পাক্ষিক অণুগল্পের আসর
গল্প #দেবীপক্ষ
মনোজিৎ মজুমদার
"এই সায়ন ওঠ, দরজায় খিলটা দিয়ে দে, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে" এই বলে বিশু দেওয়ালে ঝোলানো ঠাকুরের ছবির দিকে তাকিয়ে নমষ্কার করতে লাগলো--ঘুম চোখে সায়ন বললো "তোমার হয়ে গেছে…
পাক্ষিক অণুগল্পের আসর
গল্প #দেবীপক্ষ
মনোজিৎ মজুমদার
"এই সায়ন ওঠ, দরজায় খিলটা দিয়ে দে, আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে" এই বলে বিশু দেওয়ালে ঝোলানো ঠাকুরের ছবির দিকে তাকিয়ে নমষ্কার করতে লাগলো--
ঘুম চোখে সায়ন বললো "তোমার হয়ে গেছে, আচ্ছা যাও, আমি উঠছি"
বাবা শোনো,- আমার জন্য জামা কাপড় এবার কিনতে হবে না--
বিশু ছেলের দিকে তাকিয়ে দেখলো, কিছু বলবে ভেবেও না বলেই দরজা খুলে চলে গেল।
বিশু বাজারে একটা মাছের আড়তে কাজ করে। ভোর চারটেই যায়। ফিরতে ফিরতে সকাল ন'টা।খাবার মাছটা জুটে যায়। এসে আবার রান্না। ছেলে স্থানীয় স্কুলে ক্লাস সেভেন।
সায়ন উঠে দরজায় খিল দিয়ে, চৌকিতে উঠে বসলো। আজ যেন আর ঘুম আসছে না। সকাল হতে দেরি আছে, সবে সারে চার।
হঠাৎ পাশের বন্ধ জানালার পাশে রাস্তায় বিকট আওয়াজ।
পাড়ার ছেলেরা বাজি ফাটাচ্ছে,একটু বাদেই মহালয়া শুরু হবে। সায়ন আস্তে করে জানালাটা খুললো। বাইরে আবছা অন্ধকার। পাশের বাড়ির রাঙ্গা পিসির বাড়ির,শিউলি ফুলের গন্ধ নাকে আসছে। দেওয়ালে ঝোলানো, ছবিটার দিকে চোখ গেল,সায়নের।
মায়ের ছবির পাশেই দিদির ছবিটা। মিটি মিটি করে যেন হাসছে। আজকের দিনেই,গত বছর মহালয়ার ভোরে, একটু তাড়াতাড়িই উঠে ছিল, দিদি। বাবাকে বলেছিল " ভাইকে তোলো,আর রেডিও টা চালু করে রেখে যাও,আমি কটা শিউলি ফুল নিয়ে আসি, এসে ভায়ের সাথে মহালয়া শুনবো"
সেই যে বাইরে গেল, ফিরলো অন্ধকারে সাপের ছোবল খেয়ে। তারপর দুদিন হসপিটালে, সব শেষ। মা টা অনেক আগেই গেছে, সেই ছোট্ট বেলায়। দিদিই ছিলো মায়ের মত, বন্ধুর মতো।
কাঠের পুতুলের মতো সায়ন জানালার পাশে চুপ করে বসে আছে। হাল্কা শিউলি ফুলের গন্ধ আসছে, দুর থেকে মহালয়ার সুর ভেসে আসছে।
দু হাত দিয়ে মুখে বালিসটা চেপে ধরলো, সায়ন। ভিজে যাচ্ছে বালিসটা, কিছু একটা হয়তো বলছে।
"হয়তো বলছে, সবার জন্য দুগ্গা মা আসছে,আমার দুর্গা দিদি আর আসবে না"
সায়নের দিদিরও নাম দুর্গা ছিল। ( কাল্পনিক)