Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#গল্প#ভালোবাসার_প্রতীক #গোপা_ব্যানার্জী
---ম্যাম আপনার মোবাইল!শুনে চমকে ফিরে তাকাতেই লাবণ্য দেখলো শপিং মলের যে শপটায় ও লাস্ট বিল করাচ্ছিল ছেলেটি ওই ক্যাশ কাউন্টারে ছিলো। ডেবিট কার্ড বের করার জন্য মোবাইলটা কাউন্টার টপে রেখে তারপর ভ…


 #গল্প#ভালোবাসার_প্রতীক #গোপা_ব্যানার্জী
---ম্যাম আপনার মোবাইল!শুনে চমকে ফিরে তাকাতেই লাবণ্য দেখলো শপিং মলের যে শপটায় ও লাস্ট বিল করাচ্ছিল ছেলেটি ওই ক্যাশ কাউন্টারে ছিলো। ডেবিট কার্ড বের করার জন্য মোবাইলটা কাউন্টার টপে রেখে তারপর ভুলে চলে এসেছে।----তোমাকে অনেক ধন্যবাদ! আজকাল সব গুলিয়ে ফেলি! বয়স হচ্ছে বুঝলেতো!এই বলে ওর সেই বিখ্যাত হাসিটা হাসলো... একসময় যার ধাক্কায় অনেক যুবকের হৃদয় চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যেত।ছেলেটি মানে প্রতীক ঘোষও বেশ ঘায়েল হলো... তবে অন্য কারণে... তার বুকে " মধুর আমার মায়ের হাসি " বেজে উঠলো। অবিকল সেই হাসি! ফোনটা ফেরৎ দিতে না আসলে এই দুর্লভ হাসি দেখা হতোনা।প্রতীক কেমন স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে থাকলো।লাবণ্য হাত থেকে ফোনটা নিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বেঁচে থাকো বাবা... বলতে সম্বিৎ ফিরে এলো।ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হয়ে লাবণ্য জিজ্ঞেস করে উঠলো...--- কি হয়েছে বাবা? তোমার মুখ শুকিয়ে গেছে কেন? ফোনটা আমিই ফেলে এসেছিলাম। তুমি না দিলে বাড়ি ফিরে কর্তার কাছে বেশ খানিকটা বকুনি খেতে হতো। থ্যাংক ইউ সো মাচ!লাবণ্য পিছন ঘুরে হাঁটা লাগালো। কিন্তু ওর মন বলছিলো ছেলেটি এখনো দাঁড়িয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য আরেকটা শপে ঢুকে কিছু জিনিস নাড়াচাড়া করতে করতে আড়চোখে তাকিয়ে দেখলো ছেলেটি পিছনে ফিরে ওখানে দাঁড়িয়ে আছে! তারপর আরেকটি ছেলে এসে কিছু বলতে চারদিকে যেন ওকে খুঁজতে খুঁজতে আবার নিজের কর্মস্থলে ফিরে গেল। লাবণ্য বেশ খানিকক্ষণ এদিক ওদিক ঘুরে আবার ওই ফ্লোরে আসলো! লিফটে উঠতে যাবে হঠাৎ পিছনে ম্যাম ডাক! চমকে উঠলো লাবণ্য!---- কিছু বলবে? আমার মনে হয়েছে তোমার কিছু বলার আছে! বলো... এত হেসিটেট করছো কেন! আমি তোমার মায়ের মতো!কথাটা বলার সাথে সাথে ওর হাতটা খপ করে ধরে টেনে নিয়ে চললো প্রতীক! বেশ অপ্রস্তুত লাবণ্য! একটা থামের আড়ালে নিয়ে দাঁড় করিয়ে প্রতীক বললো...--- আমি ভীষণ দুঃখিত আপনার সাথে এরকম করছি! কিন্তু ঠিক বলেছেন! আপনি একদম আমার মায়ের মতো!লাবণ্য ঘামতে শুরু করলো এবার! মুখে হাসি মেখে বললো...--- তাই? কি নাম তোমার? কোথায় থাকো?প্রতীক পকেট থেকে আইডেন্টিটি কার্ডটা বের করে স্থির দৃষ্টিতে লাবণ্যর দিকে চেয়ে রইলো...হ্যাঁ ঠিক! চমকে উঠে লাবণ্য প্রতীকের দিকে চেয়ে দেখলো! তারপর যতোটা সম্ভব স্বাভাবিক গলায় বললো...--- আমি এখানে থাকিনা! ইউ এস এ থেকে একমাস হলো এসেছি। সামনের সপ্তাহে ফিরে যাবো। তোমার মা কোথায় থাকেন?প্রতীক স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো...--- জানিনা! ছোট থেকে ঠাকুমা আর বাবার কাছে শুনেছি উনি আমার ছমাস বয়েসে আমাদের ছেড়ে কোথাও চলে গেছেন। কিন্তু আমি তার ছবি দেখেছি। দিনরাত আমার মাথা আমার মনে সেই ছবি ঘোরে। তার সাথে দেখা হলে আমি একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম... কি অপরাধ ছিলো আমার! আমার বাবার?উনি কেন এতটুকু একটা বাচ্চা ছেলেকে ফেলে চলে গিয়েছিলেন!