Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

#রম্য_স্টাইল#গল্প#লবঙ্গলতিকা✍#ঝিলিক_মুখার্জী_গোস্বামী
পিতৃদত্ত, পিতৃধন থ্রি বি এইচ কে ফ্ল্যাটবাড়ির, পিতৃকুলের একমাত্র স্মৃতির সাক্ষী মরচে পড়ে ক্ষয়াটে দাঁত ওয়ালা, তেল চ্যাটচ্যাটে; লালচে আভার উপর কাল কেউটের মতো ছোপ ধরা; অতিমাত্রায়…

 


#রম্য_স্টাইল

#গল্প

#লবঙ্গলতিকা

✍#ঝিলিক_মুখার্জী_গোস্বামী


পিতৃদত্ত, পিতৃধন থ্রি বি এইচ কে ফ্ল্যাটবাড়ির, পিতৃকুলের একমাত্র স্মৃতির সাক্ষী মরচে পড়ে ক্ষয়াটে দাঁত ওয়ালা, তেল চ্যাটচ্যাটে; লালচে আভার উপর কাল কেউটের মতো ছোপ ধরা; অতিমাত্রায় মেদ বহুল শরীরের ন্যায় নীচের দিকে ঝুলে পড়া চামড়ার ন্যায়; ওয়ান সীটার সোফায় বপুকে; অ্যানাবেল পুতুলের মতো হেলান দিয়ে; ডেমন এর মুখ ওয়ালা বিজ্ঞাপন প্রদত্ত ওনিডাতে বিড়াল-ইঁদুরের অত্যধিক অত্যাচার দেখছি নিমগ্ন চিত্তে। বিচ্ছরি কর্কশ আওয়াজ টা, মুডের একদম তেরোটা বাজিয়ে ছেড়ে দিল। মুডের বারোটা, ভোর থেকেই বেজে ছিল। ভোর চারটের সময় পাড়ার মাইকে মহালয়া শুনে। না! নিজেকে বাঙ্গালী প্রমাণ করার কোনো ইচ্ছা আমার নেই। তা প্রমাণ করতে, ভোরে উঠতে পারব না আমি। আপাদমস্তক ল্যাদ খাওয়া পাবলিক আমি। তো যা বলছিলাম। হ্যাঁ, কর্কশ ধ্বনি। দূর্ভাগ্যবশত আজ সাইলেন্ট মোড থেকে ওনাকে নর্মালে কনভার্ট করা হয়েছে। 


আমার জীবনের চরম শত্তুরের ফোন। ঠিক ধরেছেন। আমার, পরম শ্রদ্ধেয়; পরম পূজনীয় কাকা... শ্রী শ্রী চন্ডেলেশ্বর মুখুজ্জে। এই নাম দেখে ওপর থেকে মুচকি মুচকি হাসা আর এক মুখুজ্জে মশাইকে আমি যে কত বার ষষ্ঠাঙ্গ প্রণাম করেছি তার ইয়ত্বা নেই। সে যাই হোক। স্বয়ং শেক্সপিয়র যখন বলে গেছেন, "হোয়াট ইজ ইন আ নেম?" আমি কোথাকার কোন হরিপদ পাল! নাম নিয়ে কাটাছেঁড়া করতে গেলে, আমার স্থান না কাঁটাপুকুরে হয় আবার, এই ভয়ে চুপচাপ থাকাই শ্রেয় মনে করে চুপচাপ থাকি। ফুলে ছাপ দেওয়া ছাড়া। 


ফোনটা রিসিভ করতেই,

-"বাঁশ পড়ে গেছে। তাড়াতাড়ি তল্পিতল্পা গুটিয়ে চলে আসিস। দ্বিতীয় বার বলব না!"


বলেই ফোনের লাইন কাট। আমি জানতেও পারি না, কখন যে ফোনের লাইন কট করে কেটে যায়! মাঝে মাঝে ভাবি আমাদের সংবিধান ভুল। ওখান থেকে ইমিডিয়েটলি 'বাক স্বাধীনতা মৌলিক অধিকার' বাদ দেওয়া উচিত। নিজের দুক্কু চেপে ফেবুতে একটা দুক্কু দুক্কু স্ট্যাটাস সাঁটিয়ে আবারও ভাবনায় আঁচড় কেটে ভাবতে বসি, কাকার মতো কিছু মানুষ এই পয়েন্টের অ্যাডভান্টেজ নিচ্ছে পুরো দমে। অগত্যা। আমার হাতে কিছু থাকলে...


