..." শিকারী চোখে "...ত্রিদিব কুমার বর্মণ।~~~~~~~~~~♥~~~~[ গল্প ]~~~~
চৈত্রের এক মধুর অপরাহ্ন।বিশাল বাড়ীরসামনে প্রায় তিন কাঠা বাগানজমিতে যেন ঘাসের গালিচা পাতা। সূর্য্য প্রায়অস্তমিত। দিগন্তের ওপার থেকে সে তারঅসংখ্য রশ্মি…
..." শিকারী চোখে "...ত্রিদিব কুমার বর্মণ।
~~~~~~~~~~♥~~~~[ গল্প ]~~~~
চৈত্রের এক মধুর অপরাহ্ন।বিশাল বাড়ীর
সামনে প্রায় তিন কাঠা বাগানজমিতে যেন ঘাসের গালিচা পাতা। সূর্য্য প্রায়
অস্তমিত। দিগন্তের ওপার থেকে সে তার
অসংখ্য রশ্মি ছড়িয়ে মেঘের গায়ে দিনের শয্যা উপহার দিয়ে বিদায় নিচ্ছে.....।
বসন্তের মর্মরিত বাতাসে সবুজ লনে
চারখানা বেতের চেয়ারে ওরা চারজন... ।
সত্যপ্রিয়, অলকাদেবী,রজত আর দেবলীনা। চায়ের সান্ধ্য মজলিশে সবার
খোশ মেজাজ। একটু দূরে রজত --
দেবলীনার পাঁচ বছরের মেয়ে টুম্পা, কুকুরের সাথে বল নিয়ে খেলায় মত্ত..... ।
বাড়ীর গেটের সামনে মেহগিনি গাছের
উঁচু ডালে দিন শেষের লাল-হল্ দে আভা
পড়ছে। পাতাগুলো চঞ্চলা.... ।
সত্ত্যপ্রিয় সেদিকে চেয়ে বললেন, ---
গাছটা দেখতে দেখতে কেমন বড় হ'য়ে গেল, দেখ ! ক ' বছর হ'ল যেন..... !!
অলকা দেবী একটু ভেবে বললেন, ---
তা ' প্রায় দশ বছর তো হ'বেই। সেই সে '-
বার রাণীক্ষেত বেড়াতে গিয়ে...........
.... শেষ কথার রেশ টেনে রজত, সত্ত্যপ্রিয়ের ছেলে বলল, ---- এটা কিন্তু বাবা কাজের মত কাজ করেছে, বলো লীনা.... । বছর পনেরো অপেক্ষা ক'রো,
এ ' গাছের দাম হ'বে কম শে কম পাঁচ লাখ টাকা.... ।
সত্ত্যপ্রিয় চমকে উঠলেন... ।--- বলিস্ কি
রে...? এ ' ত টাকা.... !!
রজতের দু ' ঠোঁট ভেদ ক'রে আরো কথা বেরুল, --- ত'বে কী বলছি... । এখনই ত '
দু'হাজার টাকা সি.এফ.টি. সময়ের অপেক্ষা মাত্র........ ।
অলকা দেবীও বিস্মিত...। বলে উঠলেন,--
তা ' হলে ত ' এই গাছ রেখেই তোর মেয়ের বিয়ে হ'য়ে যাবে..... ।
রজতের স্ত্রী, দেবলীনা লোভাতুরা চোখে
গাছটাকে পরখ করতে লাগল.....। একটু
বাদে রজতের দিকে ফিরে বললে, ----
তোমরা এমন করছো, গাছটা বাঁচলে হ'য়.....।
অলকাদেবীও কিছু বলার জন্যে হিস্ -
পিস্...., বললেন, ---আর যদি বেঁচে যায়,
তবে, এ'টা কেটে টুম্পার বিয়েতে করাব
ফার্নিচার...। মেহগিনি'র খাট, আলমারি,
ড্রেসিংটেবিল...... ইস্ , ভাবাই যায় না... ।
কিন্তু শাশুড়িমায়ের পরিকল্পনা পছন্দ
হ'ল না দেবলীনার। বললে, ---তার চেয়ে
গাছটা বিক্রি ক'রে ক্যাশ টাকা নেয়াই ভাল... । ছোট খাটো একটা বাড়ী / ফ্ল্যাট
হ'য়ে যাবে... ।টুম্পার নামে ক'রে দোবো..!
