Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-সম্মাননা

#শিক্ষক দিবসে আমার নতুন শিক্ষকদের...
#রম্য_রচনা, কিন্তু একেবারে সত্যি ঘটনা 
#সুস্মিতা 
(নতুন সিলেবাস , নতুন শিক্ষক)
       বোধবুদ্ধি জেগে ওঠার পর থেকে প্রতিবছরই আমি শিক্ষকদিবসে আমার পিতামাতা এবং সকল গুরু শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে আনুষ্ঠা…

 


#শিক্ষক দিবসে আমার নতুন শিক্ষকদের...


#রম্য_রচনা, কিন্তু একেবারে সত্যি ঘটনা 


#সুস্মিতা 


(নতুন সিলেবাস , নতুন শিক্ষক)


       বোধবুদ্ধি জেগে ওঠার পর থেকে প্রতিবছরই আমি শিক্ষকদিবসে আমার পিতামাতা এবং সকল গুরু শিক্ষকদের উদ্দ্যেশ্যে আনুষ্ঠানিক শ্রদ্ধা জানাই। মনেমনে প্রতি মুহূর্তে জানালেও শিক্ষকদিবস একটি বিশেষ দিন। 


       "গুরু অথবা শিক্ষক ছাড়া কোনো কিছুই শেখা যায়না" -আমি আন্তরিকভাবে এই কথায় বিশ্বাসী। মা বাবা, আত্মীয়, ব্ন্ধু, প্রতিবেশী, কাজের মাসী এমন কি আমার ছাত্রছাত্রীরাও আমাকে জীবনের পাঠ শিখিয়েছেন। তাঁদের সকলকে শ্রদ্ধা। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক শিক্ষক শিক্ষিকাদের জানাই প্রণাম। 


 "আজ শ্রদ্ধা জানানোর পালা আমার নতুন সিলেবাসের নতুন শিক্ষক শিক্ষিকাবৃন্দকে" ...


 


   বয়স যা হয়েছে তাতে বোধবুদ্ধি জেগে উঠে আবার লোপ পাওয়ার সময়ও প্রায় এসে গেল বলে...অতএব তার আগেই এই কাজটা সেরে ফেলা ভালো। 


         নতুন সিলেবাসের এই পড়াশোনাটা করছি গত প্রায় বছর দশ বারো ধরে। একেবারেই নবীন শিক্ষকদের কাছে। শ্রদ্ধা জানাতে বেশি দেরি করে ফেললাম না তো  ? শৈশবেও স্বরবর্ণ ব্যঞ্জনবর্ণ শেখার পরে ঠিকঠাকমতো লিখতে  সময় লেগেছিল। আর আমি যে  আবার সবসময়ই স্লো-লার্নার । 


     কথা না বাড়িয়ে আসল কথায় আসা যাক। 


প্রথমেই শ্রদ্ধা জানাই আমার একমাত্র কন্যাটিকে। 


    মোবাইল ফোন তখন বাজারে এসে গিয়েছে বছর দুয়েক হবে। আমার স্বামীকে কাজের প্রয়োজনে বেশিরভাগ সময়ই বাড়ির বাইরে কাটাতে হত। বাড়িতে বৃদ্ধা শাশুড়ী ও কিশোরী কন্যাকে নিয়ে আমি। বিভিন্ন কাজের প্রয়োজনে মোবাইল ফোন ততদিনে ধীরে ধীরে প্রায় অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।        আমিও স্বামীর কাছ থেকে উপহার পেয়ে গেলাম একটা মুঠোফোন। উপহার দেওয়ার পেছনে আসল কারণ অবশ্য ট্যুরে থাকাকালীন তিনি যখন তখন বলবেন-"আচ্ছা, অমুকের ঠিকানাটা একটু পাঠাও তো,  তমুক চেকের  ওই নম্বরগুলো একটু জানাও তো" ইত্যাদি ইত্যাদি। এদিকে স্বভাবদোষে শৈশব থেকেই যন্ত্রপাতি দেখলেই আমার হাত পা কাঁপে। মনে হয় আমি হাত দিলেই সেটা খারাপ হয়ে যাবে। যন্ত্রের সঙ্গে বন্ধুত্ব আমার কিছুতেই হয়না। 


