গল্প: তৃষ্ণা বহু রুপেলেখক: কল্পদেব চক্রবর্তী
সত্য ঘটনা নিয়ে গল্প লেখা হয় নাকি! সত্যি হারিয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই । তারই রেশ টেনে চলেছে কিছু অবুঝ মুর্খ মানুষ । সত্যি মিথ্যার তর্ক করে জীবন কাটিয়ে দেয়, জীবনে কিছু পায়না। আদর্শ নামক…
গল্প: তৃষ্ণা বহু রুপে
লেখক: কল্পদেব চক্রবর্তী
সত্য ঘটনা নিয়ে গল্প লেখা হয় নাকি! সত্যি হারিয়ে গিয়েছে অনেক দিন আগেই । তারই রেশ টেনে চলেছে কিছু অবুঝ মুর্খ মানুষ । সত্যি মিথ্যার তর্ক করে জীবন কাটিয়ে দেয়, জীবনে কিছু পায়না। আদর্শ নামক হৃদয়ের মূলধন টি রক্ষার প্রতিশ্রুতি আজকাল বড্ড পুরনো হয়ে গিয়েছে , নাকি দুর্লভ! সহজে কেউ দিতে চায়না ।
জীবনে সত্যি কিছু ছিল । প্রথম জীবনে প্রেমে পড়েছিলাম । কি নিবিড় সে সুখের তৃষ্ণা । বুক ফেটেছে তবুও বলতে পারিনি, আমি তোমাকে ভালবাসি । বলতে পারলে আরও কিছু সত্যের সন্ধান হয়তো পেতাম ....। সে হারিয়ে গিয়েছে ।
গল্প লিখলাম, সত্য বলছি সত্যি ঘটনার গল্প । নাম দিলাম " অমর প্রেম।" দু-একজন প্রকাশকের দরজায় দরজায় ও গিয়েছি , তাদের স্পষ্ট বক্তব্য - "এসব প্যানপ্যান ঘ্যানঘ্যান প্রেমের গল্প কেউ পড়েনা মশাই, আজকাল এসব চলেনা । সেক্স পাঞ্চ করুন ।"
খুব দুঃখ হল । সত্যি তুমি কোথায়? কান্নার শব্দ শুনলাম । আমার সত্যি কাঁদছে । " আজকাল এসব চলেনা মশাই "।ভাবখানা এমন যেন কাল হলে চলত!
ফিরে এলাম । সেক্স চাই । ভাবতে বসলাম । না পবিত্র মনে কামনার আগুন জ্বলে নি এখনও । বিদায় লগ্নের শেষ নিশিথে ভ্রমরের হাত ধরে কান্না গোপন করে ছিলাম । বিচ্ছেদের ব্যাথা ভরা দীর্ঘশ্বাস ছিল । হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি পবিত্রতায় ভরা ছিল । এই সত্য টুকু সারা জীবন সাথী থাকবে । সেক্স এর কলুষতায় এর পবিত্রতা ক্ষুন্ন হতে দিতে পারিনা ।
অদৃশ্য লোক থেকে বঙ্কিমচন্দ্রের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, " পথিক তুমি কি পথ হারাইয়াছ?"
