কবিতা : নিশ্চিন্তে সব ঘুমাইকলমে : শক্তিপদ ঘোষতারিখ : ০৬ , ১০ , ২০২০
একবিন্দুও পুণ্য নাই কোত্থাও--একপৃথিবী পাপ ,কাজের কাজ নাই একটুও--এক আকাশ অবসর ,একতিল খয়রাতী নাই--একসমুদ্র ঐশ্বর্য ।চারিদিকে তাই সময়ের ও ঐশ্বর্যের…
কবিতা : নিশ্চিন্তে সব ঘুমাই
কলমে : শক্তিপদ ঘোষ
তারিখ : ০৬ , ১০ , ২০২০
একবিন্দুও পুণ্য নাই কোত্থাও--একপৃথিবী পাপ ,
কাজের কাজ নাই একটুও--এক আকাশ অবসর ,
একতিল খয়রাতী নাই--একসমুদ্র ঐশ্বর্য ।
চারিদিকে তাই সময়ের ও ঐশ্বর্যের দেখি-- অবাধ অপচয় ,পাপের বিপুল বিক্রম ।
সেই অপচয় , অবক্ষয় আর পাপে--ক্ষয়িষ্ণু পৃথিবীটা ধুঁকতে ধুঁকতে গড়াচ্ছে--বহুকাল না-মেরামত , ঝরঝরে-ঢকঢকে আদ্যিকালের এক
রঙচটা মোটরগাড়ির মতো ।
অথচ , লক্ষ্মীর ভাঁড়ারে এক উপগ্রহ তালা ঝুলিয়ে বেশ নিশ্চিন্তে সব ঘুমাই ; তদ্রূপ নিশ্চিন্তেই
ইঁদুরে গোলা কাটে ; গাঁটকাটায় গাঁট কাটে ,
মুষলহাতে দরজা ভাঙে দস্যুরা--ভ্রূক্ষেপ নাই । অন্যদিকে , ফসলের মাঠে পা রাখে না কোনদিন ,
অঙ্গে অঙ্গে বাতের সাঁড়াশি আক্রমণ ; তথাপি ঘুঙুরের ঝমঝম-ঝুমঝুম বোল তুলে--খামারজুড়ে ফসলের পাহাড় ওঠে এবং উঠোনবাঁধা
ধানের গোলা দু'চারটে--ঠিক থাকে অক্ষত ।
এদেশে জানি , অঢেল রক্ত মেলে--জলের দামে ;
জোঁকগুলো তাই--লক্ষমুখে রক্ত শুষে ,
কেঁদো বাঘ হয়ে ওঠে । যত রক্ত শোষে--ততই
হারায় রক্তের বিশুদ্ধতা ; আর , বিশুদ্ধতা
যত হারায় , ততই দিকে দিকে দেবগৃহ বানায় ,
কখনও কংক্রিটের মেঝে চটিয়ে
ইটালিয়ান টাইলস বসায় , বছর বছর রঙ চাপায়
রঙের 'পরে । কেউ বিগ্রহে সোনার চোখ দান করে , কেউ বা বেবাক বিগ্রহটাই--সোনায় মুড়ে দেয় ; কেউ বা নিয়ম করে প্রতিবার কালীপুজোয় কাঙালীভোজন করায়--বিপুল সমারোহে ।
খুব কমতি যারা , তারা কেউ কেউ এখানে সেখানে
দেবতার নামে একদিনের অন্নভোগ , নিদেনপক্ষে একসন্ধ্যার শীতলভোগ , অথবা বছরে একবার বস্ত্রদানের মাধ্যমে নিজেরা ধোলাই হবার
চেষ্টা করে । এতে চরিত্রের ধোলাই হয় কতখানি ,
জানি না ; তবে , কালোটাকা যে সাদা হয় , অথবা
এবারের ছড়ানো অর্থ যে--পরেরবারে
দশগুণ হয়ে ভোটবাক্সে ফিরে আসে , সেটা বুঝতে মনে হয় না--খুব বেশি শিক্ষার প্রয়োজন আছে ।
এইভাবেই , পাপের কীট--ভিতরে ভিতরে
যত কামড়ায় , ততই নিজের নাক কেটে--অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করি ।
রাত ফুরলেই যাদের বোঝা মাথায় ছুটতে হয়
বাজারে , ছুটতে হয় কারখানায় , জমিতে ও
দিনমজুরের কাজে , আত্মমুক্তির ভজনগানে
নিজেরা যেমন রাত্রি জাগি , তেমনি ঘুম নষ্ট করি সেই তাদেরও , এবং এমনি করে--আমাদের
রক্তের ভিতরে শোষিতরা যত চিৎকার করে ,
ঢাকঢোলের প্রতিশব্দে--তার শব্দ ঢাকি ;
চন্দনের মোটা প্রলেপে ঢেকে ফেলি রক্তের দাগ ।
--------------------------------------------------------------------