            এমতাবস্থায় উদ্ধারকারীর ভূমিকায় এগিয়ে এল আমার কিশোরী মেয়ে। ওর কাছেই আমার মোবাইল ফোন ব্যবহার, এস এম এস টাইপ করা এবং সেটা পাঠানোর হাতেখড়ি হল। এ যুগের ছেলেমেয়েরা কি করে যেন একেবারে জন্ম থেকেই টেক্ স্যাভি। একেবারে হাতে ধরে প্রতিটি পদক্ষেপ শেখালো মেয়ে। 


       তারপর বছর দুয়েকের মধ্যে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়ে নূতন করে দুনিয়া চেনালো আমার মেয়েই । নতুন সিলেবাসের একেবারে নার্সারির এই দিদিমনিকে(আমার মেয়েকে) আন্তরিক শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা। 


              যদিও পরবর্তীকালে সেই দিদিমনিই আমার প্রশ্নের তাড়নায় এবং আমার অদ্ভূতুড়ে ভ্রান্তিজনিত কারণে বিকল হতে থাকা ফোনটিকে সারাতে সারাতে বিরক্ত হয়ে একদিন আমাকে ত্যাজ্য শিক্ষার্থী(ত্যাজ্য মা) হিসেবে ঘোষণা করে জানিয়ে দিলো-"আমি আর পারব না, এত বাজে স্টুডেন্ট পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এবার থেকে বাকি সবকিছু  নিজে ঠেকে শিখবে"


              যাইহোক্ এবার ত্রাণকর্তার ভূমিকায় এগিয়ে এল আর একটি কিশোর। যদিও তার সঙ্গে আমার কোনও রক্তের সম্পর্ক নেই। কিন্তু কি অপরিসীম ধৈর্য ও মায়ামমতার সাথে সে আমাকে ছাত্রী হিসেবে মেনে নিলো। তার কাছে শিখলাম ই-মেইল কিভাবে করতে হয়।


 মেইলিং শেখার একেবারে শুরুর দিকে কারুকে মেইল আই. ডি দেওয়ার সময় আমি আনন্দে, উত্তেজনায় আমার পাসওয়ার্ডটিও জানিয়ে দিতাম। "আমিও পারি এবং আমারও মেইল অ্যাকাউন্ট আছে"-এই আনন্দে। কিশোর শিক্ষকটি এইসব বোকামীতে কখনও বকুনি দিত না, বুঝিয়ে বলত। 


                যদিও সেই কিশোর বয়সে এত দয়া ও ধৈর্য্যের পেছনে তার আমাকে "ভবিষ্যৎ শাশুড়ী মা" বানানোর মূল অভিসন্ধি ছিল কি না কে জানে। 


              না, মনে হয় না। কারণ আজ এত বছর বাদেও অভীষ্ট সিদ্ধির পরেও(সেদিনের সেই কিশোর আজ যুবক এবং আমার বড় প্রিয় স্নেহের জামাই)সেই আমার মোবাইল ফোন সংক্রান্ত যাবতীয় জটিলতা ও প্রশ্নের আলটিমেট মুশকিল আসান। দয়ালু ও ধৈর্যশীল এই "মোবাইলফোন  মাস্টারমশাইকে" জানাই আন্তরিক শ্রদ্ধা। 


               আমার মেয়েজামাই বর্তমানে থাকে অন্য রাজ্যে, অন্য শহরে। কিন্তু আমার ফোনবিভ্রাট তো প্রতিদিনের। আর শুধু বিভ্রাটই বা বলি কেন? শেখার কি কোনো শেষ আছে ? 


            ঈশ্বর দয়াময়। কর্মসূত্রে পুণেতে বদলী হয়ে এল আমার ভাসুরপো ও পুত্রবধূ। বড় আদর ভালোবাসার সম্পর্ক ওদের সাথে। 


            ওই যে বললাম-শেখার কি কোনো শেষ আছে? ততদিনে এসে গিয়েছে বাংলায় টাইপ করার  কিসব নতুন অ্যাপ্।বাংলা লেখার অ্যাপ্, কিন্তু আমার কাছে তো পুরো ব্যাপারটাই গ্রীক ল্যাটিন।  মাঝেমাঝেই ছেলেবৌমা রবিবারে আমার কাছে এসে সারাদিন থাকে। দুজনেই চাকরি করে সুতরাং কাকীমার রান্না ওরা বেশ তৃপ্তিসহকারে খায়। খাওয়াদাওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আমি ওদের কাছে শিখতে থাকি যন্ত্রের নতুন খেলা। 


                কিন্তু ওই যে আগেই বলেছি-যন্ত্র এবং আমার বন্ধুত্ব? বিধাতার মুচকি হাসি আছে ওখানে...


