।।পথের পাঁচালীর রূপকারকে ঘিরে।।।।। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে কিছুক্ষণ।।।। সুনির্মল বসু।।
এক নবমী পূজোর সকালে তাঁর বাড়ি হাজির হলাম। তাঁর শ্যালিকা ভেতর ঘরে বসতে দিলেন।সামান্য একটা চৌকি খাট,তাতেই বসলাম। এই খাটটি তাঁর। তি…
।।পথের পাঁচালীর রূপকারকে ঘিরে।।।
।। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে কিছুক্ষণ।।
।। সুনির্মল বসু।।
এক নবমী পূজোর সকালে তাঁর বাড়ি হাজির হলাম। তাঁর শ্যালিকা ভেতর ঘরে বসতে দিলেন।সামান্য একটা চৌকি খাট,তাতেই বসলাম। এই খাটটি তাঁর। তিনি বাংলা সাহিত্যের অপরূপ রূপ লোকের রূপকার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।শ্যালিকা বললেন,দেশে অনেক লেখক আছেন, তিনি অন্যরকম।হরিনাভি স্কুলে শিক্ষকতা করবার সময় মাঝে মাঝে বাড়ি আসতেন না।দিদি রমা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে খুঁজে দেখতে বললে, তিনি দেখতেন, ইছামতী নদীর পাড়ে তিনি ঘূরছেন। জিঞ্জাসা করলে,বলতে পারতেন না,এ কদিন কোথায় ছিলেন।
যে ফুল রেল লাইনের পাশে অযত্নে ফুটে থাকে, তিনি তার নাম দিতেন, যে পাখির নাম কেউ জানে না, তিনি তার নাম দিতেন। তাঁর শ্যালিকা বললেন,সাহিত্য লিখতে লিখতে তিনি ঈশ্বর মুখী হয়ে পড়েছিলেন।সারা রাত ধরে তিনি সহধর্মিণী রমা দেবীর সঙ্গে আকাশের তারা দেখেছেন।
বড় মায়াময় মানুষ তিনি। একবার ক্লাসে একটি ছাত্রকে বকেছেন,মন খারাপ। পরদিন তাঁকে ডেকে বললেন,এই গুটকে,তোকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছি।
বাড়িতে অতিথি আসায় বাজার গেলেন। একটি মহিলা বেগুন বেচছিল। বিক্রি হয়নি বলে, বিভূতিভূষণ সব বেগুন কিনে পয়সা দিলেন,নিলেন দুটো মাত্র।
ক্লাসে গিয়ে বলতেন,জানালা খুলে দিতে, বলতেন,এই আকাশ,এত আলো,এই গাছপালা কত যে শেখায়। আমরা চোখ থাকতেও, দেখি না।
ঘাটশিলায় থাকার সময় বন্ধু মুকুল চক্রবর্তীকে বলতেন,কাকের ভাষা তিনি বুঝতে পারেন। একজনের মেয়ে মারা যাওয়ায়,মেয়ের বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, তোমাদের মেয়ে কোথাও যায় নি,ও এখানেই আছে,যত দিন তোমরা ওকে মনে করবে,ও এখানেই থাকবে।যখন তোমরা ওকে ভুলে যাবে,তখন ও এইখান থেকে চলে যাবে।
বিভূতিভূষণ ভেন্ডারে উঠে স্কুল যেতেন। সবজিওয়ালাদের কাছ থেকে ফসলের খবর নিতেন।
তাঁর একমাত্র পুত্র প্রয়াত তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলেছিলেন, আমার স্বর্গীয় পিতৃদেব ছিলেন যুধিষ্ঠিরের তূল্য ব্যক্তিত্ব, তাঁর জীবনের রথ চক্র ভূমির উপর দিয়ে যেত, পৃথিবীর কোনো মালিন্য কখনো তাঁকে স্পর্শ করে নি।
মৃত্যুর আগেই তিনি যাবার সংকেত পেয়েছিলেন। তিনি স্কুল থেকে ফিরছেন, একটি মৃতদেহ শ্মশানমুখী হয়েছে।
কে মারা গেল গো।
মাষ্টারমশাই,আপনি চিনবেন না,পাশের গাঁয়ের।
একটু দেখাবে।
ওরা দেখালেন।
বিভূতিভূষণ দেখলেন,অন্য মানুষ,মুখটা হুবহু তাঁর মতো। পরদিন তিনি চলে গেলেন।
বিভূতিভূষণের মৃত্যুও ঘটেছিল,মুঘল সম্রাট বাবরের প্রার্থনার মতো। ছোট তারা দাসের তখন রক্ত বমি হচ্ছিল। ঈশ্বরগত বিভূতিভূষণ নিজের প্রানের বদলে, ছেলের প্রান চাইলেন।
