রম্যরচনা 26/10/20 গোফ/মোছদাড়িতে রামচন্দ্র কথাছবি কর
প্রত্যেক বছর ভগবান শ্রীরাম আর লঙ্কার রাজা রাবণকে মর্ত্যে আসতে হয় ....সেই কোনযুগে মারা গেছে তাও প্রত্যেক বছর মারা আর মরার প্রক্সি দিতে আসত…
রম্যরচনা
26/10/20
গোফ/মোছদাড়িতে রামচন্দ্র
কথাছবি কর
প্রত্যেক বছর ভগবান শ্রীরাম আর লঙ্কার রাজা রাবণকে মর্ত্যে আসতে হয় ....সেই কোনযুগে মারা গেছে তাও প্রত্যেক বছর মারা আর মরার প্রক্সি দিতে আসতেই হয় ।
পাসপোর্ট ভিসা দরকার হয়না তাদের তাই আসতেই পারে ।
এবারও এসেছেন । বনবাসী রামচন্দ্র লঙ্কার মহারাজা রাবণকে মারবেন । দুজনে একসাথেই এসেছে মর্ত্যে নাটক করতে ।
আজ রাবণকে মারবেন শ্রীরামচন্দ্র ।
মর্ত্যের গ্রীনরুমে বসেছেন দুজনে । চা মিষ্টি কেক প্রেস্ট্রি ইত্যাদি খেতে দিলাম ।
রাম বললো : এসব চলে না । চালকলা , বাতাসা , ফলমূল , লুচি তরকারি , খিচুড়ি লাবড়া , পায়েস ইত্যাদি চলে ।
রাবণের উদ্দ্যেশ্য বললাম : হুইস্কি , বা রাম দু ' চার পেগ চলবে নাকি !
রাবণ : ইচ্ছা তো করে কিন্তু ওই ট্রাডিশন না মানলে মর্ত্যবাসী আবার ঠিক মেনে নেবেনা । হুইস্কি , মদ না বলে সুরা বলে দাও । দেবতাদেরও সুরাপান মর্ত্যবাসী বেশ মেনে নেয় । রাবণ এক বোতল রাম ( সরি সুরা) পান করে । নাভিতে তীর মারবে তো নেশা চড়লে ব্যথা টের পাওয়া যায় না ।
আমি বললাম : মর্ত্যলোকেও একই ট্রাডিশন ! প্রেমে ঝটকা খেয়ে ব্যর্থ প্রেমিকগুলো সিগারেট মদের সাথে ব্যথা গুলে দিব্যি খায় । তাই বেশ বুঝি, সুরাপানে ব্যথাবোধ হয়না ।
রাবণকে সাজাতে গিয়ে দেখি একজোড়া গোফ ইঁদুর কেটে ফেলেছে । কি করা যায় এখন ! আমি #কথাছবি কর । আমি থাকতে ভগবান রামকেও চিন্তা করতে হবেনা । মুসকিল আসান আমিই করে দিচ্ছি ।
রাবণের দশটা মুখের গোফ মোছ দাড়ি ভালো করে কেটে , চকচকে গালে ফাউন্ডেশন , ময়েশ্চারাইজার , ক্রিম লাগিয়ে হ্যান্ডসাম সাজালাম । হেয়ার স্টাইল করিয়ে চুলে জেল লাগিয়ে চকচকে করলাম । সলমনখানের মতো বডি তাই ট্রাউজার শুধু , শরীরের উপর অংশ উদলা । সেই সুঠাম বডি । দেখতে লাগছে একদম হিরো । দূর থেকে তীর মারতে রামের যাতে দেখতে অসুবিধা না হয় তাই নাভিটাকে মেকআপ দিয়ে বড় আর গভীর করে দিলাম ।
এবার রামকে সাজালাম লম্বা লম্বা চুল দাড়ি গোফ মোছ দিয়ে । ময়েশ্চারাইজার ক্রিম ট্রিম দেওয়া যাবেনা । অনেকদিন থেকে শ্যাম্পু না করা রুক্ষশুষ্ক চুল , গোফে কতকাল যে তেল পরেনি ।
একখান ধুতি জাতীয় কাপড়কে লুঙ্গির মতো পরালাম ।
রাম : এ আমার কেমন সাজ । আমি ভগবান আমাকে অসুন্দর দেখালে চলবেনা । রাবণের মোটা মোছদাড়ি থাকবে , আমার না । আমি দেবতা । অসুরদের দাড়ি মোছ থাকবে ।
আমি বললাম : দেখুন ভগবান শ্রীরামচন্দ্র আপনি ভগবান বলেই আপনাকে সুদর্শন দেখাতে হবে এটা কোন লজিক !