               এক রবিবারে প্রচুর রান্নাবান্না করে ওদের ডেকে পাঠালাম। বললাম-একেবারে দুবেলাই খাওয়াদাওয়া করে যেতে হবে। বেলা এগারোটা থেকে রাত এগারোটা পর্যন্ত ওরা ছিল। দুবেলা কোনোরকমে দুটি ভাত ছেলেবৌমা মুখে দিতে পেরেছিল। বাকিটা ওদের কাটলো আমাকে এবং আমার মোবাইলফোন ব্যবহার  শেখা নিয়ে। 


             সেদিন আমি কি শিখে উঠতে পেরেছিলাম  জানিনা, তবে কিছুদিন পরে টের পেয়েছিলাম-চিকেন, মাটন, চপ, কাটলেটের লোভ দেখালেও ছেলেবৌমা আর আমাদের বাড়ি আসতে চায়না। 


            এখন অবশ্য ওরা দুজনেই আবার বদলী হয়ে চলে গিয়েছে অন্য শহরে। তবে এ হেন কাকীমাকে "ফোন ব্যবহার"শেখানোর ভয়ে ওরা নিজেরাই পুণে ছেড়ে পালালো কি না বলতে পারিনা। তবুও বাংলা টাইপ শেখানোর জন্য এই দুই শিক্ষক শিক্ষিকাকে শ্রদ্ধা। 


                এবারে শ্রদ্ধা জানাই আমার বাড়ির নীচের "ভোডাফোন স্টোর" এর প্রত্যেকটি ছেলেমেয়েকে। ওদের কথা আর কি বলব? 


          সংক্ষেপেই বলি- ভোডাফোনের দোকানে আমাকে প্রতিদিনই যেতে হয়(পাঠকরা দয়া করে বুঝে নিন কারণটা)। যদি বা কোনোদিন ওই স্টোরে না ঢুকে আমি পাশ কাটিয়ে চলে যাই, দোকানের ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে বেরিয়ে এসে চিৎকার করে আমাকে ডাক দিয়ে বলে-"আন্টি, আন্টি কেয়া হুয়া? আজ আপ কি ফোনমে কোই প্রবলেম নহী হ্যায় কেয়া ? আরে আন্টি আপ বেঝিজক্ আইয়ে...সরমাইয়ে মত্"


     আশা করি আপনাদের আর কিছু বুঝতে বাকি রইলনা। সত্যি বলছি কৃতজ্ঞতায় আমার মাথা অবনত হয়ে আসে। আগেকার দিনে মাস্টারমশাইরা দুর্বল ছাত্রদের টেনে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনায় সাহায্য করতেন। এযুগেও এরকম ডেডিকেটেড শিক্ষক ...ভাবা যায় না। 


             ভোডাফোনস্টোরের ছেলেমেয়েগুলোর সারাদিন    প্রচন্ড খাটুনি।  তবুও আমার ফোনটি নিয়ে যখনই আমি ওদের দোকানে ঢুকি, ওরা সবাই চেয়ার ছেড়ে উঠে এসে আমাকে গোল করে ঘিরে ধরে। ওদের কর্মব্যস্ত জীবনে এইটুকুই হয়তো কমিক রিলিফ...


             ক্লাসে ফেইল্ করতে করতেও তো মানুষ এগোয়। এতদিনে আমিও ফেসবুক, ই মেইল, মেসেঞ্জার, গল্প পোস্ট করা অনেক কিছুই শিখে ফেলেছি। এখন ফেসবুক থেকে পাওয়া কয়েকজন ব্ন্ধু তথা শিক্ষকের কথা তো বলতেই হবে। ফেসবুকের ব্ন্ধুরাও কিন্তু পরম ব্ন্ধু। এদের মধ্যে কয়েকজন যেন অন্তর্যামী। "দিদি" বলে ডেকে এই ভাইগুলো কিভাবে  ঠিক বুঝে নিয়েছিল যে ওদের দিদিটি টেকনোলজিতে একটি আস্ত ঢ্যাঁড়স। মেসেঞ্জারে উপদেশ দিয়ে ওরা যে আমার কত লেখা ঠিক করে দিয়েছে কি বলব । ওই "ডিস্টানস্ লার্নিং" আর কি। শ্রদ্ধা জানাই এই ভাইরূপী শিক্ষকদেরও। 


              এবার আসা যাক গৃহকর্তার কথায়। বিভিন্ন সময়ে টুকটাক টিপস্ দিয়ে উনি আমাকে এই নতুন সিলেবাসের পড়াশোনায় কখনোসখনো সাহায্য করেছেন ঠিকই , কিন্তু আমি ওঁকে শিক্ষক মানতে নারাজ । কারণ ? 


