#কবিতা#এই কি স্বাধীনতা#দেবাশিস বসু#১২/০৮/২০২০
ভোর ভোর বিউগলের শব্দেবিগ ড্রাম বেজে ওঠে দুন্দুভি নিনাদেপতাকা ওড়ে স্কুল কলেজ রাজভবনেমার্চপাস্ট উদ্ধত শির সেনানীর গর্বিত চরণেলালকেল্লার মস্তকে ওড়ে আকাশজোড়া পতাকাদূরদর্শন জুড়ে থাকে প্রতিশ…
#কবিতা
#এই কি স্বাধীনতা
#দেবাশিস বসু
#১২/০৮/২০২০
ভোর ভোর বিউগলের শব্দে
বিগ ড্রাম বেজে ওঠে দুন্দুভি নিনাদে
পতাকা ওড়ে স্কুল কলেজ রাজভবনে
মার্চপাস্ট উদ্ধত শির সেনানীর গর্বিত চরণে
লালকেল্লার মস্তকে ওড়ে আকাশজোড়া পতাকা
দূরদর্শন জুড়ে থাকে প্রতিশ্রুতির অলীক ধামাকা
এই কি স্বাধীনতা- তিয়াত্তরটা বছর পরে
এখনো কাপুরুষ চিত্ত-অবনত শিরে
শিক্ষাহীন জ্ঞানহীন শত বিভক্ত জাতিগোষ্ঠী
মুষ্টিমেয় ব্যক্তির পদতলে নিষ্পেষিত এক সমষ্টি
সীমাহীন দারিদ্র্যের কৃষ্ণগহ্বরে গরীবের কান্না বিস্ফোরণে
'এক মুঠো ভাত' জীবনের ধূসর ইতিহাস একটি বাক্যবন্ধে
শীর্ণ বুক পিঠ পাঁজর কৃষক মুক্তি খোঁজে ফলিডলে
ঋণগ্রস্ত কৃষকবধূ জোতদারের লোলুপ কবলে
কন্যাভ্রূণের ছিন্নভিন্ন শরীর
করাতের শানিত দাঁতে-দগ্ধ আগুনের চিতায়
হাত পা ছোঁড়া আর্তনাদে
জীবন্ত কবর চার ফুট মাটির তলায়
বুভুক্ষু শৃগালের আহার-হায়নার কাড়াকাড়ি
গঙ্গাজলে ভেসে যায় সদ্যোজাতের সারি
কাপড়ের পুঁটুলিতে নিজস্ব বিষ্ঠায় শ্বাসরুদ্ধ ভবিষ্যতহীন নারী
ভাঙা বোতল লোহার রডে কুমারী যোনীর বলাৎকার
ছিন্ন অন্তর্বাসে লেগে থাকে গরলের ধূসর শীৎকার
শরীরে অজস্র হায়নার নখের উপস্থিতি
নিতম্ব ঊরুদেশ নাভিমূল জুড়ে আলপনার স্মৃতি
এখনো নারীর সৌন্দর্য পুরুষের প্রয়োজনে
সৌন্দর্য সহবাস আর সতীচ্ছদের সন্ধানে
নারীকে খোঁজে যৌতুক আর সঙ্গমে-
খোঁজে পুত্রলাভে বংশের নামাঙ্কনে
এখনো দাঁড়ায় মাতৃমূর্তি আলোকস্তম্ভের অন্ধকারে সার দিয়ে
বিদ্যাসাগরের কর্তিত মস্তক কবন্ধ কণিষ্ক যেন মহাবিদ্যালয়ে
যখন কংক্রিটের জংগলে গাছেদের যথেচ্ছ হনন
বিরলকেশ শিশুর কোঁচকানো চামড়ায় আর্সেনিক দহন
সমুদ্রে তেলের চাদরে কারখানার হলুদ প্রস্রাবে সীসার কণায়
শৈবাল মারা গেছে পর্বতগাত্রে-
হিমবাহে জলধারা শুকায়
সাগরের বাদামী তলদেশ সহস্র প্রাণীর সমাধিস্তূপে-
প্রবালেরা দিন গোনে মৃত্যুর প্রতীক্ষায়
বন্ধ কল বন্ধ কারখানা বন্ধ নির্মাণ
বকেয়া মাইনে-বন্ধ অর্থের জোগান
অর্থহীন কর্মহীন নিরন্ন দশ কোটি সন্তান
পথই সাথী পথেই জীবন
পথের বাঁকে বাঁকেই লুকিয়ে আছে সহস্র মরণ
রেলপথেই শায়িত ইস্পাত কারখানার পরিযায়ী ষোলো
মালগাড়ীর চাকায় তাদের দুঃস্বপ্নের ইতিহাস লেখা হোল
ট্রাক উল্টে মারা যায় কত পরিযায়ী
পথেই স্মৃতি ফুটফুটে কিশোরী-
কেউ না কেউ তো দায়ী
কৃত্রিম পা হিঁচড়ে চলে ক্লান্ত কিশোরী
পায়ের ফোস্কা ফেটে দগদগে ঘা-দুঃস্বপ্নের বিভাবরী
এক মুঠো খাদ্য এক চুমুক জল দেয় না সভ্য নগরী
বৃদ্ধ মানুষটার মুখ থেকে খুলে ভেন্টিলেটার
তরুণের মুখে লাগানো-'যোগ্যতমের বেঁচে থাকা দরকার'
অনেক দিন বেঁচেছো-দেখেছো অনেক গ্রীষ্মের দাবদাহ
উৎপাদনে অক্ষম, অকর্মণ্য তুমি-বিদায় পিতামহ
এখনো কেন কর্মহীন যৌবন আত্মহত্যা করে
মেহুল,নীরব,বিজয় দেশ লুটে পালায় দেশান্তরে
আয়কর ছাড় পায় ঋণখেলাপী
হেলিপ্যাড জোড়া বিশাল প্রাসাদের নীচেই নিরন্ন ধারাভি
বৃদ্ধ যষ্ঠিকে শুধোয় "আর কত কমবে সুদের হার-
কেন জমার সুদ কমিয়ে কর্পোরেট ছাড়"
এখনো কেন খাপ পঞ্চায়েত-
কাঙারু আদালতে মৃত্যুর শমন
কেন দাউদাউ আগুনে সতীত্বের মিথ্যে বাহন
এখনো পুড়ে কাঠকয়লা হয় যুবতী তন মন
উল্কি দিয়ে শরীরে দেগে দিয়েছে ধর্মের তকমা
মনুর সন্তানদল-মহোৎসবে এখনো উচ্চবর্ণের উপমা
এই মিথ্যে স্বাধীনতার আগুনে আমি লেলিহান -
তিয়াত্তরটা বছর ধরে কেঁদেছে সংবিধান-ব্যর্থতায় মুহ্যমান
এমনই জ্বলতে জ্বলতে হয়তো জন্ম নেবে কোন সবুজ গ্রহ
শিলাযুত ঝরে পড়বে- অঙ্কুরিত হবে এক বীজ হরিদ্রাভ
সেই স্বাধীন ভারতবর্ষে মুক্ত মানুষের সান্নিধ্যে
বিউগলের শব্দে বিগ ড্রামের দুন্দুভি নিনাদে
থাকবো তুমি আমি ও সে
বাতিস্তম্ভ থেকে ঝোলা পতাকার নিষ্পাপ নির্যাসে