জয়দীপ পন্ডা একদিন নারায়ণের ইচ্ছে হলো পৃথিবীর লোকেরা কিভাবে রয়েছে তা স্বচক্ষে দেখবেন। মা লক্ষ্মী ও নাছোড়বান্দা তিনি ও নারায়ণের সঙ্গে থাকবেন এবং সঙ্গে থাকবেন। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীর আহ্বানে সাড়া দিতে বাধ্য হলেন ।কিন্তু দিলেন একট…
জয়দীপ পন্ডা
একদিন নারায়ণের ইচ্ছে হলো পৃথিবীর লোকেরা কিভাবে রয়েছে তা স্বচক্ষে দেখবেন। মা লক্ষ্মী ও নাছোড়বান্দা তিনি ও নারায়ণের সঙ্গে থাকবেন এবং সঙ্গে থাকবেন। শেষ পর্যন্ত লক্ষ্মীর আহ্বানে সাড়া দিতে বাধ্য হলেন ।কিন্তু দিলেন একটি শর্ত। শর্তে বলা হলো পৃথিবীতে অবতরণের পর লক্ষী মাতা উত্তর দিকে তাকাতে পারবেন না। কিন্তু ধরাধামে অবতরণের পর মাতা লক্ষ্মীর কৌতুহল হল উত্তর দিকে কি রয়েছে তা তিনি একবার প্রত্যক্ষ করবেন । তিনি উত্তর দিকে তাকালেন এবং লক্ষ্য করলেন এক তিল ক্ষেত। তিল ক্ষেতটি ফুলে ভরে উঠেছে । এই মনোহর দৃশ্য দেখে মাতা লক্ষী রথ হতে নেমে পড়লেন এবং তিল ক্ষেত হতে কয়েকটি ফুল তুলে আনলেন। নারায়ন লক্ষী মাতার এই কাণ্ড দেখে বললেন ক্ষেত্র স্বামীর বিনা অনুমতিতে তার ক্ষেত ফুলতলা পাপ কর্ম । এই পাপের ফল তোমায় ভোগ করতে হবে এর প্রায়শ্চিত্ত হল তোমার ক্ষেত্র স্বামীর গৃহে তিন বছর দাসীবৃত্তি করতে হবে।
এরপর নারায়ন ও লক্ষ্মী মাতা ব্রাহ্মণ ও ব্রাহ্মনীর ছদ্মবেশ ধরে ক্ষেত্র পতির গৃহে উপস্থিত হয়ে বললেন আপনার ক্ষেত্র থেকে আপনার বিনা অনুমতিতে এই স্ত্রীলোক তিলফুল তুলেছে তার শাস্তিস্বরূপ ওকে আপনার গৃহে তিন বছর দাসীবৃত্তি করতে হবে। কিন্তু আমার অনুরোধ আপনি ওকে কখনো উচ্ছিষ্ট খাদ্য দেবেন না। ঘর ঝাঁট দিতে দেবেন না । এবং অপরের পড়া ময়লা কাপড় কাচতে দেবেন না। এরপর ব্রাহ্মণ বেশে নারায়ন চলে গেলেন।
এদিকে ক্ষেত্র স্বামী অত্যন্ত দরিদ্র ব্রাহ্মণ ছিলেন । তার স্ত্রী তিন পুত্র এক কন্যা এবং এক পুত্র বধু ছিল। তাদের নিজেদের ঠিকমতো আহার জোটে না তার উপর ওই ব্রাহ্মণীকে খাওয়াতে হবে ভেবে গৃহস্বামী খুবই চিন্তিত হয়ে পড়লেন । তিনিই লক্ষ্মী মাতা কে উদ্দেশ্য করে বললেন, মা আমরা খুবই গরীব আমাদের ঘরে চাল ডাল কিছুই নেই। তিন ছেলে ভিক্ষায় বেরিয়েছে যদি কিছু যোগাড় করে আনতে পারে তবেই আজ আমাদের খাওয়া হবে । লক্ষ্মী মাতা দেখলেন ব্রাহ্মণ গৃহিণী শতছিন্ন এক মলিন কাপড় পড়ে আছেন। তা দেখে লক্ষ্মী মায়ের খুবই দয়া হল। তিনি ব্রাহ্মণী কে বললেন, চলো তোমার গিয়ে দেখি কেমন তোমার ঘরে কিছু নেই। ব্রাহ্মণ গৃহিণী লক্ষী মাতা কে ঘরের মধ্যে নিয়ে এসে দেখে আশ্চর্য হলেন ঘর ভর্তি রয়েছে চাল ডাল নুন তেল-ঘি এবং আলনায় ঝুলছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাপড়। তা দেখে বাড়ির সবাই আনন্দে অভিভূত হলো এবং ভাবল এই স্ত্রীলোক কোন সাধারণ মেয়ে নয় এ কোন দেবী ।তারা মনে মনে এই দেবীকে প্রণাম করলেন এরপর থেকেই এই ব্রাহ্মণ পরিবারে ঐশ্বর্য ধন-সম্পদ বাড়তে লাগল তারাও লক্ষ্মী মায়ের প্রতি বিশেষ যত্নবান হলেন।