         দাঁড়ান, ব্যাপারটা একটু খুলে বলি। 


          বছর দুয়েক আগের কথা...। ততদিনে বিভিন্ন শিক্ষক শিক্ষিকাদের সাহায্যে আমি ফেসবুক, ই মেইল এর গন্ডি পেরিয়ে ওয়াটস্ অ্যাপ্ পর্যন্ত পৌঁছেছি। 


            এরকম সময়ে আমার হাতে এসে গেল একটা স্মার্ট এবং টাচ্ ফোন। আনস্মার্ট আমার হাতে সে এক নতুন আজব খেলনা। প্রথম প্রথম ওটা সামলাতে আমি ঘেমেনেয়ে অস্থির। সামান্য আঙ্গুলের ছোঁয়ায় কখন যে কি হয়ে যাচ্ছে...কার মেসেজ কোথায় কার কাছে পৌঁছে যাচ্ছে ...। ওরে বাবারে সে এক কেলেঙ্কারি কান্ড। 


               সেরকমই সময়ে একদিন দুপুরে মেয়ের জন্য বড্ড মনকেমন করছিল। সে তখন দূরের শহরে পড়াশোনা করে। কদিন ধরে শরীরটা ওর ভালো যাচ্ছিল না, ওদিকে আবার তার কলেজের পরীক্ষাও চলছিল। 


                দুটো কঠিন সাবজেক্টের মাঝে সেই দিনটা ওর ছুটি। হোস্টেলের ঘরে একা পড়ছে, কি যে খাচ্ছে । এইসব ভেবে মনটা আমার স্নেহ মায়ামমতায় উথাল পাথাল। বড্ড ইচ্ছে করছিল সন্তানকে বুকে জড়িয়ে একটু আদর করি, মাথায় হাত বুলিয়ে দিই ...। ফোনের মধ্যে দিয়ে যতটা সম্ভব আর কি... 


                সব মিলিয়ে ফোনটা হাতে নিয়ে ওয়াটস্ অ্যাপ্ খুলে কাঁপা কাঁপা আঙ্গুলে টাইপ করলাম-"গোপাল সোনা, চাঁদের কণা আমার...খেয়েছো বাবু?  এবার একটু ঘুমিয়ে নাও।" সেই সাথে পরের দিনের পরীক্ষার জন্য শুভেচ্ছা ও আশীর্বাদ জানিয়ে টাইপ করে ফেললাম তেত্রিশ কোটি হিন্দু দেবদেবীর নাম। 


           মেসেজটা টাইপ করে "সেন্ড বাটন"টা টিপে দেওয়ার পরমুহূর্তে বুঝতে পারলাম -"হে ভগবান...কি কেলেঙ্কারি আমি করেছি"।


           টুকটাক লেখালেখি করি। বাংলাদেশের কিছু পত্রপত্রিকায় সেসব কখনোসখনো প্রকাশিত হয়। সেই সূত্র ধরে কিছু বাংলাদেশী মানুষজনের নম্বর আমার ফোনে আছে। কি জানি কি করে হাত লেগে আমার মেসেজটা পৌঁছে গেল বাংলাদেশের একটি পত্রিকার সম্পাদকের নম্বরে। ওয়াটস্ আ্যপের ডিপিতে তার ছবি গম্ভীর এক মৌলবী সাহেবের মতো...


      আমি ভয়ে একেবারে সাদা হয়ে গেলাম। তখনও পাঠানো মেসেজ ডিলিট করতে শিখিনি।  


       এক সেকেন্ডের মধ্যে অপর প্রান্ত থেকে জবাব এসে গেল-"কে আপনি ? এসব কি পাঠাচ্ছেন?"


