Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#ইচ্ছেডানা  
বাগানের ডুমুরগাছটার পাতার ফাঁক থেকে উঁকি মেরে আকাশ দেখে সে। কি ওখানে ? শূন্যতা? এত শূন্যতা! সারা আকাশ জুড়ে এত রঙেদের মেলা! হলুদ ,কমলা,নীল! কিন্তু কেন?ওখানে কি হোলি খেলা হচ্ছে? আহঃ, বড়ো মনোরম এই পরিবেশ । যেদিকে তাকাও স…

 


#ইচ্ছেডানা  


বাগানের ডুমুরগাছটার পাতার ফাঁক থেকে উঁকি মেরে আকাশ দেখে সে। কি ওখানে ? শূন্যতা? এত শূন্যতা! সারা আকাশ জুড়ে এত রঙেদের মেলা! হলুদ ,কমলা,নীল! কিন্তু কেন?ওখানে কি হোলি খেলা হচ্ছে? আহঃ, বড়ো মনোরম এই পরিবেশ । যেদিকে তাকাও সেদিকেই কী উজ্জ্বল , কত সৌন্দর্য। অথচ সে কি ভীষণ রকম ফ্যাকাশে । তার শুঁয়ো-ঢাকা দেহে শুধুই আষ্টেপৃষ্টে লেগে থাকে ঘৃণারা । তারও ইচ্ছে করে শুষে নিতে এই সবটুকু।কিন্তু না , তা সম্ভব নয় । সে চোখ ফিরিয়ে নেয় । পাতার মধ্যে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে তার অসহায় মন;  নীরবে । নিজের ওপর অভিমান হয়–এ কেমন শরীর তার? রূপ নেই , রঙ নেই, মান নেই, সুখ নেই। উফ্ অসহ্য। শুধু নেই,নেই, নেই।এইভাবেই ব্যথার পারদ বাড়তে থাকে ক্রমশ । ছোট্ট শুঁয়ো একটু একটু করে তৈরি হয়। তার ধ্যানের সময় আসন্ন; এবারই তো আসল পরীক্ষা । নিজের ক্ষুদ্র শরীরকে সে ঢেকে নেয় আবরণে। শুরু হয় প্রহর গোনার । শূন্য, এক, দুই, তিন... এ এক অপরূপ সাধনা। কোন অজানা সিদ্ধিলাভের আশায় এত নিষ্ঠা, এত ব্রত পালন করছে সে? আদৌ তা পূরণ হবে তো? ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে থাকে। ক্যালেন্ডারের পাতা উলটে যায় । নতুন সূর্য ওঠে, পাল্টে যায় একটা করে  দিন। বসন্ত তার রঙের ঝুলি উজাড় করে ভরিয়ে দেয় বাগান। ফুল, প্রজাপতিদের শিবিরে এখন একটাই আলোচনা―ছোট্ট কোকুনের মধ্যে থেকে সে যে আসবে, তাকে ঠিক কেমন দেখতে হবে? কার মতো হবে সে? লাল কৃষ্ণচূড়া ? নীল অপরাজিতা? নাকি অন্য কোনো রঙে রাঙা, একেবারে নিজের মতো? সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে। এক অদ্ভুত অস্থিরতা ছড়িয়ে থাকে সমস্তটা জুড়ে। তার এতদিনের সাধনার শেষে একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে সে। বদ্ধতা কাটিয়ে অসীম শূন্যে মুক্তিলাভের আশায় বেরিয়ে আসছে। বেরিয়ে আসছে নিজের সৌন্দর্যে সকলকে তাক লাগিয়ে দিতে । হায়! এ কি? ডানায় রূপ আছে কিন্তু রঙ কই ? তাদের বংশে যে সবাই রঙিন! সে একা রঙ ছাড়া বাঁচবে কি করে? সে একটু রঙের ছোঁয়া চায়। সেই জন্য সে রঙিন ফুলের কাছাকাছি যায় , অমনি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয় তার থেকে। তার বয়সী প্রজাপতিরা কেউ খেলেই না তার সাথে। সে যেন অস্পৃশ্য, তাদের কুলের লজ্জা , সে কারোর কাছে গেলেই ওরা তাকে দূর করে দেয়।  