Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-সাপ্তাহিক-সেরা-সম্মাননা

#সাপ্তাহিক_প্রতিযোগিতা_পর্ব_২২
#বিষয়_শিক্ষক_দিবস#বিভাগ_গল্প#মিস_অহনা#গোপা_ব্যানার্জী 
এবছর এপ্রিল মাসে এই স্কুলে নতুন কেমিস্ট্রি টিচার হয়ে যোগ দিয়েছে অহনা। এরই মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে গেছে অহনা মিস। এই অঞ্চলের বিখ্যাত কনভেন্ট স্কুল …

 


#সাপ্তাহিক_প্রতিযোগিতা_পর্ব_২২


#বিষয়_শিক্ষক_দিবস

#বিভাগ_গল্প

#মিস_অহনা

#গোপা_ব্যানার্জী 


এবছর এপ্রিল মাসে এই স্কুলে নতুন কেমিস্ট্রি টিচার হয়ে যোগ দিয়েছে অহনা। এরই মধ্যে ভীষণ জনপ্রিয় হয়ে গেছে অহনা মিস। এই অঞ্চলের বিখ্যাত কনভেন্ট স্কুল এটা।

প্রথম যেদিন ক্লাস নিতে ঢুকেছিলো, সেটা ছিলো ক্লাস সেভেন এ সেকশন। এত দুষ্টু বাচ্চাদের সামলে কিকরে ক্লাস নিয়ে বেরিয়েছিল শুধু ওই জানে। ক্লাস রুমে সি. সি. ক্যামেরা লাগানো। সব সিস্টার প্রিন্সিপাল দেখে রাখবেন ভেবেই কান্না পেয়ে যাচ্ছিলো। ডিসিপ্লিনের এত কড়াকড়ির মধ্যে মুখে শব্দ না করেই কিকরে এত দুষ্টুমি করা যায় এদের না দেখলে বুঝতে পারতোনা অহনা।

কিন্তু আজ সব কিছু বদলে গেছে। ওর একান্ত নিষ্ঠার কাছে হার মেনেছে সব প্রতিকূলতা। সেদিন সেভেন এর ক্লাস এর পরই ছিলো ক্লাস সিক্স বি এর পিরিয়ড।অহনার খুব ভালো লেগেছিলো ওদের... সেদিন ওরাও এটা বুঝতে পেরেছিলো না বকে গল্প করেও অঙ্ক শেখাতে জানে মিস।


কিছুদিন ক্লাস নেওয়ার পরই সারা স্কুলে মিষ্টি স্বভাব আর ভালো ব্যবহারের জন্য বেশ নাম হয়ে গেলো অহনার।

সেপ্টেম্বরের পাঁচ তারিখ স্কুলে বিরাট বড়ো করে শিক্ষক দিবসের আয়োজন হলো। অন্য টিচারদের মুখে শুনেছিলো স্টুডেন্টরা বিভিন্ন রকম অনুষ্ঠান করে টিচারদের সম্মান যেমন জানায়, সেরকম অনেকের  নকল করে হাস্যকৌতুকও করে।


যথা সময় অডিটোরিয়াম ভর্তি হলো, শুরু হলো অনুষ্ঠান। সম্বর্ধনা পর্ব শেষ হতেই হাই স্কুলের সবথেকে নিচু ক্লাস সিক্স এর পারফরমেন্স দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হলো। প্রথমেই স্টেজে ফারহান, যার নামে নালিশ শুনে শুনে ব্যতিব্যস্ত হয়ে গেছিলো অহনা!ওর বুক কেঁপে উঠলো। ওকে নিয়ে কিছু বলবে??

মাইক হাতে ও স্টেজে দাঁড়াতেই সবাই হাসতে লাগলো... কারণ ও এদিক ওদিক তাকাচ্ছে কিন্তু কিছু বলছেনা। হঠাৎ অহনাকে দেখতে পেয়ে একগাল হেসে বললো...

----মে আই রিকোয়েস্ট মিস অহনা টু কাম আপন স্টেজ!!!

হাততালিতে ফেটে পড়ছে হল! অহনা খুব ভয়ে ভয়ে স্টেজে উঠলো। ওকে অবাক করে দিয়ে বলতে শুরু করলো ফারহান...

কিভাবে মিস ওকে অঙ্ক শিখিয়েছে, কিভাবে ও ধীরে ধীরে সাইন্স আর অঙ্কে ভালো নম্বর পেতে শুরু করেছে, কারণ পড়াশোনা করতে ভালো লাগে এখন।

এভাবে সব ক্লাসের প্রতিনিধিরাই অহনার প্রশংসা করতে থাকলো...

অনুষ্ঠানের শেষ পর্বে সিস্টার উঠে এলেন স্টেজে। বললেন...

---এবারের শ্রেষ্ঠ টিচার সম্মান পাচ্ছে অহনা!

আনন্দে অহনার চোখে প্রায় জল এসে গেল, আপ্লুত হয়ে পড়লো ও।

অনুষ্ঠান শেষে স্টুডেন্টরা বাসে উঠছে। আজ অহনার দায়িত্ব গেটে। সবাই প্রায় উঠে পড়েছে... বাসগুলো একে একে ছেড়ে যাচ্ছে... হঠাৎ সব থেকে পিছনের বাসটা ওকে পেরিয়ে যাওয়ার সময় ও দেখলো...

বাসটা কেমন দুলে দুলে চলছে। এক পাশটা যেন বেঁকে যাচ্ছে...

তড়িৎ গতিতে বাসের পিছনে ছুটতে শুরু করলো অহনা! সঙ্গে চিৎকার করতে লাগলো... কিন্তু কন্ডাকটর শুনতে পাওয়ার আগেই পাত্তি ভেঙে যাওয়ায় বাসটা রাস্তার পাশের হাইড্রেনে কাত হয়ে পড়ে গেল...

অহনা দেখলো একটা বাচ্চা ছিটকে দূরে পড়লো। দিগ্বিদিক জ্ঞান হারিয়ে ছুটে বাচ্চা ছেলেটাকে রাস্তা থেকে তুলে উঠে দাঁড়াতেই পিছনে আসা ট্রাক অহনাকে ধাক্কা দিলো। পড়ে যেতে যেতে অহনা দেখলো... বাচ্চাটা ফারহান!


সারা স্কুল অ্যাসেম্বলিতে দাঁড়িয়ে ফারহান আর মিস

অহনার জন্য প্রেয়ার করছে। 

খবর এলো... ফারহান এখন অনেক সুস্থ মিস! কদিনের মধ্যে ছাড়া পাবে হাসপাতাল থেকে!

আর মিস অহনা...তাঁর জীবন দিয়ে ফারহানকে বাঁচিয়ে শিক্ষক দিবসে শ্রেষ্ঠ মানুষ, শ্রেষ্ঠ শিক্ষিকার কাজ করে দিয়ে সবার মনে চিরদিনের জন্য অমর হয়ে গেল ।

©®গোপা

_________________________________________