নিঃসঙ্গতার সাথী রাস্তার মোড়ের ভজুয়ার চায়ের দোকান।--' ওহে ভজু কড়া করে এক কাপ চা দাও দিকি '।
ভজু নিঃশব্দে চায়ের জল উনুনে বসিয়ে দিল '। লালা এলো, পিছনে ভব ।
--' চা বল, সাথে একটা কেক । খুব ক্ষিদে পেয়েছে ।'
অর্থাত পয়সা দেবার দায়িত্ব আমার । বল্লাম, ' পয়সা নেই ।'
লালা পকেট থেকে পাঁচ টাকা বার করে টেবিলে রাখল । - ' বাকিটা অ্যাড করে দে। ওহে ভজু দুটোকে তিনটে।'
চা এলো । খেলাম ।এতক্ষণে বেশ একটা আমেজ এলো ।
সামনের রাস্তায় সুন্দরীদের আসা যাওয়া । লালা, ভবর চারটে চোখই সুন্দরীদের অনাবৃত অঙ্গে নিবদ্ধ। তারই অভিব্যক্তি ওদের মুখমণ্ডলে।
কিঞ্চিৎ বর্ণনার প্রয়োজন । বোধ হয় কিছুটা রসের সন্ধান পাওয়া গেল ।
সাহিত্যের আবার " একাল- সেকাল " কি? সমস্ত কালজয়ী লেখাইতো সেকেলে এবং এখনও ।
আসুন মহাশয় গন অনুভব করুন, অনুরণিত হউন ।
বক্ষের গোপনীয়তা উঁকিঝুকি মারিতেছে । অতিশয় কঞ্জুস আবরন সরস দেহ প্রাঙ্গণের লোলুপতা স্বীকার করিয়া লইয়াছে । চতুষ্পার্শের বিস্ফারিত জোড়া জোড়া চক্ষু কামনার জিহ্বা বাড়াইয়া হাহাকার করিতেছে । রমনী সুস্মিত হাস্যে লাস্যে তাহাদেরকে স্বাগত জানাইতেছে । অনুভূতি পরায়ন পঞ্চ ইন্দ্রিয় চঞ্চল হইতে চঞ্চলতর হইয়া উত্তেজিত আবেগে কাঁপিতেছে । উদাসী রমনী রমনীয় ভঙ্গিমায় হাটিয়া চলিয়াছে । সুগঠিত স্তন দ্বয় মুচকি হাসিয়া স্বর্গীয় ফলের ন্যায় দুলিতেছে । উন্মুক্ত নাভি তরঙ্গে তরঙ্গে বিদ্যুত শিখা আবরন এর অন্তরালে আত্মসমর্পণ করিয়াছে । সব মিলাইয়া উত্তপ্ত সৌন্দর্য অট্টহাস্য হাসিতেছে । আগুনের লেলিহান শিখায় পতঙ্গ পুড়িতেছে।
মহাশয় আমি ভাল ছেলে । লোকে তাই বলে । অস্বীকার করবনা ভাল ছেলের আবরনের একটা বোতাম খুলে গিয়েছিল । হৃদয় ছটফট করছিল । পাছে কেউ দেখে ফেলে সেই আশঙ্কায় আর এক ইন্দ্রিয় চক্ষু কে শাসন করলাম । ভ্রমর তুমি কোথায়?
তখনো ভব উচ্ছাসিত । কি ভাবে সে গোপাকে .......। লালা ও বিভিন্ন অভিব্যক্তি তে বোঝাতে ব্যস্ত কি ভাবে সে শিলুকে ....। উঃ আহা আবেগ মথিত বর্ননা ।
ভাল ছেলের আবরনকে আর একবার চেপে ধরলাম । সে মুক্ত হতে চাইছিল ।
ভজুয়ার বৌ এলো । ভজুর কাছে টাকা চেলো । - ' টাকা দিসনা কেনে । বাজারে যাইতে হইব তো?'
ভজুয়া খ্যাক খ্যাক করে উঠল । - ' তুর টাকা নাই কেনে? '
- ' রাইত হইলে তবে তো টাকা আইবে।'
- ' কেনে কাইল রেতের অত গুলান টাকা কি হইল ?'
ভজুয়ার বৌ মুখ ঝামটা দিল।- ' ট্যাকা কি হইল! বড় বীরপুরুষ আমার । হিসাব লয়। বাবুদের সামনে যাইতে হইলে, একখান ভাল শাড়ি, ব্লাউজ, দামি সাবুন এই সব দরকার হয় বুঝলি । একি তুই, মদের গন্ধে ভ্যাপসা গন্ধ টের পাইসনা! '
ভজুয়া অসহায় চোখে বৌয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে । অস্ফুটে বলে - ' হায় ভগবান, তুমি শরীর দিলে যদি মন দিলে কেন? সহ্য হয়না যে এই যন্ত্রনা।'
লালা ব্যস্ত হয়ে একটা দুশো টাকার নোট ভজুয়ার বৌয়ের হাতে গুজে দিল ।
- ' এই নে বাজার করতে যা।'
লালার মহত্ত্বে মুগ্ধ হলাম । পরক্ষণেই সে বিশ্বাস ভেঙে গেল । লালা চোখ টিপল । সুবাসী মুচকি হাসি ছুড়ে দিয়ে শরীরে ঢেউ তুলে চলে গেল।
লালা বলল, - ' শরীরের গড়ন দেখেছিস, তিন ছেলের মা মনেই হয়না ।'
মনে মনে গল্পের নায়কের কথা ভাবছিলাম । লালাকে নায়ক করে একটা গল্প লেখা যায় বটে । কিন্তু নায়িকা? এমন রসাত্মক নায়কের একজন দুঃখিনী নায়িকা প্রয়োজন। তা নাহলে গল্প জমবে না ।
ওহে সত্য তুমি এভাবে চেয়ে থেকনা । কৈশোর আর যৌবন এক নয়। কৈশোরের ভালবাসা শান্ত স্নিগ্ধতায় শুধুই চেয়ে দেখে তৃপ্তি পেতো, আর যৌবন ছটফট করে পাওয়ার আশায় । সময় মুচকি হাসে, বলল- ' তুমিও এই পথে?'