একে মল মাস। তারপর সর্বনাশ। মহালয়ার একমাস পর পূজো। আমাদের গ্রামের বাড়িতে ঘটা করে পূজো হয় প্রতা বছর। গ্রামের মানুষকে পাত পেড়ে, কলাপাতায় খিচুড়ি ভোগ খাওয়ানো হয়। কলাগাছের প্রাণ বলিদান দেখে, বাংলা সিনেমা বলিদানের কথা মনে পড়ে যায়। চন্ডেলেশ্বরের, চন্ডাল রূপের কাছে আমি নেহাতই শিশু। উনি অনেককেই হিসু করানোর ক্ষমতা রাখেন। 


এই হয়েছে আমার ঝাঁটের স্বভাব। ধান ভানতে শিবের গীত গাইছি। এই জন্য আমার বাড়িতে হরেক সাইজের জুতো-চপ্পলের স্তূপ। ছেঁড়া ফাটা সব রকমের ডিজাইন বর্তমান। আমার এতে একরকম সুবিধাই হয়েছে। শ্রীলেদার্সের মালিকের উপর ঘ্যাম দেখাতে পারি। তো যা বলছিলাম। গ্রামের পূজো। সারা গ্রামে এই একটাই পূজো হয়। গ্রামবাসী সকল এই কদ্দিন হেব্বি মজা করে। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু এইবার পূজোয় একটু অন্যরকম বাওয়াল হল। যার ফায়দা আমি পুরো মাত্রায় লুটেপুটে নিয়েছি, লুটের মালের মতো।


কাকার ভার্চুয়াল আদেশপত্র পাওয়ার পর মনে মনে বিষন্ন হলেও ' যেতে পারি কিন্তু কেন যাব' বলার সাহস আমার ছত্রিশ ইঞ্চি ছাতিরও ছিল না। এমতাবস্থায় একদিন যাবার দিন উপস্থিত হল। আরে না না। যা ভাবছেন তাই নয়। বাড়িতে যাবার দিন। সাঁটিয়ে পেটপূজা করার দিন। কদিন কে. এফ. সি. এর সাথে বিজনেস এ ছেদ টেনেছি। ওদিকে ডমিনোজ তো আমার পায়ের তলায় এসে রীতিমতো হামাগুড়ি দিচ্ছিল। ওদেরকে অনেক বুঝিয়ে, নিজের লকলকে জীভটাকে বোবা করে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিলাম।


বাড়িতে ঢুকতেই কিপ্টে কাকার বৌ, আমার একমাত্তর কাকিমা শ্রীমতী কদম্বকেতকী ওরফে কদুবালা আমার জন্য, গুনতি করে চারটি লাল বাতাসা সমেত এক গেলাস জল নিয়ে হাজির। এখন আপনি ভাবছেন যে লোক গ্রামের লোকজন কে পাতপেড়ে খাওয়াতে ভালোবাসে তাকে আমি কোন আক্কেলে কিপ্টের তকমা দিচ্ছি। এখানেও টুইস্ট আছে বস। নামেই মুখুজ্জে বাড়ির পূজো। আদতে, শ্রীমান চন্ডেলেশ্বর গ্রাম থেকে চাঁদা, গোগ্রাসে গিলে তবেই এই পূজো করেন। চন্ডালের উপর কথা বলে কার এত সাহস? আবার ট্র্যাক চেঞ্জ করছি। এবার আপনার পাঁচ/ সাত নম্বর আমার কপাল চুম্বন করল বলে। কাকিমার দেওয়া জল-বাতাসা গিলে বাঁশ বাঁধা দেখতে গেলুম। যাওয়ার পথে ভাবলুম জল-বাতাসা তো ঠাকুর দেবতার উদ্দেশ্যে অর্পিত হয়। তবে কি! 

