Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা দৈনিক সেরা সম্মাননা

... . "  পরিযায়ী  প্রিয়জন  " ....     [  সৌজন্য   বাস্তবতা   ]   *  ( গল্প নয় , সত্যি  )  * @  ত্রিদিব  কুমার  বর্মণ  ।   @   গরম ভাতের কোল ঘেঁষে , একমুঠো লাল শাক , আলু - পটলের ঝোল গড়িয়ে চলেছে , সাদা ভাতের দিকে .... ।  পাশে …

...
. "  পরিযায়ী  প্রিয়জন  " .... 
   [  সৌজন্য   বাস্তবতা   ]   *  ( গল্প নয় , সত্যি  )  *
@  ত্রিদিব  কুমার  বর্মণ  ।   @
 
  গরম ভাতের কোল ঘেঁষে , একমুঠো লাল শাক , আলু - পটলের ঝোল গড়িয়ে চলেছে , সাদা ভাতের দিকে .... । 
পাশে এক বাটি , টলটলে ডাল ... ।  কানা - উঁচু  ভাতের
থালাটা  কোলের কাছে টেনে নিয়েই ঝরঝর করে কেঁদে
ফেলে ছেলেটি ... । বাপ -- বেটাকে ঘিরে বৃত্তাকারে দাঁড়িয়ে
থাকা ভিড় থেকে একজন বললেন ,  '  খা ,  বাছা  খা ,  ভাত 
সামনে রেখে কাঁদতে নেই ...  !  "  
   ভাতের চূড়োয়  আংগুল গেঁথে , ছেলেটি তবু ফুঁপিয়ে চলে..... । 

   দীর্ঘদিন পরে  মংগলবার ভাত খেয়েছে  উজান.... । 
উজান রায় । পাশেই তার বাপধন , বাবা ..  , আকাশ ...। 
তিন দিন আগে , সংগে থাকা চিঁড়ে ফুরিয়ে যাওয়ার পরে , 
গত পাঁচ বেলা খিদের সংগে লড়াই করেই কেটেছে  তাদের। 

স্কুলের বারান্দায় দিনের পর দিন লুকিয়ে থাকা গড়িয়ার
বালিয়ায় পিতা - পুত্র শেষতক নেমে আসে পথে । কথাটা পাঁচ কান হওয়ার পরে আটকে পড়া এই দুই পরিযায়ী
শ্রমিককে ভাত জুগিয়েছে কোন্নগরের নবগ্রামবাসীরা... । 

তাদের ঘরে ফেরানোর তোড়জোড় ও  শুরু হয়েছে । 
আসলে  কি , ওরা দু'জনে ভয় পেয়ে লুকিয়েছিল... । 
বি. ডি. ও.  এসে বলাতে , --- "দেখছি , ওদেরকে ঘরে
পৌঁছে দিতে , কি ব্যবস্থা করা যায় ... ।  " 

 আকাশ রাজমিস্ত্রির কাজ করে। সংগে নিয়েছে , ওর 
পনেরো বছরের ছেলে, উজান ... ।  বাবাকে সাহায্য
করতে  ..৷  প্রোমোটারের বিল্ডিং কন্সট্রাকশান করার
কাজ ... । 

ঘন্টা আড়াইয়ের পথ ... ।  দূরত্ব  তো বেশি দূর নয়। কাজ শেষ করে প্রায় প্রতিদিন যাতায়াত করত বাপ - বেটা.. । 
কারণ আকাশের বৌ '- এর শরীর বিশেষ সুবিধের নয় । 
রক্তাপ্লুতা ঝিরঝিরে বৌ ' ...৷। 

২৫ শে মার্চ  ' লক ডাউন '  শুরু  দেশ জুড়ে .. । ঠিকাদার
জানিয়ে দেয় , কাম - কাজ বন্ধ। যে যার নিজের বোঝ
বুঝিয়ে নাও ।  গাড়ি - বাস  চলবেনা.. । 

২৭ শে মার্চ  ছেলের হাত ধরে বাড়ির পথে হাঁটা শুরু করে
মধ্য পঞ্চাশের আকাশ ..৷ নিজের মনকে রাজি করাল , 
রেল লাইন ধরে হেঁটে হাওড়া স্টেশানে এসে  তারপর না হয় কিছু একটা পথ এগিয়ে থাকা হবে... ।  ট্রেন তো বন্ধ.. । 
জি.টি. রোড  ধরে হাঁটলেই  পুলিশের কবলে পরলে পর , 
মহাবিপদ... । রাস্তা তো তেমন চেনা নেই ... । 
 
রাতভর লাইন ধরে হেঁটে  বালি স্টেশানের কাছে একটি
নলকূপ থেকে জল নেওয়ার সময়ে তাদের ঘিরে ধরে
স্থানীয় লোকজনেরা ... । উজানের মুখ শুকনো.. । 
আকাশের মুখের কথা শুনে , লোকজনদের সদয় হয়। 
বরং কে.জি. -- পাঁচেক শুকনো চিঁড়ে দিয়ে , এগিয়ে যেতে বলে.. ।  স্টেশানে কাটালে পুলিশে ধরতে পারে । বাধ্য হয়ে
ইঁট ভাঁটির কাছে স্কুলবাড়িটিতে বাকি রাতটা কাটিয়ে দেবে। 

পরেরর দিন সকালে সেখান থেকে বাপ - বেটায় দ্যাখে , 
গরু চুরি হওয়ায় হাতে খেটো বাঁশ নিয়ে , এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে গ্রামের মানুষ... । আকাশ - উজান ভয়ে সিঁটিয়ে
গিয়েছিল , যদি পিটিয়ে মেরে ফেলে ওদের দু'জনকে !! 

তারপর থেকে এক চিলতে বারান্দাই হয়ে ওঠে ওদের 
লক ডাউনের ঠিকানা... ।  কারণ ,  উজানের দু'পায়ের
নিচে ফোস্কা.. ।  এক জায়গার চামড়া চলকে গিয়েছে। 
হাঁটলেই জ্বালা ... ।  দুঃসাধ্য চলা - ফেরা... । 

 স্কুলের কলের জল আর সংগে পাওয়া চিঁড়েই সম্বল... । 

আকাশ  বলে , -- ' বারান্দা থেকেই দেখতাম , চাল - আলু
বিলি হচ্ছে ... ।  কিন্তু নামার সাহস পাইনি ..  '

সংগে চিঁড়ে শেষ হ'য়ে যাওয়ার পরে , জল খেয়েই
আড়াই দিন কাটিয়ে দিল ওরা দু'জনে... ।  আকাশ বলে , --
' খিদের জ্বালায় ছেলেটা ( উজান )  কাঁদতে শুরু করল । 
কেমন যেন নেতিয়ে পড়ছিল.. । বুঝলাম ,  এ' ভাবে বসে থাকলে , চোখের সামনে ওকে মরতে দেখব ।  ' 

  গামছা ছিঁড়ে,   উজানের পায়ে ভালো করে বেঁধে ,  আকাশ বলল,  --- ' বেটা মন শক্ত কর , আর বেশি দূর নেই , এই তো
পৌঁছে যাবো খুব তাড়াতাড়ি... ।  হাঁটা শুরু করি দু'জনে .. । '

  ' লক ডাউন '  আর পেটের খিদে তোয়াক্কা না করে
ওরা মনে জোর নিয়ে হাঁটাতে শুরু করল , নতুন উদ্দ্যোমে........ ।  

উজান পাবে ওর  মা'কে... ।  আকাশ  দেখবে ওর গোটা বাড়ি.... ।। 

                                 -----*-----