ভ্রমরের কথা মনে পড়ল, - " কবিরা খুব মিথ্যাবাদী, বেইমান ।" ও প্রায়ই আমাকে এভাবেই বলতো ।
অসম্পূর্ণ গল্পের পান্ডুলিপি বগলে নিয়ে ঘুরে বেড়াই । নায়িকার দেখা নেই । ঢাকুরিয়া লেক , ইডেন গার্ডেন, গঙ্গার ঘাট কোথাও বিরহিনী বসে নেই । ভজুয়ার বৌয়ের প্রতিচ্ছবি এসব প্রান্তরেও যথেচ্ছ ঘুরে বেড়ায়। কিছু টাকার বিনিময়ে সুখ বিক্রি করতে চায়।
ক্লান্ত বিষন্ন লেখক । ভণিতা প্রিয় লেখক, স্মৃতি রোমন্থন করছে....।
- " আচ্ছা ভ্রমর, তোমার মনের কিছু অনুভূতি আমার দুঃখিনী নায়িকা কে ধার দিতে পারনা?" ভ্রমর বলল, - " কেন পারিনা, আমিতো তোমার "!
তুমি আমার? লেখকের মন সন্দেহে দুলে উঠল ।সত্যিই কি ভ্রমর আমার? আমার মনের আবেগ আকুলতায় সে শান্তনা দিয়েছিল, স্বীকৃতি দিয়েছে কি! ভ্রমর এখন কোথায়, কেমন আছে? সে কি আর কাউকে ভালবেসেছে? আমার মনে হয় , কবির কাব্য কে ভ্রমরের দল শ্রদ্ধা করে ভালবাসে, কিন্তু কবিকে নয় ।
সত্যিই কি তাই? মিথ্যেইবা ভাবি কি করে । আমি যখন হৃদয়ের সমস্ত অনুভূতি উজার করে তোমাকে সমর্পণ করে ছিলাম তখন তুমি আরেক জনের ভালবাসায় অঙ্গ ভাসিয়ে ছিলে।আমার ভালবাসা কেঁদেছিল । সেই কান্না তুমি শুনতে পাওনি, আর আজ তুমি দাবি করছ " আমি তোমার, শুধুই তোমার "!
ভ্রমর চলে গিয়েছে ।স্মৃতি বুকে নিয়ে বসে আছি । সে স্মৃতি শুন্য নয়, হৃদয়ের আবেগে পূর্ণ । কালো মেঘের আনাগোনা মাঝে মাঝে বাতাসে ঢেউ তোলে । সে মাঠ মায়াময় মরীচিকা নয়। উত্তপ্ত হৃদয়ে শান্ত স্নিগ্ধ শীতলতার স্পর্শ ।
প্রিয় সহানুভূতিশীল পাঠক পাঠিকা গন আমাকে ক্ষমা করবেন । ভাষার কাঠিন্য আসে মনের জটিলতা থেকে । মন জটিলতা মুক্ত নয়। বাস্তবের কাঠিন্য কে অস্বীকার করতে পারিনা । দন্দক্লান্ত কবি মন ভালবাসার খোজে আবেগের গোলক ধাঁধায় ঘুরে মরছে । আমি অসহায় । জীবনের ছন্দ পতন কবির জীবনে ছন্দ আনে, আমাকে উপহাস করবেন না ।
আমার বাবা রামাপদ মুখার্জী। সামান্য মাইনের সরকারী চাকুরী। আজ রবিবার । মনযোগ দিয়ে কাগজের পাত্র পাত্রীর বিজ্ঞাপন পড়ছেন । এক কালে ব্রাহ্মণ পন্ডিত বলে গর্ব করতেন । কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার সে দম্ভ আর নেই । এখন অসবর্ণ বিবাহ দিতেও আপত্তি নেই ।
- ' অসীম শোন।'
- ' আজ্ঞে?'
