Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-সাপ্তাহিক-সেরা-সম্মাননা

ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা# সাপ্তাহিক #প্রতিযোগিতা পর্ব ----২২বিষয়--শিক্ষক দিবসবিভাগ--গল্পশিরোনাম--স্মরণগৌতমী ভট্টাচার্য------------------------আমার গৃহশিক্ষক। এক নামজাদা পরিবারের মানুষ। নামটা উহ্য থাক। গৃহশিক্ষকতা তাঁর পেশা ছ…

 


ক্যাসিওপিয়া সাহিত্য পত্রিকা

# সাপ্তাহিক #প্রতিযোগিতা পর্ব ----২২

বিষয়--শিক্ষক দিবস

বিভাগ--গল্প

শিরোনাম--স্মরণ

গৌতমী ভট্টাচার্য

------------------------

আমার গৃহশিক্ষক। এক নামজাদা পরিবারের মানুষ। নামটা উহ্য থাক। গৃহশিক্ষকতা তাঁর পেশা ছিল। সাহিত্য, দর্শনশাস্ত্র,অঙ্ক,বিজ্ঞান ইংরেজি সব বিষয়ে ই অগাধ পাণ্ডিত্য বা অবাধ বিচরণ। নাইন, টেন,ইলেভেন প্রায় তিন বছরের ও বেশী আমি ওনার কাছে পড়েছি ।


আমি তখন হুগলী জেলার চুচুড়া তে থাকতাম। আমাদের বাড়ি থেকে ওনার বাড়ি অনেক দূরে। ভোরে ওঠার অভ্যাস প্রায় কোনোদিন ছিল না। বাবা মায়ের 'ওঠ ওঠ 'তাড়া খেয়ে ব্রাস হাতে বারান্দা য় গিয়ে দাঁড়ালে দেখতে পেতাম বড় রাস্তার মোড়ের মাথা থেকে আধ ময়লা কুঁচকানো দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া প্রায় বৃদ্ধ মাষ্টারমশাই আমাদের বাড়ির দিকে আসছেন। ঠিক তখন ঘড়ি তে ছটা বাজতে দশ। আমাদের বাড়ির দরজায় ছটা বাজতে পাঁচ। আমাকে পড়াতে বসতেন ঠিক ছটা। ওনার হাতে কোন ঘড়ি থাকতো না। ঠিক আট টা তে উনি উঠে যেতেন। আমিও দুষ্টু কম ছিলাম না, ইচ্ছে করে আটটার একটু আগে নতুন কোনো বিষয়ে র পড়া জানতে চাইতাম। অল্পকথায় বুঝিয়ে দিয়ে পরের দিন ভালো করে বোঝাবেন বলতেন। পরের দিন আমি ভুলে গেলেও উনি ঠিক মনে করে বিষয় টি নিয়ে আলোচনা করতেন। 


আমি সাহিত্যের ছাত্রী কিন্তু সংস্কৃত বিষয়ে সিঁটিয়ে থাকতাম ।আমার বাবার খুব চিন্তার বিষয় ছিল আমি সংস্কৃতে পাশ করতে পারবো কিনা। মাষ্টারমশাই এর কাছে উদ্বেগ প্রকাশ করলে উনি স্মিত হাসিতে বলতেন ভালোই করবে -ছাত্রীর উপর অগাধ বিশ্বাস। অকারণে পড়াশোনা ছাড়া কথা বলতেন না। তখনকার দিনে গৃহশিক্ষকতা করে যে টাকা পেতেন তা অতি নগণ্য সম্ভবত চল্লিশ বা পঞ্চাশ টাকা। কম ও হতে পারে, একদম ঠিক বলতে পারবো না। কারণ টাকা খামে ভরে ওনার হাতে বাবা বা মা দিতেন। আমাদের জিজ্ঞাসা করার সাহস ছিলনা। 


ছাত্র ছাত্রী দের বাড়ি পড়াতে আসতেন পায়ে হেঁটে। মাঝে মাঝে আমার মায়ের কাছ থেকে চোদ্দ পয়সা বা পাঁচ পয়সা চেয়ে নিতেন। ওনার কাছে দশ পয়সা আছে।  বাস ভাড়া ছিল চোদ্দ বা পনেরো পয়সা। মাষ্টারমশাইএর ক্লান্তি র জন্য বাসে যাবার ইচ্ছে হোত।


নিয়ম শৃঙ্খলাবদ্ধ সময়ানুবর্তিতা ওনার জীবন চর্যার মূল মন্ত্র ছিল ।'Simple living high thinking 'বিশ্বাসী মাষ্টারমশাই এর  আর্থিক দীনতা থাকা সত্ত্বেও মনের হীনতায় ক্লিষ্ট হতে কখনো দেখিনি। 


আমার হায়ার সেকেন্ডারী পরীক্ষা র রেজাল্ট আউট হবার পর উনি এসেছিলেন আমাদের বাড়ি।রেজাল্ট মোটামুটি ভালো হবে জানতেন, কিন্তু কৌতূহল ছিল সংস্কৃত নিয়ে। ভদ্রস্থ      গোছের একটা নম্বর পেয়েছি জেনে মুখে হাসি ফুটে উঠেছিল। 


সেদিন মাষ্টারমশাই চলে যাচ্ছিলেন, আমি বারান্দা য় দাঁড়িয়েছিলাম।ঋজু পায়ে চলে যেতে মনে হয়ে ছিল জ্ঞানের বর্তিকা হাতে  নিয়ে চলেছেন স্থান থেকে স্থানান্তরে দেশ থেকে দেশান্তরে শিক্ষা র আলো বিতরণে।।