ফিলিং গব্ব। 


দেখতে দেখতে পূজার দিন উপস্থিত। আমাদের পারিবারিক, মাটির প্রতিমা গড়া ইকবাল কাকা ই প্রতিবছরের ন্যায় এবছরও মাটির প্রতিমাতে প্রাণ দান করেছেন। ধর্ম এখানে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে আমার চন্ডাল কাকার জন্য শ্রদ্ধা হয়। গ্রামের অনেক মোড়ল এর ঘোর আপত্তি জানালেও কাকা শোনেনি। বলা ভাল শোনার প্রয়োজন মনে করেন নি। ইকবাল কাকা শুধুমাত্র মূর্তিতে প্রাণ ই ঢালেন না। ওনার থেকে অনেকরকমের গল্পকথন শোনা যায়। আমি তো এ কদিন মন্ডপে বসেই ওনার গাল-গল্প গোগ্রাসে গিলেছি। আমার আবার গল্প শোনার হেব্বি বাতিক আছে। সুরার নেশার মতো এ আমার এক নেশা। 


দোতালা বাড়ির বারান্দায় রাজকীয় স্টাইলে বসে পা দোলাচ্ছি। মাইকে হাল্কা করে বাজছে 'উমা'র গান রূপঙ্কের গলায়। বাতাসে ঠান্ডা হিমেল পরশ। একটা শিরশিরানি ভাব। মনটা কোথাও গ্রামের তেপান্তরের কোনো এক মাঠের শেষ সীমায় হারিয়ে গেছে। কাকার ডাকে চমকে উঠলাম। মনে হল পরলোক থেকে ইহলোকে ফিরলাম। এসেই....


-"অ্যামাজনে গ্রেট ফেস্টিভ্যাল ডে চলছে। একটা ফোন চয়েস করে দে।"


আমি বলে উঠলাম,

-"তুমি তো এই কিছুদিন আগেই একটা ফোন কিনলে। ফ্লিপকার্টে বিগ বিলিয়ন ডে তে। আবার...."


মুখের কথা মুখেই রয়ে গেল। বাজখাঁই গলায় কাকা বলে উঠল...


-"তোকে যেটুকু বলা হয় সেটুকু না করে এত সি.আই.ডি এর মতো কুছ তো গড়বড় হ্যায় দয়া। পতা লাগাও, ভাব দেখাস কেন?"


কাকাকে একটা ফোন চয়েস করে দিতেই কাকা নিমেষে যেন হাওয়ায় মিলিয়ে যায়। আমার মাথায় টিকটিকি গুলো কিলবিল করতে থাকে। পতা তো লাগানা পড়েগা কাকা। 


পূজার মাঝেই কাকা, একবাক্স লবঙ্গলতিকা নিয়ে প্রায়শ মিলিয়ে যায়। কাকিমা, পূজার কাজে ব্যস্ত থাকায় এইসব তাঁর দৃষ্টির বাইরেই থেকে যায়। আমি এমনিতে চুপচাপ থাকলেও চোখ জোড়া শকুনের মতো আর ঘ্রাণশক্তি ওই চারপেয়ের মতো। একটা কিছুর গন্ধ পাচ্ছিলাম। তিনদিনের মাথায়, সপ্তমীর দিন কাকার পিছু নিলাম। 


পেয়ারাবাগান। ওহ্ কত স্মৃতি। চুরি করে পেয়ারা খাওয়া, চড়ুইভাতি। একটু একটু করে এগিয়ে চলেছি। হঠাৎই কাকাকে চোখে পড়ল। হাতে সেই লবঙ্গলতিকার প্যাকেট। বড্ড ছটফট করেছে মনে হল যেন। বারবার হাত উল্টে ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে। গাছের আড়াল থেকে কাকার মুখে হাসি ফুটতে দেখলাম যেন! চোখ দুটো ঘষে নিলাম। চন্ডাল হাসছে? এও সম্ভব? হাসির কারণ দেখতে পেলাম না। দেখার আগেই কাকা, ফিরে বাড়ির রাস্তা ধরেছে দেখে আমিও লুকিয়ে পড়লাম।


ওইদিন 'দয়া' দয়া করেও পেয়ারা পাতার ফাঁক দিয়ে পেয়ারা পাতাকে সাক্ষী করেও কিছুই পতা লাগাতে পারেনি। নিজের মধ্যে কি রকম একটা অস্থির লাগছিল। মাথায় হাতুড়ির ঘা পড়ছিল। ডাল মে কুছ কালা হ্যায় অউর পুরা ডাল হি কালা হ্যায়? আমিও চন্ডালের বংশধর। শেষ দেখেই ছাড়ব। 