এরপর দেখতে দেখতে তিন বছর কেটে গেল । তিন বছরের শেষে একদিন গঙ্গায় পুণ্যস্নানের দিন এল। ক্ষেত্র পতির পরিবার গঙ্গাস্নানে যাবেন স্থির করলেন তারা লক্ষী মাতা কে তাদের সঙ্গে যেতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি রাজি হলেন না । লক্ষী মাতা বললেন আমি যাব না তবে আমি এই কড়ি পাঁচটা দিলাম ।তোমরা আমার নাম করে এই কড়ি পাঁচটা গঙ্গা জলে ফেলে দেবে। ব্রাহ্মণ পরিবার গঙ্গা স্নান করে কড়ি পাঁচটা আঁচল হতে খুলে গঙ্গায় ফেলে দেওয়ার সাথে সাথে দেখলেন মা গঙ্গা চেপে এসে কড়ি পাঁচটা নিয়ে গেলেন। এই দৃশ্য দেখে ব্রাহ্মণী আশ্চর্য হয়ে গেলেন। ফিরে এসে বাড়িতে দেখলেন দুয়ারে একটি রথ দাঁড়িয়ে রয়েছে। রথের মধ্যে এক ব্রাহ্মণ বসে আছেন । লক্ষ্মী মায়ের এক পা রথে এবং আর এক পা মাটিতে রেখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই দৃশ্য দেখে ব্রাহ্মণী লক্ষ্মী মায়ের যুগল জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললে মা তোমাকে আমরা চিনতে পারিনি আমাদের যা কিছু হয়েছে মাপ কর। আমাদের ছেড়ে তুমি যেওনা। লক্ষী মাতা বললেন, মা আমার তো আর থাকবার উপায় নেই । তোমাদের বাড়িতে দাসী হিসেবে থাকার আমার তিন বছরের মেয়াদ ছিল। আজ তিন বছর উত্তীর্ণ হয়েছে । নারায়ন এসেছেন আমাকে গোলোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য । তিনি আরও বললেন , তোমরা মনে ব্যথা পেও না । বাড়ির পিছনে বেল গাছের তলায় খুঁড়লে তোমাদের দুঃখ কষ্ট মুছে যাবে । আর ভাদ্র কার্তিক পৌষ ও চৈত্র মাসে লক্ষ্মী পুজো করবে। তাহলে তোমদের দুঃখ কষ্ট মুছে যাবে । সুখী ও ঐশ্বর্যশালী হবে ।এরপর বেলবৃক্ষের তলা খুঁড়ে তারা এত ধন সম্পদ পেল তা দিয়ে প্রাসাদ নির্মাণ করল । এবং দাস-দাসী ছেলে মেয়ে জামাই পুত্র বধুকে নিয়ে আনন্দে সুখে দিন কাটাতে লাগলো।এইভাবে মর্তে লক্ষ্মী পুজোর প্রবর্তন ঘটলো।
এবছর করোনা আবহে লক্ষ্মীর ভাঁড়ারে টান ধরেছে।সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে আর্থিক অনটন নিত্যসঙ্গী, তাই এবারে নমো নমো করেই দেবীর আরাধনা করতে চাইছেন সবাই,।
প্রতিমা শিল্পী লাল পদ পাল বললেন, এবারে প্রতিমার চাহিদা অন্যান্যবারের তুলনায় একেবারেই নেই। তারপর প্রতিমা তৈরীর আনুষঙ্গিক সরঞ্জাম ও লেবারের দাম অনেক বেড়েছে, ফলে আমরা আর পেরে উঠছি না,।
গতবারে প্রায় ছয়শত প্রতিমা তৈরি করে ছিলাম, সব বিক্রি হয়ে গিয়েছিল, এবারে মেরেকেটে একশত পঞ্চাশটি প্রতিমা তৈরি হয়েছে অর্ডার অনুযায়ী, সব বিক্রি হবে কিনা তাও জানিনা।
গৃহবধূ শ্রাবণী পন্ডা, জানালেন এবারের পুজোর খরচ খুব বেড়েছে তবুও বছরে একবারই তো পুজো তাই আর্থিক অনটনের মধ্যেও পুজোতে খামতি রাখতে চাইনা.।