Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সাম্যের স্বাধীনতা - মালবিকা মজুমদার

সাম্যের স্বাধীনতা মালবিকা মজুমদার
ক্রান্তীয় আগুন পেরিয়ে ঐতিহাসিক স্বাধিকার চাওয়া মিছিলের পিছনের সারিতে হয়তো ছিলো আমাদের ও আত্মীয় পরিজন।রাত্রির জ্লন্ত মশালের সামনে সোচ্চার প্রতিবাদের সূচনায় গর্জে গড়েছিল নতুন ভোরের অভিযান।সামান্য ভে…

 

সাম্যের স্বাধীনতা 

মালবিকা মজুমদার 


ক্রান্তীয় আগুন পেরিয়ে ঐতিহাসিক স্বাধিকার চাওয়া মিছিলের পিছনের সারিতে হয়তো ছিলো আমাদের ও আত্মীয় পরিজন।

রাত্রির জ্লন্ত মশালের সামনে সোচ্চার প্রতিবাদের সূচনায় গর্জে গড়েছিল নতুন ভোরের অভিযান।

সামান্য ভেবেই আহুতি দিয়েছিলো হাসতে হাসতে তরতাজা অমূল্য সব প্রাণ দিন বদলের পালায় ।

অনাহার অনিদ্রায় শীর্ণ শরীরে আধপেটা খাওয়া বীর প্রত্যয়ী ভারতবাসী বদ্ধপরিকর ছিল ছিনিয়ে নিতে মাতৃভূমির মুক্তির স্বাধীনতায়।

বিবাগী দুর্জয় দুর্দম অসীম সাহসী ছিলো যে তাঁরা যুগের কর্মযোগী অক্ষত শত নাম লেখা ইতিহাসের পাতায়। 

সংকল্পের শাখায় বিচ্ছিন্ন ওদের ভাবনা, সকলের জন্য স্বাধীনতা একমাত্র ছিনিয়ে আনা।

মধ্য রাতের অন্ধকার ছিড়ে দিব্য চোখে এগিয়ে যেতো নির্ভীক সংগ্রামের পথে 

অত্যাচারীদের থেকে কেড়ে নিতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিল, অধিকার এর চির সবুজ বাসস্থান আগামীর ।

একে একে জীবনের বিনিময়ে পেয়েছিল সাফল্যের নক্শা ,এঁকেছিলো নিজেদের হাতে তাঁরা যুগবীর।।

আবেশের ঘোরে নয় কঠিন রাস্তায় শত্রুর গুলিতে কামানের গোলায় রক্ত ঝরিয়ে ঝাঁঝরা পাঁজরে ধরে ছিলো বহু কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতার পতাকা ১৫ই আগস্ট আজকের দিনে।

আশা যাপনের ইতিহাসে স্বাধীনতার প্রচ্ছদ এঁকে দিয়েছিলো ঊষার আয়ুতে। 

পরাধীনতার অসুখের গ্লানি মুছে গিয়েছিলো সাম্য ভাতৃত্ব আর একতার গানে ।

.................................…

তিয়াত্তরের স্বাধীনতা

মালবিকা মজুমদার 



ফুটপাথে বেড়ে ওঠা কেলো পুঁটি গেটে লক্ষি খেন্তি ও বালুদের স্বাধীনতা মানে বছরের একদিন না চেয়ে পাওয়া জিলিপি কেক আর বিস্কুটে সকালের পেটের জ্বালা মেটানো। 


স্টেশনের চায়ের দোকানে সকাল থেকে কাপপ্লেট ধোওয়া ছেলেটার কাছে স্বাধীনতা মানে আর সকল ছুটির মতোই আরেকটা ভীষণ ব্যস্ততম কাজের দিন।


সূর্য ওঠার আগে চারটের লোকাল ট্রেন ধরা দশ বারো বাড়ি কাজ করা মালিনা মাসিদের কাছে দুবেলা দু মুঠো জোগাড় করতে করতে স্বাধীনতা মানে জানার সময় হয়ে ওঠেনা ।


মায়ের সাথে ইমারতের ইট বালি বওয়া মেয়েটার কাছে স্বাধীনতার মানে রাস্তার উপর পোলে বাঁধা হাওয়ায় পত্ পত্ করে  ওড়া পতাকার সারি।


