Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

##গল্প--কুলপুকুর#কলমে--দিয়ান রীনা
আজোও সে উঠেছে আমার বুকের ভিতর থেকে।রোজ ই উঠে।দিনের বেলায় ওকে দেখা যায় না।রাতের বেলায় রোজ উঠে।পাড় থেকে উঠে ও রাস্তায় দাঁড়ায়, আর রাস্তার ধারে যে সার সার বাড়িগুলো মাথা তুলে আছে তার প্রতিটি ঘরের দরজার…

 


##গল্প--কুলপুকুর

#কলমে--দিয়ান রীনা


আজোও সে উঠেছে আমার বুকের ভিতর থেকে।রোজ ই উঠে।দিনের বেলায় ওকে দেখা যায় না।রাতের বেলায় রোজ উঠে।পাড় থেকে উঠে ও রাস্তায় দাঁড়ায়, আর রাস্তার ধারে যে সার সার বাড়িগুলো মাথা তুলে আছে তার প্রতিটি ঘরের দরজার দিকে আকুল নয়নে চেয়ে থাকে।অত রাতে কে আর তার দিকে দেখবে??তবুও সে চেয়ে থাকে।কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে রাস্তায়।চিৎকার করে বলতে থাকে আমাকে কেউ বাঁচাও।আমি বাঁচতে চাই।তোমরা তো সবাই বেঁচে আছো,তোমাদের বাড়িতেও তো আমার মতো কন‍্যা আছে।ওদের কি তোমরা মরার জন্য ছেড়ে দাও।দাও না তো।তবে আমায় ছেড়ে দিলে কেন।আমি ও তো চেয়েছিলাম আনন্দে বাঁচতে।

আমার ও কিছু স্বপ্ন ছিল।কতটুকু বয়স হয়েছিল আমার।এই আঠারো বছর।মানে আমি সাবালিকা হয়েছি সদ‍্য।কলেজের সেকেন্ড ইয়ারে পড়তাম।


কিগো তুমি কেন কাঁদছো??কাঁদব আমি।শুনো না বাবা আমাকে খুব ভালোবাসতো।আমরা ছিলাম দুই বোন।আমি বড়,দেখতেও ভালো ছিলাম।কলেজে পড়তে পড়তে আমি প্রেমে পড়লাম।পড়াশোনায় ভালো ছিলাম না।বাড়িতে জানাজানি হয়ে গেল।বাবা বলল আমার ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়ে দেবে।ভয়ে রুপকে সব বললাম।রুপ বললো চলো পালিয়ে যায়।

রুপের কথায় রাতের বেলা পালাতে গিয়ে বাবা ধরে ফেলল।বাবার মান সম্মানের ভয় ছিল।আমার পড়া বন্ধ করে দিয়ে আমাকে নিয়ে এলো পিসির বাড়ি।ইচ্ছে ছিল পিসির বাড়ি থেকেই আমার বিয়ে দিয়ে দেবে।


আমি ও পিসির বাড়িতে এসে বেশ ছিলাম।পিসির বাড়ির চারপাশে গাছপালা দিয়ে ঘেরা।আর ছিলে তুমি কুলপুকুর।এত বড় পুকুর আগে তো দেখিনি।যেন এক বিরাট বড় লেক।পিসির সাথে এসে তোমার কাকচক্ষু জলে প্রানভরে স্নান করতাম।এত স্বচ্ছ জল তোমার বুকের ভিতরে কী আছে সেটা ও উপর থেকে দেখতে পেতাম।পুকুরের উল্টো দিকে ছিল বড় রাস্তা।আর সার সার ইট কাঠ পাথরের জঙ্গলে ঘেরা।পিসি বলতো ওটা ডাক্তার পাড়া।সব বড় বড় চাকুরিজীবী ,ডাক্তারদের বাড়ি ওই গুলো।ছবির মতো বাড়িগুলো দেখে খুব ইচ্ছে করতো ওখানকার মানুষগুলোকে দেখতে।তবে সব থেকে ভালো লাগতো আমার তোমাকে দেখতে।


পিসি বলেছিল তুমি এখন কুলপুকুর হলেও তোমার আগে নাম ছিল পদ্মপুকুর।পিসি যখন এখানে প্রথম বৌ হয়ে আসে সে দেখেছিল গোটা পুকুরে ফুটে আছে পদ্ম।চোখ জুড়িয়ে যেত।এখন তো টাইমের জল আসে কলে,কিন্তু আগে এই পুকুর ছিল সবার অবলম্বন।পুকুরের সামনেটা পরিষ্কার করে পিসি স্নান ,কাপড় কাচা,বাসন ধোয়া সব করতো।শুধু এই সব কাজ নয়,তুমি অতিথিদের জন্য ও ছিলে আশীর্বাদ।তখন পিসির অবস্থা ভালো ছিল না।বেশি লোকজন এলে পিসি তোমার বুকের পদ্মপাতা নিয়ে অতিথি সেবা করতো।আর তোমার বুকে ফুটে ওঠা পদ্মফুল দিয়ে হত নারায়ন সেবা।


পিসির মুখে তোমার এত গল্প শুনেছি,যে তোমার পাড়ে বসেই সারাটাদিন কেটে যেত।

তবে তোমার পাড়ের আর একদিকে ছিল ঘন জঙ্গল।ওই দিকটা কেমন অন্ধকার।ওই দিকে দেখলে কেমন বুকটা ঢিপঢিপ করতো।