অষ্টমীর দিন সকাল থেকে খুব তোড়জোড় চলছে পূজার। অঞ্জলি, ভোগ। উফফফ মনটা হেব্বি নাচছে। ঢাকের আওয়াজ। মাইকে সেই নস্টালজিক গান 'আয়রে ছুটে আয়। পূজোর গন্ধ এসেছে'। বেশ অন্যরকম লাগছে। শহরের পূজোয় এই আন্তরিকতা নেই। সব তো এখন 'থিম পূজো' তে ছেয়ে গেছে। সাবেকি পূজো কার্যত বিদায় নিয়েছে। হাতে গোনা কয়েকটি পূজো ছাড়া এখন সবাই থিমের পেছনে দৌড়াচ্ছে। গ্রামের বাড়িতে, বাড়ির পূজোর অংশ না হতে পারলে কত কি মিস করতাম। এইসবের মাঝেই নাকে একটা গন্ধ আসছে মনে হচ্ছে। গোবিন্দ ভোগ চালের খিচুড়ির সাথে পায়েসের একটা মিষ্টি গন্ধে বাতাসে একটা মিষ্টি মাখা গন্ধ। অজান্তেই মধ্যপ্রদেশে হাতটা বুলিয়ে নিলাম। অঞ্জলির মন্ত্র তখন মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আমি আবার একটু লোভীদের দলে। তাই ভক্তি শ্রদ্ধা ছেড়ে গেলার দিকেই মন পড়ে থাকে। ভাবনায় ছেদ পড়ল। হঠাৎই.....


সেই চেনা পেয়ারা গাছের গলি পেরিয়ে, বাঘের মাসি সেজে শিকারের খোঁজে এগিয়ে চলেছি। পেয়ারা পাতায় প্রতি পারদে পারদে রয়েছে নিগূঢ় রহস্য। একটু একটু করে এগিয়ে চলেছি। হাতের পজিশন ঠিক রিভলবার ধরার মতো। মনের মধ্যে ব্যোমকেশ তখন ব্যোম ভোলে করছে। ফেলুদার মতো করে কেউ বলছে, "সাবাশ!" চন্ডালের বানানো ডেরায় পা ফেলেছি। ওই জেনেশুনে বিষ করেছি পান এর মতো। ব্রাউন রঙা বাকল পরা স্লিম ফিগারের পেয়ারা গাছও তখন নীল রঙের লজ্জা আটকাতে ফেল। দেখে ফেলেছি কাকা। তোমার নীল রঙা পাঞ্জাবী। আরও একটু এগিয়েছি। একি! এতো সেই মোবাইলের বাক্স টা। ভীষণ অবহেলিত হয়ে কাকার পশ্চাতে মুখ গম্ভীর করে পড়ে আছে। ঠিক কি চলছে তখনও ঠাহর করতে পারিনি। 


স্লিম ফিগারের পেয়ারা গাছের সাথে সামান্য মোটা পেঁপে গাছ যখন পরকীয়াতে মত্ত! ওদের মাঝে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে নিজের জায়গা দখল করে নিজেকে লুকানোর চেষ্টা করলাম। দেখেই চক্ষু চড়ক গাছ, চড়কের মেলার মতো। এট্টু এট্টু কথাও (পড়ুন প্রেমালাপ) কানে আসছে। আমার শোনার বিন্দু মাত্র ইচ্ছে ছিল না। কর্ণযুগল বড্ড বেয়াড়া কিনা। 


-" লবু, আই লাব্বু!"

-"তোমার জন্য ফোন এনেছি ফ্রম ফ্লিপকার্ট।"

-"লবু একটু লবঙ্গ লতিকা মুখে দাও। লবু সোনা আমার। তোমার প্রেমে লেপ্টালেপ্টি হয়ে তো দুগ্গা ঠাকুরকেও লবঙ্গ লতিকায় মুড়িয়ে দিয়েছি!"


কাকা করছে কি? এ্যাঁ! ওদিকে কদুর কি হবে ভেবে শিউরে উঠলাম। আমার একমাত্র কাকিমা, শেষে এই অবস্থা ! এসব দেখার আগে সীতার মতো মাটি ফুঁড়ে পাতালে চলে গেলাম না কেন? লবু আবার কাকার সাথে ম্যাচিং করে লাল শাড়ি পরেছে। যেন নীল রঙে লাল মেশানোর প্ল্যান। কেন রে? রঙের আকাল পড়েছে? এইসব ভাবনা চিন্তায় ছেদ টেনে বাড়ি পালিয়ে এলাম। কারণ? চারিদিকে লুচির গন্ধ ম ম করছে। 'থেকে থেকে যেন লুচির গন্ধ পাই'। আগে লুচি সাঁটাই গোটা কয়েক। নইলে আবার গণশা রাগ করবে। ওর সঙ্গে আমার আবার হেব্বি দোস্তি। ওর সাথে ডিল হয়েছে, আমি ওকে লুচি সাপ্লাই দিলে ও আমাকে লাড্ডু দেবে। মুষিক তো ইতিমধ্যেই ভাঁড়ুর মিষ্টির দোকানের নীচে 'গভীরে যাও। আরও গভীরে যাও' করে গভীর সুড়ঙ্গ খুলেছে। 


