঘুরে বেড়ায়।

আসি স্যার, আসি মাসীমা।

এসো বাবা। পুঁথিগত শিক্ষায় কল্যাণ বড় হতে পারে,

কিন্তু মানবিক শিক্ষায় তুমি বড় হয়েছ। সমাজে ওঠা পড়ার পার্থক্যটা আমি নিজের জীবন দিয়ে বুঝতে পারছি। ভালো থেকো, দিবাকর।