#শ্রাদ্ধ ##ছোটো গল্প# নবনীতা সই8.9.20
কদিন ধরেই সুপ্রভা চিন্তা করে যাচ্ছে সুবিমল সেটা দেখছে কিন্তু কিছু বলেননি৷ এ বয়েসে এসে সময় দিতে হয়, ব্যস্ত হবার বয়েস আর নেই তাদের৷পুম বলবে দরকার হলে ৷ পুম, নামটা দু্ চারবার নিজের মনে নাড়াচাড়া …
#শ্রাদ্ধ #
#ছোটো গল্প#
নবনীতা সই
8.9.20
কদিন ধরেই সুপ্রভা চিন্তা করে যাচ্ছে সুবিমল সেটা দেখছে কিন্তু কিছু বলেননি৷ এ বয়েসে এসে সময় দিতে হয়, ব্যস্ত হবার বয়েস আর নেই তাদের৷পুম বলবে দরকার হলে ৷ পুম, নামটা দু্ চারবার নিজের মনে নাড়াচাড়া করে সুবিমল ৷কতদিন সুপ্রভাকে ভালোবেসে পুম বলা হয়নি? বেশীরভাগই কথা হয় হ্যাগো বা শুনছো৷ দুজনেই জীবন ভালো মন্দে কাটিয়েছেন৷
আজ হিসাব করার সময় আগত৷ সুবিমল নিজে অবসর প্রাপ্ত অফিসার ৷ এখন পুরো সময় বাগান, প্রাতঃভ্রমণ আর ফেসবুকে কাটে৷ পুমের কাটে ঠাকুরঘর আর নাতি সোনাক কে নিয়ে৷ ফেসবুক করে তবে সিরিয়ালের নেশায় তেমন সময় পায়না৷ কদিন চিন্তার ছাপটা মুখে চেপে বসেছে৷ আর এটা হয়েছে বড়দি মারা যাওয়াতে ৷ পুমের বড়দি সুলতা দিদি৷ গত মাসেই গত হয়েছেন৷ পুমের অনেক বড় ছিলেন৷ ভুগছিলেন ক্যানসারে৷ তার একমাত্র ছেলে সৌভিক ৷ ছেলেটি ভালো৷ বৃদ্ধা বিধবা মায়ের জন্য অনেক করেছে৷ আর তার বৌ নেহা মেয়েটাও ভালো৷ দুটি জমজ মেয়ে ওদের৷ সমস্যা হয়েছে সৌভিক মায়ের সাধ্যমত চিকিৎসা করেছে আর সেটা সুবিমল জানে৷ বিশ হাজার টাকা সে সৌভিক কে দিয়েছিলো৷ ছেলেটা খারাপ না৷ কিন্তু মায়ের শ্রাদ্ধের সময় খুব সমস্যা হয়েছে৷ টানা কদিন ফল আর হবিষ্যি করা তার উপর নেই ছুটি৷ বেসরকারী চাকরীতে কি চাপ সেটা যে করে সে বোঝে৷
কে যেন পুমকে বলেছে সৌভিক অফিসে খেয়েছে ক্যান্টিনে ৷ ব্যাস সেই থেকে পুমের ধারণা হয়েছে সৌভিক অন্যায় করেছে আর সেটা তার ছেলেও করবে৷ পুমের শেষকৃত্য ভালো করে হবেনা৷ অনেক বুঝিয়েও কোনো লাভ হয়নি৷ সবসময় চিন্তা করতে করতে ডিপ্রেসনে চলে যাচ্ছে ৷
কদিনের জন্য সুপ্রভা কে শেষে হরিদ্বার নিয়ে আসে সুবিমল ৷ কদিন পাহাড়ের কোলে ঋষিকেশের কিছু আশ্রমে নিয়ে যায়৷ এত সুন্দর সৌন্দর্য আর খরস্রোতা গঙ্গার রূপ দেখে মন ভরে যায় পুমের৷ কিন্ত চিন্তাটা রয়ে গেছে৷
সন্ধ্যারতি দেখতে দেখতে পুমের হাতটা নিজের হাতে নিয়ে সুবিমল বলে, তোমার কিসের চিন্তা ?
