Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

জয়ীইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়
একটা চুবড়ি তে শাক নিয়ে সবিতা পুকুর ঘাটে গেল।আপনমনে গজগজ করতে করতে নিজের কপালকে দুষতে লাগল।নিবারণ স্যাকরার মা বলল কি হয়েছেরে সবু?সকাল বেলা থেকেই মেজাজ গরম করলে চলে।কী হল তোর।নাকি আমার দেওর কিছু বলল।সবিতা…

 


জয়ী

ইন্দ্রাণী বন্দ্যোপাধ্যায়


একটা চুবড়ি তে শাক নিয়ে সবিতা পুকুর ঘাটে গেল।আপনমনে গজগজ করতে করতে নিজের কপালকে দুষতে লাগল।নিবারণ স্যাকরার মা বলল কি হয়েছেরে সবু?সকাল বেলা থেকেই মেজাজ গরম করলে চলে।কী হল তোর।নাকি আমার দেওর কিছু বলল।সবিতা কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো।আর ঠিক তার পর ই চোখের জল বাগ মানলো না।

কী হবে দিদি।দোষ আমার কপালের।জয়ীর বাপ আমাকে দোষে।ওনার কলকেত্তা যাবার দিন আজ।ব্রজঠাকুরের ছেলের পৈতে।ক্ষুর কাঁচি শানাতে উনি বেরোবেন।তা বলতে হবে তো আগে থেকে।ভোম্বলা হয়ে এখন বললে মেজ বৌ আমায় ভাত রেঁধে দে।ইদিকে ক্ষার ফুট্টেছি দিদি।

সকাল থেকে নাচানাচি চলছে যেন।আর উদিকে ধিঙ্গি মেয়েকে শাকটা ধুয়ে আনতে বললাম।তা সে নড়েও না,চড়েও না।মুখ গোঁজ করে বসে আছে।কাল সনাতন কবরেজের বাড়িতে বাপের সাথে গিয়ে কী বুঝেছে কী জানি।

নিবারণের মা বলল ও!তাই বল।আমি ভাবি কী না কি।হাবা গোবা মেয়ে হলে কী হবে।ভালো বুদ্ধি।কোনো কাজে জয়ীকে আঁটে না।বড় মায়া রে সবু।


সবিতা বলল আমার গর্ভের কলঙ্ক দিদি।ওই মেয়ে নিয়ে আমার মরেও শান্তি হবে না।মাঝে মাঝে ভাবি কী হবে ওর।আর বাপের তো চিন্তা ভাবনাই নেই।লোকের একটা কিছু ভালো হয় আর আমার তো তাও নেই।নিবারণের মা প্রবোধ দেয়।কাঁদিস না বৌ।আকাশের দিকে আঙুল দেখিয়ে বলেন তেনার উপর বিশ্বেস রাখ বৌ।তার ইচ্ছেতে চন্দর সূর্য উঠছে।

আঁচলের খুঁট দিয়ে চোখ মুছে শাক নিয়ে বাড়ির পথে র ওনা হল।ওর যাবার দিকে চুপ করে তাকিয়ে র ইল নিবারণের মা


বামুন পাড়ায় এই এক ঘর নাপিত।ব্রজঠাকুরের দাদু নিজের জায়গাতে সত্যানন্দ নাপিত কে বসায়।কথায় আছে হলে হাঁড়ি,মরলে ডোম।আর শুদ্ধু করতে নাপিত।


সতে নাপিতের ছেলে হল গিয়ে সবিতার শ্বশুর।উনি যদ্দিন বেঁচে ছিলেন সবুর সংসারে অভাব ছিল না।আশ্চর্যি এলেম ছিল লোকটার।অমন বাপের এমন ছেলে।আজন্ম কুঁড়েশুল।তার উপরে বোবা মেয়ে নিয়ে আদিখ্যেতা।মরণ দশা আমার।


গরমভাত,মানভাতে,চুনোমাছের টক আর শাক কটাকে ভেজে পাতে দিতে দিতে সবু বলল কিছু টাকা থাকে তো দাও।চাল বাড়ন্ত।দোকান পাসারি কিছুই নেই।


সদানন্দ শুনেও না শোনার ভান করে জয়ীকে ইশারা তে ডাকতে লাগল।বাপসোহাগি মেয়ের হাসি ফুটেছে।গা পিত্তির জ্বলে যায়।সব দায় ওর।নিজের লজ্জা অমন মেয়ে সে জন্ম দিয়েছে।


জয়ী বাবার গা ঘেঁসে বসে বসে চুনো মাছের টক খাচ্ছে।ওর সব ভাষা চোখে ব্যক্ত হচ্ছে।পাশের বাড়ি থেকে গানের সুর ভেসে আসছে

"এইধন যার ঘরে নাই

বৃথাই জীবন,বৃথাই জীবন।

ধনকে নিয়ে বনকে যাবো

সেথায় খাবো কী।সেথায় খাবো কী"।


আর কদিন পরেই দুগ্গোঠাকুর আসবে।বামুনঠাকুরদের বড়ো দয়া।পৈতের সিদে দেন দশ কেজি চাল।কিছু টাকা আর বামুন গিন্নী সবুকে একটা নকশা পেড়ে শাড়ি দেবেন।পুজোতে একটা সোনার নোলক গড়িয়ে দিলে জয়ীটাকে সগ্গের উর্বশী লাগবে।সকালে মেয়েটাকে কত শাপশাপান্ত করেছে ও।অভাবের সংসারে মাথাটাই কাজ করে না।


(ক্রমশ)