ঘাড় নেড়ে সত্ত্যপ্রিয় পুত্রবধুর কথায় সায়
জানালেন..., -- দ্যাটস্ আইডিয়া..।বাড়ীই
ভালো... ।
রজত বাধা দিল, --টাকাটা বরং ব্যবসায়
লাগাব...।লাখ চারেক ক্যাশ পে'লে আর
একটু ব্যবসাকে বাড়াতে পারি.....।
মা, অলকাদেবী একটু আহত হ'লেন।
অভিমানী ভংগিতে বললেন, --ত'বে তাই
ক'রো..। মেহগিনি কাঠের ঐতিহ্যই আলাদা, শ্বশুরবাড়ীতে দিদুভাইয়ের বাড়ত মর্যাদা। তোমার বাবার আর ক্ষমতা কতটুকু। অবসর জীবন- যাপন...।
তোমাদেরই সব দায়িত্ব..... ।
একটু থামতেই সত্ত্যপ্রিয়বাবু বললেন, ---
মনে পড়ে রজতের মা, তখন ত ' রাণীক্ষেতে মেজাজ দেখিয়েছিলে, বলেছিলে, বেড়াতে এসে ও ' সব বন-জংগল নিতে হ'বে না....। এখন ? একবার
ত' বাহবা দিলে না !! আচ্ছা, তোমাদের
তিনজনের যখন তিন মত, তখন আমার
কথাই ফাইনাল, গাছটা বিক্রি ক'রে ক্যাশ
টাকা ফিক্সড্ ক'রে রাখ...। দিদিভাইয়ের
বিয়ের সময় ভাল বুঝে যা ' কিছু করার
তখন কর..... । তিনজনের দিকে ঘুরে ফিরে তাকিয়ে কথাটা সারলেন....... ।
ওরা চারজন চার র'কম পরিকল্পনা নিয়ে
গাছটাকে দেখতে লাগল...। কিন্তু যাকে
নিয়ে এ'ত আলোচনা, সেই গাছ উদাসীন,
নির্বিকার...। শেষ বেলায় নিরীহ রোদ গায়ে মেখে বসন্ত বাতাসের সাথে খেলায়
মত্ত....... ।
যৌবনের প্রথম পদচারণায় কিশোরীর মতই চঞ্চলা এই সেই মেহগিনি গাছ.... ।
ঠিক যেন টুম্পার মাখানো ছায়া অংগময়........।
টুম্পাও টের পায় না। খেলায় মত্ত.... ।
ও'সব কথা শোনার সময় কই !! হ'য়ত ' বা
বুঝে উঠতে পারে নি যে, এই মেহগিনি
গাছ থাকবে না.... । ওর দোলনা দোলুনি
খাবে না.... । টুম্পা তখনো গাছের নিচে
মনের আনন্দে খেলছে কুকুকের সাথে... ।
স্বার্থান্বেষী মন গড়ার সময় যে এখনো
ওর হ 'য়ে ওঠে নি............ ।
চিত্র... ২.
