Page Nav

HIDE

Post/Page

Weather Location

Breaking News:

latest

সৃষ্টি-সাহিত্য-পত্রিকার-দৈনিক-সেরা-লেখনি-সম্মাননা

অনুগল্প,শিরোনামে-সন্ধ্যাতারা,রচনা-প্রদীপ মন্ডল,তারিখ-21/10/2020.
আকাশটা একটু মেঘলা মেঘলা! বৃষ্টি হবো হবো ভাব,কিন্তু হচ্ছেনা! কদিন ধরে আকাশটার কেবলই মুখভার! প্রকৃতির ভাবটা এমন যেন,মনে মনে ভীষণ রাগ,আর সেইসাথে গুমোট গরম! কাঁদতে চায় …


 অনুগল্প,

শিরোনামে-সন্ধ্যাতারা,

রচনা-প্রদীপ মন্ডল,

তারিখ-21/10/2020.


আকাশটা একটু মেঘলা মেঘলা! বৃষ্টি হবো হবো ভাব,কিন্তু হচ্ছেনা! কদিন ধরে আকাশটার কেবলই মুখভার! প্রকৃতির ভাবটা এমন যেন,মনে মনে ভীষণ রাগ,আর সেইসাথে গুমোট গরম! কাঁদতে চায় অঝোরে কিন্তু, কাঁদতে পারছেনা! হাঁসফাঁস করতে করতে একটু মুক্ত বাতাস নেওয়ার জন্য ঘরের বাইরে বেরুলো সন্ধ্যা!

নামটি বেশ,সন্ধ্যাতারা!

সারাদিন সংসারের নানান কাজ সেরে আর সন্ধ্যার ধুপ দীপ জ্বেলে,একটু হালকা মনে খোলা ছাদে চাঁদের মুখ দেখতে এলো সে!

হঠাৎ মনে পড়লো,এখন চাঁদ কোথায়? সবে তো অমাবস্যা গেল! আজতো চতুর্থী! তারপর পঞ্চমী,ষষ্ঠী,সপ্তমী,অষ্টমী,নবমী,দশমী,মানে বিজয়া? আচমকা মনের মধ্যে খচ করে উঠলো সন্ধ্যার! দুর্গাপূজা বলে এবার তার মনেই হচ্ছেনা! বিগত বছরে বাঙালির মনে যত অভাব কষ্টই থাকুক না কেন,তবু তার মধ্যে একটা পূজো পূজো ভাব ছিল! কিন্তু এবার? মনটা খুব বিষন্ন হয়ে গেল তার!

ছেলে মেয়ের জামা কাপড় হয়নি এবার! কাজটা চলে গেছে এ বছরই স্বামীর! কোনরকমে রেশনের চালে চলে যাচ্ছে সংসারটা! তাই ইচ্ছে থাকলেও পূজো পূজো ভাবটা মন থেকে মুছে গেছে কবে! এখনকার সময়ে কেমন যেন পূজোর আনন্দ মনকে আকৃষ্ট করেনা আর! তার চেয়ে ঢের ভালো সোশ্যাল মিডিয়া আর টিভির পর্দার বিনোদন! সে যাইহোক,এ বছরটা মানুষ ঘরে কাটাতেই অভ্যস্ত হয়ে গেছে জীবন রক্ষার তাগিদে! সয়ে গেছে অনেকটা! আর সন্ধ্যা ও তার ছেলে মেয়ে দুটিও মানিয়ে নিয়েছে সময়ের তালে!

হয়তো নিজের ছেলে মেয়ের মুখপানে তাকিয়ে মনে পড়ছে তার কষ্ট গুলোর কথা! কিন্তু এমনটি হবে সে ভাবেনি কোনোদিন! অনেকটা স্বপ্নের জাল বুনে একটু একটু করে সংসারটা আর নিজের জীবনটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো সে! কিন্তু বাঁধ সাধলো দুহাজার কুড়ির কিছু অসম্ভব অশুভ ঘটনা! যা বিশ্বের ইতিহাসের পাতায় কালোতম অধ্যায় হয়ে থাকবে হয়তো! প্রাকৃতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে মানুষের মনগুলিরও বিরাট পরিবর্তন ঘটে গেছে! দুরত্ত বেড়েছে মনের ও শরীরের! কত মানুষ এ বছর গৃহ হারা হয়েছে,আত্মীয় স্বজন হারিয়েছে,কর্ম হারিয়েছে কতজন তার ইয়ত্তা নেই! কত শিশু অনাথ হয়েছে,কত ভালোবাসা দূরে সরে গেছে শুধু ছোঁয়া লাগার ভয়ে,মৃত্যুর ভয়ে তার হিসেব নেই! আসলে মৃত্যুর ভয় সকলেরই প্রাণে আছে! প্রতিটি মানুষই সব থেকে বেশী নিজেকেই ভালোবাসে! তাই চোখের সামনে নিশ্চিত মৃত্যু জেনে,অতি প্রিয়জনকে ছুঁতে কতটা ভয় পায় সেটা এবার প্রমাণ হয়ে গেল!সুতরাং,ভালোবাসি,তুমি না হলে মরেই যাবো,তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা,এসব উক্তি গুলি মেকি হয়ে গেছে অনেক কাল আগেই! মানুষের অভিনয় গুলো যে নিছকই একটা স্বার্থ সিদ্ধির উপায় মাত্র,তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না! সুতরাং ভালোবাসা শব্দটার মধ্যে যে কতটা আন্তরিকতা থাকবে আগামী দিনে,নাকি শুধু প্রয়োজনের তাগিদে শারীরিক সম্বন্ধ ও মানসিক ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য মানুষ লালায়িত হবে ক্ষনিকের তরে! এবং যত্র তত্র আপন আপন দৈহিক ও মানসিক চাহিদা মেটানোর জন্য একে অন্যের উপর সাময়িক নির্ভরশীল হবে,সেটা একবার ভাবার বিষয়! তবু ভালোবাসা শব্দটা মুছে যাবেনা হয়তো মন থেকে,থাকবে স্মৃতির পাতায়! হয়তো তার স্বরূপ কিছু পরিবর্তন হতে পারে! ঠিক যেমন প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে প্রাকৃতিক ভারসাম্যর পরিবর্তন হচ্ছে প্রতিনিয়ত! হয়তো এমনদিন আসতে চলেছে,গরিব আর বড়লোকদের মধ্যে একটা বিরাট ব্যবধান হবে! গরিব মানুষগুলো হয়তো ধীরে ধীরে প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার কারণে মুছে যাবে পৃথিবী থেকে অবলুপ্ত প্রাণীদের মতো! থাকবে ফসিল হয়ে! হ্যাঁ,হতে বাধ্য! কারণ,যারা গরিব তারা কখনোই বড়লোক হতে পারবেনা!

