পাক্ষিক অণুগল্পের আসর বিষয়- উন্মুক্ত শিরোনাম- গুরুদক্ষিণা কলমে- প্রদীপ সেন তারিখ- ১২/০৮/২০
আজ রোববার, টিউশন বন্ধ। ফেসবুক ঘাঁটছিলাম। হঠাৎ দরজায় কে-যেন টোকা দিয়ে ডাকলো- স্যার, ভেতরে আসবো? আমি বললাম- চলে এসো। দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল আমার…
পাক্ষিক অণুগল্পের আসর
বিষয়- উন্মুক্ত
শিরোনাম- গুরুদক্ষিণা
কলমে- প্রদীপ সেন
তারিখ- ১২/০৮/২০
আজ রোববার, টিউশন বন্ধ। ফেসবুক ঘাঁটছিলাম।
হঠাৎ দরজায় কে-যেন টোকা দিয়ে ডাকলো- স্যার, ভেতরে আসবো?
আমি বললাম- চলে এসো।
দরজা ঠেলে ঘরে ঢুকল আমার এক প্রাক্তন ছাত্র ও তার বাবা। ছাত্রের হাতে একটা বড়ো মিষ্টির প্যাকেট। ওদের বসতে বললাম। ছাত্র আমাকে, আমার স্ত্রীকে আর তার বাবাকে প্রণাম করে সোফায় বসল। ওর বাবা করজোড়ে নমস্কার জানালে আমিও প্রতিনমস্কার জানালাম।
- স্যার, আমি অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসরের চাকরি পেয়ে প্রথম বেতনের টাকায় আপনার জন্য সামান্য মিষ্টি এনেছি।
বললাম- খুব খুশি হলাম।
ওর বাবা বলল - স্যার, আপনি কয়েক বছর ওকে বিনা পারিশ্রমিকে পড়িয়েছেন বলেই দিনমজুরের ছেলে আজ এই জায়গায় আসতে পেয়েছ। বিনা গুরুদক্ষিণায় ওর এতো উচ্চতায় আসতে পারার পেছনে আপনার অবদান সবচেয়ে বেশি।
বললাম- আমি তো অবলম্বন মাত্র। তবে চাইলে সে আমাকে আজ গুরুদক্ষিণা দিতেই পারে।
গৃহিণী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। বাবা ও ছেলে বলে-বলুন স্যার, কী গুরুদক্ষিণা চাইছেন? আজ আমি দিতে পারবো।
হেসে ছাত্রটিকে বললাম- তোমার বাবাকে এতোটা সুখ দাও যা তাঁর এতোদিনের দুঃখকে ভুলিয়ে দেয়। এটাই তোমার কাছে আমার গুরুদক্ষিণা।
ওর বাবা কেঁদেই ফেললেন। ছাত্র উঠে এসে আবারও আমায় প্রণাম করে বলল - স্যার, আশীর্বাদ করুণ যেন অমানুষ না হই। তা-ই হবে!
মনে হলো আমার পঁয়তাল্লিশ বছরের শিক্ষকতার জীবনে শ্রেষ্ঠ গুরুদক্ষিণা পেলাম।