কবিতা : বইবে কল্লোলিনীকলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ১৪ , ১০ , ২০২০
চোখের জল চোখে কবেই শুকিয়ে গেছে ,চোখের নিষ্প্রভ তারায় জেগে আছে মরুতৃষ্ণা ।বুকের মাটি মরুতৃষ্ণায় ফেটে চৌচির ,সবুজের সমুদ্র মরে গিয়ে--দিগন্তহীন মাঠবোশে…
কবিতা : বইবে কল্লোলিনী
কলমে : শক্তিপদ ঘোষ
তারিখ : ১৪ , ১০ , ২০২০
চোখের জল চোখে কবেই শুকিয়ে গেছে ,
চোখের নিষ্প্রভ তারায় জেগে আছে মরুতৃষ্ণা ।
বুকের মাটি মরুতৃষ্ণায় ফেটে চৌচির ,
সবুজের সমুদ্র মরে গিয়ে--দিগন্তহীন মাঠ
বোশেখের অনাবৃষ্টির রোদে খাঁ খাঁ করছে ।
মাঠের আলপথে ঘাসেরা নীরক্ত ঝরে গেছে ,
পুকুর দীঘি শুকিয়ে কাঠ , জলহীন নদীনালা ;
ফুলপাতা ঝরিয়ে গাছপালা সব--মন্বন্তরে মরা
কঙ্কালসার মানুষের মতো--আকাশের পানে
শতবাহু তুলে যেন ফ্যান ভিক্ষা করছে ।
মাঝেমধ্যে দু'চারটে বনস্পতি--নিচে নিজেদের
ছায়ার সাম্রাজ্য রচনা করে আকাশ ছুঁয়ে--তদ্রূপ
দাঁড়িয়ে আছে ঠিক এবং তার ছায়া ঘিরে রয়েছে
নিঃশব্দ এক গা-ছম্ ছম্ রহস্য । সেই রহস্যের
প্রগাঢ় অন্ধকারে সঁপে দিয়ে ভিটেমাটি , যারা
তাদের ছায়ায় পরাশ্রয়ী হয়ে মরে বেঁচে আছে
রিকেটরোগগ্রস্ত শিশুদের মতো , সেই তাদের মধ্যে
কেউ যদি ভুলেও কখনো আকাশ দেখার ইচ্ছা করে , বনস্পতিরা অমনি সব গোঁফ পাকিয়ে ,
চোখ রাঙিয়ে জানিয়ে দেবে--অবোধ শিশুদের
আকাশ দেখা বারণ , আকাশ দেখা অন্যায় ;
কারণ , আকাশটা তাদের কেনা--নজর দিতে নাই ।
নিজেদের ভালো যদি বুঝতে চায় , তবে
ছায়ায় থেকে তারা ছায়াটাই পাহারা দিক । তাছাড়া , মশলার যোগানে তো কিছু অভাব রাখেনি ; তা-ই দিয়ে পঞ্চব্যঞ্জন পাক করে খাক ,
স্ফূর্তিতে ভালোমন্দ নাচাগানা করুক ,
তাতে মন এবং স্বাস্থ্য--দুই ভালো থাকবে ;
তবে থাকতে হবে প্যাঁচার মতো সতর্ক , শিকারের অভাব হবে না কোনদিন : শর্ত একটাই ,
এক্তিয়ারের বাইরে পা ফেললেই বিপদ ।
বিপদ বলেই এত বিপন্নতা পৃথিবীতে ;
কাঁটাগাছে তাই ভরে আছে পৃথিবী ।
কাঁটায় কাঁটায় পা আমাদের রক্তাক্ত এবং
কাঁটা গিলতে গিয়ে মুখ দিয়ে রক্ত ঝরছে ,
হজম করেও যন্ত্রণায় অস্থির ।
অবিরাম রক্তক্ষরণে আমরা ক্লান্ত , অবসন্ন ;
ঘুমের আচ্ছন্নতা নামছে চোখের পাতায় ।
কিন্তু আমরা ঘুমাবো না , ঘুমাতে চাইও না--সেই
অনিবার্য ঘুম না ছোঁয়া অবধি ; আমরা দেখবো
আমাদের সাধের পৃথিবীটাকে ড্যাবডেবিয়ে চেয়ে । আমরা আকাশপানে চেয়ে গলাছেড়ে নাম ধরে ডাকবো--সেই তাদের , যাদের একহুঙ্কারেই মহাকরণের অলিন্দ থেকে , বুড়ীবালামের তীর ছুঁয়ে জালালাবাদের পাহাড় অবধি কেঁপে উঠেছিল
থরথরিয়ে , কেঁপে উঠেছিল ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের
বনিয়াদ ।
আমি চোখপেতে আছি--পরশুরামের কুঠার হাতে ওরা আসবে , বলরামের হলস্কন্ধে ওরা আসবে ; ওরা আসবে ভবানীর ভীম খড়্গ হাতে , পিনাকপাণীর সেই পিনাক উঁচিয়ে ।
ওদের একহুঙ্কারেই--আকাশ ছাইবে শ্রাবণ-মেঘে , উল্লাসের গান গেয়ে কলহাস্যে বইবে কল্লোলিনী , সবুজের সমুদ্র আবার দুলবে ঝড়-হাওয়ায় , আবারও শ্যামাঙ্গিণী হবে ধরণী ।
-------------------------------------------------------------------