রঙের জন্য হাহাকার, ধীরে ধীরে অসহায়তায় পরিণত হয় । এক অজানা বেদনায় ভারি হয়ে ওঠে তার পাখা। সাদা ফুলের মন খুব নরম। তার কষ্টে তাই ওদেরও খারাপ লাগে। ওরা ওদের পাপড়ি মেলে আশ্রয় দেয় তাকে। সে শুধুই ফুঁপিয়ে কাঁদে , আকাশের নামে নালিশ করে সাদা ফুলের কাছে। এমনি করেই সময় পেরোয়। সে বড়ো হয়। সাদা ফুল তার একটা নাম দিয়েছে – ‘ইচ্ছে’। একদিন হঠাৎ-ই বাগান ছেয়ে যায় এক স্বর্গীয় ঔজ্জ্বল্যে । জানা যায়, নন্দনকানন এর এক পরি বিশেষ একটি প্রজাপতির খোঁজে নেমে এসেছে মর্ত্যের বাগানে। পরি জানায় তাদের বাগানের  এক অনন্য শুঁয়ো কিছু ভুল করায় তাকে এই বাগানেই নির্বাসন দিয়েছিলেন দেবরাজ। তার বৃদ্ধিকালে নন্দনকাননের ঐশ্বর্য থেকে বঞ্চিত হয়েছিল সে। কিন্তু এখন তার শাপদশা  কেটেছে , ফেরার সময় হয়েছে তার। সময়ের ঘূর্ণাবর্তে  এখন সে পূর্ণাঙ্গ ।তাই তাকে খুঁজে পেতে বাগানের সমস্ত প্রজাপতিকে একবার  দেখতে চায় পরি। সব শুনে একে একে লাল , নীল , হলুদ , বেগুনি সব রঙিন  প্রজাপতিরাই আসে , কিন্তু পরি জানায় এদের কেউই  সে নয়। অবশেষে ডাক আসে ইচ্ছের । তাকে দেখেই উল্লাস করে ওঠে পরি , সকলকে জানায় এই সেই অভাগা স্বর্গীয় কীট । জন্মকালে যার স্বর্গে ঠাঁই হয়নি বটে , কিন্তু এখন ফিরে যাওয়ার পালা। পুরো বাগানের নিঃস্তব্ধতা ভেঙে কেউ একজন প্রশ্ন করে – “কী তার বিশেষত্ব? কিসে সে আলাদা?” পরি বলে – “সেকি? তোমরা জানোনা? সে যে মন্ত্রঃপূত ।তার ডানায় জাদু আছে। যখন যে ফুলে বসে সেই রঙেই সে রাঙা হয় যে।" অবিশ্বাস্য,  এমনটা আবার হয় নাকি? তবুও যাচাই করতে লাল গোলাপ মেলে ধরে তার পাপড়ি। ইচ্ছে এক লাল টুকটুকে। কি আনন্দ! কি আনন্দ! এত সুখ লেখা ছিল তার কপালে? সবাই আশ্চর্য্য মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে আছে । নীল অপরাজিতা কাছে ডাকছে ! তাতে বসা মাত্রই সে যে নীলাম্বরী। বাতাসে খুশির সুর। ইচ্ছের আবিরপ্রাপ্তিতে সকলেই চমকিত ,সকলেই খুশি । আকাশ তার উদ্দেশ্যে বলে – “কী অভিমানীনি? মান ভাঙল?” ইচ্ছের ছোট্ট সাদা-কালো ডানায় এখন রামধনুর অবাধ আনাগোনা। পরি তাকে মনে করিয়ে দেয় ফেরার সময় হয়েছে। ইচ্ছে নিমেষে উড়ে গিয়ে বসে সাদা ফুলে; জানতে চায় কি করবে সে ? সাদা ফুল তার গালে চুম্বন এঁকে দেয়,  আদরে আদরে ভরিয়ে দিয়ে বলে – “ তোর ইচ্ছেডানায় ভর করে পাড়ি দে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম বাগানে”। ইচ্ছে মেলে ধরে তার ডানা , পরির সাথে উড়ে চলে তার আপন দেশের পথে। ইচ্ছের রূপকথায় মোড়া ইচ্ছেডানার গল্প চুপকথা হয়ে ঘুমিয়ে থাকে পৃথ্বীলোকের ঐ অপরিচিত বাগানে।


কলমে - দেবাশ্রিতা মজুমদার

অঙ্কনে - বনিশা মন্ডল