Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-সাপ্তাহিক-সেরা-সম্মাননা

#সাপ্তাহিক_প্রতিযোগিতা_পর্ব - ১৭

#বিষয়_গৃহ_বন্দী_জীবন

#শিরোনাম_গৃহবন্দিনী রা এবং কুমুদ
#কলমে:শুভা গাঙ্গুলি
তারিখ:৩০.৭.২০

কুমুদিনী ছাদে তাঁহার মেঘসদৃশ কেশদাম শুকাইতেছিলেন,তিনি প্রত্যহ দুপুর দুইটা হইতে চার ঘটিকা ছাদে ঘুরিয়া ঘু…



#সাপ্তাহিক_প্রতিযোগিতা_পর্ব - ১৭

#বিষয়_গৃহ_বন্দী_জীবন

#শিরোনাম_গৃহবন্দিনী রা এবং কুমুদ
#কলমে:শুভা গাঙ্গুলি
তারিখ:৩০.৭.২০

কুমুদিনী ছাদে তাঁহার মেঘসদৃশ কেশদাম শুকাইতেছিলেন,তিনি প্রত্যহ দুপুর দুইটা হইতে চার ঘটিকা ছাদে ঘুরিয়া ঘুরিয়া গান করিতে করিতে তাঁহার চুল শুকান। কুমুদিনী উনত্রিশ বৎসর বয়স্কা বাল্যবিধবা,বাল্যে ছয়বৎশর বয়সে কুলীন প্রথায় বিবাহ নয় বৎসরে বৈধব্য যোগ, কুমুদ স্বামীকে চিনিত না ,মরিলে বিন্দুমাত্র দু:খিত হয় নাই, পিতৃদেবের স্বচ্ছল অবস্থা তাই তাহার জীবন সুখেই কাটিত , কিন্তু তাহাকে তখনকার নিয়ম কানুন অনুযায়ী  গৃহবন্দী হইয়া থাকিতে হইতো।
গল্প এই পর্যন্ত ঠিক ছিলো ,কিন্তু সমস্যা দেখা দিলো কুমুদের দাদা বিলাত হইতে তিনটা পাশ করিয়া ফিরিয়া আসিলে, সে আসিয়া কহিলো কুমুদ লেখাপড়া শিখিবে, কেবলমাত্র নির্জলা উপবাস করিয়া জীবন  কাটাইবে না।

বিদ্যাসাগর মহাশয় মেয়েদের শিক্ষা নিয় অনেক ব্যবস্থা করিয়াছেন, কুমুদ বিদ্যালয়ে যাইবে,

আর পড়াশোনার পাশাপাশি শিল্পকর্মও শিখিবে,|খেলাধুলাও করিবে,রায় বাডীতে বড ছেলের কথা মান্য করা হইতো, তাই কুমুদের বন্দীদশা ঘুচিলো কিন্তু অন্য অশান্তি দেখা দিলো,
তাহার বয়সী মেয়েদের অভিভাবকরা এই রীতিকে প্রশ্রয় দিলো না ফলে কুমুদ সখীহীন হইলো, কিন্তু কুমুদ দমিবার প্রাত্রী নয়, সে সকলকে বুঝাইয়া গুটি কতক ছাত্রী  জোগাড়
করিলো, পড়াশোনায় মোটামুটি ভালোই ছিলো, ইস্কুল পাস করিলে দাদা পুনরায় বিবাহের চেষ্টা করিতে লাগিলো,ততদিনে। বিদ্যাসাগর মহাশয় বিধবা বিবাহ আইন পাশ করিয়াছেন, সেই হেতু দাদা বোনের বিবাহের জন্য ব্যস্ত হইলো।
কুমুদ ছোটবয়সে বিবাহ নামক প্রণালী সম্পর্কে কোনো ধারণা করিতে পারে নাই,এখন দেখিলো এবং বুঝিলো আইন পাশ হইলেও বাল্য বিধবার  বিবাহ সহজ নহে,
নারী ঘরে পচিয়া মরিবে কিন্তু বাহিরের জগতে যাইতে পারিবে না।
কুমুদ দুই একবার দাদার কথা মানিয়া পাত্রপক্ষের সামনে বসিলো, কিন্তু তাহাদের পণপ্রথা  শুনিয়া নিজেই নাকচ করিলো।

কুমুদ নিজেই গ্রামের মেয়েদের লেখাপড়ার পাঠ দিয়া তাহাদের মানসিক শক্তি বাড়াইতে লাগিলো, নানারূপ কুসংস্কারাচ্ছন্ন মনোবৃত্তির বাহিরে যে একটা সুস্থ জগত আছে সে তাহাদের শিখাইলো,
এ কাজে তাহাকে প্রচুর অসুবিধার সামনে পড়িতে হইলেও সে পশ্চাদপদ হয় নাই।

এত অবধি গল্প মোটামুটি ঠিক চলিতেছিলো,॥এইবার ঘটনায় নয়া মোড় আসিয়াছে,কুমুদিনীর পাশের বাডীতে কোলকাতা হইতে এক মাষ্টার আসিয়া ছেলেদের স্কুলে জয়েন করিয়াছে,বিশ বছরে গ্রামে প্রচুর উন্নতি হইয়াছে,

মেয়েদের ইস্কুল ছেলেদের ইস্কুল সব কিছুই কুমুদ আর ওর দাদার আন্তরিক প্রচেষ্টায় গঠিত হইয়াছে,মেয়েরা এখন চারদেয়ালের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অশিক্ষিত গৃহবন্দী অবস্থায় দিনযাপন করে না, জ্ঞানের আলো গ্রামে প্রবেশ করিয়াছে।
খোঁজ লইয়া জানা গেছে নতুন মাষ্টার এখনও বিবাহ করে নাই সাংসারিক কারণে, এক্ষণে সে ছাদে বিচরণরত কুমুদকে দেখিয়া কিন্চিত বিচলিত  হইয়াছে, সম্ভবত: সমাজসংস্কারক কুমুদ এবং সংসারসুদারক মাষ্টার  কুমুদের দাদার পরামর্শে একত্র থাকিবে।
কুমুদ  দৃঢব্যক্তিত্বসম্পন্না সুন্দরী এবং স্বাধীনতেতা,সাধারণ জনতার ভাষায় দজ্জাল কিন্তু মানুষটির কাজে সারা গ্রাম উৎসাহিত
সে অলিখিত লকডাউন হইতে নারী জাতিকে মুক্তি দিয়াছে।।

#কলমে_শুভা গাঙ্গুলি
#রচনাকাল ৩০/০৭/২০২০