।। সুনির্মল বসুর কবিতা।।।। নদী থেকে মোহনায়।।বাঁধ ভাঙা নদীর উচ্ছলিত ঢেউয়ের মতো সে একটা জীবন ছিল,কত তার উচ্ছ্বাস, কত তার উথাল পাথাল,সারাদিন সারারাত তাই নিয়ে মন মাতাল,
ভরা নদী ভরা যৌবন, কত তার রূপ,খুশির জোয়ারে সময় বয়ে যেত, চারদ…
।। সুনির্মল বসুর কবিতা।।
।। নদী থেকে মোহনায়।।
বাঁধ ভাঙা নদীর উচ্ছলিত ঢেউয়ের মতো সে একটা জীবন ছিল,
কত তার উচ্ছ্বাস, কত তার উথাল পাথাল,
সারাদিন সারারাত তাই নিয়ে মন মাতাল,
ভরা নদী ভরা যৌবন, কত তার রূপ,
খুশির জোয়ারে সময় বয়ে যেত, চারদিকে দেখতাম
আনন্দের স্বরূপ,
বন্ধু স্বজন চারপাশে, সে একটা দিন,
দিনে রাতে বেজে চলত সুখের বীণ,
বিকেল হলেই বন্ধুরা বলতো, চ্ল্,মাঠে খেলতে
যাবো, মাঠগুলো আজ একলা কাঁদে,
একদিন সবাই জীবন সমুদ্রে জাহাজ ভাসালাম,
তারপর কে কোথায় হারালাম, স্রোতে ভাসলাম,
আসলে, শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতার মতো
আমিও তখন হেমন্তের অরণ্যে এক পোস্টম্যান,
শুধু সুনীল গাঙ্গুলীর কবিতার মত একজন নীরা খুঁজে পাগল পারা,
পরে বুঝেছি, নীরারা দূরের নক্ষত্র,
মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে,
পাশের বাড়ির কৃষ্ণাদি মাকে বলতো, কাকিমা,
বাবলু কলেজ যাবার সময় কথা বলে না,
ওর কি ঘ্যাম,
বলতে পারিনি, কৃষ্ণাদি সুন্দরী মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে আমার নার্ভাস লাগে।
নদী বয়ে যায়, জীবন অবিকল স্রোতে ভেসে যায়,
দুঃখ কষ্ট প্রেম অপ্রেম নদী জলে ধুয়ে যায়,
আজো নদীর তীরে এসে দাঁড়াই, হাঁক দিই,
সুশোভন, মহীতোষ, অভিযান, তোরা কোথায় গেলি,
কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই, শুধু জলের শব্দ,
দূরে নৌকোয় লন্ঠন জ্বলে, মাঝি-মাল্লাদের জলজ সংসার, রাতের জ্যোৎসনা জলে ভেসে যায়,
রাতচরা পাখির কর্কশ কণ্ঠস্বর শোনা যায়,
শীতল বাতাস ঝাউবন দুলিয়ে দেয়,
কখনো কখনো অবশ্য নীরার সঙ্গে গড়িয়াহাট মোড়ে দেখা হয়, বাকী সময় তারা স্বপ্নে আসে,
স্মৃতিতে ভাসে।
রাত্রি আসে, আকাশে তারা ফোটে,
আমি অপেক্ষায় থাকি, সেই তারাটির জন্য,
যে আমাকে অন্যভুবনে নিয়ে যাবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল,
নদী নদীর মতো, জীবন জীবনের মতো বয়ে চলে,
দূর আকাশে ধ্রুবতারা একা চেয়ে দ্যাখে,
নদী মোহনার দিকে যায়।