কই কিছু না তো৷
আমি জানি পুম৷
পুম হট করে মুখের দিকে তাকায় সুবিমলের৷ সুবিমল বলে , শ্রাদ্ধের?
কে বললো তোমায়?
পুম আমরা চল্লিশ বছর একসাথে কাটিয়েছি৷ তুমি হা করলেই আগে হাওড়া বুঝতাম আজ হতাশাটাও বুঝি৷
পুম সুবিমলের হাতে সামান্য চাপ দিয়ে বলে , কি হবে গো ? রনিত সবকাজ করবে?
কেন ভাবছো? যদি আমাদের ছেলে না থাকতো? যাদের থাকেনা? আর পুম সব নিয়ম গুলোর যে মানে থাকবে এর কোনো মানে নেই ৷ আমি নিজের দেহের ভালো অংশ গুলো দান করে যেতে চাই ৷ মানুষের জীবন বড় কথা, মৃত্যুর পর কি হবে কেউ জানেনা৷ জীবনটা শান্তিতে কাটাও ৷
তুমি বাদ দাও , তুমি তো দিনদিন নাস্তিক হচ্ছো ৷
ঠাকুর ঘরে সময় কাটালেই সে আস্তিক ?? পুম যখন এসব নিয়ম তৈরী হয়েছিলো তখন যুগ ছিলো আলাদা৷ হাসপাতাল ছিলো হাতে গোনা বা ছিলোনা৷ বাড়িতে ছোঁয়াচে রোগ নিয়ে মানুষ মারা যেতো বলে, এত ছোঁয়াছুঁয়ির কড়াকড়ি ছিলো৷ জানোতো ধর্মের ভয় না দেখালে সবাই মানবে না৷ আজ এত ছোঁয়াছুঁয়ি নেই ৷ আজ এত কেউ মানেনা৷
তবু অশৌচ মানো, নিরামিষ খাও , কিন্তু হবিষ্যি ? সরি পুম আমি মানতে পারিনা৷ বাড়িতে দুঃখের কিছু হলে বা আমাদের বিয়োগে আমাদের সন্তানের মনে সত্যিই কষ্ট হলে সে নিরামিষ খেতে পারে কিন্ত পনেরদিন ফল বা হবিষ্যি করতে হবে এর মানে নেই ৷ আমি মানিনা৷ দুঃখ অন্তরের অনুভূতি কাউকে দেখানোর জিনিস না৷ শ্রাদ্ধের থেকে শ্রদ্ধার দরকার আগে৷
তুমি চুপ করো৷ তুমি বুঝবে না৷
না আমি বুঝিনা পুম৷ বাবা মারা গেছে যে সন্তানের তকে লোক ডেকে তাদের কে মাছে মিষ্টি তে আন্ডেপিন্ডে গেলাতে হবে আমি বুঝিনা৷ কেন কিছু লোক ডেকে তাদের বোঝতে হবে আমি বাবা মাকে ভালোবাসতাম?? কেন? তাদের খাইয়ে বোঝাতে হবে??? আর পুম আজ সবাই ব্যস্ত , কাজের প্রেসার প্রচন্ড৷ তের দিন ধরা গলায় অফিস?? করা সম্ভব?