সুদর্শন মার্কা সুপুরুষ হলেই সে ভালো দেবতুল্য মানুষ আর কুৎসিত চেহারা হলেই বুঝি অসুর হয় ।
এখনকার মানুষ লজিক দিয়ে বুঝতে চায় । ট্রাডিশনাল চলবেনা ।
বেচারা রামচন্দ্র চুপ হয়ে গেলেন ।
রামকে যুক্তি দিয়ে বুঝালাম , দেখুন আপনি চৌদ্দ বছরের জন্য কপর্দকহীন হয়ে সুন্দরী স্ত্রী আর আপনার ভাইকে নিয়ে বনেজঙ্গলে এসেছেন । আপনার স্ত্রী চুরি ( কিডন্যাপ ) হয়েছে । কিডন্যাপারের খোঁজ করতে আপনাকে বনে বাদারে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে । টাকা পয়সা সাথে নিয়েও আসেননি । বনের ফলমূল বড়জোর কোন মুনি ঋষির আশ্রমে অতিথি হিসাবে গেছেন তখন কিছুটা অন্ন , লুচি পায়েস ইত্যাদি পেয়েছেন । এই খেয়ে ছিক্স প্যাক মার্কা সুঠাম শরীর হবেনা আর কোন সেলুনে যাননি । তীরধনুক দিয়ে দাড়ি কাটা যায় একথা মর্ত্যলোকে হজম হবেনা । ক্রিম ময়েশ্চারাইজার ইত্যাদি আবার অযোধ্যায় ফিরে রাজা হলে তখন লাগাবেন । চৌদ্দ বছর থেকে চুল দাড়ি মোছ কাটতে পারেননি ...সুন্দর আপনাকে দেখাবে কি করে মশাই !
রাবণ হল গিয়ে লঙ্কার রাজা । ভালো ভালো খেয়েছে , রাজকীয় সাজসজ্জা পেয়েছে । রাজা রাবণ বনবাসী রামের সাথে যুদ্ধ করতে আসছে তো রাবণের বেশভূষন রাজকীয় হবে । তাই মোটা মোটা গোফদাড়ি , বড় বড় রুক্ষশুষ্ক চুল আপনার সজ্জা ।
রাম বুঝলেন , লজিকটা ফেলে দেবার মতো নয় । কিন্তু পাবলিক কি খাবে ? পাবলিকের মাথায় ঢুকে আছে , দেবতা মানেই সুন্দর সুপুরুষ আর অসুর মানেই মোটা গোফদাড়ি ।
রাম : সত্যি মানুষ বড্ড বোকা । আমাকে দেখেছে কয়জন । না দেখেই তাদের ইচ্ছামতো মূর্তি বানিয়ে ফেলে ।
আমি : দাড়িমোছওয়ালা কৃষ্ণকে কেউ কল্পনাও করতে পারেনা ।
রাম : ঠিকই বলেছো ! স্বরূপ দর্শনই করতে পারেনি তারা আবার ধর্ম ধর্ম করে ।
আমি : মানুষের ব্রেনে অলরেডি বসে গেছে কৃষ্ণ মানেই বুঝি সুদর্শন দেখতে , বাঁশি হাতে একটা ছেলে । মা কালী মানেই বুঝি হাঁটুর নীচ পর্যন্ত লম্বা লম্বা চুল খুলে ন্যাংটো হয়ে জিভ বের করে শিবের উপর দাঁড়িয়ে আছে । মায়ের যে আসল কি রূপ সেটা কি কেউ বলতে পেরেছে ।
রাম : ব্রহ্ম উচ্ছিষ্ট হয়নি । কেউ তাই প্রকাশ করতে পারবেনা কোনদিনও । অর্জুনকে বিশ্বরূপ দিব্যচোখ দিয়ে দেখিয়েছিলাম দ্বাপর যুগে এসে , সহ্য করতে পারলোনা । কি দেখলো পুরোটা বলতেও পারলোনা । আসলে প্রত্যেক মানুষ তার তার মতো করে আমার চিত্র আঁকে বা মূর্তি গড়ে । তাই সাউথের রাম কিংবা কৃষ্ণ একরকম আবার উত্তরভারতে অন্যরকম । যে যেভাবে আমাকে দেখে , আমাকে সাজায় আমি সেভাবেই সাজি ।
আমি বললাম , তবে আমি এবার দাড়িমোছওয়ালা রামচন্দ্রকে সাজালাম । নিন , তীরধনুকটা নিয়ে এবার রাবণকে মেরে আসুন ।
আমরা বলবো , ' #হ্যাপি_দশেরা ' !