সিগনালে হাত পেতে দাড়ানো প্রতিবন্ধী ভিখারীটি  জন্মান্ধ সে স্বাধীনতার স্বপ্নকে ছুঁতে দেখতে  পারেনি কোনদিন।


এম-কম করা ছেলেটা সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে বাড়িতে মুদির দোকান করে অবশেষে  স্বাধীনতা পেয়েছিলো। 


উচ্চ মাধ্যমিক পাশ ছেলেটা বেসরকারি অফিসে অফিসে ঘুরে এখন সব্জি নিয়ে দুই বেলা বাজারে বসে সংসার চালিয়ে  দিব্বি স্বাধীন।


মাধ্যমিক এ চারটে লেটার পেয়ে ও পাড়ার নবীন আর কলেজে ভর্তি হতে পারে না, ডোনেশন এর টাকা জমা দিতে পারেনি ওর বাবা,ও এখন বাড়িতে তেলে ভাজার দোকান দিয়েই স্বাধীন ব্যবসায়ী।


-স্বাতীর শ্বশুর বিলেত ফেরত ছেলের যৌতুক স্বরূপ দুই লাখ চেয়ে নিল। কন্যাদায় গ্রস্থ বাবা চাষের জমি বেঁচে তাই দিয়ে মেয়ের জীবনে স্বাধীনতা কিনেছিলো।  ছয় মাস না যেতেই আবার টাকার আবদার। না দিতে পারেনি গরীব বাবা । মেয়েকে শেষ করে আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করে  । স্বাধীনতার শেষ রক্ষা হলো না ।


ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে কাজ মেলেনি তাপস এর ,সে এখন অটোর মালিক , গাড়ি কেনার শখ ছিলো ছোট বেলা থেকেই ,তাই অটো নিজে চালিয়ে দু বেলা পেটের  স্বাধীনতা কিনে আনে।


একসাথে ছোটবেলায় সরকারি স্কুলে যেতো খালের পাড়ের সাধন গোরা নিতাই কালি।খাল ভরাট করে যখন হাইওয়ে হচ্ছে তখন ওরা

সবাই মিলে প্রমোটারি করে পাকা ঘর বাধছে। এখন ওরা অনেকটা স্বাধীন।


-গ্রামের হতদরিদ্র হারান মেয়ের স্কুলে পাওয়া সাইকেল বেঁচে ঘরটা মেরামত করেছে ,একটি বছরের স্বস্তির স্বাধীনতা কিনলো।


-তিন মেয়েকে পড়াশুনা পাত্রস্থ করিয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে বসু পরিবার ,এখন স্বামী স্ত্রী দুজনে সরকারি আবাসনে পাকাপাকি স্বাধীন  দম্পতি।


রতন পাঁচটি পেট চালাতে মাঝরাতের অন্ধকার রাজপথে নামে শিকারের খোঁজার  কাজ করে ।

মা বেরোনোর সময় রোজ তাবিজ বেঁধে দিয়ে আঁচলের খুঁটে চোখ মুছে স্বাধীনতা চায়। 


গ্রামের লতাদিদি প্রাইমারি স্কুলে পড়া তো ,  স্বাধীনতা দিবসে গান গাইতো এবারে অতিমারীর কঠিন অসুখের সময় চিকিত্সার মোটা অঙ্ক জমা করতে পারেনি পরিবার। সে এ বছর স্বাধীনতা দিবসের দিন চির বিদায় নিলো।সবাই তাকে শ্রদ্ধা জানালো।


ইংরাজি সাহিত্য এম এ বি এড করে রজত এখন প্রতিষ্ঠিত গৃহশিক্ষক , বাড়িতেই ছাত্ররা এসে স্যরের সাথে পতাকা উত্তোলন করে জাতীয় সঙ্গীত করলো স্বাধীনতা দিবস পালন করলো।


-পৈত্রিক ভিটেমাটি আঁকড়ে রাখতে সরকার দম্পতির প্রাণটাই চলে গেলো , এখন ওদের জমিতে বড় শপিংমল সামনে বিশাল গাউন্ডে 

আজ  বড় পোলে স্বাধীনতার পতাকা

উড়ছে। মাইকে দেশাত্মবোধক গান বাজছে।