Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-সাপ্তাহিক-সেরা-সম্মাননা

#সাপ্তাহিক_প্রতিযোগিতা পর্ব- ২৩#বিষয়_ ঘুড়ি ওড়ানোর দিনগুলো #বিভাগঃ গল্প #নামঃ জীবনের ভোকাট্টা#কলমেঃ মধুপর্ণা বসু 
আজ সকালে অন্যমনস্ক হয়ে গ্লাসে জল ঢালতে গিয়ে গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে ব্যস, টুকরো কাঁচগুলো তুলতে গিয়ে আঙুলটাও গেল খ্যঁচ কর…

 


#সাপ্তাহিক_প্রতিযোগিতা পর্ব- ২৩

#বিষয়_ ঘুড়ি ওড়ানোর দিনগুলো 

#বিভাগঃ গল্প 

#নামঃ জীবনের ভোকাট্টা

#কলমেঃ মধুপর্ণা বসু 


আজ সকালে অন্যমনস্ক হয়ে গ্লাসে জল ঢালতে গিয়ে গ্লাসটা হাত থেকে পড়ে ব্যস, টুকরো কাঁচগুলো তুলতে গিয়ে আঙুলটাও গেল খ্যঁচ করে কেটে, রক্তটা চুষে নিতে নিতে ঝুমনার মনে পড়ে গেল সেই কত্তো ছোট বেলায়, বাবার, ছোট কাকুর সাথে মাঞ্জা তৈরীর সময় ওকে সুতো ধরতে বলতো কাকু, ' ঝুমি জোরে টানিসনা কিন্তু আঙুল কাটবে,' বলার সাথে সাথেই খুচ করে কাঁচের গুঁড়োয় আঙুল থেকে রক্ত বেরিয়ে আসতো। দূর তাতে কি? বিশ্বকর্মা পুজোয় মাঞ্জা দিয়ে বাবা, কাকা,শান্তনুকাকু, অবুকাকু, পাড়ার চন্দনদা, ববিদা, সবাই মিলে ছাদে উঠতো তিন চারটে ইয়া বড় বড় লাটাই আর শ'খানেক ঘুড়ি নিয়ে, তখন আর ঝুমনাদের পায় কে? ঝুমনা, পিঙ্কি, দিদি বুবুন,সবাই মিলে হইহই করে বড়দের সাথে সমান তালে লাটাই ধরা, ঘুড়িতে সুতো বেঁধে রেডি করা, কান্নি বাঁধা, এসবে মেতে উঠতো। তারপর শুরু হতো একেবারে কুরুক্ষেত্র যুদ্ধ, ঝুমনাদের ছাদ থেকে পাশের মিত্তির, সরকার কাকু, চোপড়া ভাইদের চলতে থাকতো ঘুড়ির প্যাঁচ। আকাশে, তাকালে মনে হতো যেন, লাল, নীল, হলুদ, সবুজ, বেগুনী, কমলা, রামধনুরা ছুটে চলেছে স্বপ্নের পাখায় জিন দিয়ে। ঝুমনাদের ছাদ থেকে একটা করে ঘুড়ি অন্যদের একটা প্যাঁচ জিততো, আর মেজকাকা, শান্তনুকাকু পাড়ার মণ্ডলের মিষ্টির দোকান থেকে এক হাঁড়ি করে রসগোল্লার অর্ডার দিতো। ছাদ থেকে চেঁচালেই দোকান থেকে মিষ্টি হাজির। আহা, সেসব দিন, ঘুড়ির মতো হাল্কা, ফুরফুরে জীবন, কচি বয়েসের কাঁচা ধারালো কাঁচের মতো অথচ ফিনফিনে বেলোয়ারি কাঁচের রঙিন চুড়ির মতো উড়ে যায়, মাঞ্জার সুতোয়, আর এছাদে ওছাদে যদি অলক্ষ্যে দেখে কিছু কুতূহলী চোখ তাহলে তো কথাই নেই। তখন সবে ক্লাস এইট ঝুমনা, আর ও ছাদের চন্দন, বাবুয়া, রনিরা তখন গোঁফের রেখার অপেক্ষায়। মাঝে মাঝেই ডাক পড়তো 'ঝুমি, সুতো ছাড়, ফাঁসিয়ে দিবি দেখছি।' হ্যাঁ কাকু, এইতো' বলে তড়িঘড়ি লাটাই সামলানোর চেষ্টা, বোনেদের মধ্যে চোখ টিপে হাসাহাসি। আকাশে উড়তো পেটকাটি, চাঁদিয়াল, গেলাসি, ময়ুরপক্ষী, বাবা, কাকা, জেঠুনদের সে কী উত্তেজনা, কি আনন্দ, প্যাঁচে জিতে চীৎকার করে অবুকাকুর কোমড় দুলিয়ে নাচ, বাবাকে নিয়ে সবার তামাশা।মা, কাকিমা, মাসিরা, শুধু চা সিঙ্গারা, নিমকি দিয়ে কুল করে উঠতে পারতোনা, বার বার ঝুমনার ডাক পড়তো.......... 

আজও এক বিশ্বকর্মা পুজোয় সকালে আঙুলটা কেটে কতো কি মনে পড়ে গেল। আজ আর ঘুড়ি দেখতে পায়না ঝুমনা,ছাদে উঠে আকাশের দিকে তাকিয়ে শুধু চোখ দুটো খুঁজে যায়, সেই কিশোরী বেলার পেটকাটি গেলাসী, বাবার হাসি, শান্তনুকাকুর প্যাঁচ জেতার উচ্ছ্বাস, ঝুমনার ছোট কাকার ঘুড়ি ওড়ানো আর প্যাঁচ জেতার ছিল, পাড়াজোড়া,নাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে ঝুমনা খুঁজছে বাবা, কাকা, চন্দন বাবুয়াদার ঘুড়ি!! নেই নেই, কোথাও নেই, ছোট বেলার আকাশা, বাতাস, সাঁইসাঁই করে উড়ে যাওয়া স্মৃতি পাখির দল, তার সাধের ভালোবাসার মানুষগুলোর উড়ান। ঝুমনার চিলেকোঠার ঘরে জমে উঠেছে অনেক মুছে যাওয়া পায়ের জলছাপ, আজও তাদের মনের মধ্যে লুকিয়ে রেখেছে ঝুমি,তার এই মনের খোঁজ কেউ বোঝেনা, ঝুমনার মেয়ে বেরিয়ে গেছে বন্ধুদের সাথে কার যেন ফ্যাক্টরির পুজোর নিমন্ত্রনে, পতিদেবতার ভীষণ ব্যস্ত সেডিউল। ঝুমনার আজ তেমন একটা কাজের তাগিদ নেই, ছাদের কার্ণিশে ভর দিয়ে নীল রহস্যময় আকাশে একমনে খুঁজে চলেছে, বাবা, কাকা, অবুকাকুর ঘুড়ির চিকচিকে ধূসর রঙের মাঞ্জা। তখন হাপরা ধরতো এর ওর কেটে যাওয়া  ঘুড়ির মাঞ্জা, তাই নিয়ে সেকি ঝগড়া.... আজ কেউ নেই ঝগড়ায় সামিল হবার,কি আপ্রাণ চাইছে ঘুড়ি গুলো আবার উড়ুক আকাশে, সবার নামে ফিরে আসুক মেঘের মুলুক থেকে ঘুড়ির ঝাঁক। আর ঝুমনাও চীৎকার করে বলে উঠবে, " কাকু, ভোকাট্টা, ভোকাট্টাআআআআ।।।। 


শব্দ সংখ্যাঃ ৪৯৪.