Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

গনগনি_গ্র্যান্ড_ক্যানিয়ন_অফ্_বেঙ্গল

#গনগনি_গ্র্যান্ড_ক্যানিয়ন_অফ্_বেঙ্গল গড়বেতা: পশ্চিম মেদিনীপুর নরসিংহ দাস বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার অন্তর্গত...মালভূমি অঞ্চলের শিলাবতী নদীর ডান পাড়ের নদী বাঁকের খাড়াই পাড় সংলগ্ন …

 


#গনগনি_গ্র্যান্ড_ক্যানিয়ন_অফ্_বেঙ্গল
গড়বেতা: পশ্চিম মেদিনীপুর
নরসিংহ দাস
বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামে পরিচিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতা থানার অন্তর্গত...মালভূমি অঞ্চলের শিলাবতী নদীর ডান পাড়ের নদী বাঁকের খাড়াই পাড় সংলগ্ন গনগনি ডাঙা.... মেদিনীপুর শহর বাঁকুড়া রাস্তায় (৬০ নং জাতীয় সড়ক) গড়বেতা ঢোকার আগেই ডান দিকে বাঁক নিয়ে গড়বেতা কলেজ পেরোলেই পৌঁছে যাওয়া যায়.... 

মেদিনীপুর শহর থেকে দূরত্ব মাত্র ৫০ কিমি...ল্যাটেরাইট সমৃদ্ধ এই অংশের মূল বৈশিষ্ট্য কমবেশী ৩০ মিটার উচ্চতাসম্পন্ন গনগনি ডাঙার বৃষ্টির জল নদীর খাড়া পাড় বরাবর প্রবাহিত হয়ে শেষে শিলাবতী নদীতে গিয়ে মিশেছে....

আর খাড়া পাড়ের উঁচু অংশ থেকে জলধারা নদীতে মিলিত হ‌ওয়ার মাঝেই.... সৃষ্টি করেছে নানান ভূমিরূপ.... ভৌগোলিকদের মতে এই কার্য প্রক্রিয়া ১০,০০০ বছর আগে থেকেই শুরু হয়েছে....যে কারনে উপরের পাতলা ল্যাটেরাইট শিলাস্তরের নীচেই রয়েছে কোয়ার্টারনারি পাললিক শিলা স্তর... বৃষ্টির জলের ভূপৃষ্ঠ প্রবাহ ও ঋতুভিত্তিক ভৌমজলস্তরের ওঠানামার কারনে..

..প্রায় ১ বর্গ কিমি স্থান জুড়ে....নালি ও গালি ক্ষয়ের কারনে একটি ক্ষয়িষ্ণু ভূমিরূপের সৃষ্টি হয়েছে.... বর্তমান শিলাস্তরের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল... বৃষ্টির জলের দ্রবণ প্রক্রিয়ার ফলে শিলার ক্ষয়... বৃষ্টি হীন অবস্থায় আবার পরে তা জমাট বেঁধে যাওয়া....সামগ্রিক অঞ্চলের সাপেক্ষে অঞ্চলটি গভীর খাত যুক্ত হ‌ওয়ায়.... আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের শুষ্ক অঞ্চলের ওপর দিয়ে প্রবাহিত কলোরাডো নদীতে সৃষ্টি গভীর গিরিখাত....যা গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন নামে পরিচিত...তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে.... এই অংশটি 'বাংলার গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন' নামে পরিচিত....

এক অদ্ভুত প্রাকৃতিক ভূমিরূপের নিদর্শন লক্ষ্য করা যায় এই অংশে.... জলপ্রবাহ জনিত রিল ও গালি ক্ষয়ের কারনে নানার ভূমিরূপের দেখা মেলে... কিছু কিছু ভূমিরূপ রয়েছে...যার সঙ্গে অন্যান্য প্রাকৃতিক শক্তির দ্বারা ক্ষয় ও সঞ্চয় কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের সঙ্গে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়... যেমন- মরু অঞ্চলের - গৌর/গারা, ইয়ারদাঙ, জুগ্যান এর ন্যায় বেশ কিছু ভূমিরূপ... আবার কার্স্ট অঞ্চলের - প্রাকৃতিক গুহার মধ্যে সৃষ্ট স্ট্যালাকটাইট, স্ট্যালাকমাইট, হেলিকটাইট, স্তম্ভ.... যদিও এখানের ভূমিরূপ ঝুলন্ত নয়, তবুও দেখতে হুবহু ঐ ভূমিরূপের ন্যায়....আবার সামুদ্রিক ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট- খিলান, প্রাকৃতিক সেতু, স্ট্যাক, স্ট্যাম্প এর ন্যায় ভূমিরূপ‌ও রয়েছে... নদীর কার্যের ফলে সৃষ্ট- গভীর গিরিখাত, পলল ব্যাজনী, নদীবাঁক বরাবর খাড়া পাড়.... হিমবাহের কার্যের ফলে সৃষ্ট- গ্রাবরেখা, হিমদ্রোণী...

আমার
চোখে আমি তাই দেখলাম....
আবার অন্যভাবে বললে...খাড়া পাড়ের দেওয়াল বরাবর... জলধারার ক্ষয়ের কারনে...যে ভূমিরূপ সৃষ্টি হয়েছে...শিল্পীর চোখে তা প্রাকৃতিক ভাস্কর্যের মতো.... প্রত্যেকটি ক্ষয়ের মাঝের উন্নত ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশ যেন...দেওয়ালে খোদাই করা অসমাপ্ত মূর্তি বিশেষ....
একদিকে যুবতী শিলাবতীর প্রবাহ... অন্যদিকে ঊষর ভূমিরূপ...এ যেন ধ্যানে রত  কোন "ঊষর" মুণি ঋষির ধ্যান ভঙ্গ করতে,  স্বর্গের অপ্সরী "শিলাবতী"র আগমণ....বর্ষার আগমনে শিলাবতী তার ছলাকলায় ঋষির মনে ও দেহে এঁকে দেয় নানান ক্ষতচিহ্ন....
বর্তমানে জায়গাটি পিকনিক স্পট হিসেবে বা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত.... আবার শিক্ষাক্ষেত্রে এটি একটি ক্ষেত্র সমীক্ষার স্থান‌ও বটে....

গনগনির ডাঙা.. উপরের বিস্তির্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে কাজুবাদামের বন...ঊষর অঞ্চলের নীচের দিকে নদী প্রান্ত বরাবর রয়েছে তালগাছের সারি...বর্ষার শেষে কাশফুল, নদীপ্রবাহ, দূরে রেলব্রীজ, চারিদিকে ঘন বনাঞ্চল....এক আলাদা অনুভূতিতে ভরে যায় মন ও প্রাণ...নীচে নামার জন্য একদিকে সিঁড়ি নির্মান করা হয়েছে...খাড়া পাড় সংলগ্ন অংশে ঘোরাঘুরি না করার জন্য রয়েছে...

বিশেষ সতর্কীকরণ....ঘন্টা তিনেক মনপ্রান ভরে কাটিয়ে দেওয়া যায় প্রাকৃতিক এই মনোরম পরিবেশে....