# মহালয়া# কলমে- মনীষা পলমল17/9/20
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জীবিত ব্যক্তির পূর্বে তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত । এই লোকের শাসক মৃত্যুর দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মা কে…
# মহালয়া
# কলমে- মনীষা পলমল
17/9/20
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী জীবিত ব্যক্তির পূর্বে তিন পুরুষ পর্যন্ত পিতৃলোকে বাস করেন। এই লোক স্বর্গ মর্ত্যের মাঝামাঝি স্থানে অবস্থিত । এই লোকের শাসক মৃত্যুর দেবতা যম। তিনি সদ্য মৃত ব্যক্তির আত্মা কে মর্ত্য থেকে পিতৃলোক এ নিয়ে যান। পরবর্তী প্রজন্মের একজনের মৃত্যু হলে পূর্ববর্তী প্রজন্মের একজন পিতৃলোক ছেড়ে স্বর্গে গমন করেনও পরমাত্মায় (ঈশ্বর) লীন হন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান এর উর্দ্ধে উঠে যান এই কারণে কেবলমাত্র জীবিত ব্যক্তির পূর্ববর্তী তিন প্রজন্মের শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হয়ে থাকে। এই শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যম একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সূর্য কন্যা রাশিতে প্রবেশ করলে পিতৃপক্ষ সূচিত হয়।লোক বিশ্বাস অনুযায়ী এই সময় পূর্বপুরুষগণ পিতৃলোক পরিত্যাগ করে তাদের উত্তর পুরুষদের গৃহে অবস্থান করেন। সূর্য বৃশ্চিক রাশিতে প্রবেশ করলে তারা পুনরায় পিতৃলোকে ফিরে যান। পিতৃগন এর অবস্থান এর প্রথম পক্ষে তাই পিতৃ-পুরুষের উদ্দেশ্যে তর্পণ করতে হয়।
মহাভারতে এই বিষয়ে একটি সুন্দর উপাখ্যান আছে---- প্রসিদ্ধ দাতা কর্ণের মৃত্যু হলে তার আত্মা স্বর্গে গমন করলে তাকে স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসেবে প্রদান করা হয়। কর্ণ ইন্দ্রকে মতান্তরে যমকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করেন। ইন্দ্র মতান্তরে যম বলেন যে কর্ণ যেহেতু সারাজীবন স্বর্ণ এবং রত্ন ই দান করেছেন, পিতৃপুরুষদের উদ্দেশ্যে কোনদিনই খাদ্য জল প্রদান করেননি তাই স্বর্ণ ও রত্ন খাদ্য হিসাবে প্রদান করা হয়েছে কর্ণ বলেন তিনি যেহেতু তার পিতৃগণের সম্পর্কে অবহিত ছিলেন না তাই তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে পিতৃপুরুষকে স্বর্ণ রত্ন প্রদান করেননি। এই কারণে কর্ণকে 16 দিনের জন্য মর্ত্যেগিয়ে পিতৃলোকের উদ্দেশ্যে অন্নজল প্রদান করার অনুমতি প্রদান করা হয়। এই পক্ষই পিতৃপক্ষ নামে পরিচিত। মহালয়া পক্ষের 15 টি তিথির নাম হল -- প্রতিপদ দ্বিতীয়া তৃতীয়া চতুর্থী পঞ্চমী ষষ্ঠী সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমী একাদশী দ্বাদশী ত্রয়োদশী চতুর্দশী ওঅমাবস্যা। হিন্দু বিশ্বাস অনুযায়ী যে ব্যক্তি তর্পনের ইচ্ছুক হন তাকে তার পিতার মৃত্যুর তিথিতে তর্পণ করতে হয়। পিতৃপক্ষের পুত্র কর্তৃক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান হিন্দু ধর্মের একটি অবশ্যকরণীয় অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের ফলেই মৃতের আত্মার স্বর্গে প্রবেশাধিকার পান। মার্কণ্ডেয় পুরাণ গ্রন্থে বলা হয়েছে যে পিতৃগন শ্রাদ্ধে তুষ্ট হলে স্বাস্থ্য ধন জ্ঞান ও দীর্ঘায়ু এবং পরিশেষে উত্তর পুরুষকে স্বর্গও মোক্ষ প্রদান করেন। বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে গৃহস্থদের দেব ভূত
অতিথিদের সঙ্গে পিতৃতর্পণের ও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে পূর্ববর্তী তিন পুরুষের উদ্দেশ্যে পিন্ডদান ও জল প্রদান করা হয় । তাদের নাম উচ্চারণ করা হয় এবং গোত্রের পিতা কে স্মরণ করা হয়। এই কারণে একজন ব্যক্তির পক্ষে বংশের 6 প্রজন্মেরনাম স্মরণে রাখা সম্ভব হয়। এর ফলে বংশের বন্ধন দৃঢ় হয়। এই পক্ষে বর্তমান প্রজন্ম পূর্বপুরুষের নাম স্মরণ করে তাদের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পিতৃপুরুষের ঋণ হিন্দু ধর্মে পিতৃ মাতৃ ঋণঅথবা গুরু ঋণের সমান গুরুত্বপূর্ণ। এইখানেই নিহিত রয়েছে হিন্দু ধর্মে মহালয়ার আসল তাৎপর্য।