- ' চিঠি গুলো পোস্ট করে দিও ।'
চিঠি গুলো পাত্রের ঠিকানায় পিতার করুন মিনতি । বাবার প্রতি সপ্তাহের এই বিশেষ দিনটার ডিউটি । এই বিংশ শতাব্দীতেও হাজার হাজার ঘরে এই রামাপদ মুখার্জী নামক পিতাদের দেখতে পাবেন।
আমার দিদি সুলক্ষনা , ছাব্বিশে পড়ল। সুশ্রী ফর্সা, বি-এ, গৃহ কর্মে নিপুনা, পাঁচ ফুট । আগে মার কথা মত সেজেগুজে পাত্র পক্ষের সামনে এসে দাঁড়াত । পুতুলের মতন অপরিচিত লোক গুলোকে টুকটাক প্রনাম করতো। মুখে থাকত সব সময় হাঁসি ।
দাবিহীন পাত্রপক্ষ যদিও মেয়েকে পছন্দ করত তবু, "মেয়েকে সাজিয়ে দেবেন ..." ইঙ্গিত পূর্ণ এই কথাতেই বাবার হৃৎপিণ্ড ধক ধক করে কাপত। দাবি নেই কথাটা লজ্জা পেত। তারপর পরপর দু গ্লাস জল ঢকঢক করে খেয়ে কেমন যেন চুপ হয়ে যেতেন ।
এটা কিন্তু কারো ব্যক্তিগত সুখ দুঃখের প্যান-প্যানানি নয় ।ঘরে ঘরে লাখ লাখ মেয়ের ব্যক্তিগত কান্না ।
গল্পের গতি নায়িকা কে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ল কেন! ভজুর চায়ের দোকান, ভজুয়ার বৌ সুবাসিনী, লালা, ভব এবং অবশ্যই আমার ভ্রমর যে কোন একজন কে নিয়ে লিখলেই গল্পের গতি অসীম আলস্যে এগিয়ে চলতে পারত ।
কিংবা অপর্ণা । ছোট্ট একটা ঘটনা । তখন আমার বয়স সোল। আমাদের ক্লাবের সাথে পাশের পাড়ার ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ।আমি খুব ভাল খেলেছিলাম । ম্যাচ জিতেছিলাম।
সকলে আমার উচ্ছাসিত প্রশংসা করছিল । অপর্ণা আমার থেকে বছর দুয়েক বড় হবে । চোখের পরিচয় ছিল । সুন্দরী না হলেও সুশ্রী বলা চলে । ভণিতা না করে এক কথায় বলা যায় , " হেভি সেক্সি "। সেই অপর্ণা একান্তে আমার দুটি হাত তার বুকের মধ্যে চেপে ধরে বার বার বলছিল, - " তুমি আজ দারুণ খেলেছ"।
হৃৎপিণ্ড টি বুক থেকে গলায় উঠে এসে দম বন্ধ হবার উপক্রম হয়েছিল । তখন সোলো বছর।এখন ছাব্বিশ । এখন আর ভেবে কি হবে! শুনেছি একটা ছেলের সাথে অপর্ণা নিরুদ্দেশ হয়েছে । যুবতীর যৌবন ছটফট করছিল । সে পালিয়ে বেচেছে ।
পাঠক পাঠিকা গন, এটাও কিন্তু কোনও এক জনের ব্যক্তিগত ঘটনা নয় । হাজার হাজার সোলো বছরের অঙ্কুরিত মন । যৌবনের প্রথম পদক্ষেপ । অজানার আহ্বান।
ভোট এল বলে। দেওয়াল লিখন লিখি । একবার দেওয়াল দখল নিয়ে দাঙ্গা বেধেছিল । প্রচুর মার খেয়েছিলাম । মাথায় ছয়টা টিচ্ পড়েছিল । হাসপাতালে হেভিওয়েট নেতারা এসেছিলেন । মাথায় হাত দিয়ে শান্তনা দিয়েছিলেন । চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি অসংখ্য বার হাহাকার করে ফিরে গিয়েছে। পথে যেতে যেতে একটু লক্ষ করলে এরকম অনেক আমিকে দেখতে পাবেন, দেওয়ালের পাশে রঙ তুলি নিয়ে দাড়িয়ে আছে । এখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ।
এমনই এক দিনে , পাশের দেওয়াল থেকে মৃনালের গলা শুনতে পেলাম । - ' গুরু অক্সিজেন । পুরো ভর্তি সিলিন্ডার ।'
আরে সত্যিই একটা মেয়ে আমার দিকেই আসছে। পরনে জিন্স । তার উপরে সংক্ষিপ্ত স্লিপ লেস টপ । বুকের উপর লেখা " KISS ME " . আরে একি! সোনালি?