তার পর এলো সেই কালো রাত।পুকুরের পাড়ে বসেছিলাম ছিপ নিয়ে।রোজ ছোট ছোট মাছ ধরতাম।কি আনন্দ লাগতো।পিসি বকতো,বলতো ওরে উঠে আয়,জেলেরা দেখতে পেলে গালাগালি করবে।ওরা পুকুরটা লিজে নিয়ে মাছ চাষ করে।কিন্তু কে শুনবে পিসির কথা।জানো কুলপুকুর আজ ভাবি যদি পিসির কথা শুনতাম, তাহলে আজ আমি---


হ‍্যাঁ তারপর সেই দিন একমনে মাছ ধরছি।আর উল্টো দিকের রাস্তা থেকে আমাকে যে কেউ লক্ষ্য করছে বুঝতেই পারিনি।সন্ধ্যা দিয়ে পিসি গেছে ডাক্তার দেখাতে।ঘরে আমি একা।হঠাৎ দরজায় কেউ টোকা দিল।আমি ভাবলাম পিসি বুঝি।না জেনে শুনে দরজা খুলে দিলাম।হুড়মুড় করে ঘরে ঢুকে পড়ল রুপ আর তার দুই বন্ধু।তিন জনে মিলে আমার হাত পা মুখ গামছা দিয়ে বেঁধে ঘর থেকে টেনে নিয়ে চলে গেল তোমার পাড়ে।যেইদিকে আছে ঘন জঙ্গলে ঢাকা।তার পর তিনজনে মিলে সারারাত আমাকে ছিঁড়ে খেল।শুনতে পাচ্ছিলাম রুপ তার বন্ধুদের বলছিল শালী আমার হাত থেকে পালিয়ে বাঁচবে ভেবেছিল।আমি ও খুঁজছিলাম, কোথায় গেল মালটা।তার পর আজ দুপুরে এখানে ডাক্তার দেখাতে এসে দেখি শালী পুকুরের পাড়ে বসে ছিপ দিয়ে মাছ ধরছে।ব‍্যস শালীর খেল খতম।


আমার শরীর যখন পশুদের দখলে তখন শুনতে পাচ্ছি পিসি, বাবা পাগলের মতো আমাকে খুঁজে চলেছে।বাবা বারবার আমার নাম ধরে ডাকছে।আমি সব শুনতে ও পাচ্ছি।কিন্তু উত্তর দিতে পারছিনা।আমার বোবা কান্না দেখে তোমার চোখে ও জল এসেছিল ।সারারাত খুঁজে হয়রান হয়ে বাবা পিসি কে নিয়ে বাড়ি  চলে গেল।আমি পশুদের হাত থেকে ছাড়া পেয়ে বললাম তাদের সব কথা আমি পুলিশ কে জানাবো।


আমি সব জানি গো।তারপর ওরা তোমাকে ধরে নিয়ে এলো আমার কাছে।আমার বুকের ভিতরে তোমাকে চেপে ধরলো।তুমি চিৎকার করে সবাইকে বলতে লাগলে বাঁচাও বাঁচাও।কিন্তু কেউ তোমার আর্ত চিৎকারে কান দিলো ন।গভীর রাত্রিতে নারীকন্ঠের আর্তচিৎকার সবার কানে প্রবেশ করলো।সবাই দরজা জানালা খুলে মুখ বাড়িয়ে দেখলো।কিন্তু তোমাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে এলোনা।সবাই বলাবলি করতে লাগলো কি হবে ঝামেলায় জড়িয়ে।এখন বাঁচাতে গেলে পুলিশ এসে ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করবে।কারো ও কাছে এত সময় নেই, আর ঘরে পুলিশ এলে সম্মানহানি ঘটবে।তাছাড়া কাদের বাড়ির মেয়ে কে জানে।নিশ্চিত কিছু দোষ আছে,মরুক,আমাদের কি।আমাদের মেয়েরা তো মরছে না।


আবার ডাক্তার পাড়ার দরজা,জানালা,আলো সব বন্ধ হয়ে গেল।আর তিনপশু মিলে তোমাকে জলে চুবিয়ে চুবিয়ে মেরে দিয়ে চলে গেল।পরের দিন সকালে তোমার নিষ্প্রাণ দেহটা ভেসে উঠলো।আমার পাড়ে পুলিশ এলো,কত লোক জমা হলো।পুলিশ যখন তোমার দেহটা তুলল তখন পুরো শরীরটা নীল হয়ে গেছে।সবাই আহা উহু করতে লাগলো।খবর পেয়ে তোমার বাবা পিসি সবাই ছুটে এলো।পুলিশ ডেডবডিটা নিয়ে চলে গেল মর্গে।


তবে তুমি রয়ে গেলে আমার বুকের মাঝে।দেখো ভোর হয়ে যাচ্ছে।চলে এসো ,উপরে তোমার জায়গা হবেনা‌।আমার বুকের মাঝেই তোমার শান্তি।চলে এসো।আবার আস্তে আস্তে  সে নেমে গেল  জলে আর কুলপুকুর তার ঠান্ডা জল দিয়ে বুকে জড়িয়ে ধরে এক অভাগীকে।