এই বাড়ী থেকে মাইল দু '-এক দূরে রেল-
লাইনের পাশে নিষিদ্ধপল্লী ...... ।
সন্ধ্যা হ'য় হ'য়। মতিবাইয়ের অবৈধ মেয়ে
ঝুমকি পথের ধারে এক্কা - দোক্কা খেলছে।
তের কি চোদ্দ বছরের চিকন দেহ লাবণ্যে
ভরা... । কালো দু'টি চোখ যেন সারল্যের
কাজল প্রলেপ, পানপাতার মত মুখমন্ডল.., ঠোঁট দু'টো যেন লেবুর কোয়া।
চিবুকে ছোট্ট অথচ স্পষ্ট একটি মাত্র তিল
জ্বলজ্বল করছে, দিগন্তে সূর্য্যের আলো-আঁধারে অস্পষ্ট আবির্ভাবের মত যৌবনে
স্পর্শ লেগেছে দেহে... ।
কিন্তু ঝুমকি উদাসীন... । ও যেন বুঝতে
চায় না কিম্বা পারে না, যৌবন ওর দৌড় -
গোড়ায়....... ।
কী করুণ নিঃস্বতায় মিশে যাবে ঘৃনিত
নিঃশ্বাস..... । স্মৃতি মলিন হ'বে নোংরা
পরিবেশে। আজ যেখানে ঝুমকি দাঁড়িয়ে, কিছুকাল পরে হ'য়তো শুদ্ধতার
বিন্দু মাত্রটি থাকতে পারবে না। থাকতে
দেবেও না ওকে হ'য়তো......... ।
ঘাস, মাটি, পথ নির্জনতার গন্ধেভরা এই
আঁধো অন্ধকারে চুপিসাড়ে আরো একটু
এগিয়ে যাবে ব'লেই কী ঝুমকির খেলার
মুহূর্ত শুরু ....!!
এক্কা - দোক্কার মজলিশে, চিকদানি ঘুটির
ছন্দে,ঝুমকির শরীরে দোল খায়...।
একমনে খেলে যায়..।এ'ঘর থেকে আরো
এগিয়ে পরের ও'ঘরে... এগোয়... ঘুরে দাঁড়ায়, জোড়া পায়ে। চিক মুঠোতে ধরে,
আবার নাচনি দিয়ে ঠিক নিজের ঘ'রে
যায়..।এই ঝাকুনিতে বুকের স্তন ও খেলা
ক'রে ঝুমকির সাথে..... ।
বৃদ্ধা মতিবাঈ বসেছে মেঝের দাওয়ায়...।
দু' একটা দালালদের আনাগোনা। কেউ -
কেউ সুযোগি চোখে খুঁজতে ব্যস্ততা, কারো কারোর ঝুমকি'র বুকের ওঠা-নামায় মন উদবেলিত, কেউবা দর কষতে
ব্যস্ততা..... । কিছু নেশাখোর পথচারী'র
জটলা... । কেউ বা ফুলের সুগন্ধি মালা
হেঁকে চলেছে.... ।
সন্ধানি ক্যামেরার লেন্সে ঝুমকি এবার
ধ'রা পড়ল... । ত'বে কী ওর যৌবন দ্বার
উন্মোচনের অপেক্ষামাত্র !!
ঝুমকির ভরা শরীরী নদীতে সাঁতার দেবার বাসনায় স্বপ্নজালে ভাসতে থাকে
কেউ-কেউ নরপিশাচী'রা.... ।
রংগিন নেশার স্বপ্ন..... মতিবাঈয়ের হাজার, হাজার টাকা....।
এককালে মতিবাঈয়ের দীর্ঘ পদ্মডাটার
ম'ত শরীরে কোনারকের মন্দির গাত্রের
মিথুন মূর্তির ম'তই ছিল রূপ, জৌলুষ... ।
এখনো ওর দীঘল টানা চোখ দু'টো যেন
আশ্চর্য ঘুম-ঘুম আঁখি পল্লব.... ।
তার বেলাশেষের উপলব্ধি ঝুমকির ওপর
যেন বর্তেছে......... ।
মতিবাঈয়ের দু' চোখ যেন নেশার ঘোর
কাটে নি....। সেও ' কী ঝুমকিকে দেখছে !
তপ্ত নেশায় উষ্ণ রক্তস্রোতে যেন আগুনের খেলা........ ।
ত' বে কী ঝুমকিও অসহায় আত্মরতিময়ী
জীব মাত্র.........!!!
চিত্র ৩.
একদিকে উদাসীন আত্মহারা সবুজ
মেহগিনি -- অন্যদিকে ঝুমকির অপার্থিব স্বর্গীয় সারল্য....... ।
মনে হ'য় বিধাতা ওদের দু' জনের ভাগ্যকে সবার অজান্তে এক'ই গ্রন্থিতে
বেঁধে ফেলেছেন............ ।
--- শিকারী চোখের অর্থ লোলুপতার
আঁচড়ে....................।।
~~~~~~~~~~♠~~~~~~~~~~~~