অষ্টমীর সকালে লুচি সাঁটিয়ে, মধ্যপ্রদেশে হাত বোলাতে বোলাতে ভাবছি কি করা যায়? নীল-লালের ব্যপারে। দশমীর দিন একদম বিসর্জন। প্ল্যান এঁকে ফেলেছি। 


নবমীর সকাল। আবারও সেই একই রকমের ব্যস্ততা। আজ আবার আমাদের বাড়ির রীতি অনুযায়ী মাংস খেতে হয়। তাই সকাল থেকেই গোটা ঘর পেঁয়াজ-রসুনের গন্ধে ছেয়ে গেছে। রান্নার ঠাকুর সিদ্ধ হস্তে রান্নার কাজ করে চলেছে। টেনিদার মতো বার কয়েক উঁকি মেরে এসেছি। দুপুর হলেই প্রথম পাতে, হাতে গরম নিয়ে বসে যাব। ডান হাতের কাজে বেশী দেরী করলে ভোলা মহেশ্বর কুপিত হবেন।

ডানহাতের কাজ ঠিকমতো না হলে আমার আবার ব্রেন কাজ করে না। 


পূজো পাঠ চুকিয়ে নবমীর দুপুরে সবাই খেতে বসেছি। কাকা দেখি হেব্বি রসিয়ে রসিয়ে হাড় চিবোচ্ছে। কাকার ওই দৃশ্য দেখে...

'এবার কালী তোমায় খাব' কথাটা মনে পড়ে গেল। 

কাকিমার ব্যস্ততার কারণে সকাল থেকে কদু'র শাড়ির আঁচলের টিকি আমি পাইনি। এমতাবস্থায় কাকাকে বেরিয়ে যেতে দেখেই পড়ি কি মরি করে ছুটে কাকিমা কে আবিষ্কার করলাম। 


-"কি হয়েছে? টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?"

-"বলবি কি হয়েছে?"


আমি কাকিমার কথায়, উত্তর না দিয়ে টানতে টানতে একদম পেয়ারা বাগানে নিয়ে গেলাম। কাকার পরকীয় ঘর। কাকিমা আবারও....


-"কি হয়েছে বলবি? নইলে ঠাঁটিয়ে....."


কাকিমার কথা শেষ হয়নি। তার আগেই পেয়ারা বাগানে ভর দুপুরে জোড়া শালিকের দর্শনে মাথায় করজোড় করার আগেই হতভম্ব অবস্থায় অবস্থান করছে কাকিমা। ওদিকে লবু - চন্ডেলেশ্বরের মুখের হাঁ আস্ত তিমি মাছের হাঁ হয়েছে। বোধহয় আজ কিছু করার প্ল্যান ছিল কাকার। আমি সেই প্ল্যান ভেস্তে দিয়েছি। নিজের কাঁধে নিজেই হাত চাপড়ালাম। মনে মনে বললাম 'শত্রুর শেষ রাখতে নেই।'


পেয়ারাবাগান থেকে ফেরার পর আমি একদম কাকিমার আঁচল ছাড়া হইনি। ওইটি আমার সবেধন নীলমণি আশ্রয়। ওটা ছেড়েছি কি! আমি চন্ডালের হাতে জবাই। 


পরদিন। পূজার শেষ দিন। তথা বিজয়া দশমী। এতকিছুর মাঝেও কাকিমা নারকেল কুরিয়ে চিনি মাখিয়ে, গরম করে তাতে পাক দিতে ব্যস্ত। নাহ্। এবার আর জিভটা লকলক করছে না। কাকার যে কি ভীমরতি হ'ল! মাতৃরূপী কাকিমা কে ছেড়ে, শেষে লবু। কাকা একটা কোণে মোড়ায় বসে আছে। আমি কাকিমার কাছে ঘেঁষে বসে আছি। বিষাদের সুর বাজছে যেন। মা দুর্গার সাথে এই মুখুজ্জে বাড়ির লক্ষ্মীপ্রতিমার ও কি?


