Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

ক্যাসিওপিয়া-সাহিত্য-পত্রিকা-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#অপেক্ষার_আর_মাত্র_১৩_দিন❤#মা_আসছে...#ছোট_করে_হলেও_পুজোতো_হবেই।
|| শক্তি ||
- শোন বাবু, বাড়ির পুজোর ঝক্কিটা নিশ্চয়ই ভালোই বুঝিস,মায়ের বোধনের আর ১৩ দিন বাকি।তাই আমি চাই না অন্য কোনো কাজ এসে তার মাঝে ব্যাঘাত ঘটাক।- মা!...- দাঁড়াও। আগ…

 


#অপেক্ষার_আর_মাত্র_১৩_দিন❤

#মা_আসছে...

#ছোট_করে_হলেও_পুজোতো_হবেই।


|| শক্তি ||


- শোন বাবু, বাড়ির পুজোর ঝক্কিটা নিশ্চয়ই ভালোই বুঝিস,মায়ের বোধনের আর ১৩ দিন বাকি।তাই আমি চাই না অন্য কোনো কাজ এসে তার মাঝে ব্যাঘাত ঘটাক।

- মা!...

- দাঁড়াও। আগে আমার কথাগুলো শোনো। আগামী পরশু আমাদের প্রতিমার চক্ষুদান। তারপর থেকে আমাদের আর দম ফেলার সময়ও থাকবে না। অতএব কালই তুমি বউমাকে ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে কাজটা করে এসো।

- মা, যে আসছে সে আমাদের...

- চুপ, আর একটাও কথা নয়। যেটা বলেছি সেটাই করবে, তাতেই এ সংসারের মঙ্গল, আমাদের সকলের মঙ্গল। এ সমাজে আমাদের একটা মান-সম্মান আছে । কোনো মূল্যেই তাকে আমরা নষ্ট হতে দিতে পারি না। আর এ কথার অন্যথা হলে জানোই তো তার ফল কী কী হতে পারে! 


ছেলে-বউমাকে কথাগুলো ঝড়ের গতিতে বলেই ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন কাদম্বরী দেবী।

 

সেদিন রাতেই ঘুমের মাঝে  কাদম্বরী দেবীর কানে কে যেন বলে উঠল - 

- আমি ভন্ড ভক্তদের পুজো নিই না। যারা  মৃন্ময়ীকে আবাহন জানায় আর চিন্ময়ীকে বিসর্জন দেয় তাদের শত ধিক! একজন মা হয়ে এক শিশুপ্রাণকে যে ধ্বংসের কথা ভাবে তার আরাধনা আমার দরবারে গ্রাহ্য নয়।

- মা! তুমি?

- না এসে থাকতে পারলাম না রে। আগে প্রাণের পুজো করতে শেখ। তারপরে মূর্তিপুজো করিস।

- মা! আমি অসৎ, ভন্ড কিছুই নই মা। কিন্তু বড্ড ভীতু। তুমি তো জানো মা, যে আসছে সে না নারী,না পুরুষ। এই সমাজ তাকে মেনে নেবে না মা।তাকে আগলে রাখার শক্তি আমাদের নেই। আমরা না তাকে কাছে রাখতে পারব আর তাকে কাছে রাখলে না লোকের কাছে মুখ দেখাতে পারব।তাই তো এইরকম...

- ওরে, সমাজ-প্রকৃতি নিজেই  যে সাক্ষাৎ অর্ধনারীশ্বর। কখনো সে লাস্যময়ী, কখনো আবার তারই তাণ্ডবে ধরাধাম তছনছ। সেখানে মানুষের মাঝে এক নারী আর আর এক পুরুষ একসাথে, একদেহে বেড়ে উঠলে ক্ষতি কি? যে আসছে সে অতি পবিত্র। তাই সে যেমন তাকে তেমন ভাবেই আসতে দে। স্বীকৃতি দে, মান্যতা দে। সমাজের চোখে তাকে শ্রেষ্ঠত্বের এমন শিখরে একদিন পৌঁছে দে যাতে তার অন্যকিছু আর কারোর দৃষ্টিগোচরই না হয়। আর যদি তা না করতে পারিস তাহলে বুঝব তোর শ্রদ্ধা, ভক্তি, পূজার্চনা সব মিথ্যে, সব ভুল। 


ধড়ফড় করে উঠে বসেছেন কাদম্বরী দেবী। দুচোখে তখন অঝোর শ্রাবণ। সত্যি, কী চরম ভুলটাই না করতে যাচ্ছিলেন তিনি। শুধুমাত্র তার বংশের অতিথি তৃতীয়লিঙ্গের বলেই তার বিনাশের কথা ভেবে বসেছিলেন। না, এই চরম ভুল তিনি কিছুতেই আর করবেন না। 


ধরে আসা গলায় কাদম্বরী দেবী বলে ওঠেন

-  মা,মাগো,তোমার স্বপ্নাদেশে আমার চোখ খুলে গেছে মা। আমি কথা দিচ্ছি তাকে অতি যত্নে তার মতো করেই বড়ো হতে দেব। তুমি আশীর্বাদ করো মা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে তাকে তার প্রাপ্য সবটুকু আমরা যেন দিতে পারি।


পরদিন ভোরে,

- বাবু, বউমা তোমাদের আজ কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।আমি ঠিক করেছি আমাদের ঘর আলো করে যে আসছে তার নাম রাখব শক্তি। বউমা, খুব সাবধানে থাকবে এবার থেকে আর দেখবে আমাদের বংশপ্রদীপের যেন কোনো অযত্ন বা অসুবিধা  না হয়।


এ কাকে দেখছে সবাই? কাদম্বরী দেবী না কি অন্য কেউ? মায়ের এই রূপের ছটায় চারদিকে  ছড়িয়ে পড়ছে মুক্তোদানার মতো একরাশ মুগ্ধতা। এক শক্তির আগমনের পথকে মসৃণ করতে এ যেন এক অন্য শক্তি জেগে উঠেছে আজ। এ শক্তি অপরাজেয়, অবর্ণনীয়, অদম্য, অনন্য। এ শক্তি অবিনশ্বর।


কলমে  : দেবাশ্রিতা মজুমদার