Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#শ্রাবণ সন্ধ্যায়। ছোট গল্প।
আজ সারাদিন ধরে বৃষ্টি,কখনো টিপটিপ করে আবার কখনো বা মুষলধারে।কমার নামটি নেই।অটোচালক হরি নিউ টাউনের মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় অনেক ক্ষণ ধরে  দাঁড়িয়ে আছে।আজ আর মনে হয় তেমন কেউ ঘর ছেড়ে বেরোয় নি কিছু অফিস যাত্রী…

 

#শ্রাবণ সন্ধ্যায়। ছোট গল্প।


আজ সারাদিন ধরে বৃষ্টি,কখনো টিপটিপ করে আবার কখনো বা মুষলধারে।কমার নামটি নেই।অটোচালক হরি নিউ টাউনের মোড়ে যাত্রীর অপেক্ষায় অনেক ক্ষণ ধরে  দাঁড়িয়ে আছে।আজ আর মনে হয় তেমন কেউ ঘর ছেড়ে বেরোয় নি কিছু অফিস যাত্রী থাকে,তাদের কারোর টিকিটি দেখা যাচ্ছে না। এদিকে প্রায় রাত আটটা হতে চললো। অটোর মুখ ঘুরিয়ে বাড়ি যাবার তোড়জোড় শুরু করতেই দূরে দেখে বাস স্ট্যান্ডে একটি মেয়ে দাঁড়িয়ে বাসের অপেক্ষায়। হরি ওদিকে ই চললো ,না হলেও একজন যাত্রী তো পাওয়া যাবে!!


অটো নিয়ে দাঁড়ালেও মেয়েটি কিন্তু ঘুরেও দেখছে না তার দিকে,মনে হয় দূরেই যাবে বাসের আশায় আছে। অল্প বয়সী মেয়ে,বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় তো কেউ নেই এই ভেবেই হরি জিগ্যেস করে কোথায় যাবেন দিদি? মুখে কোন কথা নেই হাত দিয়ে দেখায় ওই দিকে,,ওই দিকেই তো হরির বাড়ি উনি যদি ওঠেন তো ভালোই হয়। মেয়ে টিকে পৌঁছে বাড়ি চলে যাবে,কিছু হলেও একটা ভাড়া তো মিললো। যাবেন দিদি?আমি ওদিকে ই যাচ্ছি। মেয়েটি ঘাড় নেড়ে উঠে বসে।


কোথায় কোন পাড়ায় যাবেন দিদি?তখন যে জায়গা টা বলে সেটা বেশ ভেতর দিকেই হবে,বলে দিদি একটু বেশি ভাড়া লাগবে কিন্তু এই বৃষ্টির সময় বুঝতেই পারছেন। কোন কথা নেই মুখে ইশারায় ওকে চালাতে বলে। বোবার মতো বসে আছে মেয়েটি,,হরি চালাতে শুরু করে। বেশ ভাঙ্গা চোরা রাস্তা বৃষ্টিও পড়ছে সমানে,,হরি লুকিং গ্লাসে মেয়েটির দিকে তাকাতেই কেমন পাথরের চোখের মতো চাউনি মনে হয়। হরির শরীর বেয়ে কেমন একটা ঠান্ডা বাতাস বয়ে যায়। এবরো খেবড়ো রাস্তা দিয়ে অটো এগোচ্ছে,হরি আর কথা না বাড়িয়ে দ্রুত এগিয়ে মেয়েটির বলা পাড়ায় এসে বলে এসে গেছি দিদি,কোথায় নামবেন? মেয়েটি হিম শীতল গলায় বলে ওঠে আরো ভেতরে এখানে না। মেয়েটির দিকে তাকাতেই কেমন একটা ভয়ের উদ্রেক হলো,আরো ভেতরে দিদি? এতো ভেতরে কোনদিন যাইনি আমি। চলো বলছি!!


খাল,বিল,পুকুর সব পেরিয়ে যাচ্ছে,রাস্তা ঘাট একে একে সব সরে যাচ্ছে,, দিদি আমার গাড়ি আর যেতে পারবে না,,এইটুকু গাড়ি আর কত পথ যেতে পারে দিদি? বলতে গিয়ে পিছন ফিরে দেখে যেন মেয়েটি নেই, ভয়ে হরির তো হাত,পা,পেটের ভিতর সেঁধিয়ে যাচ্ছে কি মরতে ওকে গাড়িতে তুলতে গেছিলো।পয়সার এত লোভ আমার!!,ভেবে লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখে আবার মেয়েটি নিজের জায়গায় বসে তার দিকে শীতল দৃষ্টি তে তাকিয়ে আছে।


আর কিছুদূর গিয়ে সত্যিই বিশাল বাংলো টাইপের একটা বাড়ি নজরে এলো,,মেয়েটি থামতে বলে,,দিদি এতদূর আসাতে আমার অনেক তেল খরচ হয় গেলো আমি তো জানিনা এত ঘন জঙ্গলে আপনার বাড়ি আমার দুশো টাকা লাগবে কিন্তু। মেয়েটি নেমে বলে,আমার এতো টাকা নেই। অপেক্ষা করো এখানে,, দিয়ে যাচ্ছি। মুহূর্তে মেয়েটি উধাও হয়ে গেলো।


বেশ কিছু ক্ষণ হয়ে গেলো মেয়েটির দেখা নেই,,টাকা আনতে এতক্ষণ লাগে? হরি মনে মনে ভাবলো যত দেরি হোক টাকা আমি নিয়েই তবে যাবো কি কুক্ষনেই না আজ বেড়িয়ে ছিলাম বাড়ি থেকে!!ঝম ঝমিয়ে বৃষ্টি এলো সামনে কিছুই দেখা যাচ্ছে না ঘন গাছ পালা চারিদিকে,আর দেরি না করে ছাতা খুলে ওই বাড়ির দিকে এগোতে থাকে হরি। অন্ধকারে কিছু দেখা যাচ্ছে না। কোনক্রমে কলিং বেল খুঁজে বাজাতেই এক ভদ্রলোক দরজা খুলে দিলেন। হতভম্ব হরি দেখে লোকটির পিছন দিক থেকে ওই মেয়েটির হাসি হাসি ছবি তাতে ফুলের মালা দেওয়া। হরি কিছু বলতে গিয়ে অবসন্ন শরীর টাল সামলাতে না পেরে দরজার সামনে পরে যায়।


পরের দিন জঙ্গলের ভেতর থেকে কয়েক জন অটো চালক হরি কে খুঁজে বার করে দেখে দেহে তখনো প্রাণ আছে। তারা ছুটলো হাসপাতালের দিকে হরিকে নিয়ে।   ।।সমাপ্ত।।


মঞ্জু চ্যাটার্জি। 17ই আগস্ট।