বসে বসে আলীক চিন্তা করছি। কাকিমার ডাকে হুঁশ ফিরল। বলে উঠল....


-" বিচ্ছু(কাকিমা ওই নামেই ডাকে) তোর সাথে আমি ক'দিন কোলকাতার বাড়ি গিয়ে থাকব।"


কাকিমা ফুল স্টপ টানতেই আমিও আর কোনো প্রশ্ন করার সাহস পেলাম না। বড্ড কষ্ট হচ্ছিল।


সকালে পূজোর পর ঠাকুর মশাই ঘট নাড়িয়ে চাড়িয়ে একপ্রকার উমা বিদাইয়ের সুর বাজিয়ে দিয়েছেন। সন্ধ্যায় গ্রামতুতো ভাই-বোন, কাকিমা-জ্যাঠিমারা মেতে উঠল সিঁদুর খেলায়। একরাশ বিতৃষ্ণা বুকে নিয়ে মুখে একটা চওড়া হাসি নিয়ে কাকিমাও উমা বিদায়ের পালায় মেতে উঠল। কাকা কিন্তু আগের থেকে বেশি শান্ত। বেশি স্থির। আমার ঠিক ভাল ঠেকল না। নিজেকে দোষী মনে হতে লাগল। কিন্তু এটা কাকিমার দৃষ্টিগোচর না হলে যে আরও বড় বিপদ হতে পারত! লবঙ্গলতিকা ওরফে লবু আর আমার কাকিমা কদম্বকেতকী ওরফে কদুবালা যে কেউ সুখী হত না। 


উমা বিদায়ের পর্ব শেষ। 

সামনের কাঁসাই নদীতে 'আসছে বছর আবার হবে' বলে শ্বশুর ঘর পাঠানো হয়েছে। পৌঁছে মেইল বা চ্যাট যেন অবশ্যই করে। সেই শর্তে উমাকে, তার সন্তান -সন্ততি সমেত বাড়ি পাঠানো হয়েছে। শুধুমাত্র লক্ষ্মী আরও কিছুদিন ছুটি কাটাবে বলে মর্ত্যে থেকে গিয়েছে। 


খাবার টেবিলে তিনজন বসে আছি। 

হাতটা মুখ অবধি কারোর পৌঁছে ও পৌঁছছে না যেন। হঠাৎই কাকা....


-"কদু আমার বড্ড ভুল হয়ে গেছে। লবুর পাল্লায় যে কি করে পড়লাম! আমাকে তুমি ক্ষমা করে দাও। "


একটু থেমে কাকা আবারও যোগ করল যখন তখন কাকার গলা থেকে আবেগ ভীষণ ভাবে ঝরে ঝরে পড়ছিল। বেশ বোঝা যাচ্ছিল।


-"আমি আর জীবনে লবুর মুখ দর্শন করব না। বাড়িতে কদাপি লবঙ্গলতিকার ঠাঁই হবে না। যেগুলো আছে ওগুলোর স্থান পাড়া ঘরে হোক।"


-"কদু আমাকে ছেড়ে গেলে...."


কাকিমা হঠাৎই ঝাঁঝিয়ে উঠল...


-"থামো থামো। মেনীমুখো পুরুষ মানুষ। দোষ করে কাঁদতে বসেছেন। ভেবেছেন আমি গলে জল হয়ে যাব!"


কাকিমা সত্যিই গলে জল হয়েছিল সেই রাতে। 

কাকা-কাকিমার প্রেম যুগ যুগ জিও। 

এরপর একান্তে ওঁরা কি করেছিলেন?

খুব জানতে ইচ্ছে করছে?

আমি এতটাই খারাপ?


পরদিন নিজের তল্পিতল্পা গুটিয়ে কাকিমার হাতের তৈরী এক টিফিন বক্স নারকেল নাড়ু নিয়ে দু'জোড়া পায়ের আশির্বাদ নামক একরাশ ধূলো নিয়ে, কানে অরিজিৎ সিং এর একটা স্যাড সঙ্গীত কে সঙ্গী করে বাড়ি ছেড়েছিলাম। 

আসছে বছর আবার হবে।


#টাইপো_আছে🙏