        প্রবল ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে আমি উত্তর লিখলাম -" আমি কেউ না, দয়া করে আমাকে মাপ করে দিন।"


        উত্তর এল-"কেউ না মানে? এসব কেন পাঠিয়েছেন?  সরস্বতী,দুর্গা ? তারপরে দুপুরবেলা অফিসে ঘুমিয়ে পড়তে বলছেন ...কি রসিকতা হচ্ছে? "


                আমার যে তখন কি অবস্থা...আমি ভাবলাম "হায় ভগবান এ আমি কি করলাম...চারিদিকে আজকাল ধর্ম নিয়ে কি হুলুস্থুল কান্ড...শেষে কি আমার এই মেসেজের জন্য দুই দেশে যুদ্ধ লেগে যাবে? সম্প্রদায়িক দাঙ্গা? রায়ট ? "-উফ...মাগো মা...এবার কি হবে? আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে আমি তাড়াতাড়ি মোবাইল ফোনটি সুইচ অফ্ করে দিলাম। মনেমনে প্রতিজ্ঞা করলাম-"অনেক হয়েছে আমার স্মার্ট হওয়ার চেষ্টা, জীবনে আর কোনোদিন এটা ব্যবহার করব না।"


           কি করি ? কি করি ? সারা দিনটা যে আমার কিভাবে কাটলো...আমি বসতে পারছিনা, শুতে পারছিনা। কল্পনায় শুধু দেখছি দুই দেশে রায়ট লেগেছে...আগুন জ্বলছে...চারিদিকে কি মারামারি কাটাকাটি। সব কিছুর জন্য দায়ী আমার ওই মেসেজ ...


            অবশেষে সন্ধ্যা পার করে গৃহকর্তা বাড়ি ফিরলেন। আমি কোনোমতে খাবারটাবার দিয়ে তার পাশে গিয়ে বসে বললাম- "জানো, আমি না একটা বিরাট ভুল করে ফেলেছি গো"। আমাদের বিবাহিত জীবনে আমি বহুবার বহু "কেস খাওয়ার ঘটনা" ঘটিয়েছি। কর্তা সেসবে অভ্যস্ত। সুতরাং কোনোরকম গুরুত্ব ও পাত্তা না দিয়ে তিনি প্রশ্ন করলেন-"কি হল...আবার কি করেছ? " আমি প্রায় কাঁদতে কাঁদতে এবং কাঁপতে কাঁপতে দুপুরবেলার সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বললাম। মনে আশা তিনি নিশ্চয় কোনও সুরাহা বের করবেন ...


            ঘটনাটি বলতে বলতে ভয়ে  আমি ততক্ষণে একেবারে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছি। হঠাৎ শুনি সারা ঘর জুড়ে পুরুষকণ্ঠের অট্টহাসি...সে হাসি আর থামেই না...


        বিস্ফারিত নয়নে আমি জিজ্ঞেস করলাম-"কি হল ? এত হাসছ কেন?"


      অতি কষ্টে হাসি সামলে তিনি বললেন-"তোমার যা অপরাধ, তোমাকে তো মনে হচ্ছে বাংলাদেশ নয়...একেবারে পাকিস্তানে চালান করা হবে। তবে হ্যাঁ, যদি প্রমাণ করতে পারো যে পুরো ব্যাপারটাই ভুল করে হয়ে গিয়েছে ...তাহলে হয়ত তোমাকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেবে যে কোথাকার জেলে তুমি থাকতে চাও...লাহোর, করাচী, ইসলামাবাদ না কি রাওলপিন্ডি?"


               যাক গে সেসব কথা। তারপরে দুবছর কেটে গিয়েছে । ইতিহাস সাক্ষী-"আমার মেসেজের জন্য অন্ততঃ দুই দেশের মধ্যে কোনো যুদ্ধ বা রায়ট লাগেনি। আমাকেও জেলে যেতে হয়নি।" 


 তিনদিন বন্ধ রাখার পরে আমি আবার আমার মোবাইল ফোনটি ব্যবহার করতে শুরু করেছিলাম...


            তবে সেই অট্টহাসি আজও আমার কানে মাঝেমাঝেই গুঞ্জরিত হয়। তখনই মনে হয়-ছাত্রছাত্রীর নিষ্পাপ ভুলে কোনো শিক্ষক কি কখনও অমন হাড়জ্বালানো হাসি হাসতে পারেন ? 


অতএব ...


                    **************