মারা যাবার আগে বলেছিলেন, তোমরা কাঁদছো কেন, আমি কোথাও যাচ্ছি না,কেবল এ ঘর আর ও ঘর।যখন যখন তোমরা ঝর্নার কাছে যাবে, সবুজ ঘাসে সোনালী আলোয় হাঁটবে,তখন জানবে, আমিও তোমাদের সঙ্গে আছি।।।।পথের পাঁচালীর রূপকারকে ঘিরে।।।
।। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে কিছুক্ষণ।।
।। সুনির্মল বসু।।
এক নবমী পূজোর সকালে তাঁর বাড়ি হাজির হলাম। তাঁর শ্যালিকা ভেতর ঘরে বসতে দিলেন।সামান্য একটা চৌকি খাট,তাতেই বসলাম। এই খাটটি তাঁর। তিনি বাংলা সাহিত্যের অপরূপ রূপ লোকের রূপকার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়।শ্যালিকা বললেন,দেশে অনেক লেখক আছেন, তিনি অন্যরকম।হরিনাভি স্কুলে শিক্ষকতা করবার সময় মাঝে মাঝে বাড়ি আসতেন না।দিদি রমা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে খুঁজে দেখতে বললে, তিনি দেখতেন, ইছামতী নদীর পাড়ে তিনি ঘূরছেন। জিঞ্জাসা করলে,বলতে পারতেন না,এ কদিন কোথায় ছিলেন।
যে ফুল রেল লাইনের পাশে অযত্নে ফুটে থাকে, তিনি তার নাম দিতেন, যে পাখির নাম কেউ জানে না, তিনি তার নাম দিতেন। তাঁর শ্যালিকা বললেন,সাহিত্য লিখতে লিখতে তিনি ঈশ্বর মুখী হয়ে পড়েছিলেন।সারা রাত ধরে তিনি সহধর্মিণী রমা দেবীর সঙ্গে আকাশের তারা দেখেছেন।
বড় মায়াময় মানুষ তিনি। একবার ক্লাসে একটি ছাত্রকে বকেছেন,মন খারাপ। পরদিন তাঁকে ডেকে বললেন,এই গুটকে,তোকে নিয়ে একটা গল্প লিখেছি।
বাড়িতে অতিথি আসায় বাজার গেলেন। একটি মহিলা বেগুন বেচছিল। বিক্রি হয়নি বলে, বিভূতিভূষণ সব বেগুন কিনে পয়সা দিলেন,নিলেন দুটো মাত্র।
ক্লাসে গিয়ে বলতেন,জানালা খুলে দিতে, বলতেন,এই আকাশ,এত আলো,এই গাছপালা কত যে শেখায়। আমরা চোখ থাকতেও, দেখি না।
ঘাটশিলায় থাকার সময় বন্ধু মুকুল চক্রবর্তীকে বলতেন,কাকের ভাষা তিনি বুঝতে পারেন। একজনের মেয়ে মারা যাওয়ায়,মেয়ের বাবাকে সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, তোমাদের মেয়ে কোথাও যায় নি,ও এখানেই আছে,যত দিন তোমরা ওকে মনে করবে,ও এখানেই থাকবে।যখন তোমরা ওকে ভুলে যাবে,তখন ও এইখান থেকে চলে যাবে।
বিভূতিভূষণ ভেন্ডারে উঠে স্কুল যেতেন। সবজিওয়ালাদের কাছ থেকে ফসলের খবর নিতেন।
তাঁর একমাত্র পুত্র প্রয়াত তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে বলেছিলেন, আমার স্বর্গীয় পিতৃদেব ছিলেন যুধিষ্ঠিরের তূল্য ব্যক্তিত্ব, তাঁর জীবনের রথ চক্র ভূমির উপর দিয়ে যেত, পৃথিবীর কোনো মালিন্য কখনো তাঁকে স্পর্শ করে নি।
মৃত্যুর আগেই তিনি যাবার সংকেত পেয়েছিলেন। তিনি স্কুল থেকে ফিরছেন, একটি মৃতদেহ শ্মশানমুখী হয়েছে।
কে মারা গেল গো।
মাষ্টারমশাই,আপনি চিনবেন না,পাশের গাঁয়ের।
একটু দেখাবে।
ওরা দেখালেন।
বিভূতিভূষণ দেখলেন,অন্য মানুষ,মুখটা হুবহু তাঁর মতো। পরদিন তিনি চলে গেলেন।
বিভূতিভূষণের মৃত্যুও ঘটেছিল,মুঘল সম্রাট বাবরের প্রার্থনার মতো। ছোট তারা দাসের তখন রক্ত বমি হচ্ছিল। ঈশ্বরগত বিভূতিভূষণ নিজের প্রানের বদলে, ছেলের প্রান চাইলেন।
মারা যাবার আগে বলেছিলেন, তোমরা কাঁদছো কেন, আমি কোথাও যাচ্ছি না,কেবল এ ঘর আর ও ঘর।যখন যখন তোমরা ঝর্নার কাছে যাবে, সবুজ ঘাসে সোনালী আলোয় হাঁটবে,তখন জানবে, আমিও তোমাদের সঙ্গে আছি।।