লাবণ্যর গা যেন ছেড়ে দিচ্ছে! পায়ের তলার মাটিটা যেন আচমকা সরে গেছে। ও কোনোক্রমে বললো...--- তোমার বোধহয় ভুল হচ্ছে! আমি তোমার মায়ের মতো দেখতে শুধু!এরপরে পিছন ফিরে হনহন করে হাঁটা লাগালো। তাড়াতাড়ি বাইরে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে দম নিতে চেষ্টা করলো! কিন্তু মনে হচ্ছে বাতাসে অক্সিজেন কমে গেছে। কিছুতেই স্বাভাবিক ভাবে দম নিতে পারছেনা। মাটিতে বসে পড়লো লাবণ্য।একজন সিকিউরিটি গার্ড দৌড়ে এসে ওকে উঠতে সাহায্য করলো! তারপর ছুটে গিয়ে আরও একজন মহিলা গার্ড ছিলো তাকে ডেকে আনলো! দুজনে ধরাধরি করে একটা কফি শপে নিয়ে বসালো। তারপর বললো...--- ম্যাম আপনি ঠিক আছেন? গাড়ি কোথায়?লাবণ্য বেশ লজ্জায় পড়ে গেল। বললো...--- ঠিক আছি আমি! একটু জল আর কফি অর্ডার করে দিননা প্লিজ! আপনাদের বিরক্ত করছি! আর একটা কাজ একটু করে দিলে ভীষণ উপকার হয়।উনি তাড়াতাড়ি বললেন...---না না ম্যাম এটা আমাদের ডিউটি। বলুননা!একটু দম নিয়ে লাবণ্য বললো...--- উপরে শপার্স স্টপে ক্যাশ কাউন্টারে প্রতীক ঘোষ বলে একজন আছে,ওনাকে...--- ও প্রতীকদা? এখনি ডাকছি! তুমি ম্যামকে দ্যাখো!বলেই ছুটে চলে গেলেন। লাবণ্য কিছুটা জল নিয়ে ঘাড়ে মুখে লাগিয়ে ওই মহিলাকে টাকা বের করে দিয়ে বললো...--- আপনারা এত ভালো, এত উপকার করলেন তার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ! এটা দিয়ে বাড়ির বাচ্চাদের মিষ্টি কিনে দেবেন। ভদ্রমহিলা না না করেও শেষে নিলেন। তখনি হন্তদন্ত হয়ে প্রতীক ঢুকলো সিকিউরিটি গার্ড ভদ্রলোকের সাথে। ওরা আসতেই লাবণ্য আরও কিছু টাকা জোর করে ভদ্রলোকের হাতে দিয়ে ওদের বিদায় দিলো। প্রতীক প্রচন্ড উৎকণ্ঠা নিয়ে লাবণ্যর দিকে চেয়ে বসে রইলো।লাবণ্য নিজের ভিতরের উত্তেজনা কন্ট্রোল করে নিলো। তারপর বললো...--- তোমার বাড়ি মধ্যমগ্রাম! তোমার বাবার নাম প্রতীম ঘোষ... তাইতো?প্রতীক চুপ! ওর চোখ ফেটে জল আর ঘৃণা দুটোই বেরিয়ে আসছে! ঘাড় নাড়লো ও।লাবণ্য বললো...--- হ্যাঁ! আমিই সেই অভাগী মা! যে তার ছমাসের শিশু পুত্রকে ফেলে বাধ্য হয়েছিলো বাড়ি ছাড়তে। আমি জানি তোমার অনেক অভিমান, ঘৃণা সব জমেছে! কিন্তু তুমি আমার কথা শোনো। একটু বলতে...লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো প্রতীক। দাঁতে দাঁত চেপে বললো...--- কিছু শোনার নেই! সব জানি... ঠাকুমা বলেছে আমাকে। তুমি নিজের স্বার্থে নিজের ক্যরিয়ার তৈরি করার জন্য আমাকে, আমার বাবাকে ছেড়ে চলে গিয়েছো। আমি কিছুই শুনবো না! আমার ঠাকুমা মারা গেছেন গত বছর। বাবা শয্যাশায়ী। আমার বাবা আর বিয়ে করেননি। আমি একজন আয়ার কাছে তাকে রেখে কাজে আসি। আর কয়েকটা মাস তার আয়ু। লিভার ক্যান্সার! খুশি হলেন নিশ্চয়ই।উঠে চলে গেল প্রতীক। লাবণ্য স্থির হয়ে বসে কিছুক্ষন, ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালো। তারপর স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় হেঁটে বেরিয়ে এলো শপিং মল থেকে!বাড়ি ফিরে আবার শরীর খারাপ লাগাতে সৌগতকে ডেকে খুলে বললো সব। সৌগত ওর বর্তমান স্বামী, ওর রিসার্চ পার্টনার একসময়ের! ভীষণ ভালো বন্ধুও। সেদিন বাড়ি ছাড়ার পরে সৌগত না থাকলে ও কোথায় ভেসে যেত ঈশ্বর জানেন!বাড়ি ফিরেছে প্রতীক। রুটিন মাফিক এসে বাবার পাশে বসতে, প্রতীম ওর দিকে ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়েই বুঝলো ছেলেটার চোখে মুখে যেন কেউ কালি ঢেলে দিয়েছে। ও জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।ওর হাতটা নিজের হাতে তুলে নিয়ে