বড়লোকদের সাথে পাল্লা দিতে দিতে তারা আরও গরিব হয়ে যাবে! যারা বড়োলোক তারা কখনো গরিব হতে চাইবে না! বরং বড়োলোকেরা গরিব মানুষ না হলে চলতে পারেনা,তাদের স্বার্থ চরিতার্থ করবার জন্য!কিন্তু প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে বা মহামারী ঘটলে,সবচেয়ে গরিব মানুষ বা দুর্বল মানুষেরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়,সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা!

আর বড়োলোকেরা দুটো সস্তায় মানব সেবা করে দুচারটে হাতে তালি নেওয়ার জন্য অপেক্ষা করে ফুলের মালা গলায় পরে! হয়তোবাএকদিন গরিবগুলো রোবটের মতো কাজ করবে! যাদের কোনো গরিবি অনুভূতিই থাকবেনা! সুতরাং,তৃতীয় ব্যক্তির উপাসনা করার কোন প্রয়োজন থাকেনা!শুধু বেঁচে থাকতে হলে অতি অত্যাধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হলেই হবে! আর থাকতে হবে প্রচুর অর্থ,ক্ষমতা,আর একটা চেয়ার! প্রকৃতিকে জয় করতে হবে যেকোনো কৌশলে! প্রয়োজনে যেতে হবে অন্য গ্রহে,যদি যায় এ পৃথিবী ধ্বংসমুখে! তার জন্য উপায় একটাই,পয়সা,মানি,টাকা,টাকা যার ক্ষমতা তার! ক্ষমতা যার,বিদ্যা বুদ্ধি তার! এটাই বিশ্ব জোড়া পরিবর্তন!কিন্তু,সকল মানুষগুলোকে একসাথে এমন অর্থনৈতিক পরিবর্তন বা উন্নতি ঘটানো যাবে কি? যদি যায় তাহলে তো আর গরিব বলে কিছুই থাকবেনা! তবে বড়োলোকের দাম দেবে কে? সে কথা ভাবার অবকাশ নেই! হয়তো আগামীদিনে দুর্বলশ্রেণী গুলোকে পেছনের সারিতে ফেলে সামনের দিকে আরও এগিয়ে যাবে পৃথিবী! আর তার সাথে দৌড় প্রতিযোগিতায় কিছু মানুষ হেরে লুকিয়ে যাবে অন্ধকারে! আর ভালোবাসা নামক শব্দটার মানে এটাই দাঁড়াবে,যদি ভালোবাসো,তবে দৌড়াও এসো! যতক্ষণ শক্তি সামর্থ আছে! নইলে ভালোবাসা ডিলিট হয়ে যাবে ডিজিটাল জমানা থেকে! আর মাঝে মাঝে আপডেট করে দেখে নিতে হবে ক্ষমতার ল্যাপটপে,ভালোবাসা নামক শব্দটা কতটা ব্যালান্স আছে তাতে!

এতক্ষন কথাগুলো ভাবছিলো সন্ধ্যা আকাশের দিকে তাকিয়ে! আর সন্ধ্যাতারাটা মিলিয়ে যাচ্ছিলো মেঘেদের আড়ালে,কিছুটা লজ্জা পাওয়ার মতোই! দূরে কোথাও ঢাকে কাঠি পড়ার শব্দ ভেসে আসে তার কানে! মনে মনে ভাবলো সন্ধ্যা,তার নামের সাথে মিলিয়ে সন্ধ্যা নেমেছে বেশ! জীবনটাও কেন যেন গভীর অন্ধকার! উড়ছে একঝাঁক কান্নার মেঘ! যাতে জমা আছে না ঝরা বৃষ্টি ক'ফোটা,শারদীয়ার আবছা হিমেল পরশে!!