তো কোরোনা৷ আমি মরলে ফেলে দিও জলে৷
তুমি ধর্ম মানোনা, কিছু মানোনা৷
পাগলের মতন কথা বোলোনা শেষকৃত্য বা অশৌচ পালন নিয়ে কথা হচ্ছে না , হচ্ছে অভিষ্যি আর লোক খাওয়ানো নিয়ে৷ আর কোনধর্ম পুম? সনাতন ধর্ম?? তোমরা ধর্ম মানো? যদি মানতে তো সনাতন ধর্মের মূল কথা মানতে দেহ নশ্বর ৷ সব থেকে আসল আত্মা৷ যা মৃত্যুর পর পরমআত্মায় মিলিয়ে যায়৷ মৃত্যুর পর দেহের আর কোনো ভূমিকা নেই ৷ মানো? তাহলে চোখ দান করতে সমস্যা হয় কেন? কেন সহজ ভাবে নিতে পারোনা যে মৃত্যুর পর তোমার আমার আত্মা পরমেশ্বরের কাছে চলে যাবে৷ চুল কাটা অশৌচ সব শোক জ্ঞাপন করা পুম৷আর শোক মনে হওয়া উচিত দেখানোর জন্য নয়৷আজকাল সবাই ব্যস্ত ৷ যুগ পাল্টে গেছে৷ বোঝো৷
আমার মা চলে গেছেন আমি শোকে আছি৷ তার নিয়ম অনুযায়ী শেষকৃত্য করলাম কিন্ত হাজার জন ডেকে তাদের মাছে মিষ্টি তে খাওয়াবো? তার থেকে সেই টাকা টুকু কোনো ভালো কাজে দেওয়া যায়না? আমি আমার মায়ের কাজে দুটো বিকলাঙ্গ শিশুকে দুটো হুইল চেয়ার দিয়েছিলাম ৷ আমার সামর্থ্য তখন তাই ছিলো৷ আজও মায়ের মৃত্যু বার্ষিকি তে আমি কোনো অনাথ আশ্রমে বা বৃদ্ধাশ্রমে সময় কাটাই ৷
কোনদিন তো বলোনি৷
সামান্য কিছু করেই কি বলে বেড়াতে হবে?
আমাকে বলবে না?
আমার অনুভূতি এটা৷ তোমায় বললে তুমি রাগ করতে৷
মোটেই না৷ চেনোনা আমায়৷ তারমানে আরও কতকিছু যে লুকিয়ে রেখেছো৷
বাবা তোমার তারমানে৷ কোনো মানে নেই ৷
পুম তো বুঝলো না উল্টে রাগ করে কথা বললো না দুদিন৷
ফিরে দেখলাম মেজাজ সেই খিঁচড়ে আছে৷
কি করে বোঝাবো? শরীরটা খারাপ করবে৷ এ বয়েসে এসে ভালোবাসা বলতে তো একে অপরের যত্ন করা৷ শারিরীক টান তো আর নেই ৷ কত ঝগড়া , মান অভিমান পেরিয়ে আজ এতগুলো বছর কাটিয়ে দিলাম আমরা৷ কি করে এই মহিলাকে বোঝাই ?
মাসখানেক পর আমার ফেসবুক বন্ধুদের নিয়ে পিকনিক ছিলো বারবার করে বললাম চলো৷ রাগ করে গেলোনা৷ আমি চলে গেলাম ৷ ফিরে দেখি শরীর ভালোনা৷ রাতে বাড়াবাড়ি হলে নার্সিংহোমে নিতে হলো৷ রাতে ঘুমাতে পারিনি৷ রনিত আর আমি দুজনে নার্সিংহোমে বসা৷ নেহা আর সৌভিক দুজনে বৌমার সাথে বাড়িতে ছিলো৷ ভোরের দিকে জ্ঞান আসলে আগে রনিত কে ডাকলো পুম৷
অক্সিজেন মাস্ক সরিয়েছে ডাক্তার৷ বললো কথা বেশী না বলতে৷ রনিত পাশে বসতেই পুম বললো, রনি
বলো মা৷
আমার একটা শেষ চাওয়া৷
এভাবে কেন বলছো মা৷ তুমি এখনও অনেক বাঁচবে৷
শোন বাবা ফিরে গেলে তো গেলাম যদি না থাকি তো তুই আমা