আমার খুব চেনা । সম্পর্ক টা ঘনিষ্ঠতর হতে পারত কিন্তু হয়নি । তখন সারা দেহে একটা স্নিগ্ধতা ছিল অথচ এখন কি উদ্ধত ।
চেহারার বর্ণনা দিয়ে গল্পের পরিধি কে উত্তেজিত করবনা । সে ইচ্ছেও নেই । সে আমার চেনা, খুব চেনা ।
অসমাপ্ত পান্ডুলিপির কথা মনে হল ।
- ' সোনালি তুমি '!
সোনালি কোনও উত্তর দিলনা । নিরবে আমার আপাদমস্তক পর্যবেক্ষণ করতে থাকল । হাতে আমার তখনো লাল হলুদ রঙ মাখান তুলি ।
- ' ছবি আকার এই ক্যানভাস কবে থেকে আপন হল? কবিতা, সেটাও কি ভাগারে গিয়েছে? আর তোমার সেই দম্ভ?'
মাথা নিচু করে রইলাম, - ' সোনালি, সবই হারিয়ে ফেলেছি বোধ হয় ' ।
সোনালির ঠোট দুটো যেন একটু কেপে উঠল । - ' ছবি একে কত পাও'?
- ' দিনে তিনশ টাকা। '
মনেহল সোনালির চোখ দুটো করুনায় ছলছল করে উঠল । - ' আমাকে তুমি চিনতে পারলে ?'
- ' চিনেছি, মিলিয়ে নিতে পারিনি। '
- ' কেন তুমিতো আর্টিস্ট, মিলিয়ে নিয়ে আমার সেই ছবি আমাকে ফিরিয়ে দাওনা।'
- ' সোনালি যা হারিয়ে গিয়েছে তাকে ফিরে পাবে কি করে?'
সোনালি কোনও উত্তর করলনা । ওর চোখে নিরব বেদনা ছলছল করছিল ।
পুরনো দিনের সোনালির কথাগুলো মনে পড়ছিল ।
- ' এই তুমি আমাকে নিয়ে একটা গল্প লেখনা?'
- ' গল্প কবিতা ওসব আমার আসেনা । আরে আমি নিজেই একটা কবিতা, আমার চোখ দেখনা কত কবিতা লেখা আছে এখানে ।'
সোনালি কপট রাগ দেখায় । আলতো করে আমার কানটা মুলে দেয় ।
সোনালি কে কথা দিয়েছিলাম ওকে নিয়ে গল্প লিখব । সোনালি বলেছিল, - " জান মনে মনে কত গল্প সাজিয়ে রাখি কিন্তু ওরা ভীষণ অভিমানী । ধরতে গেলেই হারিয়ে যায়!"
সোনালির সপ্ন হারিয়ে গিয়েছে। হয়তবা সবার সপ্নই এভাবেই হারিয়ে যায় । আসলে হারিয়ে গিয়েছে সত্যি । আমরা সবাই তাকে খুজে পাবার ব্যর্থ প্রয়াস করি মাত্র ।
ফিরে চললাম । অসমাপ্ত ছবি সম্পূর্ণ করতে হবে যে ।
আমি কল্পনা প্রিয় দিকভ্রান্ত পথিক পথের সন্ধানে ক্লান্তি হীন। জানিনা কবে শেষ হবে এই পথ চলা ।
( সংরক্ষিত )
***************